বুকিন ঘুমুচ্ছে। মাঝরাতে ওর ঘুম ভাঙ্গানো হয়েছে। এটার জন্য অবশ্য অনেক কায়দা-কানুন করতে হয়েছে। প্রথমে বুকিনের ছোট্ট খাটটা অনেকক্ষণ ধরে বেদম ঝাঁকানো হলো। পর্যায়ক্রমে ফোস্কা পড়া গরম, বরফ ঠান্ডা বাতাস, কান ফাটানো শব্দে ঘরটা ভরে গেল। এত কাঠখড় পুড়িয়েও ফল মিললো না-দেখে বুকিনের ছোট্ট খাটটা উল্টে ফেলা হলো।
এবার বুকিন বিকট হাই তুলল যা অবিকল টারজানের মতো শোনাল। বুকিন ঘুমঘুম চোখে দেখল, অদ্ভুত এক আকৃতি। আকৃতিটা অনেকটা কঙ্কালের মতো। দেখো দিকি কান্ড, এর দেখি আবার মুন্ডু নেই! না-না আছে, মুন্ডুটা আবার হেলমটের মতো বগলে চেপে রেখেছে!
বুকিন অসম্ভব বিরক্ত হয়ে বলল,‘হেই-হেই, কি জিনিস তুমি?’
আকৃতিটা হতভম্ব! এ আবার কেমন প্রশ্ন? কি জিনিস তুমি, সে কি জিনিস- আলু, পটল? আর এটা কী ভাষা, হেই-হেই! অথচ বাচ্চাটা ভয়ে আধমরা হয়ে মুর্ছা যাওয়ার পূর্বে বলবে: কে, ক্কে-কে, কে আপনি... তা না...কেমন ভয়হীন তাচ্ছিল্য করে চ্যাটাং-চ্যাটাং করে কথা বলছে!
আকৃতিটা হতভম্ব! এ আবার কেমন প্রশ্ন? কি জিনিস তুমি, সে কি জিনিস- আলু, পটল? আর এটা কী ভাষা, হেই-হেই! অথচ বাচ্চাটা ভয়ে আধমরা হয়ে মুর্ছা যাওয়ার পূর্বে বলবে: কে, ক্কে-কে, কে আপনি... তা না...কেমন ভয়হীন তাচ্ছিল্য করে চ্যাটাং-চ্যাটাং করে কথা বলছে!
‘আমি রাগী ভূত,’ বলল, আকৃতিটা চিবিয়ে চিবিয়ে।
বুকিন ঠোঁট বেঁকিয়ে বলল, ‘শোনো, বলার ভঙ্গিটা আরও রপ্ত করতে হবে তোমায়, একদম মানাচ্ছে না। আর একদম ফড়ফড় করবে না। ভূত বললেই হয় তাও আবার রাগী ভূত, এইসব কী! মানুষ হলে বলতে পারতে ডক্টর অমুক ম্যানেজার তমুক। এটা তোমার বেলায় খাটে না কারণ তুমি তো আর মানুষ না, ভূত। অবশ্য তুমি যে একটা ফাজিল টাইপের ভূত এতে আমার কোনো সন্দেহ নাই। ভূত, হেহ! ছাগু-ভূত, ছাগুয়া না হলে, কেউ অযথা গভীর রাতে কারো ঘুম ভাঙ্গায়! আমি ডিস্টার্ব হইলাম, বড়ো ডিস্টার্ব হইলাম।’
ভূত স্তম্ভিত। ওর ধারণা ছিল, ওকে দেখামাত্র পুঁচকে এই ছেলেটা মুতে বিছানা ভাসিয়ে ফেলবে। অথচ...! হা ভূতরাজ, মুন্ডুটা হেলমেটের মতো কোমরের কাছে কায়দা করে ধরে রাখতে কতো অনুশীলনই না তাকে করতে হয়েছে! গুড লর্ড, এইসব হচ্ছেটা কী! ভূতদের মান-সম্মান বলে কিছুই আর রইল না। অপমানে মরে যেতে ইচ্ছা করছে কিন্তু ভূতদের তো আবার দ্বিতীয়বার মরে যাওয়ার কোন নিয়ম নাই।
বুকিন ঠোঁট বেঁকিয়ে বলল, ‘শোনো, বলার ভঙ্গিটা আরও রপ্ত করতে হবে তোমায়, একদম মানাচ্ছে না। আর একদম ফড়ফড় করবে না। ভূত বললেই হয় তাও আবার রাগী ভূত, এইসব কী! মানুষ হলে বলতে পারতে ডক্টর অমুক ম্যানেজার তমুক। এটা তোমার বেলায় খাটে না কারণ তুমি তো আর মানুষ না, ভূত। অবশ্য তুমি যে একটা ফাজিল টাইপের ভূত এতে আমার কোনো সন্দেহ নাই। ভূত, হেহ! ছাগু-ভূত, ছাগুয়া না হলে, কেউ অযথা গভীর রাতে কারো ঘুম ভাঙ্গায়! আমি ডিস্টার্ব হইলাম, বড়ো ডিস্টার্ব হইলাম।’
ভূত স্তম্ভিত। ওর ধারণা ছিল, ওকে দেখামাত্র পুঁচকে এই ছেলেটা মুতে বিছানা ভাসিয়ে ফেলবে। অথচ...! হা ভূতরাজ, মুন্ডুটা হেলমেটের মতো কোমরের কাছে কায়দা করে ধরে রাখতে কতো অনুশীলনই না তাকে করতে হয়েছে! গুড লর্ড, এইসব হচ্ছেটা কী! ভূতদের মান-সম্মান বলে কিছুই আর রইল না। অপমানে মরে যেতে ইচ্ছা করছে কিন্তু ভূতদের তো আবার দ্বিতীয়বার মরে যাওয়ার কোন নিয়ম নাই।
এবার ভূত রাগী গলায় বলল, ‘অযথা ঘুম ভাঙ্গিয়ে রসিকতা করব, আমি কী গোপাল ভাঁড়, না মি. বীন, নাকি টেলি সামাদ! শোনো খোকা, ব্যাপারটা খুব জরুরী। আজ আমাদের ভূত দিবস।’
বুকিনের দু-চোখ ঘুমে জড়িয়ে আসছে। এপাশ ওপাশ ঢুলতে-ঢুলতে বলল, ‘ভূ-ভাত দিবস, বেশ-বেশ। আমরা করছি ফাস্ট ফুড-ডোনাট দিবস আর তোমরা করছ ভাত দিবস, তা মন্দ না! কিন্তু ব্রাদার, ভাত খেয়েও তোমার শরীরে দেখছি এক ছটাক মাংসও নাই, বিষয়টা কী!’
ভূতটা এবার দুঃখিত হয়ে বলল, ‘খোকা, আমি একজন বয়স্ক ভূত। আমার সঙ্গে তোমার আচরণ দেখে কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। আমি বলছি ভূত দিবস আর তুমি কিনা-!’ এই মুহুর্তে ভূতটাকে দেখে মনে হচ্ছে কাঁদার উপায় থাকলে এ নির্ঘাত ভেউ-ভেউ করে কেঁদে ফেলত। কিন্তু কাঁদার জন্য চোখ তো দূরের কথা, তার চোখের মনিই নাই!
ভূতটা এবার দুঃখিত হয়ে বলল, ‘খোকা, আমি একজন বয়স্ক ভূত। আমার সঙ্গে তোমার আচরণ দেখে কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। আমি বলছি ভূত দিবস আর তুমি কিনা-!’ এই মুহুর্তে ভূতটাকে দেখে মনে হচ্ছে কাঁদার উপায় থাকলে এ নির্ঘাত ভেউ-ভেউ করে কেঁদে ফেলত। কিন্তু কাঁদার জন্য চোখ তো দূরের কথা, তার চোখের মনিই নাই!
বুকিন এবার কোমল গলায় বলল, ‘সরি, তোমার মানে আপনার কথা ঠিক শুনতে পাইনি তো। ইয়ে, ভূতদের আবার দিবস-টিবস আছে নাকি?’
ভূত রাগে গসগস করে বলল, ‘হোয়াই, হতে পারে না কেন! তোমরা গাছ-দিবস, পশু-দিবস, ভাল্লুক না কি যেন 'ভালুবাসা' দিবস, লাখ লাখ দিবস করো আর আমরা বছরে একটা দিবস, 'ভূত দিবস' পালন করতে পারব না, এটা কেমন বিচার! আমরা কি মানুষ মানে ভূত না। আমাদের আবেগ বলে কী কিছু নেই!’
বুকিনের গলায় উষ্মা, ‘আহা ওভাবে বলবেন না, গাছ দিবস না আমরা 'বৃক্ষ রোপণ' দিবস পালন করি।’
ভূত রাগে গসগস করে বলল, ‘হোয়াই, হতে পারে না কেন! তোমরা গাছ-দিবস, পশু-দিবস, ভাল্লুক না কি যেন 'ভালুবাসা' দিবস, লাখ লাখ দিবস করো আর আমরা বছরে একটা দিবস, 'ভূত দিবস' পালন করতে পারব না, এটা কেমন বিচার! আমরা কি মানুষ মানে ভূত না। আমাদের আবেগ বলে কী কিছু নেই!’
বুকিনের গলায় উষ্মা, ‘আহা ওভাবে বলবেন না, গাছ দিবস না আমরা 'বৃক্ষ রোপণ' দিবস পালন করি।’
ভূত বলল, ‘হাতির ডিম।’
বুকিনের বিভ্রান্ত চোখ, ‘মানে?’
‘আমরা তো তোমাদের মত না তাই আমরা ভূতরা তাচ্ছিল্য করে ঘোড়ার ডিম না বলে 'হাতির ডিম' বলি। তা যা বলছিলাম, তোমাদের কোন মন্ত্রী এলে, একটা গাছ লাগাতে লাখ খানেক টাকা খরচ করো। অনুষ্ঠান শেষ হলে নার্সারী থেকে ভাড়া করে আনা ক্রিসমাস ট্রিগুলো নার্সারীর লোকজনরা উপড়ে নিয়ে যায়। হাহ!’
বুকিন উষ্ণ হয়ে বলল, ‘আপনি ভূত বলেই খারাপটা দেখছেন। জানেন, গাছ না লাগালে কি হবে- পৃথিবীর ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষ মরে সাফ হয়ে যাবে।’
বুকিনের বিভ্রান্ত চোখ, ‘মানে?’
‘আমরা তো তোমাদের মত না তাই আমরা ভূতরা তাচ্ছিল্য করে ঘোড়ার ডিম না বলে 'হাতির ডিম' বলি। তা যা বলছিলাম, তোমাদের কোন মন্ত্রী এলে, একটা গাছ লাগাতে লাখ খানেক টাকা খরচ করো। অনুষ্ঠান শেষ হলে নার্সারী থেকে ভাড়া করে আনা ক্রিসমাস ট্রিগুলো নার্সারীর লোকজনরা উপড়ে নিয়ে যায়। হাহ!’
বুকিন উষ্ণ হয়ে বলল, ‘আপনি ভূত বলেই খারাপটা দেখছেন। জানেন, গাছ না লাগালে কি হবে- পৃথিবীর ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষ মরে সাফ হয়ে যাবে।’
ভূত এবার আরাম করে খাটে পা ঝুলিয়ে বসল, হাড়ে-হাড়ে ঘসা লেগে কেমন খটখট শব্দ হচ্ছে। বুকিনের মুখে প্রায় এসে পড়েছিল: আহা, হাড্ডি-হুড্ডিতে গ্রিজ লাগান না কেন!
ভূত এবার হেলাফেলা ভঙ্গিতে বলল, ‘পৃথিবীতে মানুষ না-থাকলেই আমরা ভূতরা মজা করে থাকব। মানুষ বড়ো যন্ত্রণা করে। এরা পাজি-এরা দুষ্ট! একে-একে সব গাছ কেটে ফেলছে। আমাদের গেছো ভূতদের যে একটা গাছ প্রয়োজন তা আমরা গেছো ভূতরা যাবোটা কোথায়! ভাবো দেখি, গাছের চেয়ে ভূতের সংখ্যা বেশি। আমার আগের গাছটা কেটে ফেলার পর এক বছর ফ্যা-ফ্যা করে ঘুরেছি। গাছ দখলে চ্যাংড়া ভূতদের সঙ্গে কী আমি পারি, বলো! বুড়া হয়েছি না, গেটিং ওল্ড!’
ভূত এবার হেলাফেলা ভঙ্গিতে বলল, ‘পৃথিবীতে মানুষ না-থাকলেই আমরা ভূতরা মজা করে থাকব। মানুষ বড়ো যন্ত্রণা করে। এরা পাজি-এরা দুষ্ট! একে-একে সব গাছ কেটে ফেলছে। আমাদের গেছো ভূতদের যে একটা গাছ প্রয়োজন তা আমরা গেছো ভূতরা যাবোটা কোথায়! ভাবো দেখি, গাছের চেয়ে ভূতের সংখ্যা বেশি। আমার আগের গাছটা কেটে ফেলার পর এক বছর ফ্যা-ফ্যা করে ঘুরেছি। গাছ দখলে চ্যাংড়া ভূতদের সঙ্গে কী আমি পারি, বলো! বুড়া হয়েছি না, গেটিং ওল্ড!’
বুকিন ছলছল চোখে বলল, ‘আহা-আহা, আপনার থাকার জায়গা নাই। কী কষ্ট! তা আপনি আমার এখানে থাকেন না কেন। বাবাকে বললে না করবেন না। আমার বাবা কিন্তু খুব ভাল- আমি যা চাই তাই দেন। আমার বাবার মত ভাল মানুষ এই পৃথিবীতে নাই!’
ভূত মুন্ডুবিহীন ধড় নাড়িয়ে বলল, ‘না-না, ক-দিন হলো থাকার সমস্যার একটা সমাধান হয়েছে। 'সার্ক ফোয়ারা' দেখেছ তো, ওটা দেখতে অনেকটা গাছের কঙ্কালের মতো। আমাদের দেশের চোরারা গাছটা লাগিয়েছে। এরা চোর হলেও লোক ভাল। গাছ লাগায়। ওইটা আমার বড় মনপসন্দ হইছে- 'আমার বাড়ি যাইয়ো বন্ধু বসতে দিবো পিঁরহা...'। তাছাড়া কয়েক কোটি টাকার গাছ। হাহ-হা, হাক্কু, হাক্কু, হাক্কু!’
ভূত মুন্ডুবিহীন ধড় নাড়িয়ে বলল, ‘না-না, ক-দিন হলো থাকার সমস্যার একটা সমাধান হয়েছে। 'সার্ক ফোয়ারা' দেখেছ তো, ওটা দেখতে অনেকটা গাছের কঙ্কালের মতো। আমাদের দেশের চোরারা গাছটা লাগিয়েছে। এরা চোর হলেও লোক ভাল। গাছ লাগায়। ওইটা আমার বড় মনপসন্দ হইছে- 'আমার বাড়ি যাইয়ো বন্ধু বসতে দিবো পিঁরহা...'। তাছাড়া কয়েক কোটি টাকার গাছ। হাহ-হা, হাক্কু, হাক্কু, হাক্কু!’
হাড়ে খটখট শব্দ তুলে ভূতটা হাক্কু, হাক্কু হাসতে গিয়ে তার মুন্ডুটা গড়িয়ে গেল। বুকিন চোখ বড় বড় করে বলল, ‘আচ্ছা, আলাদা মুন্ডুটা হাতে নিয়ে রাখেন কেন আপনি?’
ভূতটা হেসে বলল, ‘শরীরের একটা অংশ ফেলতে মায়া লাগে। তাছাড়া খুব বিষণ্ন বোধ করলে কখনো এটায় লাউয়ের জুস বা জামের জুস পান করি আবার কখনো এটা দিয়ে ফুটবল খেলি।’
বুকিন অবাক হয়ে বলল, ‘একা একা ফুটবল খেলেন, আহারে-আহারে!’ অজান্তেই বুকিন দীর্ঘশ্বাস ফেলল, ‘আহা, আপনার দেখি বড়ো কষ্ট! আচ্ছা, ভূত দিবস কী?’
ভূত এবার হড়বড় করে বলল, ‘ওহ, ভূত দিবস? এইদিন আমরা মানুষের ক্ষতি-টতি করি। বিশেষ করে বাচ্চাদের ভয় দেখাই। এই ধরো কারও প্রিয় কোন জিনিস ফেলে তাকে দুঃখ দেয়া। সরি, আমি তোমার খেলনাগুলো না জানালার বাইরে ফেলে দিয়েছি।’
বুকিন ঠোঁট উল্টে বলল, ‘বেশ করেছেন। যেসব বাচ্চাদের খেলনা নেই ওরা কুড়িয়ে নেবে। জানেন, আমার না ইচ্ছা করে ওদের কিছু খেলনা দেই। আমার কত্তো খেলনা। কিন্তু মা’র জন্য পারি না। খুব কষ্ট হয়। যাহ, এখন ওদের কথা ভেবে কিন্তু আমার মন খুব খারাপ হয়েছে।’
ভূতটা এক পাক নেচে বলল, ‘আজ তোমার মন খারাপ, হুই-হুই। আচ্ছা বুকিন, তোমাকে একটা গান শুনাই, মারাত্মক! তোমার মন ভালো হবে, ভূত রাজার নাম নিয়ে শুরু করলাম তাহলে: ‘হে-হে-এ। আমি একটা বৃদ্ধ ভূত, বুকিনের সঙ্গে খেলি কুত কুত । হে-হে-এ, হে- হে- এ- এ-এ।’
ভূতটা হেসে বলল, ‘শরীরের একটা অংশ ফেলতে মায়া লাগে। তাছাড়া খুব বিষণ্ন বোধ করলে কখনো এটায় লাউয়ের জুস বা জামের জুস পান করি আবার কখনো এটা দিয়ে ফুটবল খেলি।’
বুকিন অবাক হয়ে বলল, ‘একা একা ফুটবল খেলেন, আহারে-আহারে!’ অজান্তেই বুকিন দীর্ঘশ্বাস ফেলল, ‘আহা, আপনার দেখি বড়ো কষ্ট! আচ্ছা, ভূত দিবস কী?’
ভূত এবার হড়বড় করে বলল, ‘ওহ, ভূত দিবস? এইদিন আমরা মানুষের ক্ষতি-টতি করি। বিশেষ করে বাচ্চাদের ভয় দেখাই। এই ধরো কারও প্রিয় কোন জিনিস ফেলে তাকে দুঃখ দেয়া। সরি, আমি তোমার খেলনাগুলো না জানালার বাইরে ফেলে দিয়েছি।’
বুকিন ঠোঁট উল্টে বলল, ‘বেশ করেছেন। যেসব বাচ্চাদের খেলনা নেই ওরা কুড়িয়ে নেবে। জানেন, আমার না ইচ্ছা করে ওদের কিছু খেলনা দেই। আমার কত্তো খেলনা। কিন্তু মা’র জন্য পারি না। খুব কষ্ট হয়। যাহ, এখন ওদের কথা ভেবে কিন্তু আমার মন খুব খারাপ হয়েছে।’
ভূতটা এক পাক নেচে বলল, ‘আজ তোমার মন খারাপ, হুই-হুই। আচ্ছা বুকিন, তোমাকে একটা গান শুনাই, মারাত্মক! তোমার মন ভালো হবে, ভূত রাজার নাম নিয়ে শুরু করলাম তাহলে: ‘হে-হে-এ। আমি একটা বৃদ্ধ ভূত, বুকিনের সঙ্গে খেলি কুত কুত । হে-হে-এ, হে- হে- এ- এ-এ।’
বুকিনের মনে হচ্ছে, এই মুহুর্তে ওর চেয়ে সুখী আর কেউ নেই। ভূতটা কী এক বিচিত্র ভঙ্গিতে ততোধিক বিচিত্র গান গেয়ে বুকিনের মন ভাল করার চেষ্টা করছে। আহা-আহা, ভূতটার মনে কী মায়াই না গো!
বুকিন এবার থেমে-থেমে বলল, ‘আচ্ছা, মরে গেলে আমিও কি আপনার মত ভূত হবো?’
ভূতটা হাহাকার করে উঠল, ‘না-না-না, বুকিন, না! গড ব্লেস য়্যু। তুমি কেন ভূত হবে, কেবল অসৎ মানুষরা মরে গেলেই ভূত হয়।’
বুকিন অবাক, ‘তাহলে এমন ভাল আপনি কেন ভূত হলেন? আপনি কি অসৎ ছিলেন?’
ভূত লজ্জায় খানিকটা খাটো হয়ে ভাঙ্গা গলায় বলল, ‘হ্যাঁ। জীবিত থাকতে আমি দেদারসে ঘুষ খেতাম। হারাম খেতাম।’
‘ঘুষ কি-হারাম কি?’
‘থাকগে, এতো জেনে তোমার কাজ নেই। এসব বড়দের ব্যাপার। কুৎসিত ব্যাপার।’
বুকিন বলল, ‘বলেন না, প্লিজ।’
ভূত চুপ করে আছে। বুকিন এবার বড় অসহিষ্ণু, ‘না না, চুপ করে থাকবেন না, বলতে হবে। বলতে হবে-বলতে হবে।’
ভূতটা হাহাকার করে উঠল, ‘না-না-না, বুকিন, না! গড ব্লেস য়্যু। তুমি কেন ভূত হবে, কেবল অসৎ মানুষরা মরে গেলেই ভূত হয়।’
বুকিন অবাক, ‘তাহলে এমন ভাল আপনি কেন ভূত হলেন? আপনি কি অসৎ ছিলেন?’
ভূত লজ্জায় খানিকটা খাটো হয়ে ভাঙ্গা গলায় বলল, ‘হ্যাঁ। জীবিত থাকতে আমি দেদারসে ঘুষ খেতাম। হারাম খেতাম।’
‘ঘুষ কি-হারাম কি?’
‘থাকগে, এতো জেনে তোমার কাজ নেই। এসব বড়দের ব্যাপার। কুৎসিত ব্যাপার।’
বুকিন বলল, ‘বলেন না, প্লিজ।’
ভূত চুপ করে আছে। বুকিন এবার বড় অসহিষ্ণু, ‘না না, চুপ করে থাকবেন না, বলতে হবে। বলতে হবে-বলতে হবে।’
ভূত অনেকক্ষণ চুপ থেকে থেমে থেমে বলল, ‘এটা নাহয় তোমার বাবাকে জিজ্ঞেস করো। বিদায়, ব্যাটা। ভাল থেক, এই রকমই, পানির মতো টলটলে। আর বুকিন শোনো, তোমাকে এ কথাটা বলতে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে, খুব শিগগির তোমার বাবার সঙ্গে আমার দেখা হবে, এবং তারও একটা গাছের প্রয়োজন হবে! একটা ভূতগাছ...।’
* আলী মাহমেদ, শুভ'র ব্লগিং বই থেকে।
1 comment:
আপনার লেখাটা পড়ে লেখালেখির ইচ্ছাটা এখন নাই. কেমন করে লেখেন এমন লেখা ভাই?
Post a Comment