Search

Monday, August 6, 2007

খুন করা আর ১৪৯ টুকরা করা- যোজন তফাত

Rangs ভবন ভেংগে ফেলা হচ্ছে। এ নিয়ে আমার বলার কিছু নাই। অবৈধ হলে ভেংগে ফেলা হবে, এ নিয়ে দ্বিমতের কী আছে! কিন্তু বাংলাদেশে সব অবৈধ স্থাপনা ভেংগে ফেলার কোমরের জোর কী আছে? পাকিস্তানে অনেকগুলো অবৈধ মসজিদ ভেংগে ফেলা হয়েছে, তথাকথিত মুসলিম দেশে! বাংলাদেশে কী এমন উদাহরণ সৃষ্টি করা সম্ভব? গণতন্ত্র- বড্ডো গুরুপাক! যাই হোক, কুতর্কে যাই না।

তো, উচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, বেশ!
কিন্তু আদালতের রায় বের হতে দেরি হয়নি, কপিও প্রতিপক্ষকে হাতে পাওয়ার সময় দেয়া হয়নি, বৃহস্পতিবার (০৩.০৮.০৭) বিকেলে এই রায় হওয়ার পরই বিকেলেই রাজউক-এর পক্ষ থেকে মাইকিং করে ৮ ঘন্টার নোটিশ দিয়ে বলা হয়েছে, ১৬টি তলার খালি করে দেয়ার জন্য। অনুমান করি, এই হিংস্র প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য এরা আগেভাগেই সমস্ত প্রস্ততি নিয়ে রেখেছিলেন।
রাত ১২টার পরই বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয় সব ধরনের সুবিধা- গ্যাস, বিদ্যুত ইত্যাদি। বন্ধ হয়ে যায় লিফট। কেবলমাত্র ১টি সিড়ি দিয়ে সব কিছু নামাবার চেষ্টা করা হয়।
আমি খানিকক্ষণ চোখ বন্ধ করে ভাবার চেষ্টা করছি, কী অসহনীয়, অবণর্নীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল।

পরেরদিন শুক্রবার, অফিসিয়াল ছুটি শুক্র, শনি- তবুও ৮ ঘন্টার নোটিশ না দিয়ে সোমবার থেকে ভাংগা হলে কি ইস্রাফিল শিংগায় ফু দিতেন!
ভবনের এই তলাগুলোতে ছিল ব্যাংক, মোবাইল অপারেটরদের স্থাপনা, সুইচরুম। যে সুইচগুলো তাক্ষণিকভাবে সরিয়ে নেয়ায়, সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সাধারণ মানুষদের। যারা এই ভবনের অবৈধ কাযর্ক্রমের সংগে মোটেই সম্পৃক্ত নন। সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে হাজার হাজার নিরপরাধ সাধারণ মানুষকে। শুনতে পাই, এটা ভেংগে ফেলার জন্য নাকি ১ কোটি টাকা খরচ করা হবে। ইশ, আজ সমস্ত সরকারী কর্মকর্তরা সাধু হয়ে গেছেন।

আমি শিউরে উঠি, ঠান্ডা মাথায় কেমন করে এই বিপুল জিনিসপত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য মাত্র ৮ ঘন্টা সময় দেয়া হয়েছে, একটা সভ্য দেশে এই অসভ্য কান্ড কেমন করে সম্ভব!
আমার কাছে বিষয়টা মনে হয়েছে এমন, আইনের প্রয়োজনে একটা মানুষকে প্রাণ নস্ট করার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছিল কিন্তু খুব ঠান্ডা মাথায় রসিয়ে রসিয়ে একটা মানুষকে কুপিয়ে ১৪৯ টুকরা করা হয়েছে।
(সত্যি সত্যি একজন মানুষকে ১৪৯ টুকরা করার ঘটনা এই দেশেই ঘটেছে। যে মানুষটা এই কান্ডটা করেছিল সেই মানুষটা ধরা পড়েছিল কি না আমি জানি না। ওই মানুষটাকে নিয়ে আমাদের দেশের মনোবিদরা মাথা ঘামিয়েছিলেন কিনা এও জানি না, যে কোন পযার্য়ে গেলে একজন মানুষ এমনটা করতে পারে! ওই মানুষটার মধ্যে খুব বড় ধরণের সমস্যা আছে যার আদ্যপান্ত জানাটা আমাদের জন্য খুব জরুরী ছিল। আমি নিশ্চিত, এ নিয়ে কোন কাজ হয়নি, আমাদের এতো সময় কোথায়!)
তো, ওই ভয়ংকর মানুষটার সমস্যা কী আমাদের অনেকের মাঝেই ছড়িয়ে গেছে? ওই মানুষটাকে নিয়ে মাথা না ঘামাবার পাপ কি আমরা বহন করছি?
আমি আমার সবর্স্ব বাজি রাখতে আগ্রহী, পৃথিবীর চৌকস বাহিনীকেও যদি লাগিয়ে দেয়া হয় এই সময়ের মধ্যে এই ভবন খালি করার জন্য, এরা ব্যর্থ হবে।

আমি খানিকটা বুঝি, আমার ভাড়ার অফিস ভেংগে দেয়া হয়েছিল। পুরো ২৪ ঘন্টা সময় পেয়েছিলাম, তারপরও সব কিছু সরিয়ে আনতে পারিনি। হারিয়ে গিয়েছিল, আমার তিলতিল করে জমানো মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র, জরুরী কাগজ। নতুন করে এই বিষয়ে বলে বিরক্তি বাড়াবার অপচেষ্টা করি না। ওই পোস্টের লিংক দিয়ে দিচ্ছি:কফিনের শক্ত পেরেকটা

তো, কে জানে, Rangs অফিসের ড্রয়ারে ছিল কারও প্রিয়মানুষ, মার চিঠি, যেটা হারিয়ে যাবে অবলীলায়। এই চিঠির কীই বা মূল্য!
কারণ, আমরা এটা শিখেছি, বস্তি ভেংগে। দুম করে বস্তি ভেংগে দিলাম, খুব উল্লসিত হলাম, ঢাকা ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করলাম ভেবে।
ভাল, যে গার্মেন্টস কর্মীরা এই দেশের চাকা ঘুরাচ্ছেন, এরা তো ১৫০০-১৮০০ টাকায় বেতনে গুলশানে থাকবেন, কি বলেন?
যে গার্মেন্টস কর্মী, বাবা-মা, শিশুটিকে রেখে কাজে গিয়েছিলেন, তাদের যে শিশুটি হারিয়ে গেল, ওই শিশুটিকে কি পাওয়া গিয়েছিল? আমরা জানি না, কেননা, এটা আমাদের জানার প্রয়োজন নাই। তো, মানবসন্তান হারিয়ে যায় আর একটা চিঠির কথা বলে লাভ আছে, বালখিল্য কথা!

ওয়েল, এতক্ষণ অন্ধকার জগত নিয়ে খুব হাতি-ঘোড়া মারা হল, এবার আলোকিত ভুবন নিয়ে খানিকটা আলোচনা করা যাক। এখানে কিন্ত অনেক আলোর খেলা- খেয়াল রাখবেন, চোখ যেন ঝলসে না যায়!
এই প্রসংগ নিয়ে সবাধির্ক প্রচারিত দৈনিক (এদের দাবীমতে) প্রথম আলো (০৫.০৮.০৭)সম্পাদকীয় লেখে। অনুমান করি, এই প্রধান সম্পাদকীয় সম্পাদক সাহেবই লিখেছেন। শিরোনাম হচ্ছে: `Rangs ভবন, চুড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত একটি সংযোগ সড়ক।'
ভেতরে বিতং করে হাবিজাবি আরও অনেক কিছু লেখা কিন্তু এমন একটা অমানবিক বিষয় নিয়ে কোথাও আলোচনা নেই। এমন একটা অসভ্য কান্ড এই সভ্য দেশে ঘটে গেল, এটা আমাদের আলোকিত মহোদয়দের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়নি! কেন হয়নি, এ নিয়ে সম্ভবত তর্ক করার অবকাশ নেই। ইনারা সম্ভবত এইসব তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাতে আগ্রহী নন।
জ্ঞানী মানুষরা হয়তো বা এমনই হন। খামাখা আমাদের মতো ঈর্ষাম্বিত মানুষরা বলি, এইসব জ্ঞানপাপীরা আছেন বলেই না আমরা এমন অসভ্য কান্ড আরও দেখার জন্য মানষিক ভাবে তৈরি হই। জয়তু, জ্ঞানপাপীরা, আমাদের মতো অগাবগাদের সালাম গ্রহন করুন এবং বেচে বর্তে থাকুন। আমীন- সুম্মা আমীন!

2 comments:

Anonymous said...

শুভ ভাই, এই লেখাগুলো বৃহত্তর পাঠকগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানো উচিত। আপনি জাতীয় দৈনেকে কেন লিখছেন না? ব্লগস্পটে লেখার পাশাপাশি আপনি সামহয়্যার ইন-ও তো লিখতে পারেন! কিছু মনে করবনে না, এটা আমার মনে হলো তাই বললাম।

Anonymous said...

এইটাই তো মিলিটারি স্টাইল! কিছুই বলার নাই। কাচগুলো এভাবে ভাঙতে দেখে আমারো খুব কষ্ট লেগেছে। ৮ ঘন্টা না হয়ে সময়টা ২৪ ঘন্টা হতে পারতো।
শেষে যে প্রসঙ্গ তুলেছেন সেটা নিয়ে নো কমেন্টস :)
আপন