এক সময় আমার মনে হলো, আরে, আমি এটা করছিটা কি! ময়নাটার বিশাল আকাশ ছিনিয়ে তাকে ছোট্ট একটা খাঁচায় আটকে ফেলেছি। মানুষ হিসাবে করছি ক্ষমতার অপচয়!
কষ্টে-দুঃখে আমার উদভ্রান্ত অবস্থা। নিজেকে পোকা-পোকা মনে হচ্ছিল। এ অন্যায়-এ অন্যায়! আমি নিজের চোখে চোখ রাখতে সাহস পাচ্ছিলাম না।
সিদ্ধান্ত নিলাম, ময়নাটাকে ছেড়ে দেব তার আকাশ তাকে ফিরিয়ে দেব। হায়, সময়কে কে ফিরিয়ে দেয়, না দিতে পারে? আমার সুহৃদরা নিষেধ করলেন, এখন যদি ময়নাটাকে ছেড়ে দেয়া হয়, অন্যায়ের মাত্রাটা বাড়বে বৈ কমবে না। অনেক কটা বছর খাঁচায় আটকে ময়নাটা অনেকখানি ভুলে গেছে তার সহজাত প্রবৃত্তি। সারভাইভ করা তার জন্য কঠিন হয়ে পড়বে, কাক ঠুকরে মেরে ফেলবে নিশ্চিত।
সিদ্ধান্ত নিলাম, ময়নাটাকে ছেড়ে দেব তার আকাশ তাকে ফিরিয়ে দেব। হায়, সময়কে কে ফিরিয়ে দেয়, না দিতে পারে? আমার সুহৃদরা নিষেধ করলেন, এখন যদি ময়নাটাকে ছেড়ে দেয়া হয়, অন্যায়ের মাত্রাটা বাড়বে বৈ কমবে না। অনেক কটা বছর খাঁচায় আটকে ময়নাটা অনেকখানি ভুলে গেছে তার সহজাত প্রবৃত্তি। সারভাইভ করা তার জন্য কঠিন হয়ে পড়বে, কাক ঠুকরে মেরে ফেলবে নিশ্চিত।
ওই সময় তাদের এ পরামর্শ আমার কাছে যথার্থ মনে হয়েছিল। ময়নাটার দিকে তাকাই আর নিজেকে বড়ো অপরাধী মনে হয়, ক্রমশ আমি মানুষ থেকে পশুতে রূপান্তরিত হই। কখনও কখনও ময়নাটার প্রতি তীব্র রাগ হতো, কি হয় তোর মরে গেলে, মরে গিয়ে আমাকে উদ্ধার কর না, বাপ। কিন্ত আমার মুখে ছাই দিয়ে ময়নাটাও বেঁচে রইল বছরের পর বছর ধরে। আমার সহ্য হচ্ছিল না। একদিন খাঁচাটা খুলে দিলাম। ময়নাটা কিন্ত পালাবার চেষ্টাও করেনি। জবুথবু হয়ে কি এক চোখে তাকিয়ে থাকে। জানি না কি ছিল তার চোখে? হয়তো এমন, দীর্ঘ দিনের মমতার হাতটা কি তুমি ছেড়ে দেবে, পারবে?
এক সময় ময়নাটা মরে গেল। কেঁদেছিলাম, প্রিয়জন হারানোর শোকে। চশমার কাঁচ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল, থেকে থেকে। বুকটা কেমন ভারী হয়ে ছিল নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। হায়রে অমানুষ মানুষ, বিচিত্র এক প্রাণী বটে!
চোখের জলে ভাসতে ভাসতে মাটি খুড়ছিলাম মাটি দিয়ে ঢেকে দেব বলে। যারা এই কান্ডটা জেনেছেন, তাদের কী তীব্র শ্লেষ, ইশ-শ, পাখিকে আবার কবর দেয়, ব্যাটা মুরতাদ!
আমি জিজ্ঞেস করি, ভালমানুষদের, কি গো, ভালা মাইনষের ছেইলেরা, আপনার সব জায়গায় ধর্মকে টেনে নিয়ে আসেন কেন? টয়লেটে একজন যাবে এখানেও দোয়া পড়বে হবে, আজিব!
আমি জিজ্ঞেস করি, ভালমানুষদের, কি গো, ভালা মাইনষের ছেইলেরা, আপনার সব জায়গায় ধর্মকে টেনে নিয়ে আসেন কেন? টয়লেটে একজন যাবে এখানেও দোয়া পড়বে হবে, আজিব!
যে প্রাণটা আমার সঙ্গে বছরের পর বছর থেকেছে, আমাকে দেখলেই মায়াভরা কন্ঠে শিষ বাজিয়েছে, নাম ধরে ডেকেছে, মৃত্যুর পর তাকে আমি ফেলে দেব আর কাক ঠুকরে ঠুকরে খাবে। আমি নির্বিকারচিত্তে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখব! না হে, ভালমানুষের সন্তানেরা, আমি আপনাদের মতো ভালমানুষ হতে চাই না গো ।
ক-দিন পুর্বেও একটা অ্যাড দেখাত টিভিতে। এ দেশের কিছু সেলিব্রেটি টাইপের মানুষ আসতেন, বিপাশা, বাপ্পা আরও কে কে জানি। খুব পোজ নিয়ে বলতেন, 'আমি কোন দিন কোন শিশুর গায়ে হাত তুলিনি, আপনারাও শিশুর গায়ে হাত তুলবেন না'। তাদের আবেদন, সদিচ্ছাটা উত্তম।
কিন্তু এদের এই ফাজলামী দেখে আমার রাগে গা জ্বলে যেত। আমার প্রশ্ন, এখানে যাদের বেছে বেছে আনা হচ্ছে এরা কি শিশুর গায়ে হাত না তোলার দলে? নাকি কেউ সেলিব্রেটি হয়ে গেলেই কি এরা একেকজন চলমান মহাপুরুষ বনে যান? ভাবখানা এমন, উদরে এরা এক পেট আবর্জনার বদলে সুস্বাদু হালুয়া নিয়ে ঘুরে বেড়ান! যেন সেলিব্রিটি মাত্রই মার গর্ভ থেকে দেশ-দশ নিয়ে মাথা ঘামানো শুরু করে দেন!
হুম, ভাগ্যিস আমার সেলিব্রেটি হওয়ার যোগ্যতা নাই, বাই এনি চান্স, আমাকে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় নিলে আমি বলতাম, হুঁ, আমি শিশুর গায়ে কখনও না কখনও হাত তুলেছি। ভয়াবহ ভুল করেছি। যাদের প্রতি এ অন্যায়টা করেছি তাদের কাছে করজোরে মাফ চাই এবং এ ভুল আমি আর করবো না।
No comments:
Post a Comment