আমার লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করে যখন ভিনদেশি এইসব মানুষদের কাছে আমাদেরকে অকৃতজ্ঞ, নগ্ন করে দেয়া হয়। ফাদার মারিনো রিগন। ইতালীর নাগরিক। ১৯৭১ সাল, মুক্তিযুদ্ধ। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে তিনি তাঁর গির্জাকে রাতের বেলায় বানিয়ে ফেলতেন হাসপাতাল। শত শত মুক্তিযোদ্ধার প্রাণ বাঁচিয়েছেন তিনি। যুদ্ধের নারীকে করেছেন পূর্ণবাসিত।
১৯৭১ সালে রামশীল গ্রামে দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধার দল হেমায়েত বাহিনীর সঙ্গে পাক আর্মীর তুমূল যুদ্ধ হয়। ওই যুদ্ধে হতাহত হন পাক আর্মীর ১৫৮ জন। আহত হন হেমায়েত বাহিনীর হেমায়েত। যথারীতি চিকিৎসা করেন ফাদার রিগন। ওই সময় হেমায়েতের মুখ থেকে শুনুন, ওই সময় আমার চিকিৎসা করে ফাদার নিজের জীবনের উপর ঝুঁকি নিয়েছিলেন। ওই সময় উপরে ছিলেন ঈশ্বর নীচে ফাদার রিগন।
আমরা ৮৬ বছরের এই মানুষটাকে এই ৩৬ বছরে কি দিয়েছি- লম্বা লম্বা বাতচিত করেছি?
অথচ এই ৩৬ বছরে তিনি বারবার আবেদন করেছেন তাঁকে নাগরিকত্ব দেয়ার জন্য। তিনি জটিল অপারেশনের জন্য দেশে যাওয়ার আগে গির্জার লোকজনকে বলে গেছেন, ইতালীতে তাঁর মৃত্যু হলে তাঁকে যেন বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়, এখানেই সমাহিত করা হয়। যাওয়ার আগে তিনি ফোনে আশা নাজনীনকে বলে গেছেন জীবনানন্দের ভাষায়, আবার আসিব ফিরে এই বাংলায়, এই ধানসিঁড়ি নদীর তীরে...।
হায়রে আইন- হায়রে গাইন। কার জন্য আইন! এই মানুষটাকে নাগরিকত্ব দিতে সমস্যা কোথায়? আফসোস, একজনের নাগরিকত্ব অন্যজনকে দেয়ার নিয়ম নাই। নইলে তুচ্ছ আমি, সীমাহীন আনন্দের সঙ্গে এই মানুষটার জন্য নিজের নাগরিকত্ব ছেড়ে দিতাম। আজীবন এই আনন্দ বয়ে বেড়াতাম, সামান্য একজন আমি ভাল একটা কাজ করলাম। আফসোস...।
*পোস্টের সঙ্গে ইচ্ছা করেই তাঁর ছবিটা দিলাম না। দেবদূতের মতো এই মানুষটার চশমার পেছনের ঝকঝকে চোখে চোখ রাখি কেমন করে!
**সুখের বিষয় কিছুদিন পূর্বে মানুষটাকে নাগরিকত্ব দেয়া হয়েছে।