মুনসুর আলী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। অখ্যাত লেখক নামের এই মানুষটার জন্য কী মায়াই না হচ্ছে, এই মায়ার উত্স কী কে জানে!
মুনসুর আলী নিজেই নিজের উপর বিরক্ত- এই সব কী, এই সবের মানে কী! উঁহু, এ ভূমিকায় ওঁকে মোটেও মানাচ্ছে না। পত্রিকা অফিসের লোকজনরা আঁচ করতে পারলে হাসাহাসি করবে। তাচ্ছিল্য করে বলবে, হায় মুনসুর, হায়, তুমি এখনও প্রফেশনাল হলে না। তুমি দেখি পত্রিকা ডুবিয়ে ছাড়বে।
মুনসুর আলী আসলে একটি চালু দৈনিকের সাহিত্য পাতার সম্পাদক। কতটুকুই বা ওঁর ক্ষমতা- ওঁ তো আর পত্রিকার সম্পাদক না। আসলে এখন সমস্ত ক্ষমতা পত্রিকা মালিকের। বড়ো বিচিত্র ব্যাপার- ব্যবসায়ীরাই সব পত্রিকার মালিক হয়ে বসে আছেন! পত্রিকা মালিক ত্রাণ দিচ্ছেন এটা হররোজ ঘটা করে ছাপা হবে। ত্রাণ বন্ধ তাতে কী- রক্ত দান কর্মসূচীতে তিনি যে মূল্যবান রক্ত দান করছেন এটা কী ছাপা না হয়ে যায়?
মুনসুর আলীর সাক্ষাত্কার নেয়ার কথা ছিল যে লেখকের তিনি একজন অ-জনপ্রিয়, অখ্যাত লেখক । খুব জনপ্রিয় লেখক হলে সমস্যা ছিল না। যাদের বইয়ের কপি নিঃশেষ হয়ে যায় বই বের হওয়ার পূর্বেই।
জনপ্রিয় লেখক, বড় জটিল জিনিস! জনপ্রিয় এমন একজন লেখক, যার বই এখনও বেরই হয়নি অথচ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন চলে এসেছিল প্রথম মুদ্রণ নিঃশেষিত দ্বিতীয় মুদ্রণও প্রায় শেষ হয় হয়। সন্তান প্রসবের পূর্বেই সন্তানের পিতা! যে এ নিউজ করল তার চাকরি যায় যায়।
বা যারা নিজের বইয়ের বিজ্ঞাপন নিজেই দিয়ে লিখে দেন প্রথম মুদ্রণ শ্যাষ, দ্বিতীয় মুদ্রণের ছাপার কাজ চলিতেছে।
মুনসুর আলী পূর্ণদৃষ্টিতে এই লেখক নামের প্রাণীটির দিকে তাকালেন। প্রাণীটি কাঠের টেবিলে মাথা নীচু করে লিখে যাচ্ছে, যেন বা সে গোটা পৃথিবীটা এই কাঠের টেবিলটায় আটকে ফেলেছে। শব্দের ইট একের পর এক সাজিয়ে অন্য ভুবনের এক ইমারত গড়ছে।
মুনসুর আলী ভেবে পাচ্ছেন না একে কি করে বলবেন এঁর সাক্ষাত্কার ছাপা হচ্ছে না। ছাপা হচ্ছে এক টিভি স্টারের, যে কিনা মাত্র দু-একটা বিজ্ঞাপন করে স্টার হয়ে গেছে। সম্পাদকের ধারণা, ওই টিভি স্টারের বিজ্ঞাপনটা পাবলিক ভাল খাবে, কচকচ করে খাবে।
মুনসুর আলী কথাটা বলবেন, ঠিক সেই মুহূর্তে লেখক নামের প্রাণীটি মুখ তুলে তাকাল। কী তীব্র সেই চোখের দৃষ্টি! অ-জনপ্রিয় লেখক পাঁচ আঙ্গুলে আকড়ে ধরা ভয়ংকর অস্ত্রটা তাক করলেন। কলম নামের কী হাস্যকর একটা অস্ত্র অথচ মুনসুর আলীর গা কাঁপছে।
*'সাদাকে কালো বলিব' থেকে
সহায়ক লিংক: http://www.ali-mahmed.com/2009/03/blog-post_21.html
No comments:
Post a Comment