একজন মানুষ কেমন করে স্বপ্নের ফেরিওয়ালা থেকে দু:স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হয়ে পড়ে? সাধে কী?
গত বছরের মাঝামাঝি মুখোমখি হলাম সীমাহীন বিপর্যয়ের! ঝপ করে চোখের সামনে নেমে এলো একগাদা বাজে ক্ষণ- চোখের মনি মাখামাখি হয়ে গেল নিকষ কালিতে!
বড় ধরনের আর্থিক বিপর্যয়। এমন সমস্যা অনেকটা গোপন অসুখের মত, চট করে কাউকে বলা যায় না। বললে কেউ না আবার ভেবে বসেন: এইরে, এই বুঝি কোন হেল্প চাইবে!
টানেলের শেষ মাথায় কোন আলো নাই, অল্প আলোও শুষে নেয় অন্ধকার। আমি বিমর্ষ মুখে ঘুরে বেড়াই। পৃথিবীর যাবতীয় কিছুই অর্থহীন মনে হয়। কেমন বদলে যেতে থাকলাম। আগে ফান করে নিজেকে পোকামানব বলতাম- সত্যি সত্যিই পোকামানব বনে গেলাম।
সামনে বই-মেলা, ডেড লাইন পেরিয়ে যাচ্ছে। আমি নিরাসক্ত ভংগিতে ভাবি, গোল্লায় যাক বই-মেলা। আমার ছাতাফাতা লেখার জন্য কে মুখিয়ে আছে, আবর্জনা সৃষ্টি না করলে আটকাচ্ছে কে!
মড়ার উপর খাড়ার ঘা, নাকি খাড়ার উপর মড়ার ঘা? বছরের শেষের দিকে বুলডজার চলে এসেছে আমার বাড়ি ভেংগে দিতে। ব্রিটিশ আমলে এটা নাকি রেলওয়ের জায়গা ছিল- এই দীর্ঘ বছর পর এরা এক্ষণ আবিষ্কার করেছে জায়গাটা তাদের! ব্রিটিশ আমলে নাকি কারা কারা ভুল করে গেছে। বেশ যাহোক, এই জের আমাকে বইতে হবে কেন? তর্কের খাতিরে মেনে নিলাম নাহয় কিন্তু ভাংতে হবে কেন?
বুলডজারের সামনে কলম বড় হাস্যকর একটা ঢাল, আমার মত কলমবাজের এই কলম ছাড়া আছেই বা কী! আমার অবস্থাটা দাড়াল পিংপং বলের মত- এখান থেকে ওখানে, ওখান থেকে এখানে। যেসব মানুষদের কাছ থেকে শত-হাত দূরে থেকেছি তাদের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থাকি। দু-কলম লেখার চেষ্টা করি বলে প্রথম শ্রেণীর একজন কর্মকর্তা আমাকে শেখান সাহিত্য কি। আমি শিখি- সময় আমাকে শেখায়। ইনি নাকি সময়ের অভাবে সাহিত্য প্রসব করতে পারছেন না- নইলে এই দেশে হাংগামা করে ফেলতেন!
পিংপং বলের গতির সংগে যোগ হয় টাকা চালাচালি। আমাদের এই কর্মকর্তা কাম নব্য সাহিত্যিক অভব্যর মত অন্যায্য টাকা নেন, এতে তার কোন লাজ নাই, আমারো। আমি একজন পোকামানব নির্বিকারচিত্তে টাকা দেই...ভয়ে নিজের চোখের দিকে তাকাই না।
হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়ে রিটের আবেদন করলে হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা দেন কিন্তু এখানেও কাহিনীর শেষ নাই। আজ আর এটা নিয়ে বলতে ইচ্ছা করছে না- হয়তো অন্য কোন সময়।
তো, আমি ভোরে শীতে কাপতে কাপতে ঢাকা যাই- অপেক্ষায় থাকি ন্যায়ের জন্য। নিজের সংগে অভিমান কি না জানি না অভুক্ত থাকতেই ভাল লাগে। পা ছড়িয়ে বসে থাকি অভুক্ত, শ্রান্ত, বিষণ্ন, বিমর্ষ। পা ছড়িয়ে কাদতে পারলে বেশ হতো- পুরুষ মানুষদের নাকি কাদতে নাই, নিয়ম নাই। কাদলেও চট করে মুখ ঘুরিয়ে নিতে পারাই বড় কথা।
প্রকাশক ফোন করে বলেন, ভাল খবর, আপনার বইয়ের কাজ শেষ। আমি উদাস হয়ে বলি, বেশ! একদিন বললেন বইয়ের ব্যাক-কভারের জন্য কিছু লিখে মেইল করে দেন। আমি কেমন করে বলি মেইল দূরের কথা একটি বাক্য, শব্দও আমার মাথায় নাই।
একদা অবলীলায় বলতাম, আমি এ দেশ ছেড়ে কোথাও যেতে চাই না, পৃথিবীর সবচে সুন্দর দেশেও না। কিন্তু আজ পারলে এই দেশ, সম্ভব হলে এ গ্রহ ছেড়ে যেতে একপায়ে খাড়া- আজ নিজের প্রাণটা বড় তুচ্ছ মনে হয়...
এরশাদ-খালেদা জিয়ার সময় যেভাবে লেখা গেছে, ক্যারিকেচার, কার্টুন আঁকা গেছে আওয়ামী শাসনামলে সেটা ছিল স্রেফ একটা স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন! একদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (!) শহিদুল আলমকে নগ্ন পায়ে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেল। কোথায় নিয়ে গেল সেটা আবার অনেক পরে জানা গেল। কোর্টে আবার 'মাই লর্ড' বিচারক পুলিশকে জিজ্ঞেস করছেন, পুলিশ আসামীর (শহিদুল আলমের) ফোনের পাসওয়ার্ড নিয়েছে কিনা, সেদিনই লেখালেখির কফিনে পেরেক ঠোকা হয়ে গেল...!
Friday, January 18, 2008
একজন দু:স্বপ্নের ফেরিওয়ালা...
বিভাগ
দু:স্বপ্নের ফেরিওয়ালা
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
2 comments:
অনেক কস্ট নিয়ে পড়লাম।
একজন সাহসী মানুষের জীবনে সমস্যা আসবেই, সে সাহসী মানুষ সমস্যাকে সমস্যা না ভেবে সেটার মোকাবেলা করে এবং একসময় সে আবিস্কার করে যে সে সমস্যাও দূর হয়ে গিয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাষ সেটা আপনার ক্ষেত্রেও ইনশাল্লাহ্ হবেই হবে।
দু:স্বপ্নের ফেরিওয়ালার...স্বপ্ন ভাঙ্গলেই আশা করছি সব ঠিক হয়ে যাবে।আসলে সব ঠিক হতে হবে যে...মানুষ যে...
অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করলেও....সব তো আর বলা হয় না...
-----------
অনেক অনেক দিন পরে আপনার লেখা পড়লাম সেই আগের স্বাদ।
পড়তে পড়তে গান ও শুনা যায় দেখছি।জটিল...
তবে আপনাকে তাড়পড়েও আশা করছি..
আর..
Post a Comment