প্রথম আলোর শ্লোগান ‘চোখ খুললেই প্রথম আলো’। এটা অন্য পত্রিকার বেলায়ও প্রযোজ্য।
শ্লোগানটা মন্দ না- সকালে চোখ খুলে পত্রিকায় চোখ না বুলালে অনেকের হাগু হয় না। যেদিন পত্রিকা বের হয় না সেদিন কি হয় এটা নিয়ে খানিকটা চিন্তায় আছি। হাগুর বিদ্রোহ বিষয়টা আনন্দের না!
পত্রিকাঅলারা আমাদেরকে প্রথম আলো দেখাবেন, না শেষ আলো সেটা তারাই ঠিক করেন- এতে আমাদের কোন হাত নাই! পত্রিকাওয়ালারা পণ করেছেন দুনিয়ার যাবতীয় মন্দ বিষয়গুলো প্রথম পাতায় ফলাও করে আমাদেরকে ঘটা করে সক্কাল সক্কাল জানাবেন। দিনের শুরুতেই মন্দ বিষয়, হতাশা নিয়ে আমাদের দিন শুরু। এ থেকে আমাদের নিস্তার নাই।
একটু লক্ষ করলেই দেখা যাবে প্রথম পাতায় হত্যা, মৃত্যু, খুন-খারাপি আর নামকরা অপদার্থদের অশ্লীল অমৃতবাণী। অশ্লীল বললাম এ কারণে, বছরের পর বছর ধরে কেউ কারো মুখদর্শন করতে রাজি না কিন্তু এখন বেকায়দায় পড়ে বলছেন, গণতন্ত্রের খাতিরে, মুখ কেন গোটা শরির দর্শনেও আপত্তি নাই, আলোচনায় বসতে মালকোঁচা মেরে তৈরি হয়ে আছেন!
ধরা যাক, আজকের প্রথম আলো (০৯.০৭.০৮)। প্রথম পাতায় অর্ধপৃষ্ঠা জুড়ে আছে ‘ব্যবসা জমজমাট, যাত্রীরা জিম্মি’। ঢাউস ২টা ছবিসহ সি এন জি স্কুটার, ক্যাবের হা বিতং করে বিশাল কাহিনি। এটা তো বিশেষ সংখ্যাও দেয়া যেত। নিদেনপক্ষে পেছনের পাতায়, ভেতরের পাতায় দিলে সমস্যা ছিল না। নাকি এরচেয়ে জরুরি সংবাদ দেয়ার মত ছিল না?
আজকেই শেষ পাতায় সিংগেল কলামে একটা খবর ছাপা হয়েছে হেলাফেলা ভঙ্গিতে। তুচ্ছ একটা খবর- ছাপা যে হয়েছে এই তো ঢের!
ঘটনা সামান্য। দিনাজপুরের ১৯ বছরের শাহিদ হোসেন নামের এক যুবক জ্বালানি ছাড়াই বিদ্যুত উত্পাদনের কৌশল আবিষ্কার করেছেন।
তিনি সংবাদ সম্মেলন করে হাতেনাতে একটি প্লান্ট থেকে জ্বালানি ছাড়াই ৩০ কিলোওয়াট বিদ্যুত উত্পাদন করে দেখান। তাঁর দাবী, এটা ১০০ ভাগের ১ ভাগ কম খরচে করা সম্ভব এবং দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করা সম্ভব।
সম্মেলনে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ব্যতীত প্রায় ১ হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে এমন কেউ কি ছিলেন না যিনি এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ? যিনি বলতে পারতেন শাহিদ প্রমাণ করে দেখিয়েছেন? কারণ পত্রিকায় ছাপা হয়েছে শাহিদ দাবি করেছেন। দাবি আর প্রমাণ এই দুইয়ে যোজন দুরত্ব। অনুমান করি, বিশেষজ্ঞ স্যাররা দেশ উদ্ধারে ভারী ব্যস্ত বিধায় এমন তুচ্ছ বিষয় নিয়ে তাদেঁর মুল্যবান মাথা খরচ করার মত সময় ছিল না! আর ঢাকা নামের আবর্জনার শহর থেকে বাইরে পা ফেলতে এদেঁর বড় আলস্য । এর সংগে যোগ হয় মফ:স্বলের প্রতি নিদারুণ তাচ্ছিল্য- গোদের ওপর বিষফোড়া!
এই অভাবনীয় কান্ড করেছেন শাহিদ নামের যে মানুষটা, তাঁর ছবি ছাপার প্রয়োজন বোধ করেনি প্রথম আলো।
অথচ আজই প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছে ডালের ছবি। ‘প্রতিদিনই বাড়ছে সব ধরনের ডালের দাম’ সংগে ডালের ছবি। ডালের ছবি না ছাপালে আমাদের জানাই হত না ডাল দেখতে কেমন হয়- চালের মত, নাকি বুদ্ধিজীবীদের খালের মত!
No comments:
Post a Comment