বছরটা বড় বাজে গেল, বড় বাজে। আমার শক্ররও যেন এমন সময় না আসে। বাসস্থান-আহার, এইসব মৌলিক চাহিদাগুলোর সমস্যা হলে দেশ-দশ বঙ্গোপসাগরে গেল না লোহিতসাগরে, এই খোঁজে কার কী দায় পড়ে!
কেমন করে নিজের হাতের আঙ্গুলগুলো কুঁকড়ে আসে, কেমন করে চেনা মানুষগুলো অচেনা হয়ে যায়? জনান্তিকে বলি, বাহে, একদা আমিও ছিলাম তোমাদের লোক! আমিও তাদের সাথে সাথে বিশ্বাস করি, তারা শান্ত পুকুর, ঢেউ উঠবে না কোনদিন? বেশ-বেশ। তারাও আমাকে বিশ্বাস করিয়ে ছেড়েছে, বাতিল পুতুল একটা। তাইতো দেখছি...!
একজন মানুষ যখন নিজের উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলে তখন ওই মানুষটার সঙ্গে একটা গলিত শবের কোন পার্থক্য থাকে না।
২০০৯ নামের একটা ভোরের অপেক্ষায়। আসলে ভোর হয়, ভোরকে কেউ আটকাতে পারে না কিন্তু আফসোস, কেউ কেউ ভোর দেখার আগেই হাল ছেড়ে দেয়। আমার প্রবল বিশ্বাস, আমি তাদের মধ্যে একজন না...।
এরশাদ-খালেদা জিয়ার সময় যেভাবে লেখা গেছে, ক্যারিকেচার, কার্টুন আঁকা গেছে আওয়ামী শাসনামলে সেটা ছিল স্রেফ একটা স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন! একদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (!) শহিদুল আলমকে নগ্ন পায়ে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেল। কোথায় নিয়ে গেল সেটা আবার অনেক পরে জানা গেল। কোর্টে আবার 'মাই লর্ড' বিচারক পুলিশকে জিজ্ঞেস করছেন, পুলিশ আসামীর (শহিদুল আলমের) ফোনের পাসওয়ার্ড নিয়েছে কিনা, সেদিনই লেখালেখির কফিনে পেরেক ঠোকা হয়ে গেল...!
Wednesday, December 31, 2008
২০০৯ নামের একটা ভোরের অপেক্ষায়।
বিভাগ
ইচ্ছা
Monday, December 29, 2008
মুসলমানরা টেররিস্ট হয়ে থাকলে, এরা কারা?
এই গ্রহের সমস্ত টেররিস্ট নাকি মুসলমান, তা আর বলতে! দাড়ি, টুপি এখন ভারী সন্দেহজনক চরিত্র, বাইরের লোকজনরা চোখ সরু করে তাকিয়ে থাকে। এয়ারপোর্টে এদের জন্য বাড়তি খাতির, উঠবস করাতে করাতে কাল ঘাম বের করে ফেলে, ইচ্ছার বিরুদ্ধে হাগিয়ে ছাড়ে।
সম্প্রতি ইসরায়েল গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে প্রায় ৩০০ বে-সামরিক মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করল এটাকে কী খুন বলা হবে না, না?
ওহ, এরা তো আদম-সন্তান না। যারা খুন হল তাদের প্রিয়জন, এরা কী ধরেই নিয়েছে যুগের পর যুগ ধরে এদেরকে ইসরাইলিরা বিষণ্ন বোধ করলেই পাখির মত গুলি করে মারবে!
তাই কী গাজার অধিবাসিরা অনেকখানি রোবট হয়ে পড়েছে? হাসপাতালের অবর্ণনীয়, বীভত্স দৃশ্য দেখে যখন আমাদের পাগল-পাগল লাগে তখন গাজাবাসীরা এরই মধ্যে দ্রুততার সঙ্গে তাদের স্বজনদের পোশাক ও অন্যান্য সামগ্রী দেহ থেকে অবলীলায় খুলে নিয়ে যাচ্ছেন। নির্মম বাস্তবতা।
পাশাপাশি এই শিকার-শিকার খেলায় ইসরাইলিদেরকে, এমন কী তাদের শিশুদেরকেও করে তুলছে আমোদপ্রীয়, খেলুড়ে।
আহা, ওদের শিশুরা কত প্রাণোচ্ছল! ইসরাইলী শিশুরা অপার আনন্দে যে মিসাইলে ফানি ফানি কথা লিখে সেই মিসাইলটাই ছুটে আসে, গাজাবাসীদের শিশুরা পড়ে থাকে ক্ষত-বিক্ষত, ভাগাড়ের কুকুরের মত।
হা ঈশ্বর, তোমার লীলা বোঝা দায়...?
নির্বাচনী নামতা দুই এক এ দুই...।
এইবার ক্ষমতায় কে আসবে- এখানে কিছু অংকের হিসাব আছে? লাইম লাইটে যারা ছিলেন, তাদের কোন ইচ্ছা-অনিচ্ছা-ভয় থাকতে নেই বুঝি? তারেক-কোকোর শারিরিক দৃশ্যগুলো আপাততদৃষ্টিতে সুখকর ছিল না।
প্রাসঙ্গিক হবে বিধায় এখানে একরোখা খালেদা জিয়ার একটা প্রসঙ্গ উল্লেখ করি, আশা করছি বুদ্ধিমানরা যোগসূত্রটা ধরতে পারবেন।
"সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন- বিদেশী পর্যবেক্ষকরা বলছিলেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে কিন্তু খালেদা জিয়ার অনড় বক্তব্য ১০০ আসনে কারচুপি হয়েছে। তিনি সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করতে যাচ্ছিলেন।
এতে বড় ধরনের গলযোগ সৃষ্টি হতে পারে, এটা জানতে পেরে, ব্রিটিশ হাই কমিশনারের দপ্তর থেকে অনুরোধ করে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, জাপানের রাষ্ট্রদূত, হাই কমিশনাররা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে কথা বলার জন্য অনুমতি চান। কিন্তু খালেদা জিয়া ব্যস্ত আছেন এটা বলে অনীহা প্রকাশ করেছিলেন।
উপায়ন্তর না দেখে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্কিন প্রেসিডেন্টের অতি জরুরি বার্ত বেগম জিয়ার কাছে এখনই পৌঁছে দিতে চান বলে জানান এবং তার সঙ্গে আরও ২জন রাষ্ট্রদূত এবং ২জন হাই কমিশনার থাকবেন এটাও উল্লেখ করেন। বেগম জিয়া বাধ্য হয়ে সময় দেন।
নির্ধারিত সময়ে এঁরা ৫জন বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান। বেগম জিয়া বাংলায় বলেন, 'এরা কেন এসেছে, মাতব্বরি করার আর জায়গা পায় না'।
বেগম জিয়ার দোভাষী ইংরাজিতে বলেন, 'আপনারা আসায় ম্যাডাম অত্যন্ত খুশি হয়েছেন তিনি আপনাদেরকে স্বাগত জানাচ্ছেন'।
এরা কেউই জানতেন না যে, জাপানি রাষ্ট্রদূত ভালই বাংলা জানতেন আর ফরাসি রাষ্ট্রদূত জানতেন জাপানি ভাষা। সঙ্গে সঙ্গে জাপানি রাষ্ট্রদূত খালেদা জিয়ার বলা কথাগুলো জাপানি ভাষায় ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে তর্জমা করে বলেন।
যাই হোক, অনেকক্ষণ ধরে এই ৫ কূটনীতিক খালেদা জিয়াকে নির্বাচনি ফলাফল মেনে নিতে অনুরোধের পর অনুরোধ করেন, নইলে বাংলাদেশ আবার নতুন করে সংকটে পড়বে, রাষ্ট্রপতি কোন চরম ব্যবস্থা নিয়ে ফেলবেন। কিন্তু খালেদা জিয়া অনড় থাকেন।
এই ৫ কূটনীতিক হাল ছাড়েন না। একসময় খালেদা জিয়া আনুষ্ঠানিক সম্মতি না দিলেও এরা বুঝতে সক্ষম হন খালেদা জিয়া সম্মত হবেন তখন তাঁরা ধন্যবাদ জানিয়ে চলে আসেন"।
(সূত্র: বিপুলা পৃথিবী/ আনিসুজ্জামান)
তো, ওই যে বললাম অংক।
নির্বাচনটা হচ্ছে ডিসেম্বরে। ডিসেম্বর হচ্ছে আমাদের বিজয়ের মাস। যুদ্ধপরাধির ইস্যুটা প্রবল হয়ে উঠবে এতে সন্দেহ কী। তাছাড়া এইবারই প্রথমবারের মত ভোটার হয়েছেন প্রায় ৩ কোটি। তো এই ভোটারদের মধ্যে স্বাধীনতাবিরোধীদের বিপক্ষে মনোভাব অনেকটা প্রবল। ঘুরিয়ে বললে ভোটগুলো আওয়ামীলীগদের পক্ষেই এসে পড়ে।
আমি বিশ্বাস করি, এই প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে বড়ো ব্যাকুল। স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে বিতর্ক-কুতর্ক করার কোন আগ্রহই তাদের নাই।
কেউ ধোয়া তুলসি পাতা না কিন্তু যেহেতু শেষবার ক্ষমতায় ছিল বিএনপি- ক্ষতগুলো বড়ো দগদগে। ত্রানের বিস্কুট খায় ঘোড়া! এদের সময়ে , এদের মদদে ইসলামের দোহাই দিয়ে জঙ্গীরা যা করেছে এটা সব হিসাবের বাইরে! তার উপর কুড়ালে পা- নির্বাচনের ঠিক আগে আগে সিমেন্স, কোকোর সিঙ্গাপুরে অবৈধ টাকা।
এমনিতেও একটা পরিবর্তন তো আম-জনতা চাইতেই পারে। আর প্রার্থী নির্বাচনের বেলায় বিন্দুমাত্র কোন ভাবনা ছিল বলে তো আমার মনে হয় না নইলে কী আর পিন্টুকে...!
সবই অংকের হিসাব কিন্তু আমাদের মত সাধারণ মানুষদের ভাগ্যর কী পরিবর্তন আসবে সেটাই দেখার বিষয়। আপনারা কী যুদ্ধাপরাধীদের প্রাপ্য বিচার করবেন, আমি আগের মতই ধন্ধে আছি? শেখ হাসিনা ১০ টাকা কেজি দরে আমাদের চাল খাওয়াবেন এতে যার উল্লসিত হওয়ার হন, আমি হতাশ, অন্তত এই কথা বলার পেছনে কোন অংকের সূত্র কাজ করেছে বলে আমি মনে করি না। তাইলে এই দেশের সব কৃষকের গলায় ফাঁস দিতে হবে।
প্রাসঙ্গিক হবে বিধায় এখানে একরোখা খালেদা জিয়ার একটা প্রসঙ্গ উল্লেখ করি, আশা করছি বুদ্ধিমানরা যোগসূত্রটা ধরতে পারবেন।
"সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন- বিদেশী পর্যবেক্ষকরা বলছিলেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে কিন্তু খালেদা জিয়ার অনড় বক্তব্য ১০০ আসনে কারচুপি হয়েছে। তিনি সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করতে যাচ্ছিলেন।
এতে বড় ধরনের গলযোগ সৃষ্টি হতে পারে, এটা জানতে পেরে, ব্রিটিশ হাই কমিশনারের দপ্তর থেকে অনুরোধ করে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, জাপানের রাষ্ট্রদূত, হাই কমিশনাররা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে কথা বলার জন্য অনুমতি চান। কিন্তু খালেদা জিয়া ব্যস্ত আছেন এটা বলে অনীহা প্রকাশ করেছিলেন।
উপায়ন্তর না দেখে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্কিন প্রেসিডেন্টের অতি জরুরি বার্ত বেগম জিয়ার কাছে এখনই পৌঁছে দিতে চান বলে জানান এবং তার সঙ্গে আরও ২জন রাষ্ট্রদূত এবং ২জন হাই কমিশনার থাকবেন এটাও উল্লেখ করেন। বেগম জিয়া বাধ্য হয়ে সময় দেন।
নির্ধারিত সময়ে এঁরা ৫জন বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান। বেগম জিয়া বাংলায় বলেন, 'এরা কেন এসেছে, মাতব্বরি করার আর জায়গা পায় না'।
বেগম জিয়ার দোভাষী ইংরাজিতে বলেন, 'আপনারা আসায় ম্যাডাম অত্যন্ত খুশি হয়েছেন তিনি আপনাদেরকে স্বাগত জানাচ্ছেন'।
এরা কেউই জানতেন না যে, জাপানি রাষ্ট্রদূত ভালই বাংলা জানতেন আর ফরাসি রাষ্ট্রদূত জানতেন জাপানি ভাষা। সঙ্গে সঙ্গে জাপানি রাষ্ট্রদূত খালেদা জিয়ার বলা কথাগুলো জাপানি ভাষায় ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে তর্জমা করে বলেন।
যাই হোক, অনেকক্ষণ ধরে এই ৫ কূটনীতিক খালেদা জিয়াকে নির্বাচনি ফলাফল মেনে নিতে অনুরোধের পর অনুরোধ করেন, নইলে বাংলাদেশ আবার নতুন করে সংকটে পড়বে, রাষ্ট্রপতি কোন চরম ব্যবস্থা নিয়ে ফেলবেন। কিন্তু খালেদা জিয়া অনড় থাকেন।
এই ৫ কূটনীতিক হাল ছাড়েন না। একসময় খালেদা জিয়া আনুষ্ঠানিক সম্মতি না দিলেও এরা বুঝতে সক্ষম হন খালেদা জিয়া সম্মত হবেন তখন তাঁরা ধন্যবাদ জানিয়ে চলে আসেন"।
(সূত্র: বিপুলা পৃথিবী/ আনিসুজ্জামান)
তো, ওই যে বললাম অংক।
নির্বাচনটা হচ্ছে ডিসেম্বরে। ডিসেম্বর হচ্ছে আমাদের বিজয়ের মাস। যুদ্ধপরাধির ইস্যুটা প্রবল হয়ে উঠবে এতে সন্দেহ কী। তাছাড়া এইবারই প্রথমবারের মত ভোটার হয়েছেন প্রায় ৩ কোটি। তো এই ভোটারদের মধ্যে স্বাধীনতাবিরোধীদের বিপক্ষে মনোভাব অনেকটা প্রবল। ঘুরিয়ে বললে ভোটগুলো আওয়ামীলীগদের পক্ষেই এসে পড়ে।
আমি বিশ্বাস করি, এই প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে বড়ো ব্যাকুল। স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে বিতর্ক-কুতর্ক করার কোন আগ্রহই তাদের নাই।
কেউ ধোয়া তুলসি পাতা না কিন্তু যেহেতু শেষবার ক্ষমতায় ছিল বিএনপি- ক্ষতগুলো বড়ো দগদগে। ত্রানের বিস্কুট খায় ঘোড়া! এদের সময়ে , এদের মদদে ইসলামের দোহাই দিয়ে জঙ্গীরা যা করেছে এটা সব হিসাবের বাইরে! তার উপর কুড়ালে পা- নির্বাচনের ঠিক আগে আগে সিমেন্স, কোকোর সিঙ্গাপুরে অবৈধ টাকা।
এমনিতেও একটা পরিবর্তন তো আম-জনতা চাইতেই পারে। আর প্রার্থী নির্বাচনের বেলায় বিন্দুমাত্র কোন ভাবনা ছিল বলে তো আমার মনে হয় না নইলে কী আর পিন্টুকে...!
সবই অংকের হিসাব কিন্তু আমাদের মত সাধারণ মানুষদের ভাগ্যর কী পরিবর্তন আসবে সেটাই দেখার বিষয়। আপনারা কী যুদ্ধাপরাধীদের প্রাপ্য বিচার করবেন, আমি আগের মতই ধন্ধে আছি? শেখ হাসিনা ১০ টাকা কেজি দরে আমাদের চাল খাওয়াবেন এতে যার উল্লসিত হওয়ার হন, আমি হতাশ, অন্তত এই কথা বলার পেছনে কোন অংকের সূত্র কাজ করেছে বলে আমি মনে করি না। তাইলে এই দেশের সব কৃষকের গলায় ফাঁস দিতে হবে।
বিভাগ
আয়না
Tuesday, December 23, 2008
মুক্তিযুদ্ধে একজন পীর সাহেব!
কইবুল্লা। অসম্ভব ধার্মিক এই মানুষটা পীর নামে পরিচিত ছিলেন। উত্তর বাংলায় তাঁর ছিল হাজার হাজার মুরীদ-সাগরেদ। তাঁর ছোট ৩ ভাই, এঁরাও পীর। মাঝারি ধরনের এই বাড়িটায় সর্বদা গমগম করত শতশত দর্শনার্থি। কোরান, মৌলুদ পাঠ, ওয়াজ নসিহত আর ওয়াক্তে ওয়াক্তে নামায...।
এই পীর সাহেব ছিলেন আধুনিকমনস্ক। পাক আর্মি যখন ইসলামের দোহাই দিয়ে নির্বিচারে খুন করছে লাখ-লাখ মানুষ, নস্ট করছে নারীর সম্ভ্রম, লুটতরাজ করছে, তিনি এসব মেনে নিতে পারছিলেন না। তাঁর ১ ভাই তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ২৫ মার্চের পর তিনি ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার কমান্ডার নিযুক্ত হন।
গোকুল গ্রামের তসিম পাড়ের 'জনৈক' এখানে পাক আর্মিকে নিয়ে আসে। কালো বোরকা পরে মেয়েদের সাজ নিয়ে সে পীরবাড়ি সনাক্ত করিয়ে দেয়। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সে আদেশ-নির্দেশও দিচ্ছিল।
রমজান মাস। শেষরাত। সেহরি সেরে পীর সাহেব এবাদতে মগ্ন। ১ ভাই পাশের মসজিদে কোরান তেলাওয়াত করছিলেন। অন্য ভাই ভাত খাচ্ছিলেন।
পাক আর্মি এইসময় ঘিরে ফেলে পীর বাড়ি। একেক করে ৪ ভাইকে গুলি করে হত্যা করে। পীর সাহেব মারা গেলেন হাতে তসবীহ নিয়ে, অন্য ভাই হাতে এঁটো ভাত। একজন গড়িয়ে পড়েছেন ওজুর ঘটির উপর।
পাক আর্মিরা পীর বংশেরই দোলনায় ঘুমন্ত এক শিশুকে গুলি করে হত্যা করে।
পরদিন সকাল। পীর বাড়িতে যেন সৃষ্টি হলো কারবালা। শতশত ভক্ত, বুক চাপড়াচ্ছে, মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদছে। কেউ রক্তরঞ্জিত মাটি নিয়ে মাথায় মাখছে।
ভক্তরা তাঁদের সমাহিত করেন। তারপর এই পীরবাড়ির মুঠো মুঠে মাটি নিয়ে যান। এই পবিত্র মাটি তাঁরা সযতনে তুলে রাখবেন।
*সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, দৈনিক আজাদ, ১১ মার্চ ১৯৭২।
**ভাষারীতি প্রায় অবিকল রাখা হয়েছে।
রাজাকার বলতেই আমাদেরকে যেসব ছবি দিনের পর দিন দেখানো হয়েছে সেটা হচ্ছে এইরকম, দাড়ি-টুপি পরা বয়স্ক একজন মানুষ! এটা সত্য তখন প্রচুর তথাকথিত ইসলামমনস্ক মানুষ পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল কিন্তু তাই বলে ঢালাও মন্তব্যর কোন অর্থ নাই।
অজস্র উদাহরণ থেকে একটাই বলি, শহীদ ৪ সন্তানের পিতা মৌলভী আব্দুল হালিম বলেছিলেন, "ঘরে বসে গুলি খেয়ে মরার চেয়ে লড়াই করে শহীদ হওয়া অনেক মর্যাদার"।
মৌলভী আব্দুল হালিমের কেবল এক সন্তান প্রাণে বেঁচে যান এবং পরে স্মৃতিচারন করেন।
পাক আর্মিরা এই দেশে যুদ্ধ করেছে, এরা যোদ্ধা ছিল বলে আমি মনে করি না। পতিতারও যেমন অধিকার আছে তেমনি যুদ্ধেরও কিছু নিয়ম আছে। যুদ্ধেও কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয় আইনানুসারে। মানবিক দিকে না-হয় গেলাম না।
ইসলামের লেবেনচুষ খাইয়ে রমজান মাসে প্রার্থনারত মানুষদের অহেতুক মেরে ফেলা, ঘুমন্ত শিশুকে হত্যা করা আর যাই হোক যুদ্ধের অংশ না। এদের যোদ্ধা না বলে বলা প্রয়োজন সাইকোপ্যাথ।
এই খুনগুলোর কেন বিচার হবে না এটাই বিস্ময়, এর জন্য বিশেষ কোন আইনের প্রয়োজন পড়ে বলে তো মনে হয় না। অভাব ছিল কেবল আমাদের সদিচ্ছার, সচেতনতার। নইলে এই খুনের পেছনে যে মানুষটা, তাকে কালো বোরকার আড়ালে আমরা চিনতে পারছি 'জনৈক' নামে। কেন আমরা এখানে তার নামটা পাই না? চেষ্টার অভাব? এই 'জনৈক' নামের খুনিটাকে সনাক্ত করা হয়েছিল কী?
এতো সেইসব মানুষদের একজন না। মুক্তিযুদ্ধে অনেকে বুঝে-না বুঝে, ধর্মের ভুল ব্যাখ্যায়, ক্ষিধার জ্বালায়- এমন উদাহরণও আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্ভবতী এক শিক্ষকের পেটে বন্দুক ঠেকিয়ে দেশবিরোধী কাগজে সই নেয়া হয়েছিল। এসব অবশ্যই বিবেচ্য।
কিন্তু খুনিটা তো সেই দলে না। সে যেচে পড়ে আর্মিকে এখানে নিয়ে এসেছিল এবং পুরো হত্যাকান্ড উপভোগ করেছে।
এটা অবশ্যই বিচারযোগ্য অপরাধ।
মুক্তিযোদ্ধা হলেই সাতখুন মাফ হয়ে যাবে এরও কোন মানে নাই।
"যুদ্ধের পর, রাজাকারের বিচারের প্রহসনের নামে ১৮ ডিসেম্বর ঢাকা স্টেডিয়ামে হাজার হাজার লোকের সামনে নারকীয় তান্ডব হয়েছিল। বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হাত-পা ছিড়ে এদের মারা হয়েছিল"। (ইন্টাভিউ উইথ হিস্ট্রি, ওরিয়ানা ফালাচি)
এটাও বিচারযোগ্য অপরাধ।
১৯৭১। অনেক বছর চলে গেছে, না?
"১৯১৫, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তুর্কিরা আনুমানিক ১৫ লক্ষ আর্মেনিয়কে হত্যা করে। আর্মেনিয়রা এখনও এটা ভুলেনি কিন্তু বরাবরের মত তুরস্ক বিষয়টা এড়িয়ে যাচ্ছিল।
এই গণহত্যা নিয়ে কথা বলায় নোবেলজয়ী লেখক ওরহান পামুকসহ অনেককে আইনি হয়রানি করা হয়। হান্ট ডিংক নামের এক সাংবাদিককে গুলি করে মেরে ফেলা হয়।
সেই তুরস্কের ২০০বুদ্ধিজীবীসহ ২৫০০ হাজার সাধারণ নাগরিক আর্মেনিয়দের কাছে প্রকাশ্যে (ইন্টারনেটে) ক্ষমা চান"।
(ইন্টারনেট থেকে, এপি)
এই পীর সাহেব ছিলেন আধুনিকমনস্ক। পাক আর্মি যখন ইসলামের দোহাই দিয়ে নির্বিচারে খুন করছে লাখ-লাখ মানুষ, নস্ট করছে নারীর সম্ভ্রম, লুটতরাজ করছে, তিনি এসব মেনে নিতে পারছিলেন না। তাঁর ১ ভাই তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ২৫ মার্চের পর তিনি ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার কমান্ডার নিযুক্ত হন।
গোকুল গ্রামের তসিম পাড়ের 'জনৈক' এখানে পাক আর্মিকে নিয়ে আসে। কালো বোরকা পরে মেয়েদের সাজ নিয়ে সে পীরবাড়ি সনাক্ত করিয়ে দেয়। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সে আদেশ-নির্দেশও দিচ্ছিল।
রমজান মাস। শেষরাত। সেহরি সেরে পীর সাহেব এবাদতে মগ্ন। ১ ভাই পাশের মসজিদে কোরান তেলাওয়াত করছিলেন। অন্য ভাই ভাত খাচ্ছিলেন।
পাক আর্মি এইসময় ঘিরে ফেলে পীর বাড়ি। একেক করে ৪ ভাইকে গুলি করে হত্যা করে। পীর সাহেব মারা গেলেন হাতে তসবীহ নিয়ে, অন্য ভাই হাতে এঁটো ভাত। একজন গড়িয়ে পড়েছেন ওজুর ঘটির উপর।
পাক আর্মিরা পীর বংশেরই দোলনায় ঘুমন্ত এক শিশুকে গুলি করে হত্যা করে।
পরদিন সকাল। পীর বাড়িতে যেন সৃষ্টি হলো কারবালা। শতশত ভক্ত, বুক চাপড়াচ্ছে, মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদছে। কেউ রক্তরঞ্জিত মাটি নিয়ে মাথায় মাখছে।
ভক্তরা তাঁদের সমাহিত করেন। তারপর এই পীরবাড়ির মুঠো মুঠে মাটি নিয়ে যান। এই পবিত্র মাটি তাঁরা সযতনে তুলে রাখবেন।
*সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, দৈনিক আজাদ, ১১ মার্চ ১৯৭২।
**ভাষারীতি প্রায় অবিকল রাখা হয়েছে।
রাজাকার বলতেই আমাদেরকে যেসব ছবি দিনের পর দিন দেখানো হয়েছে সেটা হচ্ছে এইরকম, দাড়ি-টুপি পরা বয়স্ক একজন মানুষ! এটা সত্য তখন প্রচুর তথাকথিত ইসলামমনস্ক মানুষ পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল কিন্তু তাই বলে ঢালাও মন্তব্যর কোন অর্থ নাই।
অজস্র উদাহরণ থেকে একটাই বলি, শহীদ ৪ সন্তানের পিতা মৌলভী আব্দুল হালিম বলেছিলেন, "ঘরে বসে গুলি খেয়ে মরার চেয়ে লড়াই করে শহীদ হওয়া অনেক মর্যাদার"।
মৌলভী আব্দুল হালিমের কেবল এক সন্তান প্রাণে বেঁচে যান এবং পরে স্মৃতিচারন করেন।
পাক আর্মিরা এই দেশে যুদ্ধ করেছে, এরা যোদ্ধা ছিল বলে আমি মনে করি না। পতিতারও যেমন অধিকার আছে তেমনি যুদ্ধেরও কিছু নিয়ম আছে। যুদ্ধেও কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয় আইনানুসারে। মানবিক দিকে না-হয় গেলাম না।
ইসলামের লেবেনচুষ খাইয়ে রমজান মাসে প্রার্থনারত মানুষদের অহেতুক মেরে ফেলা, ঘুমন্ত শিশুকে হত্যা করা আর যাই হোক যুদ্ধের অংশ না। এদের যোদ্ধা না বলে বলা প্রয়োজন সাইকোপ্যাথ।
এই খুনগুলোর কেন বিচার হবে না এটাই বিস্ময়, এর জন্য বিশেষ কোন আইনের প্রয়োজন পড়ে বলে তো মনে হয় না। অভাব ছিল কেবল আমাদের সদিচ্ছার, সচেতনতার। নইলে এই খুনের পেছনে যে মানুষটা, তাকে কালো বোরকার আড়ালে আমরা চিনতে পারছি 'জনৈক' নামে। কেন আমরা এখানে তার নামটা পাই না? চেষ্টার অভাব? এই 'জনৈক' নামের খুনিটাকে সনাক্ত করা হয়েছিল কী?
এতো সেইসব মানুষদের একজন না। মুক্তিযুদ্ধে অনেকে বুঝে-না বুঝে, ধর্মের ভুল ব্যাখ্যায়, ক্ষিধার জ্বালায়- এমন উদাহরণও আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্ভবতী এক শিক্ষকের পেটে বন্দুক ঠেকিয়ে দেশবিরোধী কাগজে সই নেয়া হয়েছিল। এসব অবশ্যই বিবেচ্য।
কিন্তু খুনিটা তো সেই দলে না। সে যেচে পড়ে আর্মিকে এখানে নিয়ে এসেছিল এবং পুরো হত্যাকান্ড উপভোগ করেছে।
এটা অবশ্যই বিচারযোগ্য অপরাধ।
মুক্তিযোদ্ধা হলেই সাতখুন মাফ হয়ে যাবে এরও কোন মানে নাই।
"যুদ্ধের পর, রাজাকারের বিচারের প্রহসনের নামে ১৮ ডিসেম্বর ঢাকা স্টেডিয়ামে হাজার হাজার লোকের সামনে নারকীয় তান্ডব হয়েছিল। বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হাত-পা ছিড়ে এদের মারা হয়েছিল"। (ইন্টাভিউ উইথ হিস্ট্রি, ওরিয়ানা ফালাচি)
এটাও বিচারযোগ্য অপরাধ।
১৯৭১। অনেক বছর চলে গেছে, না?
"১৯১৫, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তুর্কিরা আনুমানিক ১৫ লক্ষ আর্মেনিয়কে হত্যা করে। আর্মেনিয়রা এখনও এটা ভুলেনি কিন্তু বরাবরের মত তুরস্ক বিষয়টা এড়িয়ে যাচ্ছিল।
এই গণহত্যা নিয়ে কথা বলায় নোবেলজয়ী লেখক ওরহান পামুকসহ অনেককে আইনি হয়রানি করা হয়। হান্ট ডিংক নামের এক সাংবাদিককে গুলি করে মেরে ফেলা হয়।
সেই তুরস্কের ২০০বুদ্ধিজীবীসহ ২৫০০ হাজার সাধারণ নাগরিক আর্মেনিয়দের কাছে প্রকাশ্যে (ইন্টারনেটে) ক্ষমা চান"।
(ইন্টারনেট থেকে, এপি)
বিভাগ
১৯৭১: প্রসব বেদনা
Wednesday, December 17, 2008
একটি ব্যর্থ নাটক নিয়ে নাটক!
সালটা ২০০৩। সুতীব্র ইচ্ছা, হরতালের উপর আমার লেখা 'কয়েদী' নিয়ে নাটক করার। কিন্তু কারা কারা নাটক বানান তাঁদের তো কাউকেই আমি চিনি না।
থাকি মফস্বলে, ঢাকা যাই কালেভদ্রে। গাঁও-গেরামে থাকা গায়ে সরষে তেলমাখা আমি এক ভুত, আমার এমন লোভ থাকাটা দোষের বৈকি! এই দেশে বিখ্যাত হতে হলে তো কথাই নেই, মানুষ হওয়ার জন্যও নাকি ঢাকায় বসবাস করাটা খুব জরুরি, অতি জরুরি।
যাই হোক, ব্যক্তিগত জটিলতায় ১৯৯৩ পর থেকে ২০০৩ পর্যন্ত আমার লেখালেখি আর করা হয়ে উঠেনি! আগে যাও-বা কিছু মানুষকে চিনতাম, তাঁদের অনেকের সঙ্গেই পরে আর যোগাযোগ ছিল না। একদিন, প্রথম আলো অফিসে একজনকে খুঁজতে গেছি। ওখানেই আনিসুল হককে পেয়ে গেলাম। এই মানুষটাকে আমি চিনতাম ভোরের কাগজের 'মেলা'র কল্যাণে। তখন আমি ভোরের কাগজে ফি হপ্তাহে 'একালের রুপকথা' নামের একটা লেখা লিখি। ওই পাতা যিনি দেখতেন, সঞ্জীব চৌধুরী- একজন লেখক বানাবার মেশিন [১]। তিনি আনিসুল হকের সঙ্গে পরিচয় করে দিয়ে বলেছিলেন, ইনি 'মেলা' পাতাটা এখন থেকে শুরু করছেন, লেখা চাচ্ছেন। আপনি মেলার জন্য লেখা দেন।
আমি অবশ্য খুব একটা উচ্ছ্বসিত হইনি কারণ... সঞ্জীব চৌধুরীর সঙ্গে কাজ করার মজাই আলাদা। তাছাড়া আমার গায়ের মফস্বলের গন্ধ নিয়ে সঞ্জীব চৌধুরী খুব একটা মাথা ঘামাতেন না- তাঁর নাক কখনও উঁচু হতে দেখিনি।
যাই হোক, মেলায় লেখা দিয়ে সে এক কাহিনি হয়েছিল, সে এক চোট্টামির অন্য কাহিনি...অন্য কোন দিন!
আনিসুল হককে বললাম, 'কয়েদী' নামের যে পান্ডুলিপিটা আমার ওটা নিয়ে নাটক করবে, এমন কেউ তাঁর পরিচিত আছেন কিনা। তিনি ওই লাইনেই গেলেন না। আমাকে বুঝিয়ে প্রায় ফেললেন, দেশের অবস্থা দেখছেন না, এখন নাটকের তেমন বাজার নাই।ইত্যাদি, ইত্যাদি...। আনিসুল হক, নামকরা মানুষ, আমার কী আর না-বুঝে উপায় আছে!
তারপর বললেন, আর আপনি যে নাটক করবেন, আপনার স্ক্রিপ্টটার তো নাট্যরূপ দেয়া নাই। নাট্যরূপ দিতে হবে।
আমি বললাম, নাট্যরূপ, এটা তো আমি আগে কখনও করিনি। আপনি কী এটার নাট্যরূপ করে দিতে পারবেন।
আনিসুল হক বললেন, আমাকে দিয়ে করালে ২০ হাজার দিতে হবে।
আমি কুর্নিশ করে চলে এসেছিলাম।
পরে যখন আমি এটার নাট্যরূপ দিয়েছিলাম তখন বিস্মিত হয়ে ভাবছিলাম, হা ঈশ্বর, এটার জন্য ২০ হাজার টাকা! শ্লা, সব টাকা দেখি এখন মিডিয়াতে! ২০০৩-এ ২০ হাজার হলে এখন ২০০৮-এ এই টাকার মান সম্ভবত লাখখানেক হবে! না আরও বেশি? আল্লা জানে...।
২০০৫ সালে 'কয়েদী' যখন বই আকারে বের হল তখন এটা পড়ে শংকর সাওজাল বিচিত্র কোনো এক কারণে অযাচিত মুগ্ধতা প্রকাশ করেছিলেন, তখন এটা নিয়ে নাটক করার জন্য বাড়াবাড়ি রকমের আগ্রহ দেখালেন। আমার ধারণা, এই চমঃকার মানুষটা 'হুদাহুদি', অল্পতেই মুগ্ধ হয়ে যান!
কিন্তু... ২০১২ শেষ হয়-হয়, এখনো নাটকের ন-ও হয়নি! হরতাল নিয়ে নাটক নাকি পটাবলিক খাবে না। এই দেশের মানুষ নাকি আলকাতরা খায় আর এই অখাদ্য খাবে না, 'আজিব'! কথা সেটা না, এই দেশে হরতাল নিয়ে কোনো ফিকশন নাই, কোনো নাটক নাই। কেন? হরতাল নামের অতি কুৎসিত গা ঘিনঘিনে এই দানবটাকে নিয়ে কোনো নাটক করা যাবে না!
শংকর দা অবশ্য এখনও আশার বাণী শোনান। এই চমত্কার মানুষটার উপর আমার কোন ক্ষোভ নাই কারণ তিনি নিজে নাটক বানান না। যে দুজন বিখ্যাত নাট্যপরিচালকের সঙ্গে তাঁর কথা পাকা হয়েছিল এঁরা গা না করলে শংকরদার কীই-বা করার আছে!
এখনও ফোনে কথা হলে তিনি হাল ছাড়েন না, মাহমেদ, দাঁড়াও হবে-হবে।
আমার আর এই মানুষটাকে বিব্রত করতে ভাল লাগে না। তবে মনে মনে বলি, দাদা, আমি তো আর এখন দাঁড়িয়ে নাই, বসে বসে থেকে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি।
আশিক নামের এক ছেলে আমার লেখা নিয়ে নাটক করার জন্য খুব ঝুলাঝুলি করছিল। তার নাকি কার-কার সঙ্গে জানা-শোনা আছে। আসলেই ছিল। একদিন নিয়ে গেল আফসানা মিমির কাছে। ও আল্লা, মিমির সঙ্গে দেখি এর ভালই খাতির। একজন অন্যজনের হাত ধরে আছে। কৃষ্ণচুড়া না কি যেন নাম, ওই প্রডাকশন হাউজ থেকে মিমি নাটক বানাচ্ছেন।
মিমির সঙ্গে কথা হল। শুটিং নিয়ে খুব ব্যস্ত। তবুও এই মানুষটার আচরণ আমাকে মুগ্ধ করেছে।
ওখানেই প্রথম দেখলাম সুবর্ণা মুস্তফাকে। স্রেফ, এই ভদ্রমহিলাকে আমার অভব্য, অমার্জিত মনে হয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছিল এই ভদ্রমহিলার আচরণ খানিকটা মার্জিত হলে তিনি নিশ্চয়ই অ-সেলিব্রটি হয়ে যেতেন না।
তো, মিমির মোদ্দা কথা, এই দেশে ভাল স্ক্রিপ্টের আকাল তাই তিনি ভারতীয় স্ক্রিপ্ট নিয়ে নাটক বানাচ্ছেন। আগামিতেও এমনটাই ইচ্ছা।
আমার এখানে আর ভাল লাগছিল না। এদের দেয়া চা-টাও বিস্বাদ লাগছিল। এটা কেমন কথা! আমি না-হয় ছাতাফাতা তিন টাকা দামের কলমবাজ, তাই বলে কী এ দেশের সমস্ত লেখক মারা গেছেন যে ভারত থেকে স্ক্রিপ্ট আমদানী করতে হবে? এই সব ফাজিলদের ফাজলামি কথা শুনে গায়ে আগুন ধরে যায়। মিমি ব্যতীত আরও অনেকে দাদাদের লেখা নিয়ে ঝাপিয়ে নাটক বানাচ্ছেন।
আশিক ছেলেটা আরেকজনের কাছে নিয়ে গেল। ওর চ্যাংড়া নাটকনির্মাতার নামটা ভুলে গেছি। উনি আবার প্রেমের নাটক ব্যতীত অন্য নাটক করেন না। আমাকে বললেন, প্রেমের নাটক হলে আছি।
আমি বললাম, আমার কিছু উপন্যাস আছে, ওগুলো নাট্যরূপ করে দেই? 'কনকপুরুষটা'...।
তিনি বললেন, আরে না-না, আধুনিক প্রেমের উপন্যাস। যেটা পাবলিক খাবে। হে মাবুদ, পাবলিক যে কি খায় এটা সম্ভবত তুমি ব্যতীত আর কেউ জানে না।
তিনি একটা প্লটের আইডিয়াও দিয়েছিলেন। ভয়াবহ, গায়ের রক্ত হিম হয়ে আসে! সবটা মনে নাই। অনেকটা এমন: এক দেশে এক ছেলে ছিল। সে এক মেয়ের সঙ্গে প্রেম করে। করুক...কিন্তু সে যে মেয়ের সঙ্গে প্রেম করে সেই মেয়ের মায়ের সঙ্গেও সে প্রেম করে। এটা আবার মা-মেয়ে জানে না। এমনসব উদ্ভট আইডিয়া নিয়ে নাটক এগুবে। তিনি আমাকে হাত-পা নিড়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেলেন কেমন করে আমাকে লিকতে হবে।
আমি বিরক্ত হয়ে বলেছিলাম, এক কাজ করেন, আপনি নিজেই লিখে ফেলেন না কেন! এটাই উত্তম হবে।
ওখান থেকে ফিরে আসতে আসতে জনান্তিকে বিড়বিড় করছিলাম, হে প্রভূ, আর নাটক ভাল লাগে না...।
*কয়েদীর লিংক: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_5073.html
থাকি মফস্বলে, ঢাকা যাই কালেভদ্রে। গাঁও-গেরামে থাকা গায়ে সরষে তেলমাখা আমি এক ভুত, আমার এমন লোভ থাকাটা দোষের বৈকি! এই দেশে বিখ্যাত হতে হলে তো কথাই নেই, মানুষ হওয়ার জন্যও নাকি ঢাকায় বসবাস করাটা খুব জরুরি, অতি জরুরি।
যাই হোক, ব্যক্তিগত জটিলতায় ১৯৯৩ পর থেকে ২০০৩ পর্যন্ত আমার লেখালেখি আর করা হয়ে উঠেনি! আগে যাও-বা কিছু মানুষকে চিনতাম, তাঁদের অনেকের সঙ্গেই পরে আর যোগাযোগ ছিল না। একদিন, প্রথম আলো অফিসে একজনকে খুঁজতে গেছি। ওখানেই আনিসুল হককে পেয়ে গেলাম। এই মানুষটাকে আমি চিনতাম ভোরের কাগজের 'মেলা'র কল্যাণে। তখন আমি ভোরের কাগজে ফি হপ্তাহে 'একালের রুপকথা' নামের একটা লেখা লিখি। ওই পাতা যিনি দেখতেন, সঞ্জীব চৌধুরী- একজন লেখক বানাবার মেশিন [১]। তিনি আনিসুল হকের সঙ্গে পরিচয় করে দিয়ে বলেছিলেন, ইনি 'মেলা' পাতাটা এখন থেকে শুরু করছেন, লেখা চাচ্ছেন। আপনি মেলার জন্য লেখা দেন।
আমি অবশ্য খুব একটা উচ্ছ্বসিত হইনি কারণ... সঞ্জীব চৌধুরীর সঙ্গে কাজ করার মজাই আলাদা। তাছাড়া আমার গায়ের মফস্বলের গন্ধ নিয়ে সঞ্জীব চৌধুরী খুব একটা মাথা ঘামাতেন না- তাঁর নাক কখনও উঁচু হতে দেখিনি।
যাই হোক, মেলায় লেখা দিয়ে সে এক কাহিনি হয়েছিল, সে এক চোট্টামির অন্য কাহিনি...অন্য কোন দিন!
আনিসুল হককে বললাম, 'কয়েদী' নামের যে পান্ডুলিপিটা আমার ওটা নিয়ে নাটক করবে, এমন কেউ তাঁর পরিচিত আছেন কিনা। তিনি ওই লাইনেই গেলেন না। আমাকে বুঝিয়ে প্রায় ফেললেন, দেশের অবস্থা দেখছেন না, এখন নাটকের তেমন বাজার নাই।ইত্যাদি, ইত্যাদি...। আনিসুল হক, নামকরা মানুষ, আমার কী আর না-বুঝে উপায় আছে!
তারপর বললেন, আর আপনি যে নাটক করবেন, আপনার স্ক্রিপ্টটার তো নাট্যরূপ দেয়া নাই। নাট্যরূপ দিতে হবে।
আমি বললাম, নাট্যরূপ, এটা তো আমি আগে কখনও করিনি। আপনি কী এটার নাট্যরূপ করে দিতে পারবেন।
আনিসুল হক বললেন, আমাকে দিয়ে করালে ২০ হাজার দিতে হবে।
আমি কুর্নিশ করে চলে এসেছিলাম।
পরে যখন আমি এটার নাট্যরূপ দিয়েছিলাম তখন বিস্মিত হয়ে ভাবছিলাম, হা ঈশ্বর, এটার জন্য ২০ হাজার টাকা! শ্লা, সব টাকা দেখি এখন মিডিয়াতে! ২০০৩-এ ২০ হাজার হলে এখন ২০০৮-এ এই টাকার মান সম্ভবত লাখখানেক হবে! না আরও বেশি? আল্লা জানে...।
২০০৫ সালে 'কয়েদী' যখন বই আকারে বের হল তখন এটা পড়ে শংকর সাওজাল বিচিত্র কোনো এক কারণে অযাচিত মুগ্ধতা প্রকাশ করেছিলেন, তখন এটা নিয়ে নাটক করার জন্য বাড়াবাড়ি রকমের আগ্রহ দেখালেন। আমার ধারণা, এই চমঃকার মানুষটা 'হুদাহুদি', অল্পতেই মুগ্ধ হয়ে যান!
কিন্তু... ২০১২ শেষ হয়-হয়, এখনো নাটকের ন-ও হয়নি! হরতাল নিয়ে নাটক নাকি পটাবলিক খাবে না। এই দেশের মানুষ নাকি আলকাতরা খায় আর এই অখাদ্য খাবে না, 'আজিব'! কথা সেটা না, এই দেশে হরতাল নিয়ে কোনো ফিকশন নাই, কোনো নাটক নাই। কেন? হরতাল নামের অতি কুৎসিত গা ঘিনঘিনে এই দানবটাকে নিয়ে কোনো নাটক করা যাবে না!
শংকর দা অবশ্য এখনও আশার বাণী শোনান। এই চমত্কার মানুষটার উপর আমার কোন ক্ষোভ নাই কারণ তিনি নিজে নাটক বানান না। যে দুজন বিখ্যাত নাট্যপরিচালকের সঙ্গে তাঁর কথা পাকা হয়েছিল এঁরা গা না করলে শংকরদার কীই-বা করার আছে!
এখনও ফোনে কথা হলে তিনি হাল ছাড়েন না, মাহমেদ, দাঁড়াও হবে-হবে।
আমার আর এই মানুষটাকে বিব্রত করতে ভাল লাগে না। তবে মনে মনে বলি, দাদা, আমি তো আর এখন দাঁড়িয়ে নাই, বসে বসে থেকে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি।
আশিক নামের এক ছেলে আমার লেখা নিয়ে নাটক করার জন্য খুব ঝুলাঝুলি করছিল। তার নাকি কার-কার সঙ্গে জানা-শোনা আছে। আসলেই ছিল। একদিন নিয়ে গেল আফসানা মিমির কাছে। ও আল্লা, মিমির সঙ্গে দেখি এর ভালই খাতির। একজন অন্যজনের হাত ধরে আছে। কৃষ্ণচুড়া না কি যেন নাম, ওই প্রডাকশন হাউজ থেকে মিমি নাটক বানাচ্ছেন।
মিমির সঙ্গে কথা হল। শুটিং নিয়ে খুব ব্যস্ত। তবুও এই মানুষটার আচরণ আমাকে মুগ্ধ করেছে।
ওখানেই প্রথম দেখলাম সুবর্ণা মুস্তফাকে। স্রেফ, এই ভদ্রমহিলাকে আমার অভব্য, অমার্জিত মনে হয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছিল এই ভদ্রমহিলার আচরণ খানিকটা মার্জিত হলে তিনি নিশ্চয়ই অ-সেলিব্রটি হয়ে যেতেন না।
তো, মিমির মোদ্দা কথা, এই দেশে ভাল স্ক্রিপ্টের আকাল তাই তিনি ভারতীয় স্ক্রিপ্ট নিয়ে নাটক বানাচ্ছেন। আগামিতেও এমনটাই ইচ্ছা।
আমার এখানে আর ভাল লাগছিল না। এদের দেয়া চা-টাও বিস্বাদ লাগছিল। এটা কেমন কথা! আমি না-হয় ছাতাফাতা তিন টাকা দামের কলমবাজ, তাই বলে কী এ দেশের সমস্ত লেখক মারা গেছেন যে ভারত থেকে স্ক্রিপ্ট আমদানী করতে হবে? এই সব ফাজিলদের ফাজলামি কথা শুনে গায়ে আগুন ধরে যায়। মিমি ব্যতীত আরও অনেকে দাদাদের লেখা নিয়ে ঝাপিয়ে নাটক বানাচ্ছেন।
আশিক ছেলেটা আরেকজনের কাছে নিয়ে গেল। ওর চ্যাংড়া নাটকনির্মাতার নামটা ভুলে গেছি। উনি আবার প্রেমের নাটক ব্যতীত অন্য নাটক করেন না। আমাকে বললেন, প্রেমের নাটক হলে আছি।
আমি বললাম, আমার কিছু উপন্যাস আছে, ওগুলো নাট্যরূপ করে দেই? 'কনকপুরুষটা'...।
তিনি বললেন, আরে না-না, আধুনিক প্রেমের উপন্যাস। যেটা পাবলিক খাবে। হে মাবুদ, পাবলিক যে কি খায় এটা সম্ভবত তুমি ব্যতীত আর কেউ জানে না।
তিনি একটা প্লটের আইডিয়াও দিয়েছিলেন। ভয়াবহ, গায়ের রক্ত হিম হয়ে আসে! সবটা মনে নাই। অনেকটা এমন: এক দেশে এক ছেলে ছিল। সে এক মেয়ের সঙ্গে প্রেম করে। করুক...কিন্তু সে যে মেয়ের সঙ্গে প্রেম করে সেই মেয়ের মায়ের সঙ্গেও সে প্রেম করে। এটা আবার মা-মেয়ে জানে না। এমনসব উদ্ভট আইডিয়া নিয়ে নাটক এগুবে। তিনি আমাকে হাত-পা নিড়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেলেন কেমন করে আমাকে লিকতে হবে।
আমি বিরক্ত হয়ে বলেছিলাম, এক কাজ করেন, আপনি নিজেই লিখে ফেলেন না কেন! এটাই উত্তম হবে।
ওখান থেকে ফিরে আসতে আসতে জনান্তিকে বিড়বিড় করছিলাম, হে প্রভূ, আর নাটক ভাল লাগে না...।
*কয়েদীর লিংক: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_5073.html
সহায়ক সূত্র:
১. সঞ্জীব চৌধুরী: http://www.ali-mahmed.com/2007/11/blog-post.html
বিভাগ
‘কয়েদি’ বই থেকে অংশবিশেষ
এক গ্রাম্য গাতক- লোকন মইসান!
বিচিত্র নামের এই মানুষটা বিচিত্র বাদ্য (পেতলের গামলা) বাজিয়ে গান করেন কী সাবলীল!
বিভাগ
গাতক
Tuesday, December 16, 2008
১০০ পারমানবিক বোমার চেয়ে শক্তিশালি যে বোমা: জুতাবোমা
৬৬ বছর বয়সী নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আইরিশ বেটি উইলিয়ামস ২০০৬-এ বলেছিলেন, "বুশকে আমি সামনে পেলে অবশ্যই তাকে হত্যা করতাম। আজ আমার কাছে অহিংস শব্দটা ভীষণ অপ্রয়েজনীয় মনে হয়"!
এমন একজন বয়স্ক মানুষ, একজন নোবেল লরিয়েট কোন পর্যায়ে গেলে এমন হিংস্র অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন তা সহজেই অনুমেয়। কারণ তিনি ইরাক থেকে ঘুরে এসেছিলেন। সেখানে তিনি দেখেছেন শত-শত শিশুকে বাতিল পুতুলের মত মরে পড়ে থাকতে। অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে যখন তিনি ওখানকার শিশুদের সামনে কথাগুলো বলছিলেন তখন তার চোখে-মুখে ফুটে উঠেছিল তীব্র ঘৃণা!
২০০৩ সালে যৌথ বাহিনীর সুগার কোটেড বড়ির মোড়কে আমেরিকা আক্রমনের পর থেকে ২০০৫ পর্যন্ত ইরাক যুদ্ধের ভয়াবহতার কারণে ১৬ হাজার বৃটিশ সেনা চাকরি ছেড়েছিল।
তো এমন নোবেল লরিয়েট, দুর্ধর্ষযোদ্ধাদেরই যদি এই অবস্থা হয় আমি কোন ছার!
আমি আমার টাট্টিখানার দরজায় আমেরিকা-বৃটিনের পতাকা লাগালে লোকজনদের সূক্ষরূচি আহত হয় বুঝি! আর এইসব সভ্য দেশের অসভ্য লোকদের বর্বরতার কারণে আমার মস্তিষ্কে যে শর্ট-সার্কিট হয়ে যেত, পাগল-পাগল লাগত এর বুঝি কোন দাম নেই? কসম, তখন মরে যেতে ইচ্ছা করত।
হায়, নপুংসক আমি, কীই-বা করার ছিল ৩ টাকা দামের এই কলমবাজের; অনর্থক কলমবাজি করা ব্যতীত।
বুশ ওরফে জঙ্গল। এই গ্রহে জঙ্গলের আইন চালু করেছিল। এখানে ছাপার অক্ষরে কথা চালাচালির সুযোগ কই!
তবে মানুষটাকে মেরে ফেললে কী লাভ হত? নিমিষেই জাগতিক আনন্দ-বেদনার বাইরে চলে যেত! তারচে এই-ই ভাল হল। বুশের বাকি জীবন এই জুতা মারার স্মৃতি তাড়া করুক এটা আমার সুতীব্র চাওয়া। তাড়া করবেই। কারণ ধারণা করি, বুশ পুরাপুরি রোবট না কেননা রোবটদের প্রজনন-ক্ষমতা নাই বলেই জানি (বুশের ২টা মেয়ে আছে বলেই শুনেছি। এই নিয়ে কারও সংশয় থাকলে তাদের ডিএনএ টেস্ট করাতে পারেন। )
*লেখাটা অসমাপ্ত। আরও লেখার ছিল। পরে হয়তো যোগ করব।
'ফ্রিডম' বই থেকে খানিকটা তুলে দিচ্ছি:
বুশ, এ মানসিক রোগে ভুগছে; অ্যাটেনশন ডেফেশিট হাইপার অ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার।
বুশকে যদি বলা হয়, তুমি সারফেস উঁচু করো। এ করবে কি, সব লোকজন মেরে কবর বানিয়ে সারফেস উঁচু করে ফেলবে। এবং করছেও তাই!
আমাদের দুর্ভাগ্য, বুশ-এর মতো মানুষ পৃথিবীর মাথায় বনবন করে ছড়ি ঘুরাচ্ছে। কোন দেশের নিয়তি নির্ভর করে সেই দেশের শাসক কতটুকু পেটের পীড়াগ্রস্থ তার উপর। আসলেই পৃথিবীর নিয়তি নির্ভর করে বুশ সাহেব ঠিক মতো ডেলিভারী দিচ্ছেন কিনা, রেস্টরুমে !
এই মানুষটা এ গ্রহের কী যে বিপুল ক্ষতি করছে তার ইয়াত্তা নাই! ইরাকের হাজার হাজার বছরের সভ্যতা গুড়িয়ে দিয়েছে। একজন মানব সন্তানের প্রতি জন্তর চেয়েও খারাপ আচরণ করেছে। ইরাকের পবিত্র জায়গাগুলো অপবিত্র করেছে।
ইসলামের ধারক-বাহক আরব দেশ নিশ্চুপ। কিন্তু এটা ছিল আসলে এসিড টেস্ট- ভবিষ্যতে সৌদির পবিত্র জায়গাগুলোর জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি হলো।
বুশ, ইরাকের লোকজনদের ভাবনা এলোমেলো করে দিয়েছে। একজন ইরাকি কুর্দি আরি বলেন: 'I know i am recist but i can’t help it. আরবদের আমি ঘৃণা করি। এমনকি মুসলমানদেরকেও। আমি কোরআন পড়ি না- কেন না এটা আরবীতে লেখা। আমি ইসলাম মানি না কেননা আরবদের মাধ্যমে ইসলাম এসেছে'।
জঙ্গল সাহেব আমাদের জঙ্গলের আইনের বদলে গণতন্ত্র শেখান! শেখান তেলের সংগে কেমন করে রক্ত মেশাতে হয়। কেমন করে হাইটেক মারণাস্ত্রগুলোর জান্তব মহড়া দিতে হয়।
একজন মানুষকে হত্যা করলে চরম শাস্তি দেয়া হয় অথচ বুশকে লক্ষ-লক্ষ মানুষ হত্যার জন্য কোন শাস্তি দেয়ার বিধান নাই- গ্রহবাবা যে!
এটা সত্য বুশ নিজ হাতে কাউকে হত্যা করেনি- তাতে কী! গোল্ডা মায়ারের স্পষ্ট কথা, 'একজনকে নিজ হাতে হত্যা করা আর হত্যা করার সিদ্ধান্ত দেয়ার মধ্যে মুলত কোন পাথর্ক্য নাই'।"
বিভাগ
ক্ষমতার অপব্যবহার
Tuesday, December 9, 2008
কোপানি এন্ড চাবানি ঈদ
আমার মতে ২ ঈদকে সামনে রেখে এই দেশে সবচেয়ে বেশি 'দু-নম্বুরি' হয়। এই বিষয় নিয়ে আবারও আলোচনা করার ফায়দা নেই বিধায় একই বিষয় নিয়ে লেখার লিংকটা...http://www.ali-mahmed.com/2008/10/blog-post.html।
ওষুধের দোকানে দেখলাম ৫০০ টাকা করে টাকা তোলা হচ্ছে ড্রাগ সুপার সাহেবের জন্য। এই সুপার সাহেবের আয়ত্বে আছে প্রায় ২০০ দোকান। তাইলে টাকা উঠবে আনুমানিক ১ লাখ!
এই সুপার সাহেব যখন লাখ টাকার গরু কোরবানি দেবেন তখন আমাদের মত লোকরা পশ্চাদদেশে চাপড় মেরে লাখ-উল্লাস করব এতে আর সন্দেহ কী!
ওষুধের দোকানে দেখলাম ৫০০ টাকা করে টাকা তোলা হচ্ছে ড্রাগ সুপার সাহেবের জন্য। এই সুপার সাহেবের আয়ত্বে আছে প্রায় ২০০ দোকান। তাইলে টাকা উঠবে আনুমানিক ১ লাখ!
এই সুপার সাহেব যখন লাখ টাকার গরু কোরবানি দেবেন তখন আমাদের মত লোকরা পশ্চাদদেশে চাপড় মেরে লাখ-উল্লাস করব এতে আর সন্দেহ কী!
বিভাগ
এলিয়েন
Monday, December 8, 2008
এক কলমযোদ্ধা
ছবিটি সেলিনা পারভীনের। 'শিলালিপি' পত্রিকার প্রকাশক, সম্পাদক। মুক্তিযোদ্ধাদের ওষুধ, খাবার দিয়ে সহায়তা করতেন।
১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর, দুপুর। পাকবাহিনির দোসররা তাকেঁ তার বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়।
তখনও তাঁর দুপুরের খাওয়া হয়নি। ৮ বছরের ছেলে সুমনকে বলে গিয়েছিলেন, তুমি খেয়ে নাও, আমি ফিরে খাব। ওয়ান-ওয়ে জার্নি, সেই শেষ যাওয়া।
তাঁর সন্তান সুমনের কী মাথা খারাপ? তিনি কিনা তাঁর মায়ের নামে সামান্য একটা রাস্তার নামকরণ করার জন্য বছরের পর বছর ধরে সরকার বাহাদুরের লোকজনদের বিরক্ত করেছেন।
কী আস্পর্ধা!
ছবি ঋণ: আফতাব আহমদ
১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর, দুপুর। পাকবাহিনির দোসররা তাকেঁ তার বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়।
তখনও তাঁর দুপুরের খাওয়া হয়নি। ৮ বছরের ছেলে সুমনকে বলে গিয়েছিলেন, তুমি খেয়ে নাও, আমি ফিরে খাব। ওয়ান-ওয়ে জার্নি, সেই শেষ যাওয়া।
তাঁর সন্তান সুমনের কী মাথা খারাপ? তিনি কিনা তাঁর মায়ের নামে সামান্য একটা রাস্তার নামকরণ করার জন্য বছরের পর বছর ধরে সরকার বাহাদুরের লোকজনদের বিরক্ত করেছেন।
কী আস্পর্ধা!
ছবি ঋণ: আফতাব আহমদ
বিভাগ
১৯৭১: প্রসব বেদনা
সাধুবাদ বনাম মুর্দাবাদ
সাধুবাদ:
"হাইকোর্ট। ২৮ আগষ্ট।
১ দিনে বিচারপতি শরীফ উদ্দিন চাকলাদার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ প্রায় ৩১৯ মিনিটে ২৯৮ মামলার রায় দিয়েছেন। প্রতি মামলার জন্য লেগেছে গড়ে ৬৩ সেকেন্ড বা প্রায় ১ মিনিট"। (০৯.১১.০৮, মিজানুর রহমান খান/ প্রথম আলো)
এ ঐতিহাসিক!
এ অসম্ভব!!
এ অভূতপূর্ব!!!
হাইকোর্টের একটি মামলা অন্যের চোখ না, নিজের চোখে দেখার সুযোগ হয়েছিল বলেই জানি এটা কী অসম্ভব একটা কাজ! কোর্টে একটি মামলার কাগজপত্র গুছিয়ে উঠাতে আর নামাতে যে সময় ব্যয় হয় তাতে এই সময়ের হিসাবের কাছাকাছিও নেই!
আমি নিশ্চিত, এই গ্রহে আর কোথাও এমন রেকর্ড ভেঙ্গে খানখান করে ফেলার নজির নেই। গিনিস রেকর্ডে নাম উঠাটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। দেশের এমন একটা সাফল্যে মনটা কেমন শান্তি শান্তি লাগছে। আহা, মানুষের অসাধ্য কী আছে!
মাননীয় বিচারপতি জনাব শরীফ উদ্দিন চাকলাদারকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাই।
মুর্দাবাদ:
“মাননীয় বিচারক মি. ফ্যাঙ অতন্ত কৃশকায় এবং গরম মেজাজের লোক। ইনি অশক্ত শরিরে যতোটুকু সহ্য হয় তারচেয়ে বেশি মদ্যপান করেন। ফল যা হবার তাই হয়, সর্বদা মেজাজ টং হয়ে থাকে। তাছাড়া ক-দিন পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকায় তাঁর লেখা মামলার এক রায়-এর কঠিন সমালোচনা বেরিয়েছে। পত্রিকাটি লিখেছে, এ নিয়ে তিনশোবার বিচারক ফ্যাঙের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়েছে...”। (অলিভার টুইস্ট/ চার্লস ডিকেন্স)
এ অন্যায়!
এ নিন্দনীয়!!
এ ক্ষমার অযোগ্য!!!
মাননীয় বিচারক মি. ফ্যাঙের ঘোর নিন্দা জানাই।
"হাইকোর্ট। ২৮ আগষ্ট।
১ দিনে বিচারপতি শরীফ উদ্দিন চাকলাদার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ প্রায় ৩১৯ মিনিটে ২৯৮ মামলার রায় দিয়েছেন। প্রতি মামলার জন্য লেগেছে গড়ে ৬৩ সেকেন্ড বা প্রায় ১ মিনিট"। (০৯.১১.০৮, মিজানুর রহমান খান/ প্রথম আলো)
এ ঐতিহাসিক!
এ অসম্ভব!!
এ অভূতপূর্ব!!!
হাইকোর্টের একটি মামলা অন্যের চোখ না, নিজের চোখে দেখার সুযোগ হয়েছিল বলেই জানি এটা কী অসম্ভব একটা কাজ! কোর্টে একটি মামলার কাগজপত্র গুছিয়ে উঠাতে আর নামাতে যে সময় ব্যয় হয় তাতে এই সময়ের হিসাবের কাছাকাছিও নেই!
আমি নিশ্চিত, এই গ্রহে আর কোথাও এমন রেকর্ড ভেঙ্গে খানখান করে ফেলার নজির নেই। গিনিস রেকর্ডে নাম উঠাটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। দেশের এমন একটা সাফল্যে মনটা কেমন শান্তি শান্তি লাগছে। আহা, মানুষের অসাধ্য কী আছে!
মাননীয় বিচারপতি জনাব শরীফ উদ্দিন চাকলাদারকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাই।
মুর্দাবাদ:
“মাননীয় বিচারক মি. ফ্যাঙ অতন্ত কৃশকায় এবং গরম মেজাজের লোক। ইনি অশক্ত শরিরে যতোটুকু সহ্য হয় তারচেয়ে বেশি মদ্যপান করেন। ফল যা হবার তাই হয়, সর্বদা মেজাজ টং হয়ে থাকে। তাছাড়া ক-দিন পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকায় তাঁর লেখা মামলার এক রায়-এর কঠিন সমালোচনা বেরিয়েছে। পত্রিকাটি লিখেছে, এ নিয়ে তিনশোবার বিচারক ফ্যাঙের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়েছে...”। (অলিভার টুইস্ট/ চার্লস ডিকেন্স)
এ অন্যায়!
এ নিন্দনীয়!!
এ ক্ষমার অযোগ্য!!!
মাননীয় বিচারক মি. ফ্যাঙের ঘোর নিন্দা জানাই।
Subscribe to:
Posts (Atom)