প্রায়শ ভাবি, আমরা যারা ভুল রোলে অভিনয় করি, নিতান্ত বাধ্য হয়ে; এদের কাছ থেকে খুব বেশি আশা করা বাতুলতা মাত্র। এদের মস্তিষ্ক, পায়ু, উদর একাকার হয়ে যায়।
চাকুরি সংক্রান্ত বিষয়, ভাইয়ের জন্য ।একজন সদাশয় মানুষের রেফারেন্সে এখানে আসা। চাকুরিদাতার অপেক্ষা। বসে থাকা, অনেক ফানির্চারের সঙ্গে মিলেমিশে ফার্নিচার হয়ে।
গুলশান। গাড়ির শো-রুম। এখানে ঘুষখোর, দূর্নীতিবাজদের বখা ছেলে-মেয়েদের স্যার-ম্যাম বলে বলে মুখে ফেনা তুলে আলগোছে গছিয়ে দিতে হবে ঝাঁ চকচকে একখানা গাড়ি।
অবশেষে তিনি এলেন। তাঁর খাস কামরা। টুকটাক উত্তর দেয়ার পাশাপাশি প্রশস্ত কামরায় চোখ বুলানো। ভদ্রলোকের সামনে রাখা এলসিডি মনিটরে অসংখ্য চলমান ছবি। ভালই তো, ইনি তাহলে একই সঙ্গে অনেকগুলো চ্যানেল দেখেন।
অরি আল্লা, ঘটনা তো এটা না, এটা তো লুকানো অসংখ্য সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা ছবি! মাবুদ, মনের ভুলে কেউ গোপনাঙ্গ চুলকালে এটাও যে কেউ আয়েশ করে বসে বসে দেখবে আর হি-হি করে হেসে গড়িয়ে পড়বে?
বিষয়টা মেনে নেয়া কঠিন কিন্তু এই অসভ্য কান্ড এই দেশেই সম্ভব। এখানে কে এটা নিয়ে গলাবাজি করবে যে এটা অবশ্যই আগন্তককে সতর্ক করা আবশ্যক যে গোপন ক্যামেরা চালু আছে। এবং ক্যামেরা যে চালু আছে তার একটা চিহৃ প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে না-দেয়াটা কঠিন অন্যায়।
ভদ্রলোক দুপুরের খাবার খাওয়াচ্ছেন। শুকরিয়া। এবং এটাও স্মরণ করিয়ে দিতে ভুলছেন না, কার রিজিক কোথায় থাকে কে বলতে পারে, এই যেমন আমিই কী জানতাম আজ দুপুরের আমার রিজিক এখানে? হুম, তা বটে। আরেকটা বিষয় হতে পারে এটাও ইন্টারভিউ-এর একটা অংশ।
ভদ্রলাক একনাগাড়ে কথা বলেই যাচ্ছেন। সৌদি আরব নিয়ে খুবই উচ্ছ্বসিত। আমি নিরীহ মুখে বললাম, ওখানে মুতওয়া (পুলিশ) ঘরে ঢুকে এক বাঙ্গালিকে ধরে নিয়ে গেছে, সে বারবার বলছে আমি পাক না, কে শোনে কার কথা। জোর করে থানায় নামায পড়িয়ে বন্ড সই রেখে তবে ছেড়েছে।
সবটা মনোযোগ দিয়ে শুনে কাজটা যথার্থ হয়েছে বলেই ভদ্রলোক সায় দিলেন এবার তিনি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এই দেশে মাতামাতি করায় খুবই উষ্মা প্রকাশ করলেন। ওঁর ধারণা, কবির মর্যাদা দিলে নজরুল ব্যতীত আর কাউকে দেয়া চলে না। দরাজ গলায় আবৃত্তি করলেন, 'কবর দিও আমায় মসজিদের পাশে...'।
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম, কবি নজরুল ইসলাম যে সমস্ত লেখা লিখে গেছেন এখনকার সময়ে নজরুল এর দশ ভাগের এক ভাগ লেখাও লিখলে কবির বাবরি চুল বাতাসে উড়ত। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে বাবরি চুলের পেছনে কবির কল্লা থাকত [১]!
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম, কবি নজরুল ইসলাম যে সমস্ত লেখা লিখে গেছেন এখনকার সময়ে নজরুল এর দশ ভাগের এক ভাগ লেখাও লিখলে কবির বাবরি চুল বাতাসে উড়ত। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে বাবরি চুলের পেছনে কবির কল্লা থাকত [১]!
তিনি বলেই যাচ্ছেন, এখানে কাজের সময় সকাল সাড়ে আটটা থেকে রাত সাড়ে আটটা। বেশ। মধ্যে খাওয়া, নামাযের ব্রেক। খাওয়ার ব্যবস্থা এখানেই। বেশ। এবার তিনি চেষ্টাকৃত গম্ভীর হলেন, এখানে নামায কিন্তু অবশ্যই পড়তে হবে, এই বিষয়ে কিন্তু কোন ছাড় নাই।
হায় আকাশ! সকাল থেকে রাত- এখানে পড়ে থাকলে আকাশ দেখার সুযোগ কই? আচ্ছা, না-হয় আকাশ হারিয়েই গেল। পেটে আগুন নিয়ে আকাশ তো আর চিবিয়ে খাওয়া যায় না। বাদ আকাশ! কিন্তু নামাজ পড়ার আদেশ? এটাও তাহলে চাকুরির একটা শর্ত-অংশ!
আমি কখনও ঈশ্বর দেখিনি, এত কাছ থেকে তো প্রশ্নাতীত- তাহলে ঈশ্বরের সান্নিধ্যে ঝলসে যাব যে!
আজকাল বাড়ির গেটে ‘বিষধর সাপ হইতে সাবধান’ সাইনবোর্ড লাগাবার চল শুরু হয়ে গেছে। কালে কালে দেখব 'রাজাকার হইতে সাবধান' এমন সাইনবোর্ডও চলে এসেছে! ‘ঈশ্বর হইতে সাবধান’ এমন সাইনবোর্ডও ঝুলিয়ে দেয়া জরুরী, তাইলে আমরা বেঁচে যাই...।
লিংক:
১. কাজী নজরুল ইসলাম: https://www.ali-mahmed.com/2015/05/blog-post_25.html
2 comments:
অনেক ভালো লাগল। :)
ধন্যবাদ আপনার সহৃদয় মন্তব্যর জন্য।
Post a Comment