মুক্তচিন্তার পত্রিকায় তেলতেলে উপ-সম্পাদক কানসাট নিয়ে ১০১ লাইনের অখাদ্য কবিতা লেখে, কবিতার জন্য তখন সমুদ্র গুপ্তদের খুঁজে পাওয়া যায় না। আমরা নিবোর্ধ পাঠক তা গিলতে বাধ্য হই। একজন সমুদ্র গুপ্ত, মায় পত্রিকায়ও চাকুরির পান না।
একজন সমুদ্র গুপ্তকে ৫৫-৫৬ বছর বয়সে ফেরিওয়ালা হতে হয়। স্বপ্নের ফেরিওয়ালা না, ওষুধের ফেরিওয়ালা। জীবনের তাগিদে। আরেকটু গুছিয়ে বললে ওষুধের হকার, প্রচলিত 'ক্যাম্বেসার'।
পেট থেকে কান্না এসে জমে চোখে। হায় পেট-হায় জীবন! এই একটা জায়গায় প্রতিভার কী-ই বা দাম! কবির কান্না চশমার মোটা কাচেঁর আড়ালে হারিয়ে যায়। ১৫ কোটি মানুষের মধ্যে কাউকেই খুজেঁ পাওয়া যায় না কেউ কবির হাত ধরতে পারে।
আমার মাথায় দাউদাউ করে আগুন জ্বলে। কিন্তু এই অসভ্য ইচ্ছাটাও জাগে, যদি দেখে যেতে পারতাম সমুদ্র গুপ্ত একজন চালু হকারের মত বাঁদর নাচিয়ে ওষুধ বিক্রি করছেন। লোকজন গোল হয়ে বাঁদরের তামাশা দেখছে, আমিও। দেখছি বানরটাকে, দেখছি সমুদ্র গুপ্তকে, দেখছি নিজের পশুত্বটাকে। বেশ হত, অন্তত এই দৃশ্য দেখার পর আর আমি কখনই নিজেকে মানুষ বলে দাবি করতাম না। খোদার কসম।
আমাদের চাওয়াটা তো খুব বেশি না, যে মিরোশ্লাফ হোলুবের মত সমুদ্র গুপ্তকে মোটা অংকের স্কলারশীপ দেয়া হবে, বছরের পর বছর ধরে। হোলুব ১ বছরে ১টা কবিতা লিখবেন যে কবিতা ঘষামাজা করতে করতে লাগবে আরও বছরখানেক। মানলাম আমাদের সীমাবদ্ধতা কিন্তু ১৫ কোটি মানুষের দেশে কেন সমুদ্র গুপ্তকে ফেরিওয়ালা হতে হবে? একজন রুদ্র বসার জন্য ১টা চেয়ার পাবে না, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখতে লিখতে হারিয়ে যাবে! কেন?
এই বিচিত্র দেশে আমরা অপেক্ষা করি, কখন এঁরা মুমূর্ষু হবেন তখন আমাদের যাবতীয় দরদ উথলে পড়বে। তখন আমরা ঘটি নিয়ে বেরিয়ে পড়ি, পত্রিকায় পত্রিকায় সাহায্যের আবেদন করি, কনসার্ট করি। শালার দেশ!
সমুদ্র গুপ্ত, আপনার কেন এই করুণা নেয়া, দেশে কী চ্যারেটি, সরকারি হাসপাতালের অভাব ছিল? কেন তীব্র অভিমান নিয়ে না বলতে পারলেন না, যাব না?
কেন আপনার অচল কবিতাকে নতুন করে লিখলেন না: ...আমি তাদের কাছাকাছি থাকি না, যাদের ঘামের গন্ধে গা গুলায়…।
No comments:
Post a Comment