*কেউ জানে না কতজন বাঙ্গালীকে পাকিস্তানী আর্মিরা হত্যা করেছে- কারণ অনেক প্রমাণ এরা মিটিয়ে দিয়েছে। তবে বিশ্বস্ত সূত্রের খবর অনুযায়ী এখন পর্যন্ত অন্তত ১ লাখ লোক মারা গেছে। মৃতের সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশী হবার আশংকাই বেশী। ( সিডনি এইচ শ্যানবার্গ/ নিউইয়র্ক টাইমস/ ৪ জুলাই, ১৯৭১)
*সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ মহলের ধারণা, মৃতের সংখ্যা ৩ লাখ হবে, আবার কারো ধারণা ৫ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর লোক অবশ্য বলেছে, ২৫শে মার্চে মারা গেছে আনুমানিক ১০০জন। কিন্তু অন্যান্য সূত্রের খবর মতে, হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে মেশিগানের গুলিতে লাইন ধরে ঝাঁঝড়া করে দেয়া হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে বেছে বেছে শিক্ষকদের! পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এসব খবরের কোন প্রতিবাদ করেনি। (মরিস কোয়েন ট্যান্স/ রয়টার/ ৯ মে ১৯৭১)
*সেনাবাহিনীর আক্রমনের অন্যতম প্রধান লক্ষস্থল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ২৬ মার্চের সকালে শোনা কথোপকথনঃ (অপারেশনে অংশগ্রহনকারী ভারপ্রাপ্ত সেনা অফিসার ও উর্ধতন সামরিক কর্তার মধ্যে ) কতজন বেজন্মাদের হত্যা করা হয়েছে?
অন্তত ৩০০জন, স্যার। ওয়েল ডান, গুড হান্টিং- কিন্ত এ সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদেরকে বন্দুকের মুখে কবর খুড়ানো হয় এবং মৃতদেহগুলো সেই কবরে চাপা দিয়ে, যারা কবর খুড়ে ছিল, এদেরকে গুলি করে ওই গর্তে ফেলে দেয়া হয়। (লামদ/ ৬ আগস্ট, ১৯৭১)
*নবম ডিভিশনের কমান্ডিং অফিসার মেজর জেনারেল শওকত রাজার সাথে কুমিল্লায় ১৬ এপ্রিল আমার কথা হয়। তার সঙ্গে কথা বলে আমি পাকিস্তানী সেনাদের মনোভাব বুঝতে পারি। তিনি বলেনঃ আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, অহেতুক আমরা লোকবল ও অর্থক্ষয়ের ঝুকি নিয়ে এ অপারেশনে নামিনি। আমরা একটা বিরাট কাজে হাত দিয়েছি। এবং সেই কাজ আমরা শেষ করব। এখানে আমরা পরবর্তীতে মাথাচাড়া দিয়ে দাড়াবে, এমন কোন লোককে রেখে আমাদের কাজ অর্ধসমাপ্ত রাখব না। (ওয়াশিংটন পোস্ট/ ১৩ জুলাই, ১৯৭১)
*ঠান্ডা মাথায় পাকিস্তাসী সেনারা মেশিনগানের গুলি চালিয়ে হত্যা করছে নিরীহ লোকদের তারপর নির্বিকার ভঙ্গিতে ঘরগুলোতে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। রাতের পর রাত একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে চলছে। নির্বিচার গণহত্যা আর ধ্বংসলীলা শুধু ঢাকাতেই না, সমস্ত দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। আমি লক্ষ করেছি, এদের মধ্যে কোন বিকার দেখিনি, এরা নিজেদের মধ্যে হাসি তামাশা করছে, চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। ব্যাপারটা এরা উপভোগ করছিল। এই ব্যাপারটা আমাকে অসুস্থ করে দিচ্ছে।
(নিউজ উইক, এটার তারিখ পাওয়া যায়নি)।
ঋণঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, কিঞ্চিত তথ্য ঋণঃ বিচিন্তা/ ১৩.১২.১৯৯১