Search

Tuesday, July 29, 2008

ক্রসফায়ার, এক মহাআবিষ্কার!

ক্রসফায়ার (link) এ দেশের এক মহা মহা আবিষ্কার। গ্রিজ-জেল মাথায় মেখে একজন মন্ত্রীবাহাদুর এটা চালু করেছিলেন! এ জন্যে নোবেল না পেলেও 'বোবেল' পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। 
ক্রসফায়ার জটিল এক আবিষ্কার! অনেক আঁক কষতে হয়, জটিলসব সূত্র, অংকের ফল মেলাতে হয়। বাংলার ফল খেতে খেতে, অংকের ফল মিলিয়ে, ইংরাজিতে ফল হয়ে জনমের তরে মাটিতে শুয়ে যেতে হয়। 
প্রথমে আমি ধারণা করেছিলাম এটা মৌলিক আবিষ্কার না। কিন্তু স্টেফেন হকিং-এর 'আ ব্রিফ হিস্ট্রি অভ টাইম' বা আইনস্টাইনের বই-টই খুঁজেও না পেয়ে স্বস্থির নিশ্বাস ফেললাম, যাক এটা তাহলে বঙ্গালদের(! ) আবিষ্কার!

ক্রসফায়ার খুব জটিল একটা বিষয়! ধরুন, আপনি আইনের লোক। আপনার কাছে আছে শটগান। একজন আউট-ল, তার কাছে আছে ওয়েলথার পিপিকে।
ধরুন (আমি বিজ্ঞানী না যে আপনাদেরকে চুলচেরা তথ্য দিতে পারব। তাই আমি ধরুন বলব আর আপনারা ধরতে থাকবেন, দয়া করে আবার হাতের মুঠোয় গুলি ধরতে যাবেন না যেন)।
তো ধরুন, আপনার শটগানের গুলির গতি সেকেন্ডে ১০০ মাইল, আইটল’র ওয়েলথারের গতি ১১৫ মাইল।
বজ্রনির্ঘোষ ঘোষণা হল, ওপেন ফায়ার। ওয়ান, টু, থ্রি...টেন...ফিফটি...নাউ ফাইনাল ফায়ার। আপনি গুলি করলেন (আপনি আ মীন আইনের লোকই প্রথমে গুলি চালাবেন। এটা ক্রিকেট খেলা না, এখানে টসের কোন সুযোগ নাই। লেডিজ ফার্স্ট এর মত আইনের লোকও ফার্স্ট)।

আউটলও গুলি করল। ১০০ মাইল এবং ১১৫ মাইলের মধ্যে শুরু হয়ে গেল তুমুল যুদ্ধ।
যদিও আপনারা সবাই জানেন, আপনি যদি ১০০ মাইল স্পিডের কোন গাড়িতে ভ্রমণ করেন এবং আপনার জানালার বাইরে দিয়ে যদি ঠিক একটা ১০০ মাইল স্পিডের গুলি যায়, সত্যি সত্যি আপনি হাতের মুঠোয় গুলিটা ধরতে পারবেন। হে হে হে, উত্তাপে হাত পুড়ে গেলে অবশ্য অন্য কথা!
রসো, এক্ষণ কিন্তু গুলিতে কেউ হাত দেবেন না, কেউ না, যমও!

তো, আমরা ফিরে যাই সেই কুরুক্ষেত্রে, না-না, ক্রসফায়ারক্ষেত্রে। যেহেতু ১১৫ মাইল গতির আউটল’র গুলিটা ভিলেনের ভূমিকায় অভিনয় করছে তাকে তো না হেরে উপায় নেই।
আপনাকে মনে রাখতে হবে ১০০ মাইল হচ্ছে নায়ক, ১১৫ মাইল হচ্ছে খলনায়ক-ভিলেন। হিন্দি-বাংলা সিনেমায় কি কখনো দেখেছেন ভিলেন বেঁচে আছে নায়ক মরে গেছে? পাগল, এই ছবি একদিন পরই হল থেকে নেমে যাবে!
তো, একটা গাড়ি যেমন অন্য গাড়িকে ওভারটেক করে তেমনি দু-পক্ষের গুলি আগুপিছু করে খুব সূক্ষ একটা পয়েন্টে স্থির হবে। উভয়পক্ষই ওই পয়েন্টটা নোটবুকে টুকে রাখবেন।
যাকে আপনি মারার জন্যে গোপন ইচ্ছা পোষণ করেন, তিনি কিন্তু এতক্ষণ ধরে ফ্রিজ হয়ে থাকবেন। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখবেন, লাইক আ ল্যাম্পপোস্ট। অতঃপর নোটবুক খুলে ওই পয়েন্টটার সূক্ষাতিসূক্ষ হিসাবটা বুঝবে,ন তারপর হেলেদুলে হাঁটা ধরবেন।
ঠিক ওই সূক্ষ যে পয়েন্টটাতে ১০০ এবং ১১৫ মাইল গতির দুইটা বুলেট একত্রিত হয়েছে, আ মীন ক্রস করেছে এবং বিদ্ধ করার জন্য ঝুলে আছে, ওখানে গিয়ে বুক চিতিয়ে দাঁড়াবেন।
ব্যস।

এরপর আর কী? ইন্নালিল্লাহ, রাম নাম সাত্য হ্যায়, যীশু তার আত্মাকে শান্তি দিন।
কি এক বিচিত্র কারণে, কে জানে, সক্রেটিস যেভাবে স্ব-ইচ্ছায় হেমলক পান করেছিলেন এইসব আউটলরাও সূক্ষ ওই পয়েন্টে বুক পেতে দিচ্ছে! এ এক রহস্য! আমি সম্ভবত ঠিক বুঝাতে পারলাম না, আসলে খুবই জটিল একটা বিষয় তো! হকিং ছাড়া আসলে হবে না। দেখি হকিং সাহেবকে মেইল করে...।

ক্রসফায়ার আমাদের দেশে এতো জনপ্রিয় হওয়ার কারণ অনেক। দু একটা বলি, কিছু সন্ত্রাসী এতো ভয়ংকর, এদের টিকিটিও কেউ স্পর্শ করতে পারে না। কোন কারণে ধরা গেলেও অল্প কয়েকদিনের ভেতরই জামিন নিয়ে সে আবার সাক্ষী বা বাদীকে খুন করে। এই দানবদের থামানো মুশকিল।
এ জন্য আইনে কি কি পরিবর্তন আনা প্রয়োজন এটা আমার আলোচ্য বিষয় না- এর জন্য বড় বড় বিশেষজ্ঞরা রয়ে গেছেন। তবে প্রলম্বিত বিচার, এটাই সবেচেয়ে বড়ো সমস্যা!
জাস্টিস ডিলে...আমি ওই বহুল ব্যবহৃত শব্দটা না বলে, চীনা একটা প্রবাদ বলি: একটি বেড়ালের জন্যে আপনি মামলা করবেন। নির্ঘাত একটা গাভী হারাবেন কিন্তু তারপরও আপনি ওই বেড়ালটা পাবেন কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নাই।

বহুল আলোচিত একটা মামলার কথা বলতে চাই। শাজনীন হত্যা মামলা। শাজনীনের বাবা হচ্ছেন প্রথম আলোর মালিক এবং এ দেশের একজন বিগশট, মি. লতিফুর রহমান। স্কলাসটিকা স্কুলের নবম শ্রেনীর ছাত্রী শাজনীনকে ১৯৯৮ সালের ২৩ এপ্রিল রাতে হত্যা করা হয়। ২০০৭ সাল পর্যন্ত (তখন পর্যন্ত তাই জানতাম), এই মামলা চলছে। কেন চলছে এসব জটিলতায় আমি যেতে চাচ্ছি না। প্রায় ৯ বছর এ মামলা চলছে।
লতিফুর রহমানের মতো বিগশটের যদি এই হয় অবস্থা, আমাদের মতো ছাপোষাদের আল্লা-ভগবান-গড-গুরু নানক ছাড়া গতি কী! এঁরা আবার ঘুমাতে বড়ো পছন্দ করেন!

২৪.০৪.০৬-এ প্রথম আলোয় একজন লিখেছেন, 'দয়া করে এ খুনটাকে ক্রসফায়ার বলবেন না'। ঘটনাটা এ রকম, শুনুন ওই পত্র লেখকের মুখে: "খুলনায় পুলিশের ক্রসফায়ারে মুকুল নামের একজন চরমপন্থী নিহত হন। এই পত্র লেখক মুকুলের নিকট আত্মীয়।
তার বক্তব্য: ২২ বছর আগে কিশোর মুকুল কুড়িয়ে পাওয়া এক বোমা নিয়ে খেলতে গিয়ে তার দুই হাত বোমায় ওড়ে যায়। ২২ বছর ধরে দুই হাতবিহীন প্রতিবন্ধী মুকুল অসহায় নিরপেক্ষভাবে জীবনযুদ্ধে সংগ্রাম করেছে! এটা সবাই জানে, আর জানেন মহান প্রভু আল্লাহ, যিনি সবই জানেন।
...নিরপেক্ষ তদন্ত করলে সব বেরিয়ে পড়বে। পুলিশ মুকুলকে দীর্ঘ আটদিন আটকে রেখে না খেতে দিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে, গ্রেপ্তার না দেখিয়ে লুকিয়ে রেখেছিল, তার পাপহীন জীবনটা ভিক্ষা চাইতে গিয়ে অনেক সরকারী নেতার কাছে গিয়েছি, নতজানু হয়ে ভিক্ষা চেয়েছি। হাত না থাকার কারণে তাকে সন্ত্রাসী করেছে, আরও কতশত প্রশ্ন। কী হাস্যকর, কী বিস্ময়কর!" 

*'শুভ'র ব্লগিং' বই থেকে।

Monday, July 28, 2008

লাইফ- এচিভমেন্ট- সেক্রিফাইস!

করিম শেখ। 
প্রাইমারী স্কুলের একজন শিক্ষক। কিছু জমি জিরেত আছে। চাষবাস করে যৎসামান্য টাকা আসত। সে বছরটা প্রচন্ড খরা গেল, ফসল সব পুড়ে ছাই। স্কুলের বেতন কি আর নিয়মিত পাওয়া যায়! তার স্ত্রী একটা ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিয়েছিলেন। এই ব্যাংকে আবার মহিলাদের সদস্য হতে হয় এবং সেই সদস্যের নামেই ঋণ পাওয়া যায়।
করিম শেখের ধারণা ছিল, ফসল উঠলে কিস্তির টাকাসহ জমা দিয়ে দেবেন। করিম শেখ ফসলের মাঠের দিকে তাকিয়ে লম্বা লম্বা শ্বাস ফেলেন! ব্যাংক থেকে লোক এসে বেশ ক-বার হুমকী দিয়ে গেছে, সময়মতো টাকা শোধ না দিলে এর পরিণাম ভালো হবে না।

করিম শেখ হুমকীর ভয়ে কাবু নন। ব্যাংকের লোকজনরাও নিশ্চয়ই খোঁজখবর রাখে, তিনি একজন শিক্ষক। ৭ গ্রামে তাকে ছাড়া কোন সিদ্ধান্ত হয় না। কিন্তু তিনি নিজেই লজ্জায় মরে যাচ্ছিলেন, মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছা করে! গ্রামে, স্কুলে জানাজানি হলে কি উপায় হবে! বাচ্চার মায়ের গায়েই বা ক-ফোঁটা গহনা! অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলেন জমি বিক্রি করে দেবেন, এ ছাড়া আর গতি নেই।

সেদিন ছিল হাটবার। করিম শেখ হাটে গিয়েছিলেন। ব্যাংকের লোকজনরা পুলিশসহ এসেছিল। করিম শেখের স্ত্রী বারংবার কাতর অনুরোধ করছিলেন, বাচ্চার বাপ বাড়ীতে নাই, হাটে গেছে; ফিরুক, নিশ্চয়ই কোন একটা ব্যবস্থা হবে। এরা কান দিল না। ব্যাংকের লোকদের এক কথা: টাকা তো আমরা বাচ্চার বাপকে ধার দেই নাই তোমাকে দিয়েছি, তুমি পরিশোধ করবা।
করিম শেখের স্ত্রী এক্ষণ টাকা পাবেন কোথায়? সমস্ত গ্রামের মহিলারা এ বাড়ীতে জড়ো হয়েছেন; পুরুষরা বেশীরভাগই হাটে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে। মহিলাদের হা হুতাশে কান দেয় কে! এরা করিম শেখের একটা গরু , কয়েক বস্তা ধান, করিম শেখের স্ত্রীর হাতের সরু তারের দুইটা রুলি নিয়ে নিল।

ঝমঝম শব্দ। করিম শেখের ৬ষ্ট শ্রেণী পড়ুয়া কন্যা দৌড়ে এলো। ঝমঝম শব্দের উৎস তার পায়ের নূপুর।
বাবা বড়ো শখ করে খেয়ে না খেয়ে গড়িয়ে দিয়েছিলেন। যেদিন বাজান এটা নিয়ে এসেছিলেন, সে দিন বাজান সুর করে বলছিলেন: কই রে আমার টুনটুনি, কই রে আমার ঝুনঝুনি, কই রে আমার মুনমুনি; দেখ লো মা, তোর লিগ্যা কি আনছি।

সেদিন তার চোখে তীব্র আনন্দে পানি চলে এসেছিল! বিড়বিড় করে বলছিল, আল্লা-আল্লা, আল্লা গো, আমার বাপজানের লাহান বাপজান এই দুনিয়াত আর একটাও নাই! কিছু দিন নষ্ট হবার ভয়ে তুলে রেখেছিল। বাবা ছদ্মরাগে বলেছিলেন: আমার মা হাঁটে আওয়াজ পাই না ক্যা? এরপর থেকে পায়ে দেয়া শুরু করল।

করিম শেখের কন্যা ব্যাংকের লোকের পা জড়িয়ে ধরলো। ব্যাংকের লোকদের ভাবান্তর হলো না। এত কিছু দেখলে ব্যাংক চলে না, মাসিক টার্গেটেরই বা কি হবে? এদের নিজেদেরর মধ্যে চোখাচোখি হলো।
একজন বলেছিল: খুকি তোমার পায়ের নূপুরটা তো খুব সুন্দর, দেখি একটু। করিম শেখের কন্যা সরল মনে খুলে দিল। কিন্তু ওরা যখন অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে এটাও নিয়ে গেল তখন
সে ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল।
ভিড়ের মধ্যে তার স্কুলের মুখরা এক বান্ধবী বলেছিল: ভালা হইছে, স্কুলে এইটা পইরা গিয়া খুব রঙ্গ করতি, অহন রঙ্গ বাইর হইবো!
করিম শেখ সন্ধ্যায় ফিরে এলে, অনেক কিছুর সঙ্গে পাননি জমিতে দেয়ার জন্য ১টা কীটনাশক বোতল আর তার কন্যাকে।

গরমকাল। রাতের মধ্যেই জানাজা পড়ে কবর দিয়েছিলেন। মানুষটা শান্তই ছিলেন, চিৎকার চেঁচামেচি কিছুই করেননি। শুধু তার কন্যাকে কবরে নামাবার সময় একবার কাতর গলায় বলেছিলেন: আহা, একটু আস্তে কইরা নামাও না, মায়াডা দুকখু পায় না বুঝি! 

করিম শেখ নামের শান্ত মানুষটা আরও শান্ত হয়ে গিয়েছিলেন। জমি বিক্রি করে শোধ করে শুধু নূপুরটা নিয়ে এসেছিলেন, আর কিচ্ছু আনেনি।
ব্যাংকের লোকজনরা অনেক পীড়াপীড়ি করেছে। করিম শেখ অবিচল। এমন কি একবার লোক দিয়ে এরা গরু, ধানের বস্তা গ্রামে করিম শেখের বাড়ীতে নিয়ে এসেছিল। জোর করে রেখে যাওয়ার চেষ্টা করলে, করিম শেখের মতো শান্ত মানুষটা বটি দা নিয়ে হিংস্রভঙ্গিতে বলেছিলেন: আমার চোকখের সামনে থিক্যা দূর হ, নাইলে একটা কোপ দিমু।

ছোট একটা পত্রিকার সাংবাদিক এসেছিল। করিম শেখ দেখা করতে, কথা বলতে রাজী হননি। অন্যদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে, ওই পত্রিকার মফঃস্বল বিভাগে খুব ছোট্ট করে এ খবরটা ছাপা হয়েছিল। গ্রামের ছেলেপুরেরা, তার ছাত্ররা বলেছিল, আপনে খালি একবার কন, ব্যাংক জ্বালায়া দিমু। করিম শেখ মাথা নেড়ে না করেছিলেন।
...


প্রায় ২০ বছর পর। নামী এক পত্রিকার দুঁদে সাংবাদিক ঢাকা থেকে এসেছেন করিম শেখের সঙ্গে দেখা করতে। করিম শেখ দেখা করতেন না কিন্তু সঙ্গে এসেছে তার অতি প্রিয় ছাত্র, যে এখন ওই পত্রিকাতেই এখন চাকরি করে। এই সাংবাদিক অসম্ভব বুদ্ধিমান। তিনি জানেন, এই নিউজের এই মুহূর্তে কী অপরিসীম মূল্য!
সাংবাদিক বললেন, ‘আপনার প্রতি ভয়াবহ অন্যায় হয়েছে। আমি আবার নতুন করে আপনার ওই খবরটা প্রথম পাতায় ছাপাতে চাই। আপনার মেয়ের ছবি থাকবে, সঙ্গে আপনার সাক্ষাৎকার এবং ছবি।’
করিম শেখ বললেন, ‘এত্তো বছর পর আপনে এইটা নিয়া নাড়াচাড়া করতে চাইতাছেন ক্যান?’ 

সাংবাদিক খানিকটা থমকালেন, ‘অনেক বছর আপনি ন্যায় পান নাই… টাকাও আপনি পাবেন।’
করিম শেখ তার ভারী চশমাটা মুছতে মুছতে বললেন, ‘বাবা, আমি একজন শিক্ষক, সামান্য লেখাপড়া জানি। বিষয় এইটা না, বিষয়টা হইলো গিয়া যে ব্যাংক আমার প্রতি মহা অন্যায় করছিল ওই ব্যাংকের পরতিষ্ঠাতা অনেক বড়ো সম্মান পাইছেন। দুনিয়ায় আমাগো দেশের নাম আলোচনা হইতাছে। আমাদের মাথা অনেক উঁচা হইছে। আপনের পরতিকা চাইতাছে, ওই মানুষটারে কেমনে ছোড করা যায় কি বাবা, ভুল বললাম?’
সাংবাদিক তো তো করে বললেন, ‘আপনি কি আপনার মেয়ের কথা ভুলে গেছে, তার কথা ভেবে…।’

করিম শেখ এ প্রশ্নের উত্তর দিলেন না। উঠে গিয়ে ভেতর থেকে গিট দেয়া একটা রুমাল নিয়ে এলেন। নিমিষেই ঘরময় ছড়িয়ে পড়লো ন্যাপথলিনের সৌরভ। তিনি খুব যত্ন করে রুমালের গিট খুললেন। বেরিয়ে এলো কালচে রুপার ১টা নূপুর। করিম শেখ রুমাল দিয়ে অযথাই ঘসে ঘসে নূপুরটা চকচক করার চেষ্টা করছেন। তার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ে নুপরটা ভিজে যাচ্ছে। করিম শেখ ভাঙ্গা গলায় বললেন, ‘দেশের সম্মানের থিক্যা বড়ো কিছু আর নাই। দেশের লাইগ্যা আমার ১টা মাইয়া কুরবানী দিলেই কী’!”

* সত্য ঘটনা অবলম্বনে এই লেখাটি লেখা হয়েছিল। মূল ঘটনা সত্য, মেয়েটি দুর্দান্ত অভিমানে আত্মহত্যা করেছিল। পত্রিকার ভেতরের পাতায় খুব অবহেলা ভরে মেয়েটির আত্মহত্যার খবরটা ছাপা হয়েছিল। ক-রাত ঘুমের খুব সমস্যা হয়েছিল আমার।
ফিকশনের জন্ম রিপোটিং-এর গর্ভে। তাই এ লেখাতেও খানিকটা ফিকশন আছে বৈকি। 

বিটিভি'র আটটার সংবাদ...

শাসক সাহেব নিরিবিলিতে অবসর জীবন কাটাবেন বলে একটা রাজবাড়ী কিনলেন। অবশ্য এটাকে রাজবাড়ী না বলে পোড়োবাড়ী বললেই ভালো হয়। আধমাইলের ভেতর জনমানব নেই।
বাড়িটা কিনেছেন পানির দামে। বাজারে গুজব, এ বাড়ির মালিকদের নাকি অপঘাতে মৃত্যু হয়, বদরাগী একটা ভূত নাকি থাকে এ বাড়িতে।
শাসক সাহেব ছুঁচালো গোঁফের ডগা (মোম দিয়ে প্রচুর সময় নিয়ে পাকানো) দুমড়ে মুচড়ে মুচকি হেসেছিলেন, ব্যাটারা ভাড় কোথাকার। ভূতের ভয় দেখায় তাকে, রিটায়ার্ড এস.পি এম. এইচ. শাসককে, যার ভয়ে একঘাটে শেয়াল মুরগি পানি খেয়েছে।

গভীর রাতে শাসক সাহেবের ঘুম ভেঙে গেল, অকারণেই কেমন যেন গা ছমছম করছে। চোখ পুরোপুরি খুলে খাটের পাশে যে অবয়বটাকে দেখলেন এক কথায় একে বলা চলে, কত্সিত-অশুভ। ভয় গোপন করে হুংকার দিলেন, এ্যাই, কে-কে, কে তুমি।
আমি ভূত, অবয়বটা বিকট হেসে বলল, নড়াচড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়গুলো থেকে মটমট শব্দ হচ্ছে।
মামদোবাজীর জায়গা পাও না- তুমি ভূত, প্রমাণ কি? আই.ডি মানে পরিচয়পত্র আছে?
ভূতটা এতো অবাক হলো তার লাল চোখটা নীল হয়ে গেল, তোতলাতে তোতলাতে বলল, আমি ভূ-ভূত, আমার আ-আবার-আইডি!

ইয়েস, চোয়াল শক্ত করে বললেন আজাদ সাহেব। ভূত হও আর টূত হও পার পাবে না, আই.ডি না দেখালে বাপকেও ছাড়ি না। সাংবাদিকরা আই.ডি দেখিয়েও আমার কাছ থেকে ছাড় পায়নি, পিটিয়ে শুইয়ে দিয়েছি।
ভূতটা মাথা নিচু করে মাথা চুলকাতে চুলকাতে কি যেন ভাবল। দূরে পড়ে থাকা একটা লোহার ডান্ডা তুলে কচকচ করে চিবিয়ে মস্তো ঢেকুর তুলে বলল, কি, এইবার বিশ্বাস হয়?
এবার শাসক সাহেব ভয় পেলেন, হাত-পা পেটে ঢুকে যাওয়ার দশা। ক্ষীণ গলায় কোনোমতে বললেন, হয়।
হয়, না, ভালো-ভালো, ভূতটা বলল পোড়ো বাড়িটাকে নাড়িয়ে দিয়ে, হুই, এইবার তোর মুণ্ডুটা ছিঁড়ে ফেলব।

শাসক সাহেব স্তম্ভিত। ভূতটা তাকে তুই তুই করে বলছে, একজন রিটায়ার্ড এস.পি-কে! মাথায় কেমন ভোঁতা যন্ত্রণা, হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকের মতো মনে পড়ল। এই তো সেদিন টিভি নাটকে দেখছিলেন কিভাবে চট করে একজনকে সম্মোহিত করে ফেলা যায়। কি সর্বনাশ, দেখতে দেখতে তিনি নিজেও সম্মোহিত হয়ে পড়েছিলেন। আচ্ছা, এ নিয়ম কি ভূতদের বেলায়ও খাটে, চেষ্টা করে দেখতে দোষ কি। ঠাণ্ডা শ্বাস ছেড়ে ভাবলেন, হারাবার তো আর কিছু নেই, তুই করে তো বলেই ফেলেছে।
তিনি উঁচু গলায় বললেন, আমি ঊনিশ থেকে নয় পর্যন্ত গুণব, সম্মোহিত হয়ে আমি যা বলব তুমি তাই করবে।
ভূত গা জ্বালানো হাসি হেসে বলল, হয়-হয়, মরার আগে ব্রেন আউট হয়।
শাসক সাহেব একাগ্রচিত্তে গুণে চলেছেন, উনিশ... সতের... পনের... এগার... নয়।

ডিং। ভূতটার হাড়ের মটমট শব্দ মিলিয়ে গেল, ফার্নিচারের মতো দাঁড়িয়ে রইল। শাসক সাহেব বিস্ময় চেপে ঠাণ্ডা গলায় বললেন, এবার ডান হাত দিয়ে ডান কান ধরো, ধরেছো, গুড। মোচড় দাও, উহু, আরও জোরে, দিয়েছ, ভেরী গুড। এবার কানটা ছিঁড়ে ফেল। যাও, এখন থেকে ভ্যানগগের মতো এক কান নিয়ে ঘুরে বেড়াও।
ভূত ছেঁড়া কান নিয়ে কাঁদ-কাঁদ গলায় বলল, ভ্যানগগ তো মাফলার দিয়ে কান ঢেকে রাখত, এই গরমে মাফলার পাই কই।
তুমি তাহলে জানো ভ্যানগগ সম্বন্ধে, আজাদ সাহেবের বিস্ময়ের শেষ নেই।
হাহ, ভূত বলল হেলাফেলাভাবে। এটা কোনো ব্যাপারই না। আমি হলাম গিয়ে প্রাচীন ভূত। পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকেই আছি, কোন ব্যাপারটা জানি না? বুঝলেন, আমার মনটা ওদিন খুব বিষণ্ন ছিল, অনেকগুলো লুডিওমিল ট্যাবলেট খেয়েও কাজ হল না। মানুষের খুলিতে হুইস্কি পান করতে করতে ভাবলাম, জীবনটা আসলে খুব নিরামিষ হয়ে যাচ্ছে। তো, আমি একটা মন্ত্র পড়লাম: মানুষ আমার পুত, মেয়ে মানুষ আমার ঝি- বুকে আছে আমেরিকার নাম, করবি আমার কি। ভ্যানগগের মাথায় পাগলামিটা তো আমিই ঢুকিয়েছিলাম। আহ্, এরপর কি মজাটাই না হয়েছিল!

এবার ভূতটা সামনে পেছনে হেলেদুলে হা হা করে হাসতে লাগল, হাড়ে ঘষা খেয়ে বিকট মট মট শব্দ হচ্ছে। শাসক সাহেব শঙ্কিত হলেন, বাড়িটার যে অবস্থা যেভাবে হাসছে ফেলে না দেয়। ধমক দিলেন, ফ্যা ফ্যা করে হেসো না তো। আর মট মট শব্দ শুনে মনে হচ্ছে ইউনিভার্সিটিতে গোলাগুলি হচ্ছে। জয়েন্টগুলোতে গ্রীজ লাগাও গিয়ে, গ্রীজ না পেলে মঘা দাওয়াখানার হালুয়া লাগিয়ে দেখতে পারো।
ভূতটার অসম্ভব রাগ হলো, তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবল, আঃ, এই লোকটার খুলিতে করে চা খেলে কি মজাই না হবে।

শাসক সাহেব কি করে জানি টের পেয়ে গেলেন, বিড়বিড় করে বললেন, ঊনিশ...নয়?
ডিং। ভূতটার এবার ভাবলেশহীন চোখ, নিস্তেজ গলা, মাফ করে দেন, জনাব।
আচ্ছা যাও মাফ করে দিলাম। তা দৈত্য-টৈত্যদের শুনেছি অনেক ধরনের ক্ষমতা-টমতা থাকে, তোমার কি আছে নাকি এরকম কিছু?
জ্বী জনাব, আছে, আপনি কি চান?
শুনেছি টেলিভিশনের মতো শক্তিশালী মাধ্যম নাকি এদেশে আর নাই। এই যাদুর বাক্সে যা দেখানো হয় পাবলিক তাই বিশ্বাস করে। আমি চাই সংবাদে, বিশেষ করে আটটা-দশটার সংবাদে গুরুত্বের সঙ্গে আমাকে দেখানো হোক। জনগণের জন্যে আমি যে সোনার দেহ মাটি করে ফেলছি, এসব তুলে ধরা হোক। বিশেষ করে প্রথম পনেরো মিনিট আমার জন্য বরাদ্দ রাখবে।
কি করবেন আপনি, যেটা দেখানো হবে, ভূত আগ্রহের সঙ্গে জানতে চাইল।
এই ধরো গাছ-টাছ লাগালাম, ফিতা কাটলাম- এইসব আর কি।
তথাস্তু,ভূত অদৃশ্য হয়ে গেল।

পরদিন, আরাম কেদারায় গা এলিয়ে শাসক সাহেব গভীর আগ্রহে সংবাদ দেখছেন- কী চমৎকারই না দেখা যাচ্ছে তাকে।
তার পেছনে ভূতটা দাঁড়িয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল, একমাত্র সেই জানে, এই মুহূর্তে এই দেশে এরা দুজনই মাত্র সংবাদের এ অংশ দেখছে। বিচিত্র কারণে বাংলাদেশের দর্শকরা আটটার সংবাদ শুরু হওয়ার পনেরো মিনিট পর টিভি অন করে।

Saturday, July 26, 2008

সমুদ্র গুপ্ত, কেন অভিমান করে বললেন না, যাব না?

রবীন্দ্রনাথের কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল সে মরে নাই। আর আমাদের চুতিয়া দেশে কবি-শিল্পীদের মরার আগে প্রমাণ দিয়ে যেতে হয় আমরা জাতি হিসাবে কী আবেগপ্রবন, সচেতন, সভ্য।
মুক্তচিন্তার পত্রিকায় তেলতেলে উপ-সম্পাদক কানসাট নিয়ে ১০১ লাইনের অখাদ্য কবিতা লেখে, কবিতার জন্য তখন সমুদ্র গুপ্তদের খুঁজে পাওয়া যায় না। আমরা নিবোর্ধ পাঠক তা গিলতে বাধ্য হই। একজন সমুদ্র গুপ্ত, মায় পত্রিকায়ও চাকুরির পান না।


একজন সমুদ্র গুপ্তকে ৫৫-৫৬ বছর বয়সে ফেরিওয়ালা হতে হয়। স্বপ্নের ফেরিওয়ালা না, ওষুধের ফেরিওয়ালা। জীবনের তাগিদে। আরেকটু গুছিয়ে বললে ওষুধের হকার, প্রচলিত 'ক্যাম্বেসার'।
পেট থেকে কান্না এসে জমে চোখে। হায় পেট-হায় জীবন! এই একটা জায়গায় প্রতিভার কী-ই বা দাম! কবির কান্না চশমার মোটা কাচেঁর আড়ালে হারিয়ে যায়। ১৫ কোটি মানুষের মধ্যে কাউকেই খুজেঁ পাওয়া যায় না কেউ কবির হাত ধরতে পারে।

আমার মাথায় দাউদাউ করে আগুন জ্বলে। কিন্তু এই অসভ্য ইচ্ছাটাও জাগে, যদি দেখে যেতে পারতাম সমুদ্র গুপ্ত একজন চালু হকারের মত বাঁদর নাচিয়ে ওষুধ বিক্রি করছেন। লোকজন গোল হয়ে বাঁদরের তামাশা দেখছে, আমিও। দেখছি বানরটাকে, দেখছি সমুদ্র গুপ্তকে, দেখছি নিজের পশুত্বটাকে। বেশ হত, অন্তত এই দৃশ্য দেখার পর আর আমি কখনই নিজেকে মানুষ বলে দাবি করতাম না। খোদার কসম।

আমাদের চাওয়াটা তো খুব বেশি না, যে মিরোশ্লাফ হোলুবের মত সমুদ্র গুপ্তকে মোটা অংকের স্কলারশীপ দেয়া হবে, বছরের পর বছর ধরে। হোলুব ১ বছরে ১টা কবিতা লিখবেন যে কবিতা ঘষামাজা করতে করতে লাগবে আরও বছরখানেক। মানলাম আমাদের সীমাবদ্ধতা কিন্তু ১৫ কোটি মানুষের দেশে কেন সমুদ্র গুপ্তকে ফেরিওয়ালা হতে হবে? একজন রুদ্র বসার জন্য ১টা চেয়ার পাবে না, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখতে লিখতে হারিয়ে যাবে! কেন?

এই বিচিত্র দেশে আমরা অপেক্ষা করি, কখন এঁরা মুমূর্ষু হবেন তখন আমাদের যাবতীয় দরদ উথলে পড়বে। তখন আমরা ঘটি নিয়ে বেরিয়ে পড়ি, পত্রিকায় পত্রিকায় সাহায্যের আবেদন করি, কনসার্ট করি। শালার দেশ!

সমুদ্র গুপ্ত, আপনার কেন এই করুণা নেয়া, দেশে কী চ্যারেটি, সরকারি হাসপাতালের অভাব ছিল? কেন তীব্র অভিমান নিয়ে না বলতে পারলেন না, যাব না?
কেন আপনার অচল কবিতাকে নতুন করে লিখলেন না: ...আমি তাদের কাছাকাছি থাকি না, যাদের ঘামের গন্ধে গা গুলায়…।

Wednesday, July 23, 2008

এইডস, বাঁচতে হলে জানতে হবে।


এই 'ভদ্দরনোক' একজন যাদুকর ছিলেন। হুডিনি, কপারফিল্ড, জুয়েল আইচ এর কাছে নস্যি! ইনি দিব্যি ঘুরে বেড়াতেন সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে , প্রাইভেট কোর্ট বসিয়ে যাকে খুশি তাকে বিচার করতেন। কর্মকান্ডগুলো করতেন মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ধরে কিন্তু কেউ তাঁকে দেখতে পেত না!


এই যেমন, তাঁর একমুখ আউলা-ঝাউলা দাড়ি। দাড়ি দূরের কথা, দাড়ি যেখানে গজিয়েছিল, মুখ-মুখমন্ডল; সেই মুখমন্ডল লেগে থাকত যে শরীরে, সেই শরীর! ওই গোটা শরীর নিয়ে দিব্যি দাবড়ে বেড়িয়েছেন দেশময় কিন্তু এই দেশের চৌকশ পুলিশ বাহিনী তার শরীর দূরে থাক দাড়িটিও খুঁজে পেত না। গোপন কেশের কথা না-হয় নাই বললাম...।
এটা আসলে যাদু, স্রেফ যাদু।

ইনি আমাদের বঙ্গাল ভাই। আপনারা চাইলে নিজ দায়িত্বে বাংলা ভাইও বলতে পারেন। তবে ইনাকে একবার আটকানো হয়ছিল। এই বঙ্গাল ভাইয়ের জেলখানায় বিভিন্ন মহাপুরুষদের সঙ্গে উঠা-বসা ছিল, উঠ-বস না (রিমেম্বার, আপনারা উঠবস শুনে আবার অন্য কিছু ভাবলেন না, বাট আ য়্যাম নট শিয়্যুর। 'হৈলেও হৈতারে'।)।
যাই হোক, জেল থেকে বেরিয়ে তিনি চিন্তা করলেন কি পেশা বেছে নেবেন? লেখক হয়ে লাভ নাই, লেখালেখি করে এই দেশে ভাত দূরের কথা রুটিও মেলে না। ফাও গালি মেলে!


শোনা কথা, একটা ওয়েব-সাইটে নাকি এসেছিলেন চাকরির জন্য। ওই ওয়েব-সাইটটা চালান আবার একজন বিদেশী। প্রথমে সবাই ধারণা করেছিল তিনি বিদেশী হয়ে এসেছেন আমাদের বাংলা উদ্ধার করতে, ত্রাণকর্তা। ক্রমশ সবার ভুল ভাঙ্গল!
ওই ব্লগাধিপতির সঙ্গে কথাবার্তা ছিল নিম্নরূপ-
বঙ্গাল ভাই: হা-ডু-ডু, হালু- হালু, আপনে ভালু?
ওই ব্লগাধিপতি: কথা নাম্বার এক, আমি হা-ডু-ডু খেলা পারি না। কথা নাম্বার দুই, আমি হালু-আলু খাই না। আর আমি ভালু না। আমার শরীরে আপনার মত লোমও নাই যে...।
বঙ্গাল ভাই: 'আস্ছা-আস্ছা'। আলু না, পুছ করলাম ভালু আছেন কিনা?
ব্লগাধিপতি: আপনি এভাবে বাংলা বলছেন কেন? হয় শুদ্ধ করে বাংলা বলেন নইলে ইংরাজি।
বঙ্গাল ভাই (উষ্মা নিয়ে): ইংরাজী মুরতাদের ভাষা, মুরতাদের ভাষা বললে হারপিক দিয়ে কুলি করতে হয়। এস্তেঞ্জার পর শিরীষ কাগজ ব্যবহার করতে হয়। এইটা বড় কষ্ট, তাই আমি মুরতাদের ভাষায় কথা বলি না। যাক, বাংলা যখন বুঝতে পারেন, বাঁচলাম। একটা চাকরি চাইছিলাম।
ব্লগাধিপতি (বিস্মিত হয়ে): এখানে আপনি কী চাকরি করবেন?
বঙ্গাল ভাই: আমার নাম শোনেন নাই, আমি বঙ্গালভাই। পাবলিকদের ছহীহ বংলা শিখাব।
ব্লগাধিপতি: দু:খিত, আমার এই সাইটে বাংলা জানা লোকদের অভাব নাই।

এরপর... বঙ্গাল ভাই যাওয়ার আগে হুমকি দিয়ে গিয়েছিলেন, বোমা মেরে এই ওয়েব-সাইটের সমস্ত নরমতার (সফটওয়্যার মুরতাদের ভাষা বলে তিনি এটা উচ্চারণ করেননি) এলোমেলো করে দেবেন।
অবশেষে নিরুপায় বঙ্গালভাই পীর হয়ে গেলেন, পীর হতে নাকি কোন যোগ্যতা লাগে না- কোন পরীক্ষাও দিতে হয় না! কী মজা! তো, পীর হয়ে প্রতি নিঃশ্বাসে হাক মাওলা-হাক মাওলা বলেন! লোকজনের সব সমস্যার সমাধান দেন! সবচেয়ে বেশি নামডাক হলো, বঙ্গাল হুজুরের দোয়ায় শতশত সন্তান প্রত্যাশী মহিলার (পুরুষদের হওয়ার নিয়ম নাই) সন্তান হল। সিস্টেমটা কী জানা যায়নি কিন্তু হুজুরের দোয়া বিফলে যায় কমই! অঅর বাচ্চাগুলোও মাশাল্লাহ! বাচ্চাগুলোর চেহারাও হয় বঙ্গাল হুজুরের মত, বঙ্গানুরানি!

কী কারণে জানা যায়নি হুজুরেআলা বঙ্গাল ভাইয়ের মনে একদিন ভয় ঢুকল। আল্লার ভয় না, এইডসের ভয়! সম্ভবত কারও কাছে শুনেছিলেন এইডস হলে বাঁচার উপায় নাই। বাঁচতে হলে জানতে হবে। পীর সাহেবরা আপামর জনতার সব রোগের চিকিত্সা করেন কিন্তু নিজের চিকিত্সা করান ডাক্তার দিয়ে! বঙ্গাল হুজুরেরও ডাক্তারের কাছে না গিয়ে উপায়ই বা কী! বাঁচতে হলে জানতে হবে।


ডাক্তার: আপনি কি কোন নেশায় আসক্ত? সুঁই ব্যবহার করেন?
বঙ্গাল ভাই: ('হামোশ' কুতুয়া বলতে গিয়ে রাগ চেপে) নাহ, আমার কেবল একটাই নেশা। চার্জারে বোমা রাখা আর সুযোগ পেলে তা ফাটিয়ে দেয়া।
ডাক্তার (বিভ্রান্ত চোখে) : নিজের রেক...(সেন্সর) ফাটালে বেঁচে থাকেন কেমন করে!
বঙ্গাল ভাই (অমায়িক হেসে): আরে, না-না, ওখানে রাখি কিন্তু ফাটাই অন্যখানে। আমার বিষয়টা একটু 'গোফনিয়'। কাছে আসেন কানে কানে বলি।
ডাক্তার (ভয়ে ভয়ে) : কে জানে এর চার্জারের বোমাটা না এক্ষুনি ফেটে যায়।
সব শুনে ডাক্তার সাহেব বঙ্গাল ভাইকে বললেন, আপনি ক...ব্যবহার করেন, যেটা প্রত্যেক দায়িত্ববান পুরুষ বিশেষ সময়ে ব্যবহার করে, এইডস থেকে বাঁচার এটাই উপায়।

হুজুরেআলা বঙ্গাল ভাই অপার আনন্দে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ফিরে এলেন এবং ক... ব্যবহার করে এখন দস্তরমতো দায়িত্ববান পুরুষ! বাঁচতে হলে জানতে হয়।
কিন্তু হায়! বিকট একটা সমস্যা দেখা দিল, ;‘দায়িত্ববান পুরুষ’ বঙ্গাল ভাই হুজুরের দোয়া এখন আর কাজ করে না, মহিলাদের সন্তান হওয়া বন্ধ হয়ে গেল। কেন বন্ধ হয়ে গেল এই বিষয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করে লাভ নাই। কারণ...


*সত্যর চেয়ে পাজি আর নাই। কখনও বাস্তব কল্পনাকেও হার মানায়! একটি উপাসনালয়ের ধর্মগুরুরা অবিকল এমন একটা সমস্যায় পড়েছিলেন। বিশাল একটা গোত্রকে আহত করা সমীচীন মনে করিনি বলে স্থান-কাল-পাত্র উল্লেখ করলাম না।

**অংশবিশেষ ছাপা হয়েছিল শুভ'র ব্লগিং বইয়ে।  

Tuesday, July 22, 2008

প্রকৃতির আকাশ বনাম আমাদের আকাশ

আমাদের পরিবারের প্রিয় একজন মানুষের ইচ্ছায়, পোষা একটা ময়না ছিল আমাদের।
এক সময় আমার মনে হলো, আরে, আমি এটা করছিটা কি! ময়নাটার বিশাল আকাশ ছিনিয়ে তাকে ছোট্ট একটা খাঁচায় আটকে ফেলেছি। মানুষ হিসাবে করছি ক্ষমতার অপচয়!
কষ্টে-দুঃখে আমার উদভ্রান্ত অবস্থা। নিজেকে পোকা-পোকা মনে হচ্ছিল। এ অন্যায়-এ অন্যায়! আমি নিজের চোখে চোখ রাখতে সাহস পাচ্ছিলাম না।

সিদ্ধান্ত নিলাম, ময়নাটাকে ছেড়ে দেব তার আকাশ তাকে ফিরিয়ে দেব। হায়, সময়কে কে ফিরিয়ে দেয়, না দিতে পারে? আমার সুহৃদরা নিষেধ করলেন, এখন যদি ময়নাটাকে ছেড়ে দেয়া হয়, অন্যায়ের মাত্রাটা বাড়বে বৈ কমবে না। অনেক কটা বছর খাঁচায় আটকে ময়নাটা অনেকখানি ভুলে গেছে তার সহজাত প্রবৃত্তি। সারভাইভ করা তার জন্য কঠিন হয়ে পড়বে, কাক ঠুকরে মেরে ফেলবে নিশ্চিত।

ওই সময় তাদের এ পরামর্শ আমার কাছে যথার্থ মনে হয়েছিল। ময়নাটার দিকে তাকাই আর নিজেকে বড়ো অপরাধী মনে হয়, ক্রমশ আমি মানুষ থেকে পশুতে রূপান্তরিত হই। কখনও কখনও ময়নাটার প্রতি তীব্র রাগ হতো, কি হয় তোর মরে গেলে, মরে গিয়ে আমাকে উদ্ধার কর না, বাপ। কিন্ত আমার মুখে ছাই দিয়ে ময়নাটাও বেঁচে রইল বছরের পর বছর ধরে। আমার সহ্য হচ্ছিল না। একদিন খাঁচাটা খুলে দিলাম। ময়নাটা কিন্ত পালাবার চেষ্টাও করেনি। জবুথবু হয়ে কি এক চোখে তাকিয়ে থাকে। জানি না কি ছিল তার চোখে? হয়তো এমন, দীর্ঘ দিনের মমতার হাতটা কি তুমি ছেড়ে দেবে, পারবে?

এক সময় ময়নাটা মরে গেল। কেঁদেছিলাম, প্রিয়জন হারানোর শোকে। চশমার কাঁচ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল, থেকে থেকে। বুকটা কেমন ভারী হয়ে ছিল নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। হায়রে অমানুষ মানুষ, বিচিত্র এক প্রাণী বটে!
চোখের জলে ভাসতে ভাসতে মাটি খুড়ছিলাম মাটি দিয়ে ঢেকে দেব বলে। যারা এই কান্ডটা জেনেছেন, তাদের কী তীব্র শ্লেষ, ইশ-শ, পাখিকে আবার কবর দেয়, ব্যাটা মুরতাদ!
আমি জিজ্ঞেস করি, ভালমানুষদের, কি গো, ভালা মাইনষের ছেইলেরা, আপনার সব জায়গায় ধর্মকে টেনে নিয়ে আসেন কেন? টয়লেটে একজন যাবে এখানেও দোয়া পড়বে হবে, আজিব!

যে প্রাণটা আমার সঙ্গে বছরের পর বছর থেকেছে, আমাকে দেখলেই মায়াভরা কন্ঠে শিষ বাজিয়েছে, নাম ধরে ডেকেছে, মৃত্যুর পর তাকে আমি ফেলে দেব আর কাক ঠুকরে ঠুকরে খাবে। আমি নির্বিকারচিত্তে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখব! না হে, ভালমানুষের সন্তানেরা, আমি আপনাদের মতো ভালমানুষ হতে চাই না গো ।

ক-দিন পুর্বেও একটা অ্যাড দেখাত টিভিতে। এ দেশের কিছু সেলিব্রেটি টাইপের মানুষ আসতেন, বিপাশা, বাপ্পা আরও কে কে জানি। খুব পোজ নিয়ে বলতেন, 'আমি কোন দিন কোন শিশুর গায়ে হাত তুলিনি, আপনারাও শিশুর গায়ে হাত তুলবেন না'। তাদের আবেদন, সদিচ্ছাটা উত্তম।

কিন্তু এদের এই ফাজলামী দেখে আমার রাগে গা জ্বলে যেত। আমার প্রশ্ন, এখানে যাদের বেছে বেছে আনা হচ্ছে এরা কি শিশুর গায়ে হাত না তোলার দলে? নাকি কেউ সেলিব্রেটি হয়ে গেলেই কি এরা একেকজন চলমান মহাপুরুষ বনে যান? ভাবখানা এমন, উদরে এরা এক পেট আবর্জনার বদলে সুস্বাদু হালুয়া নিয়ে ঘুরে বেড়ান! যেন সেলিব্রিটি মাত্রই মার গর্ভ থেকে দেশ-দশ নিয়ে মাথা ঘামানো শুরু করে দেন!

হুম, ভাগ্যিস আমার সেলিব্রেটি হওয়ার যোগ্যতা নাই, বাই এনি চান্স, আমাকে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় নিলে আমি বলতাম, হুঁ, আমি শিশুর গায়ে কখনও না কখনও হাত তুলেছি। ভয়াবহ ভুল করেছি। যাদের প্রতি এ অন্যায়টা করেছি তাদের কাছে করজোরে মাফ চাই এবং এ ভুল আমি আর করবো না।

Saturday, July 19, 2008

রোপণ করছি একেকটা বিষবৃক্ষ!

বয়স্ক মানুষটাকে লাথি মারা হল- যে এই কান্ডটা করল তাকে এখনও ধরা হয়নি, কেন? এর উত্তর আমাদের কারও কাছে নাই।
তর্কের খাতিরে না-হয় মুক্তিযোদ্ধা, রাজাকার বিস্মৃত হলাম কিন্তু একজন বয়স্ক মানুষকে জনসমক্ষে লাথি মারা যায়, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কল্যাণে কোটি কোটি মানুষ তা প্রত্যক্ষ করে এবং এর জন্য আইনের কোন বাঁধা নাই- আইন তার কেশাগ্রও ছুতেঁ পারে না। তাইলে এই দেশে কোন অপরাধের জন্য কারাগারের প্রয়োজন নাই (লিংক)।

এই প্রজন্মের এতে কোন সমস্যা নাই , সমস্যা হবে পরবর্তী প্রজন্মের। আজ যে গাছটা আমরা লাগাবো এতে ফল তো আর সঙ্গে সঙ্গে ধরবে না, খানিকটা সবুর না করে উপায় কী!

সুরুয মিয়া। (লিংক) একজন মুক্তিযোদ্ধা আত্মহত্যা করেন ১৬ ডিসেম্বর।
একজন মানুষের তার নিজের চেয়ে প্রিয় আর কিছু এ গ্রহে নাই। সেই মানুষটা যখন তার নিজের প্রাণটা নষ্ট করে ফেলেন, নিজ হাতে- কতটা কষ্টে, কত বেদনায়, এটা এই আমাদের কখনই জানা হবে না!
কিন্তু এই আত্মঘাতি মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন হবে না এটা যখন প্রশাসন থেকে জানানো হয় তখন প্রশাসনকে আমরা খুব করে কষে গালি দিতে পারি। কিন্তু এটা নিয়ে আমরা ভাবি না প্রশাসনের এমন ভাবনার উত্স কী! কোন নিতল থেকে উঠে আসে এমন ভাবনা?
প্রশাসন বলতে আমরা যা বুঝি, আসলে কোন রোবট তো আর না। গুটিকয়েক মানুষই থাকেন সিদ্ধান্তে।

ইউ, এন ও নামের যে মানুষটা এই সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন তিনি তার বালকবেলায়, কিশোরবেলায় দেখেছেন ফট করে গুলি করে একজন নেতাকে মেরে ফেলা হয়, সরকারি হেফাজতে জেলখানায় জাতীয় নেতাদের মেরে ফেলা যায়, যুদ্ধাপরাধিদের আস্ফালন- এইসবের জন্য এদের কোন বিচার হয় না। ওই বালকটি পরবর্তীতে ইউ, এন, ও হয়ে আত্মঘাতি মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন হবে না এমন সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন- এতে দোষের কী আছে!

আজ যে প্রজন্ম দেখছে প্রকাশ্যে একজন বয়স্ক মানুষকে তার সন্তানসম একজন লাথি মারছে, তাদের মধ্যে থেকে কেউ না কেউ আগামীতে প্রকাশ্যে ধর্ষণ করবে এটা কোটি কোটি মানুষ ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রত্যক্ষ করবে, নির্বিকারচিত্তে। ধর্ষণ যখন অবধারিত…!

Monday, July 14, 2008

মিশন পসিবল

আমাদের দেশে ফি বছর বন্যা হওয়াটা বড় জরুরী। নইলে আমরা যে কী মানবদরদী এটা প্রমাণ হবে কেমন করে! বন্যা হয় বলেই না এটা আমরা হাতেনাতে দেখিয়ে দিতে পারি একেকজন কেমন হাজী মহসীন! হেলিকপ্টারে করে কয়েক বসত্মা ত্রাণ না দিলে মানবতা যে আমাদের পগারপার হয়! এটা আমরা শিখেছি আমাদের মহান নেতাদের কাছ থেকে। ত্রাণের বিস্কুট খায় নেতাদের পোষা ঘোড়া। আর ত্রাণের টিন এদের পশ্চাদদেশ ব্যতীত কোথায় লাগানো হয়নি?

রাজনীতিবিদদের স্টাইলই আলাদা। এই দেখুন না, যমুনা ব্রীজের জন্য বছরের পর বছর ধরে কোটি কোটি টাকা ‘যমুনা সেতু সারচার্জ’ দিলাম আমরা আহাম্মক পাবলিকরা, আর অন্যত্র মারামারি হলো এটা কার সেতু এটা নিয়ে! প্রত্যেকেই ডুয়েল লড়লেন, এঁদের দাবী এরাই নাকি এই সেতু করেছেন। সবই আমরা জানলাম, কেবল জানা হলো না, এঁরা এঁদের কোন তালুকটা বিক্রি করে করে ক-টাকা অমুক্ত হস্তে দিয়েছেন, এটা।

তো, বন্যা এলেই শুরু হয় মানব দরদীদের ত্রাণ কর্মকান্ড। কী সব একেকটা ফটোসেশন! আজকালকার ক্যামেরা, মুন্ডুটা ঘুরিয়ে ক্যামেরার দিকে না এনে তাকালে মুন্ডুর রেহাই নেই, ক্যামেরারও!
আজকাল পত্রিকাওয়ালারাও বছর ধরে ত্রাণ বিতরণ করে আসছেন। মহতী উদ্যেগ সন্দেহ নেই। যারা টাকা দান করছেন তাদের নাম ছাপানো হয়, বেশ। কিন্তু পত্রিকাওয়ালারা বিস্মৃত হন এখানে এদের ভূমিকা কেবল সমন্বয়কারীর। নিজেদের পত্রিকায় নিজেদের ঢোল এমন বাজিয়ে ফেলে, অন্য কেউ ঢোল ফাটিয়ে ফেলার আগেই। নিয়ম করে, ফলাও করে, ওই পত্রিকার গুণগান। ‘... মুইরে বাচাই দিলে’- ‘আফনেরা ইতান দিয়া পুতের কাম করছুইন’। ‘পোত্তম আলো থ্যাকি পোত্তম ইলিপ পাইনো’।
কীসব টাচী বাতচিত- ফাও কী সব দুর্ধর্ষ ছবি! কই ত্রাণ, কই মাথা! ওই যে বললাম, ফটোসেশন! আমার বোধগম্য হয় না, ত্রাণ দিতে গেলে ফটোসেশন করার প্রয়োজনটা কোথায়?

দেখাবার অভিলাষ। এটা সম্ভবত আমরা শিখেছি এ দেশের তথাকথিত ধর্মভীরুদের কাছ থেকে। ক্রমশ বাড়ছে এদের পাঞ্জাবীর ঝুল, দাড়ির চুল, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তসবীর দানা। বাজারে হাঁটতে হাঁটতে তসবীহ টিপছেন, বা মুখে থুথু ভরিয়ে মিসওয়াক নামে দাঁত খুলে ফেলার চেষ্টা করছেন। উনি যে কত আল্লাওয়ালা লোক এটা আমাদেরকে না বোঝানো পযন্ত কারো নিস্কৃতি নেই! ঝোলা নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন ধর্ম উদ্ধার করতে। ৩ মাসের চিল্লায় বেরিয়ে পড়বেন, কিন্তু ৩ দিনের জন্য বলে দেখুন না, ত্রাণ নিয়ে বেরিয়ে পড়তে। দেখুন, ক-জনকে পাওয়া যায়!

শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে, এই হার ক্রমশ বাড়ছেই! ক-জন মিলে একটা নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। আসলে এইভাবে বিচ্ছিন্ন করে প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই চালানো যায় না। প্রকৃতির সন্তানরা লড়বে প্রকৃতির বিরুদ্ধে সমানে সমানে। বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্ত লড়াইয়ে প্রকৃতি নিশ্চয়ই ধিক্কার দেয় তার হেরে যাওয়া, অপুষ্ট সন্তনদের প্রতি। আর এই ধারণা আমাদের মাথা থেকে কবে বের হবে? ত্রাণ নামের সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে কেউ কারও মাথা কিনে নিচ্ছে না। এটা বন্যাকবলিতদের অধিকার। এঁরাও পরোক্ষ ট্যাক্স দিয়ে যাচ্ছেন।

যাই হোক, বন্যার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি কি আমাদের ছিল, থাকে? আমার মনে হয় না। বন্যার বিরুদ্ধে যেটা করা প্রয়োজন ছিল, সেটা হচ্ছে পুরোদস্তর যুদ্ধ। এই যুদ্ধে আমি চোখ বন্ধ করে চাইতাম সেনাবাহিনীকে, সশস্ত্রবাহিনীকে। জানি-জানি, অনেকে চোখ সরু করে তাকাচ্ছেন। কেন যেন আমাদের একটা বদ্ধমূল ধারণা হয়ে গেছে যুদ্ধ ব্যতীত সেনাবাহিনী ব্যারাকের বাইরে থাকতে পারবে না। প্রাণ গেলে যাক, তাতে কী! এ তো স্রেফ ক্ষমতার অপচয়! এমন ভাবনাটা কেন, যেন এরা অন্য গ্রহের কেউ! যেন এদের কারো সঙ্গে আমাদের কারো প্রাণের সম্পর্ক নাই।

অন্যরূপও আছে। সেনাবাহিনীর লোকজনরা কতটা সচেষ্ট এটাও ভাবার বিষয়। থাইল্যান্ডে সম্প্রতী সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, হাসিমুখে থাকার জন্য, কারণ সহজেই অনুমেয়।

কে মাথার দিব্যি দিয়েছে, মানুষের বিরুদ্ধেই কেবল যুদ্ধ হয়, মানুষের জন্য অকল্যাণকর কিছুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ বারণ! বাস্তবতা হচ্ছে, বন্যাকে, বন্যার্তদেরকে মোকাবেলা করার জন্য যে ট্রেনিং প্রয়োজন এটা সিভিলিয়ানদের নাই।

একজন ফোন করে আমার কাছে দোয়া চাইলেন। কারণটা জানতে চাইলে তিনি বললেন, ভাইরে, ত্রাণ দিতে যাইতাছি। এই মানুষটাকে ব্যক্তিগতভাবে আমি চিনি। আল্লার কসম, একে সামলাতে ৪ জন লাগবে।এই মানুষটার পাজারোর এসি খারাপ ছিল বলে মাত্র ৬০ মাইল আসতে আসতেই প্রাণ বেরিয়ে যায় এমন অবস্থা। তো, এই বান... নাকি ত্রাণ দেবে। শারীরিক ফিটনেসটা কেন জরুরী এটা বলার অবকাশ নেই!

এই যে ক্রিকেট টীম কমান্ডো ট্রেনিং নিচ্ছে, এতে কি লাভ এ নিয়ে মাথা ঘামাতে ঘামাতে বুদ্ধিজীবী ভায়াদের টিকে থাকা অল্প চুল যায় যায় প্রায়। ক্ষতিটা কী হে বাপু? আজ মজার একটা জিনিস নোটিশ করলাম, ক্রিকেটারদের কমান্ডো ট্রেনিং চলাকালীন সময়ে নিউজ কাভার করতে গেছেন বিভিন্ন পত্রিকার ৩৭ জন সাংবাদিক। এদের যখন বলা হল, ‘চাইলে আপনারাও ট্রেনিং নেয়ার চেষ্টা করে দেখতে পারেন। তাতে ক্রিকেটাররাও সঙ্গ পাবেন’। ইস্ট্রাকটরের এই আহ্বানে ৩৭ জন সাংবাদিকের কেউ, আমাদের সোনার সন্তানেরা, মহতী সাংবাদিক ভাইয়েরা মোটেও আগ্রহ দেখালেন না। অন্তত চেষ্টা করা, এই ভাবনাটাও এদের মাথায় খেলা করেছিল কী!

আসলে নাগরিক আমরা, বড্ডো নাগরিক হয়ে গেছি। ফাস্ট ফুড খাওয়া স্টমাক আর ফ্ল্যাটের এক চিলতে জানালা দিয়ে বিশাল আকাশ দেখা, এসি রুমে বসে বসে কলমবাজী করার বাইরে খুব একটা নড়াচড়া করতে আমাদের ভাল লাগে না। তারচে বড় কথা হচ্ছে, আমাদের কেবল প্রয়োজন চড়া দামে বিক্রি করার মত তথ্য- আমরা একেকজন চলমান তথ্যবাজ! এর বাইরে ভাবার অবকাশ কই! আমরা এটা কখনই বুঝতে চাইব না, আমরা বুঝতে চাই না, একজন দুর্ধর্ষ তথ্যবাজ আর একজন মানবিক মানুষের অনেক তফাত!

ওয়েল, বলছিলাম, মিশন পসিবলের কথা। মিশন পসিবল, প্রকৃতির বিরুদ্ধে প্রকৃতির সাহসী সন্তানদের যুদ্ধ। ন্যূনতম প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সাপোর্ট রেখে ব্যবহার করা হবে সশস্ত্রবাহিনী এবং তাদের সব ধরনের লজিস্টিক, অত্যাধুনিক ইক্যুপমেন্ট, সমস্ত হেলিকপ্টার, স্পীড বোট। নখদর্পনে থাকবে এই দেশের প্রতি ইঞ্চির ম্যাপ। প্রয়োজনে মাউসের এক ক্লিকেই যেন জানা যেতে পারে বন্যা উপদ্রুত এলাকার আপডেট; ঠিক কোন ধরনের সহায়তা প্রয়োজন। ধরা যাক, সাপের কামড়ের প্রতিষেধক, এটা যে এক্ষণ বড়ো প্রয়োজন। একটা টিম এটা চাওয়া মাত্রই হেলিকপ্টার উড়ে গিয়ে দিয়ে আসবে।
সশস্ত্রবাহিনীর পাশাপশি, যে সমস্ত মোল্লারা গাট্টি-বোঁচকা নিয়ে ধর্মপ্রচার করেন এদের অংশগ্রহন করানো যেতে পারে। বন্যায় যেখানে সৃষ্টির সেরা জীব নরকযন্ত্রণা ভোগ করছে সেখানে ধর্মপ্রচার আপাতত কিছুদিনের জন্য মুলতবি রাখলে ১টা আসমান ছিটকে পড়বে না নিশ্চয়ই! এমনিতে সিভিলিয়ানরা, যারা এই মিশনে অংশগ্রহন করবেন, অংশগ্রহনে এদের পযাপ্ত র্ট্রেনিং, অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে দুর্দান্ত কাজে আসবে।

আগে থেকেই ফান্ড আলাদা করে রাখা হবে। কোত্থেকে ফান্ড আসবে? আইডিয়া চাইলে সে দেয়া যাবে নে। এমনিতে প্রত্যেকবার ফান্ড উঠানো শুরু হয় বন্যা শুরু হবার পর, রয়েসয়ে। এটা পরবর্তীতে ঠিক কতটা কাজে লাগে আমার জানা নাই- অন্তত মৃত মানুষের কোন কাজে লাগে বলে তো মনে হয় না!

মিশন পসিবলের যুদ্ধ শুরুর আগে মস্তিষ্কে একটামাত্র তথ্যই কেবল ঘুরপাক খাবে, একজনকেও মরতে দেয়া যাবে না; একজনকেও না। বাই এনি চান্স, কেউ মারা গেলে এটা হবে ওই এলাকার দায়িত্বে থাকা পুরা টিমের ব্যর্থতা। সামরিক কায়দায় বাজবে বিউগল, ধর্মীয় কায়দায় হবে মানুষটার দাফন, মানবিক কায়দায় ওই টিমের সমস্ত লোকজনরা মাথা নীচু করে রাখবেন খানিকক্ষণ- এটা যে তাদের ব্যর্থতা!

মিশন পসিবল। একটি স্বপ্নের নাম। আফসোস, আমাদের দেশে স্বপ্নবাজদের বড়ো অভাব। আর আমরা নিজেরা তো স্বপ্ন দেখাই ভুলে গছি...”।

*এই পোস্টে খানিকটা সংশোধনী হবে। প্রায় হুবহু এই লেখাটা অন্য একটা ওয়েব-সাইটে দেয়ার পর মাহবুব সুমন খানিকটা ভুল ধরিয়ে দেন। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা।
তিনি লেখেন: "আমাদের তথাকথিত মেধাবী সেনাবাহিনীরতো ডিজাস্টার ম্যানেজম্যান্ট এর কোনো রকম ট্রেনিং নাই। ...
তবে দুর্যোগে আমাদের পূর্ব প্রস্তুতি থাকে না এটা মনে হয় পুরুপুরি ঠিক না।"
আমার বক্তব্য ছিল: "ভাল একটা পয়েন্ট বলেছেন। আমি খানিকটা শুধরে নিচ্ছি। ধন্যবাদ আপনাকে।
ঠিক বলেছেন এদের ডিজাষ্টার ম্যানেজমেন্ট-এর ট্রেনিং নাই।
আমি মনে করি, একজন মানুষকে কত দ্রুত মেরে ফেলা যায় এই ট্রেনিং-এর চেয়ে, একজন মানুষকে কত দ্রুত বাঁচানো যায় এই ট্রেনিং সহজ। এদের শিখতে সময় লাগার কথা না।
শিখবে।

ডিজাষ্টার ম্যানেজমেন্ট কেন জরুরী এর উদাহরণ দেয়া যায়। আমেরিকার মত দেশ, সব আছের দেশ। অথচ ক্যাটরিনা যখন আঘাত করল তখন নিউ অর্লিন্সে মানুষ চিকিৎসার অপ্রতুলতায় অসহায়ভাবে মরছিল। তখন পাশের বন্দরে uss bataan জাহাজটি ছিল। যে জাহাজে ছিল ৬টি অপারেটিং রুম এবং ৬০০ হসপিটাল বেড। কিন্তু ওই জাহাজকে কোন কাজেই লাগানো হয়নি। এই জাহাজের ১২০০ নাবিক বসে বসে মশা মারছিল। এটাও ডিজাষ্টার ম্যানেজমেন্ট না-থাকার কুফল।

এদের এখানে প্রকৃতিক বিপর্যয় হয় কালেভদ্রে কিন্তু আমাদের তো নিয়ম করে। অন্তত মিনিমাম প্রস্তুতি যদি আমাদের না থাকে তাহলে বেদনার শ্বাস ফেলে বলতেই হয়, আমাদের প্রাণ, কেজি দরের প্রাণ!

এমনিতে এও সত্য, আমাদের সশস্ত্রবাহিনীর মহাশয়গণ তো আবার গরম মেজাজের লোক। ত্রানের সঙ্গে ফাউ বেত পেলে ওই ত্রান পিষ্টকখন্ড মনে হবে। এখানে উল্লেখ করা যায় থাই সেনাবাহিনীকে একবার বলা হয়েছিল, হাসিমুখে থাকার জন্য। যেন জনগণ তাদের সঙ্গে একাত্ম বোধ করে। আইডিয়া খারাপ না।

এমনিতে আমাদের সেনাবাহিনী আবার বিচিত্র কারণে বৈদেশে জাতিসংঘ মিশনে অতুলনীয় কাজ দেখান। সিয়েরো লিওন-এর জনগণ তো আমাদের সেনাসদস্যদের কর্মকান্ডে মুগ্ধ হয়ে দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসাবে বাংলাকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
আল্লা জানে, নিজেদের দেশের জনগণ দেখলে কেন এদের মিজাজ খারাপ হয়।
..............
লিখেছিলাম, প্রস্তুতি থাকে না। এটা আক্ষরিক অর্থে গ্রহন করার প্রয়োজন নাই।
যেটুকু থাকে তাকে প্রস্তুতি বলা চলে না। গত বন্যা বা এর আগে ঠিক মনে নাই। ওই সময় ওর-স্যালাইনের তীব্র সঙ্কট। অনেক জায়গায় একেকটা স্যালাইন ২০-২৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছিল। স্যালাইনের অভাবে ছোট-ছোট বাচ্চা মারা যাচ্ছিল।
এই নিয়ে গা করা অবকাশ আমাদের কই! ওষুধ কোম্পানীগুলো, এর সঙ্গে জড়িত লোকজনের সেকি আনন্দ! ‘ইশকুল খুইলাছে মাওলা’ টাইপের- হরিলুট শুরু হয়ে গিয়েছিল। সরকারী অধিকাংশ হাসপাতালে স্যালাইন ছিল না। সরকারকে এটা কী আমার মত অগাবগার বলে দিতে হবে, বন্যার পর স্যালাইনের চাহিদা বেড়ে যায়?

কেবল সরকারকেই দোষ দেই না। আমরা আম-পাবলিকও কম যাই না। এমনিতে প্রতি শ্বাসে আল্লার নাম নিতে নিতে মুখে ফেনা তুলে ফেলি। কিন্তু বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্য়োগের পর চিড়া, গুড়ে, স্যালাইনের দাম কেন বেড়ে যায়, এটা কার কাছে জানতে চাইব?
বিচিত্র দেশ! জিনিসপত্রের দাম লাগামছাড়া হয় রমজান মাসে-সিয়ামের মাসে। সবচেয়ে বেশি ঘুষ চালাচালি হয় রমজান মাসে।
এসবে আমাদের কোন বিকার নাই।
বড় ধর্মভীরু আমরা। এমনিতে পান থেকে চুন খসলেই ধর্ম গেল রে বলে রব উঠে- আকাশলোকের বাসিন্দার পর্যন্ত ঘুম ভেঙ্গে যায়।

সশস্ত্রবাহিনীর কথা আলাদা করে উল্লেখ করেছিলাম। এই কারণে না যে, এদের প্রতি আমি বিশেষ মমতায় মাখামাখি হয়ে আছি। এদের ট্রেনিং-এর অনেক কিছুই এখানে কাজে লাগবে বিধায়।
পৃথিবীর অনেক দেশে বেসামরিক লোকজন বিভিন্ন মেয়াদে সামরিক ট্রেনিং নেয়। কেউ কাজে, কেউ শখ করে। পরবর্তীতে এই ট্রেনিং বিভিন্ন কাজে লাগে। দেশের জন্য, তার নিজের জন্য।
আমাদের দেশেও এটা চালু করা গেলে মন্দ হয় না। ফাঁকতালে সশস্ত্রবাহিনীর বাড়তি আয় হবে। তবে সমস্যাও আছে। টাকার জন্য হয়তো আমার মত সাধারণরা বাদ পড়ব। কিন্তু ঠিকই গালকাটা রমজান, পেটকাটা রব্বান ট্রেনিং নিয়ে ভজকট করে ফেলবে- আগে যে ভুলভাল করত, এখন আর করবে না! কী মোলায়েম করে গাল কাটা যায়, পেট কাটা যায় এটা রপ্ত করে ফেলবে। কে জানে, হয়তো বা অজান্তেই আমাদের মুখ দিয়ে বেরিয়ে যাবে, ভাইয়ের হাতে যাদু আছে।

মুশকিল হচ্ছে, সশস্ত্রবাহিনীর লোকজনরা ব্যারাক থেকে বের হওয়ামাত্রই নিজেদের মত অন্যদেরকে বানাবার ফিকির খোঁজে। আমার চুল ছোট তো সবার চুল ছোট থাকবে। আমার চেহারা রোবটের মত তো সবার চেহারা রোবটের মত থাকবে। ফুল-শ্লীভ শার্টের হাতা গুটিয়ে রেখেছে কে রে? বান…, ব্যাটন দেখছো, এইটা তোমার…।
কই, আমরা ব্লাডি সিভিলিয়ানরা তো তাদের কাছে জানতে চাই না, তুমি কেন হুবহু আমাদের মত না?

এরা যখন হেলমেট না থাকার অপরাধে প্রকাশ্যে, স্ত্রীর সামনে তার স্বামীকে কান ধরে উঠবস করায় তখন একটা সভ্যতা মৃত্যু হয়। এই ট্রেনিংটা এদের কে দেবে?
এরা ট্রেনিং-এর এই অংশটা পুরাপুরি বিস্মৃত হয়। সামান্য একজন সৈনিকের সঙ্গে তার বউ থাকলে এবং ওই সৈনিকের সাথে জেনারেলের দেখা হলেও সে স্যালুট করবে না, জাস্ট সালাম দেবে। এটা করা হয়েছে স্ত্রীর কাছে তার সৈনিক স্বামীর সম্মানার্থে।

আফসোস, এরা এটা বিস্মৃত হয়, এদের বাবা-মা, ভাই-বোন সামরিক না, বেসামরিক লোক। এরা চুল বড় রাখতে পারে, এরাও বন্যায় ভেসে যেতে পারে, ঝড়ে উড়ে যেতে পারে, লঞ্চ ডুবে মরতে পারে!"

ছবিঋণ: প্রথম আলো

Sunday, July 13, 2008

সব কারাগার গুড়িয়ে দিতে হবে

আমাদের দেশে এখন আর কারাগারের প্রয়োজন নাই। কারাগারের আবশ্যকতাই বা কী! অপরাধ, অপরাধি নাই তো কারাগার কেন?
পত্রিকায় দেখে আমি তন্ন তন্ন করে খুঁজছিলাম। আংশিক পড়লাম, বাকিটা কই? যারা এই কান্ডটা ঘটিয়েছে এদের আটকে কারাগারে ঢোকাবার খবরটা কই? নেই তো নেই।

মানে? এদের কি খুজেঁ পাওয়া গেল না? তা কি করে হয়? ভিডিও ফুটেজ দেখে অনায়াসে খুজেঁ বের করে ফেলার কথা।
তাহলে? তাহলে কি এটা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে না? এটা অপরাধ না হলে আমাদের দেশে কোন অন্যায়ই অপরাধ না। আর অপরাধ না থাকলে কারাগারের প্রয়োজন কী! সব কারাগার নিমিষেই গুড়িয়ে ফেলা হোক- খালি জায়গায় ধান চাষ করা হোক, চালের বাজার যদি খানিকটা কমে। গরিব বেঁচে যায়।

গুরুতর কোন অপরাধের তেমন প্রমাণ ছিল না তারপরও নাত্সী কানেকশন থাকায় এত বছর পরও গুন্টার গ্রাসের সত্যর মুখোমখি না হয়ে বাচোঁয়া নাই। সত্যটা স্বীকার না করে পারেননি।
সত্য হচ্ছে রক্তের দাগ- ৩৭ বছর কেন ৩৭০ বছরেরও মুছে ফেলা যায় না (লিংক)

আর এখানে হাজির আমাদের সোনার সন্তানেরা যেসব নসিহত করলেন?
সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির? তিনি নাকি জানতেন না কাদের অনুষ্ঠানে এসেছেন! বেশ, যা হোক! আপনার কি যে কেউ ডাকলেই চট করে চলে আসেন- এত সহজলভ্য, বাদামের খোসা?

যাক, এখন তো জেনেছেন? এখন কেন প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইছেন না?

সাবেক জ্বালানী উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান? আপনার দেখি খুব রাগ ২৬শে মার্চ ভারতীয় জেনারেলকে এনে স্বাধীনতার চেতনাকে ক্ষুন্ন করা হয়েছে বলে। বাহ বেশ! ভারতীয়রা যে মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধ করেছে এটা কি সত্য না? নাকি এটা ইতিহাস থেকে মুছে দেবেন?
আচ্ছা, আপনি যে এই অনুষ্ঠানে এসে খুব লম্বা লম্বা বাতচিত করছেন, আপনি কি ভুলে গেছেন এই আপনাকেই রাজাকার বলায় কী ক্ষুব্ধই না হয়েছিলেন!(লিংক)

বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালকের বক্তব্য বলিহারী। ওনার কঠিন বক্তব্য, ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাপিয়েঁ পড়া সময়ের দাবী। এটা সত্য ভারতের দাদাগিরি অসহ্য কিন্তু আপনি যে বক্তব্য দিলেন এটা কি ভেবেচিন্তে বলেছেন? এমন একটা দায়িত্বশীল পদে থেকেছেন যখন আপনার নিশ্চয়ই জানার বাকি নাই আপনার দাবি কতটা হাস্যকর...! আপনার একটা অর্বাচীন মন্তব্যর কারণে আমরা যে মেরে-কেটে সাফ হয়ে যাব, আপনার জিহ্বার নিচে রাখা মস্তিষ্কের কারণে!

Thursday, July 10, 2008

চোখ খুললেই আবর্জনা ঢালো।

প্রথম আলোর শ্লোগান ‘চোখ খুললেই প্রথম আলো’। এটা অন্য পত্রিকার বেলায়ও প্রযোজ্য।
শ্লোগানটা মন্দ না- সকালে চোখ খুলে পত্রিকায় চোখ না বুলালে অনেকের হাগু হয় না। যেদিন পত্রিকা বের হয় না সেদিন কি হয় এটা নিয়ে খানিকটা চিন্তায় আছি। হাগুর বিদ্রোহ বিষয়টা আনন্দের না!
পত্রিকাঅলারা আমাদেরকে প্রথম আলো দেখাবেন, না শেষ আলো সেটা তারাই ঠিক করেন- এতে আমাদের কোন হাত নাই! পত্রিকাওয়ালারা পণ করেছেন দুনিয়ার যাবতীয় মন্দ বিষয়গুলো প্রথম পাতায় ফলাও করে আমাদেরকে ঘটা করে সক্কাল সক্কাল জানাবেন। দিনের শুরুতেই মন্দ বিষয়, হতাশা নিয়ে আমাদের দিন শুরু। এ থেকে আমাদের নিস্তার নাই।
একটু লক্ষ করলেই দেখা যাবে প্রথম পাতায় হত্যা, মৃত্যু, খুন-খারাপি আর নামকরা অপদার্থদের অশ্লীল অমৃতবাণী। অশ্লীল বললাম এ কারণে, বছরের পর বছর ধরে কেউ কারো মুখদর্শন করতে রাজি না কিন্তু এখন বেকায়দায় পড়ে বলছেন, গণতন্ত্রের খাতিরে, মুখ কেন গোটা শরির দর্শনেও আপত্তি নাই, আলোচনায় বসতে মালকোঁচা মেরে তৈরি হয়ে আছেন!

ধরা যাক, আজকের প্রথম আলো (০৯.০৭.০৮)। প্রথম পাতায় অর্ধপৃষ্ঠা জুড়ে আছে ‘ব্যবসা জমজমাট, যাত্রীরা জিম্মি’। ঢাউস ২টা ছবিসহ সি এন জি স্কুটার, ক্যাবের হা বিতং করে বিশাল কাহিনি। এটা তো বিশেষ সংখ্যাও দেয়া যেত। নিদেনপক্ষে পেছনের পাতায়, ভেতরের পাতায় দিলে সমস্যা ছিল না। নাকি এরচেয়ে জরুরি সংবাদ দেয়ার মত ছিল না?

আজকেই শেষ পাতায় সিংগেল কলামে একটা খবর ছাপা হয়েছে হেলাফেলা ভঙ্গিতে। তুচ্ছ একটা খবর- ছাপা যে হয়েছে এই তো ঢের!
ঘটনা সামান্য। দিনাজপুরের ১৯ বছরের শাহিদ হোসেন নামের এক যুবক জ্বালানি ছাড়াই বিদ্যুত উত্পাদনের কৌশল আবিষ্কার করেছেন।
তিনি সংবাদ সম্মেলন করে হাতেনাতে একটি প্লান্ট থেকে জ্বালানি ছাড়াই ৩০ কিলোওয়াট বিদ্যুত উত্পাদন করে দেখান। তাঁর দাবী, এটা ১০০ ভাগের ১ ভাগ কম খরচে করা সম্ভব এবং দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করা সম্ভব।
সম্মেলনে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ব্যতীত প্রায় ১ হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে এমন কেউ কি ছিলেন না যিনি এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ? যিনি বলতে পারতেন শাহিদ প্রমাণ করে দেখিয়েছেন? কারণ পত্রিকায় ছাপা হয়েছে শাহিদ দাবি করেছেন। দাবি আর প্রমাণ এই দুইয়ে যোজন দুরত্ব। অনুমান করি, বিশেষজ্ঞ স্যাররা দেশ উদ্ধারে ভারী ব্যস্ত বিধায় এমন তুচ্ছ বিষয় নিয়ে তাদেঁর মুল্যবান মাথা খরচ করার মত সময় ছিল না! আর ঢাকা নামের আবর্জনার শহর থেকে বাইরে পা ফেলতে এদেঁর বড় আলস্য । এর সংগে যোগ হয় মফ:স্বলের প্রতি নিদারুণ তাচ্ছিল্য- গোদের ওপর বিষফোড়া!

এই অভাবনীয় কান্ড করেছেন শাহিদ নামের যে মানুষটা, তাঁর ছবি ছাপার প্রয়োজন বোধ করেনি প্রথম আলো।
অথচ আজই প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছে ডালের ছবি। ‘প্রতিদিনই বাড়ছে সব ধরনের ডালের দাম’ সংগে ডালের ছবি। ডালের ছবি না ছাপালে আমাদের জানাই হত না ডাল দেখতে কেমন হয়- চালের মত, নাকি বুদ্ধিজীবীদের খালের মত!

Wednesday, July 9, 2008

স্যাররা শেখান, আমরা শিখি।

কথিত আছে, আইয়ুব খান নাকি একবার তার বহর নিয়ে যাচ্ছিলেন। রাস্তায় শববাহী একটা গাড়ি পেছন পেছন আসছিল, সুযোগ থাকা পরও ভয়ে এগুচ্ছিল না, আইয়ুবের গাড়ি অতিক্রম করছিল না যদি আইয়ুব খান চটে যান।

কিন্তু বিষয়টা যখন আইয়ুবের চোখে পড়ল তিনি শববাহী গাড়িটাকে দাঁড় করালেন, স্যালুট করলেন, আগে যেতে অনুরোধ করলেন।

একজন মৃত মানুষের প্রতি সম্মান, শেষ সম্মান! এই সম্মান না-জানালে ওই মৃত মানুষের কিছুই যায় আসে না কিন্তু জীবিত মানুষগুলো নগ্ন হয়ে পড়ে!

জানি না এখনো নিয়মটা চালু আছে কিনা (এটা একজন ডাক্তারের মুখ থেকে শোনা) মেডিকেল কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদের যখন ব্যবচ্ছেদ শেখানো হয় তখন মেয়েদেরকে হাতের অলংকার খুলে যেতে নির্দেশ দিতেন অধ্যাপকরা। কারণ ওই, মৃতদেহের প্রতি সম্মান।

ছবিটা একজন শিল্পপতির। অপহরণ করার পর, দীর্ঘ সময় তিনি নিখোঁজ ছিলেন। পরে তার শরীরের হাড় উদ্ধার করা হয়। এবং ময়নাতদন্তের জন্য আনা হয়।
এই ছবিতে আমাদের দেশের নামকরা পরফেছর(!) সাহেবদের (যাদের নাম শুনে মেডিকেলের ছাত্ররা ছড় ছড় করে ইয়ে ত্যাগ করে) দেখা যাচ্ছ। তেনারা (পড়বেন, ইনারা) হাড়ের পেছনে কতটুকু মাংস লেগে আছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।

তা বেশ! কিন্তু দেখুন দিকি, কোথায় স্যারদের পা আর কোথায় হাড়! ইয়ে, এটা কিসের হাড় যেন ভুলে গেছি! যাগগে, এটা তো আর আমার-আপনার বাবার মৃতদেহের হাড় না। সমস্যা কি...।

এই স্যাররাই বড় বড় ইশকুল খুলে আমাদেরকে শেখান কিন্তু এদের শেখাবার ইশকুলটা কোথায়?

Sunday, July 6, 2008

আবার যেদিন তোমরা বইমেলায় যাবে…

কত বছর, কত বছর হবে? দশ, এগারো, বারো, তেরো, পনের বছর? এত বছরের মধ্যে কেবল এবারই একুশের বইমেলায় যাওয়া হল না। আমি স্পষ্ট মানষচক্ষে দেখতে পাচ্ছি, অনেকের কপালে ভাঁজ পড়ছে এটা ভেবে, ব্যাটা বলতে চাইছে কী, ৩ টাকার কলমচীর বিরহে বইমেলা মুখ কালো করে রেখেছিল নাকি?
নারে বাহে, কারও কোন ক্ষতি-বৃদ্ধি হয়নি কিন্তু না যাওয়া বেদনার দগদগে ক্ষতটা এখনও বয়ে বেড়াচ্ছি। জানি না কবে নাগাদ এটা বয়ে বেড়াব, হয়তো আমৃত্যু?
এবারের মেলায় অনেকে অনেক মাস্তি করলেন, এইসব রসালো কাহিনি পড়ে ঠান্ডা শ্বাস ফেলা ব্যতীত আমার কিই-বা করার ছিল!

আমার সুহৃদদের অনেকেই তাদের আহ্বানে সাড়া না দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন, তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন, অনেকে ব্যক্তিগত অপমান হিসাবে ধরে নিয়েছেন।
একজন সুহৃদকে ফোন করলাম, মেলায় কেমন মাস্তি করছেন, মহতরাম?
তিনি আলাদা গাম্ভির্য এনে বললেন, ব্যস্ত আছি, পরে ফোন করব।

ফেব্রুয়ারি গেল, জুলাই গেল মহতরম আর ফোন করেননি। মহতরাম ফোনের অপেক্ষায় থেকে থেকে ক্লান্ত হয়ে গেছি।
এক মহতরমা রাগের চোটে ফোন নাম্বারই বদলে ফেলেছেন। হায়রে বালসুলভ আচরণ- আমর চেয়েও অপক্ক!

সচরাচর আমরা হাসিই দেখি, দেখতে পছন্দ করি। আহা, আমি তো ফটো না যে হাসিমুখের ছবি দিব্যি ঝুলতে থাকবে, যদ্দিন আপনি চাইবেন।
যান্ত্রিক এ সময়ে হাসির পেছনের বিমর্ষতা দেখার অবকাশ কোথায়? আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা কত দ্রুত নাগরিক হতে পারি, জাতে উঠতে হবে যে।
আপনারা কেবল নিজেদেরটাই দেখলেন হে…আমি শ্লা কি করি, রঙ্গ করি?

বইমেলায় আমার এককানা কিতাব বাহির হইয়াছিল- আমার বুঝি ইচ্ছা করেনি বইখানার মুখদর্শন করতে। উমম, নিজের আনকোরা বইয়ের গন্ধটা কেমন? আমার তো মনে হয় বিস্মৃত হয়ে আসা ভূমিষ্ঠ শিশুর গায়ের গন্ধ। বাহে, কোন পিতাকে জিজ্ঞেস করিয়েন, নিজের সন্তানকে ছুতেঁ না পারা রঙ্গ, কেমন রঙ্গ…।

Saturday, July 5, 2008

ওড়া, তোরা সব কেতন ওড়া।

দেখে যেতে কি পারব, বাংলার ঘরে ঘরে কেতন উড়ছে পতপত করে? কি জানি, সময়ই এটা ঠিক করে দেবে। তবে দেশ যেখানে এগিয়ে যাচ্ছে, আমি আশাবাদী।


ফ্রান্স দেশটা নাকি লা-জবাব। প্যারিস নাকি আরেক কাঠি সরেস। কেন নয়, ফ্রান্স থেকে প্যারিসের দূরত্বই বা কী(!), প্যারিসের তুলনা এ গ্রহে আর কোথায়! প্যারিসে না গেলে নাকি মননশীল বলে দাবি করাটা পাগলামির পর্যায়ে পড়ে। শিল্প-টিল্পর সূতিকাগৃহ- প্যারিসের গর্ভযন্ত্রণার নাকি শেষ নাই, কী কষ্ট! মেলা খরচ, নইলে ঠিক প্যারিসগামি হাওয়াইযানে উঠে পড়তুম। বসার জায়গা না পেলে দাঁড়িয়ে গেলে আটকাত কে(!)


এই ফ্রান্স যা দেখাল সম্প্রতী, পাথর হব, না নিথর এটা নিয়ে থিসিস সাবমিট করা যেতে পারে। এক মোছলমান বাসর রাতে আবিষ্কার করেন তাহার ইস্তারি সাহেবার হাইমেন নাই। তো? যাহ, তোর লগে ভাত খামু না। ফলাফল বিবাহ ভাংগিয়া দিতে চাহি। ওই মোছলমান-বাদীপক্ষের আইনজীবী হ্যাভিয়ার লাব্বির আবেদনে প্রেক্ষিতে ফ্রান্সের আদালত ওই মোছলমানের পক্ষে রায় দিয়েছেন। এমনকি ওই দেশের বিচারমন্ত্রী রাসিদা দাতিও ওই মোছলমানের পক্ষে তার মত দেন।


মোছলমানের দেশ বলে কথিত দেশগুলোর অনেক দেশে কঠিন নিয়ম করে যেটা পালন করা হয় সেটা হচ্ছে, কনের মাথায় গ্রে-মেটার আছে কি নাই সেটা আলোচ্য বিষয় না, হাইমেন থাকলেই হল, ব্যস। জ্বালানী তেলেভাসা পুরুষপুঙ্গব ব্যাটাদের বোঝাবার সাধ্য কার, হাইমেন অটুট না থাকার হাজারো সাধারণ কারণ থাকে। কেবল শৈশবের দৌড়-ঝাপই যথেষ্ঠ।

আহা, তাই বুঝি মেয়েদের শান্ত-শিষ্ট থাকতে বলা হয়? নইলে মুরুব্বীরা যে বড় নাগ(!) করেন।
এখনও চালু আছে কি না জানি না, ইরাকে ১০ বছর আগেই নিয়ম ছিল, বরের বাড়িতে উঁচু করে ঝোলানো আসল(ভালবাসা-বাসির ফসল) কাপড়ের লাল নিশান। যেন সবাই জেনে যেতে পারে বরের ইস্তারি সাহেবার হাইমেন অটুট।
আমি সেদিন পরম করুণাময়কে ধন্যবাদ দিয়েছিলাম, আমার জন্ম সেই দেশে হয়নি বলে। ওহো, এটা বলিনি বুঝি, চুপিচুপি কতবার যে গডের কাছে বলেছি ফ্রান্স-ট্রান্সে জন্ম নিলাম না কেন, কি মোর অপরাধ!

মো: কদু আর মো: বিড়াল, এইসব নিয়ে আমাদের দেশ যেভাবে এগুচ্ছে, ইনশাল্লা, অচিরেই দেখব বাড়ি বাড়ি কেতন উড়ছে, লাল…।

Friday, July 4, 2008

একটা চর্পট- ১৫ কোটি কুপোকাত!

এও কি সম্ভব? একটা চড় দিয়ে ১৫ কোটি মানুষকে ফেলে দেয়া, তাও একজন মহিলার পক্ষে?
এই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন একজন থাই মহিলা, পিয়াথ সারাপক ডি কস্তা। তাঁকে সহায়তা করেছেন একজন বংগাল, মি. মহিউদ্দিন আহমেদ ফারুকী। এই বংগালের জন্য আমরা গোটা দেশের মানুষ আজ গর্ভিত(!) হয়ে পড়েছি। ওহে ভদ্দরনোক, আমাদের সেলাম নেন গো।


এই ভদ্দরনোক একজন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি), তিনি আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টাপোলের ৩ দিনের একটি আঞ্চলিক সম্মেলন শেষে ব্যাংকক থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন। জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ওই থাই মহিলার সংগে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে মহিলা তাকে চড় মারলে হইচই পড়ে যায়। 
মহিলার এককথা, এই ভদ্দরনোক তার ব্যাগ থেকে মোবাইল চুরি করেছেন। বিমানবন্দরে বাজার জমে যায়। বিভিন্ন সংস্থার লোকজনরা চাপাচাপি করলে বাধ্য হয়ে মি. ফারুকী তার পকেট থেকে ওই মহিলার মোবাইল বের করে দেন।
পুলিশ প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, বিষয়টি দু:জনক।

আহা, এতে বেদনার কি আছে! না হতে রামায়ন একটা কান্ড হল, পুলিশ আর পুরীষ কি একাকার হলো, এ গবেষণা থাকুক। এই মানুষটার কারণে আমরা ১৫ কোটি মানুষ চড়ের দাগ নিয়ে পৃথিবীময় ঘুরে বেড়াব, এ কী কম পাওয়া? সবুজ পাসপোর্টটা যখন বাড়িয়ে দেব, স্যুট পরে থাকলেও কুঁকড়ে যাব, এইরে, গোপনাঙ্গ দেখে ফেলল বুঝি। ফেলুক, তাতে কী আসে যায় ? মানুষ তো এক সময় যন্ত্র ঝুলিয়ে , দেখিয়েই বেড়াত, ঢেকেঢুকে রাখা শিখল এটা আর ক-দিনের মামলা ।

Thursday, July 3, 2008

জজ সাহেব- দ্বিতীয় ঈশ্বর!

পিরোজপুরে আলোচিত এসিড সন্ত্রাস মামলায় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, ৩ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেন, ১৩ জুলাই ২০০৪-এ। হাইকোর্ট সেই রায় বাতিল করেছেন। আপাততদৃষ্টিতে ঘটনা সামান্য।
কিন্তু হাইকোর্ট এও বলছেন, 'এই আদেশ দেয়ার ক্ষমতা ওই জজের নাই'। পরে ওই ওই জজ সাহেব স্বীকার করেছেন, এই রায় দেয়ার এখতিয়ার তার নাই, এটা তার জানা ছিল না। (প্রথম আলো: ০১.০৭.০৮)


ছোট্ট সমস্যা দেখা দিয়েছে, ফাঁসির দন্ড পাওয়া আসামী হাহাকার করা একটা প্রশ্ন করেছেন, সাড়ে চার বছর ফাসিঁর প্রকোষ্ঠে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করেছি, কে ফিরিয়ে দেবে আমার এই সাড়ে চার বছর?
পাগল! ফিরিয়ে দেয়ার কথা আসছে কোত্থেকে এখানে? জজ সাহেব যেখানে বলছেন এটা উনার জানা ছিল না এরপর এই প্রশ্ন করা বাতুলতা মাত্র!
বাস্তবতা হচ্ছে, এই ৩ জনের ফাঁসির আদেশ হয়েছিল যে মানুষটাকে এসিডে চুবিয়ে মারা জন্য ওই মানুষটার ফরেনসিক রিপোর্টে বলা হয়, মৃতের শরীরে এক ফোঁটা এসিডের চিহ্নও ছিল না। অন্য রিপোর্টে জানা যায়, মানুষটাকে জনতা পিটিয়ে মেরেছিল এক মহিলাকে বিবস্ত্র করার জন্য। কোর্টেও এই রিপোর্টগুলোও দেয়া হয়েছিল, জজ সাহেবের এখতিয়ার নাই এটাও বলা হয়েছিল, তারপরও এই ফাসিঁর আদেশ। এবং এই মামলায় রাজনৈতিক চাপ ছিল বলে জানা যায়।
কী আর করা, জজ বলে কথা! জজ সাহেবদের নিয়ে কথা বলে এমন সাহস কার?


হুমায়ূন আহমেদ এক লেখায় জজদের নিয়ে লিখে কঠিন বিপদে পড়েছিলেন।
‘দরজার এপাশে’ উপন্যাসে একটা সংলাপ ছিল এমন, ‘…আগে জাজ সাহেবরা টাকা খেতেন না। এখন খায়। অনেক জাজ দেখেছি কাতলা মাছের মত হা করে থাকে’।
ব্যস, তুমুল প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে গেল। এ নিয়ে ক’জন বিচারপতি হুমায়ূন আহমেদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করেন হাইকোর্টে। ৪৮ জন বিচারপতি একাট্টা হয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন এই লেখকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
আমার খুব অবাক লেগেছিল আমাদের তাবড়-তাবড় লেখকরা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলমের কালি খরচ করতে তকলিফ করেননি। কেবল আসাদুজ্জামান নূর এই লেখকের পক্ষে কলম তুলে নিয়েছিলেন অথচ তিনি কলমবাজি করেন না।
হুমায়ূন আহমেদকে বলা হয়েছিল ক্ষমা চাইলে বিষয়টা মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হবে। কিন্তু তিনি অনড়, তিনি ক্ষমা চাইবেন না। তাঁর মতে, তিনি কোন অন্যায় করেননি।
হুমায়ূন আহমেদের এই সাহস আমাকে মুগ্ধ করেছিল। কেবল হ্যাটস অফ বলে তেলিবেলি আমি ক্ষান্ত হলে বেঁচে যেতাম কিন্তু আমার ৩ টাকা দামের কলম বড় যন্ত্রণা করছিল, শ্লা কলম!
যে পত্রিকায় টানা দেড় বছর লিখছিলাম ওই পত্রিকায় এই প্রসঙ্গে যে লেখাটা দিয়েছিলাম, ছাপা হয়নি। লেখাটা পাতে দেয়ার মত না এটা বললে সমস্যা ছিল না কিন্তু আমাকে বলা হয়েছিল বিষয়টা সংবেদনশীল তাই ঘাঁটাঘাঁটি না করাই উত্তম।
আচ্ছা, সংবেদনশীলের মানে কী? গু টাইপের কিছু , যে এটা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করা যাবে না?
পরে ‘একালের প্রলাপ’ বইয়ে ছাগলা দাড়ি- হুমায়ূন আহমেদ নামে ছাপা হলো। ভাগ্যিস, প্রকাশক লেখাটা নিয়ে আপত্তি উঠাননি। দুগগা-দুগগা!


ওই লেখাটা সংক্ষেপিত করে এখানে দিচ্ছি:
" ছাগলা দাড়ি- হুমায়ূন আহমেদ।
হুমায়ুন আহমেদ লিখেছেন আজকালকার জজ সাহেবরা টাকা খান। তিনি তো আর এটা বলেননি ওই বিচারালয়ের অমুক মাননীয় জজ সাহেব টাকা খান। আমাদের এ নাট্যমঞ্চে বিচারক এক অন্যরকম স্রষ্টা- তাঁর কলমের খোঁচায় অন্ধকার হঠে উঠে আসে আলো। কিন্তু বিচারক তো আর ঐশ্বরীক কিছু না- তিনি প্রথমে মানুষ এরপর বিচারক। সমাজে থেকে কেউ সমাজ বিচ্ছিন্ন থাকতে পারেন না। পার্থক্যটা হলো অনুপাতের। বিচারকরা দুর্নীতি করছেন এরকম অসংখ্য উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। সমপ্রতি প্রকাশিত হয়েছে, দুর্নীতির দায়ে তিনজন বিচারক সাময়িকভাবে বরখাস্ত। বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের এক আদেশবলে এসব অভিযুক্ত জজদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন মহিলা বিচারকও আছেন।

হুমায়ুন আহমেদের পূর্বে অসংখ্য লেখক বিচারকদের নিয়ে লিখেছেন।

রবিঠাকুর ‘বিচারক’ গল্পে লিখেছেন:
"জজ মোহিত মহন দত্ত স্ট্যাট্যুটরি সিভিলিয়ান। তাঁহার কঠিন বিচারে ক্ষীরোদার ফাঁসির হুকুম হইল। হতভাগিনীর অবস্থা বিবেচনা করিয়া উকিলগন তাহাকে বাঁচাইবার জন্য বিস্তর চেষ্টা করিলেন কিন্তু কিছুতেই কৃতকার্য হইলেন না। জজ তাহাকে তিলমাত্র দয়ার পাত্রী বলিয়া মনে করিতে পারিলেন না। না পারিবার কারণ আছে। একদিকে তিনি হিন্দু মহিলাগনকে দেবী আখ্যা দিয়া থাকেন। অপরদিকে স্ত্রীজাতির প্রতি তাঁহার আন্তরিক অবিশ্বাস । …মোহিত যখন কালেজে পড়িতেন তখন বেশভূষায় বিশেষ মনোযোগ ছিল, মদ্যমাংসে অরুচি ছিল না এবং আনুষাঙ্গিক আরও দু একটা উপসর্গ ছিল"।


‘বিচারক’ গল্পের মূলভাব হলো এরকম যে ক্ষীরোদা আজবাদে কাল ফাঁসীকাষ্ঠে ঝুলবে সে চব্বিশ বছর পূর্বে বিধবা বালিকা ‘হেম’ ছিল। ‘বিনোদচন্দ্র’ ছদ্দনামে এক যুবকের ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে বালিকা ‘হেম’ এক কাপড়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এল, ‘ বিনোদচন্দ্র’ যথানিয়মে একসময় বালিকার হাত ছেড়ে দেয়। বিশাল, নির্দয় পৃথিবীতে এই নি:সঙ্গ বালিকা কালে-কালে হল পতিতা ‘ক্ষীরোদা’। দুঃখ-কষ্ট, অভিমান, ক্ষুধায় একসময় গতযৌবনা ক্ষীরোদা তার শিশু সন্তানসহ কূপের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শিশুটি মারা যায়- ক্ষীরোদা প্রাণে বেঁচে গেলেও আইনের হাত থেকে বাঁচতে পারে না। শুরু হয় তার বিচার। যে জজ মোহিত মহন দত্ত এ পতিতাকে ফাঁসীর আদেশ দেন তিনিই ‘বিনোদচন্দ্র’ ছদ্দনামের সেই যুবক।

চালর্স ডিকেন্স ‘অলিভার টুইস্ট’-এ বিচারক সম্বন্ধে লিখেছেন, "মাননীয় বিচারক মি. ফ্যাঙ অত্যন্ত কৃশকায়- গরম মেজাজের লোক। ইনি অশক্ত শরীরে যতোটুকু সহ্য হয় এরচে’ বেশি মদ্যপান করেন। ফল যা হবার তাই হয়- সর্বদা মেজাজ টং হয়ে থাকে। তাছাড়া কদিন পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকায় তার লেখা মামলার এক রায়-এর কঠোর সমালোচনা বেরিয়েছে। পত্রিকাটি লিখেছে, এ পর্যন্ত তিনশোবার বিচারক ফ্যাঙের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়েছে…"।

‘দরজার ওপাশে’ একটি চরিত্র ফুফা, মাতাল অবস্থায় বলেন, "ওটা ছিল অভিনয়। আমি তোমাদের আসাদুজ্জামান নূরের চেয়ে ... ওই ছাগলা দাড়িকে ... হা-হা- হা"।
‘দরজার ওপাশে’ উপন্যাসে লেখক হুমায়ুন আহমেদ প্রস্তাবনায় লিখেছেন: যদিও আমি খুব গুরুত্বের সঙ্গে লেখাটি লিখেছি তবু বিনীত অনুরোধ করছি কেউ যেন গুরুত্বের সঙ্গে লেখাটি গ্রহণ না করেন।
প্রস্তাবনা অংশে বিনীত অনুরোধ করলেই লেখাটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে না এরকম ভাবার কোনো কারণ নেই।
মদমত্ত অবস্থায় এলোমেলো কথাবার্তা, আচরণ করা হবে এটাই মদের গুণ। কিন্তু এই মাতাল ফুফা হুমায়ুন আহমেদের সৃষ্টি। একজন লেখকের কী অপরিসীম ক্ষমতা- বদলে দিতে পারেন গোটা একটা সমাজ ব্যবস্থা, সচেতন করে তুলতে পারেন একটি জনগোষ্টীকে! যে কোনো বিষয়ে লেখার অধিকার তার রয়েছে।


কিন্তু সীমাবদ্ধ ক্ষমতা নিয়ে একজন স্রষ্টা হতে পারেন না। লেখকের সীমাবদ্ধতা, দায়বদ্ধতা, পাঠক, সমাজ, নিজের কাছে- নিজের সৃষ্ট কাঠগড়ায় দাঁড়ানো থেকে লেখক বাঁচতে পারেন না। একজন স্রষ্টা তার সৃষ্টির জন্যে অবশ্যই দায়ী- বিশেষ করে যে সৃষ্টির নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা নেই। সীমাহীন ক্ষমতার অধিকারী বলেই একজন লেখক একটি মাতাল চরিত্র সৃষ্টি করে কারো নাম উল্লেখ করে অপমান সূচক সংলাপ বলাতে পারেন না। এ কুত্সিত রসিকতার অর্থ হলো সীমাহীন ক্ষমতার অপচয়, লেখালেখির বদলে কলম দিয়ে কান চুলকানো!

Wednesday, July 2, 2008

আমাদের কোন পরিচয় নাই।

আটকেপড়া পাকিস্তানিদের নিয়ে সম্প্রতি হাইকোর্টের রায়: "দেশে আটকেপড়া পাকিস্তানিদের মধ্যে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় নাবালক ছিল বা এর পরে যাদের জন্ম হয়েছে, তারা বাংলাদেশের নাগরিক। সমস্ত নাগরিক সুবিধা তাদের প্রাপ্য"।

একটা ওয়েব সাইটে তখন চুটিয়ে লিখছিলাম। আটকেপড়া পাকিস্তানিদের নিয়ে একটা লেখা দিয়ে তোপের মুখে পড়েছিলাম। আফসোস, লেখাটার মূল সুর অনেকেই ধরতে পারেননি।
অনেকে চোখ সরু করে আমার দিকে তাকাতে লাগলেন, আমি রাজাকার টাইপের কেউ বা রাজাকার ভাবাপন্ন। কে জানে, এই খোঁজও হয়তো লাগাতে শুরু করলেন, আমার নেটের বিল কারা দেয়। সংসার চালাবার পেমেন্ট মগবাজার থেকে আসে কি না?

অনেকের প্রতিক্রিয়া ছিল তীব্র। এদের মধ্যে কিছু বৈদেশি ভায়াদের প্রতিক্রিয়া ছিল অনেকটা এই রকম, যেন সূর্যের চেয়ে বালির উত্তাপ বেশি। মন্তব্যগুলোর প্রিন্ট-আউটগুলো অনেকদিন পর আবারও পড়লাম। আফসোস, আঙ্গুরের রস সহযোগে সু-নিয়ন্ত্রিত ক্যালরিসম্পন্ন খাবার খেয়ে, নিরাপদ জীবন বেছে নিয়ে হিল্লি-দিল্লি ঘুরেও এদের দৃষ্টি কী সংকুচিত‍!
নামোউল্লেখ না করে একজনের খানিকটা সহনীয় মন্তব্য তুলে দেই। এখানকার শিশুদের নিয়ে মন্তব্য করা হয়েছে এমন, ‘এই জারজ সন্তানদের দায়িত্ব আমরা কেন নেব, জারাজদের সঙ্গে এদেরকেও মেরেকেটে সাফ করে ফেলতে হবে; সাপের বাচ্চা সাপই হবে…’।

এইসব নব্য মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ভারী মুশকিল, ইনাদের আবেগ চুঁইয়ে দেশটায় বন্যা হয়ে যাওয়ার দশা। দুধের দুধ, পানির পানি- কে রাজাকার কে মুক্তিযোদ্ধা এরা ঠিক করে দেবেন। আমরা কিভাবে হাঁটব, কার কার সঙ্গে হাত মেলাতে পারব, কার সংগে খিচুড়ি খেলে পাপ হবে না এইসব এরা ঠিক করে দেবেন! আহা, কী কষ্ট গো আপনাদের, কারা কারা জানি আপনাদের স্কন্ধে এই জটিল দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছে। যাগ গে, এরা দেশের কাজ করুন আমরা কিছু অকাজই না-হয় করলাম।
ওই লেখাটা অনেক বড়, খানিকটা এখানে তুলে দিচ্ছি:

“একটি পাখির বাসা আছে
একটি গরুর গোয়াল আছে
একটি ঘোড়ার আস্তাবল আছে
একটি খরগোসের গর্ত আছে
সবাই বলে মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব
আমরা ফিলিস্তানি, আমরা মানুষ(?)
আমাদের কোন আবাসভূমি নাই।”
(ফিলিস্তানি কবি মাহমুদ দারবিশ)
উপরে উল্লেখিত কবিতাটি যখন ফজলে লোহানী আবেগঘন গলায় আবৃতি করছিলেন, ফিলিস্তানিদের উপর একটা প্রতিবেদন দেখাবার পর; আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল, বুক ভেঙ্গে কান্না আসছিল।

সাধারণভাবে এদের বিহারী বলা হলেও…বিহারী একটি হিন্দি শব্দ। আক্ষরিকার্থে এর অর্থ দাঁড়ায় বিহারের অধিবাসি। বিহার ছাড়াও ভারতের উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, উড়িষ্যা, হায়েদ্রাবাদসহ বিভিন্ন প্রদেশের মুসলিমরা এসেছেন এখানে (এদের অনেকের ভাষা ছিল হিন্দি)।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর তারা দাঙ্গার ভয়ে চলে আসেন এখানে। পাকিস্তানি সরকার এদের পরিচয় দেয় মোহাজির বা রিফিউজি। ভারত থেকে দাঙ্গার ভয়ে পালিয়ে আসা এই অভাগা জনগোষ্ঠি রাষ্ট্র হারায়। অথচ ১৯৫১ সালের জেনেভা কনভেশন অনুসারে এদের রিফিউজি বলার উপায় নেই।


…১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিহারিরা পাকিস্তানি সামরিক জান্তার পক্ষ নেয়। বাঙ্গালী হত্যায় এদের ভূমিকা ইতিহাস স্বীকৃত। তবে এদের মধ্যে অনেকেই বিহারি বা হিন্দি, উর্দুভাষী সরাসরি অংশ নিয়েছেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধে! শহীদ হয়েছেন অনেকে। অনেক বিহারী মুক্তিযোদ্ধা নিদারুন কষ্টেও এই দেশ ছেড়ে যাননি। (উদাহরণ বিহারী মুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীক, সৈয়দ খান। পরিবার-পরিজন সবাই তাঁকে ফেলে চলে গেছে এই দেশ ছেড়ে। কিন্তু তিনি এই মাটির মায়া ত্যাগ করতে পারেননি। তাঁর সাফ কথা, 'এই দেশকে হামি কবুল করিয়ে লিয়েছি'।)
আবার ২৫ মার্চের গণহত্যার প্রতিবাদে বাঙ্গালীরাও হত্যা করেছে হাজার হাজার বিহারীকে।


ক্যাম্প ঘুরে দেখা গেছে তাদের কেউই পাকিস্তানে ফিরে যেতে চান না। অথচ এই ক্যাম্পে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এরা। ৮ ফুট বাই ৮ ফুট ঘরের অমানবিক পরিবেশে বাস করেন একেকটি পরিবার। ক্যাম্পের টয়লেট এবং পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা শোচনীয়। শিক্ষার কোন পরিবেশ নেই অথচ বাংলাদেশ সরকার ১৯৯০ সালে জাতিসংঘ সনদে সাক্ষর করেছে। সেই অনুসারে শুধু বাঙালীই নয়, এই ভূখন্ডের সব শিশুর শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের।

যুদ্ধশেষে আমরা পেয়েছি একটি নতুন দেশ, নতুন পতাকা, একটি পরিচয়! আর বিহারিরা পরিচয়হীন। আজও এদের কোন পরিচয় নাই। এরা কি বিহারি, রিফিউজি, আটকেপড়া পাকিস্তানি নাকি বাংলাদেশি? এলিয়েনও তো না, তাইলে কী? প্রত্যেকটা জিনিসের একটা নাম থাকে, নরকেরও একটা নাম আছে। আমি মনে করি এদেরও একটা নাম থাকা প্রয়োজন।

সুদূর সাইবেরিয়া থেকে যেসব পাখিরা এ দেশে অল্প সময়ের জন্য আসে এদের নিয়েও আমরা ভাবি, কাতর হই কিন্তু আমাদের চারপাশের মানব-সন্তান নিয়ে তিলমাত্র ভাবব না এ কোথাকার মানবতা? যুদ্ধক্ষেত্রে চরম শত্রুকেও তার ন্যূনতম অধিকার দেয়া হয় অথচ যুদ্ধের বাইরে ন্যূনতম ভাবনাও থাকবে না, এর কোন মানে হয়!


আইনের ফাঁকতালে গোলাম আজম, নিজামী গং এ দেশের নাগরিকত্ব পাবেন, আমাদের মাথার উপর বনবন করে ছড়ি ঘোরালে কোন সমস্যা নাই। বয়স্ক একজন মুক্তিযোদ্ধাকে লাথি মারার অপরাধে এই মানুষটার গোপনাঙ্গের কেশও কেউ স্পর্শ করতে পারেনি। এতে সমস্যা নাই! কেবল সমস্যা এই ক্যাম্পের অবোধ শিশুদের বেলায়। কেন এরা নাগরিকত্ব পাবে না- এদের জন্ম তো এই দেশেই?

খানিকটা ঋণ: জব্বর হোসেন, মহিউদ্দিন নিলয়: সাপ্তাহিক ২০০০।