খোদেজার মা খোদেজাকে ডেকে ডেকে হয়রান, কই ল মুখপুড়ি, উত্তর দ্যাস না ক্যা!
খোদেজা ইচ্ছা করেই উত্তর দিচ্ছে না। মা-র উপরও ওর রাগ, কঠিন রাগ। মা কেন বাজানকে বুঝিয়ে বলেন না। মা বললে বাজান গুরুত্ব না দিয়ে পারবেন না।
ও বুঝতে পারছে মা খুব রেগে আছেন। এমনিতে মা ওকে ডাকলে সুর করে বলেন: কই রে আমার লেংটি বেডি, কই রে আমার ছেংটি বেডি। মা এটা অনেক আগে থেকেই বলে আসেন। খোদেজার সমস্যা হল, ও এখনও বিছানা ভাসিয়ে ফেলে। মা গুমগুম করে পিঠে কিল দিতেন আর বলতেন: থুয়া-থুয়া-থুয়া, এত্তো বড় মাইয়া বিছনায় মুতে! সকালে উঠে নিয়ম করে বলতেনই বলতেন: লেংটি বেডি-ছেংটি বেডি, লেংটা ভুতুনি খেতায় মুতুনি।
খোদেজা তীক্ষ গলায় চেঁচিয়ে উত্তর দিল, পদাপদি করবা না, ভালা লাগে না।
ইশ, আমার হড়ি-আম্মা, আমার সুয়ামির আম্মা গো, ডরাইছি।
মা, কতা কইবা না আমার লগে।
কি হইছে আপনের, এত চেত ক্যা? আপনে কি ধাইন্না মরিছ?
মা, আমার লগে কতা কইয়ো না কইলাম।
খোদেজার মা হাসি লুকিয়ে নরম গলায় বললেন, লবন দিয়া কানে ডলা দিলে বুঝবি। কি হইছে ক।
তুমার চোউক নাই?
আছে দুইডা, হইছে কী?
তুমি দেখো না, আমার হাসগুলা মইরা যাইতাছে।
তোর হাস কি আমি গলা টিইপ্যা মাইরা ফালাইতাছি?
খোদেজার এবার ধৈর্যচ্যুতি হল, তুমি বাজানরে কইতে পার না হাসগুলারে পশু হাসপাতালে লয়া যাইতে।
হুনো মাইয়ার কথা! এই ছেমরি, তুই হাগল নি কুনু, ডাক্তার তোর হাসের চিকিত্সা করার লাইগ্যা আক-কইরা বয়া রইছে, না?
হ। বয়া রইছে।
ইশশ, বয়া রইছে পিঁড়ি বিছায়া।
মা, রস করবা না।
হুনো মাইয়ার কতা। অই, তোর লগে রস করুম কা। ইস, আইছে আমার রসের নাগর।
বেডির ঘরে বেডি, তুমার লগে আমি মাতি না।
না মাতলে নাই, বুড়া তোর হাই।
মা, ভালা হইব না কইলাম।
যা-যা, তোর কপালে পিছার বাড়ি।
খোদেজা উত্তর দিল না। চোখের দৃষ্টিতে কেমন একটা ত্রাস! কি এক ভাবনায় তলিয়ে গেছে। খোদেজার মা তার সন্তানের ভাবান্তর লক্ষ করেন। মেয়েটার কি যেন হয়েছে ক-দিন ধরে কিছু বললে কেমন চমকে উঠে। কেমন সন্ত্রস্ত একটা ভাব।
কি হইছে আমার ফাগলি বেডির!
কিসসু না।
কিছু কইলে চমকায়া উঠস ক্যা? তোরে খন্কারের কাছ থিক্যা তাবিজ আইনা দিমু নে। আলগা দুষ থাকলে যাইব গা।
তাবিজ লাগব না।
এবার খোদেজার মা খোদেজার জট বাধা চুল মুঠ করে ধরলেন। জট ছাড়াতে ছাড়াতে বললেন, থুয়া, কেমুন হুডা হইয়া রইছে। তুই আউলা চুলে থাকস দেইখ্যাই আলগা দুষের লিগ্যা তাবিজ লাগব। সারাদিন খালি হাস হাস করলেই হইব, চুল বাংলা সাবান দিয়া ঘসাইলে কি হয়? আবার গোসল করলে কইস তোর মাথাডা ভালা কইরা ধুইয়া দিমু নে।
গোসলের কথা শুনে খোদেজা কুঁকড়ে যায়, অজান্তেই ওর শরীর কেঁপে কেঁপে উঠে। খোদেজার মা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকেন, কিরে, তোর কি হইছে? এমুন করতাছস ক্যা?
কিসসু হয় নাই।
হারামজাদি, থাপড়াইয়া কানপট্টি ফাটায়া ফেলাম। ক, কি হইছে?
খোদেজা চোখের নিমিষে মাকে জড়িয়ে ধরল। কান্নার দমকে হেঁচকি উঠে গেছে। মা একে শান্ত হওয়ার জন্য খানিকটা সময় দিলেন। গায়ে-পিঠে হাত বুলিয়ে ভাঙ্গা গলায় বলে যাচ্ছেন, কান্দে না, আমার মা কান্দে না। খোদেজা, আম্মা কন কি হইছে? মার কাছে কুনু ডর নাই। মার লগে হগ্গল কতা কওন যায়।
অনেকক্ষণ পর খোদেজা খানিকটা সুস্থির হয়। নিচু গলায় থেমে থেমে বলল, মা, কাইল না আমি হাসের শামুকের লিগ্যা বিলে গেছিলাম। গরম লাগতাছিল, ফানিতে ডুব দিলাম। শফিক ভাই-।
কোন শফিক, মাইঝ পাড়ার শফিক?
হ, মা।
হেষে?
শফিক ভাই আমারে দেইখা কেমুন কেমুন করতাছিল।
খোদেজার মা চেঁচিয়ে বললেন, হেষে কি হইল, হেইডা ক।
আমার শইল ধরতে চাইছিল।
হেষে?
টেরেনটা আয়া খাড়াইছে দেইখ্যা ছাইড়া দিল। আমি এক দৌড়ে বাড়িত আইলাম।
খোদেজার মার গা কাঁপছে। তিনি তার মেয়েকে একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছেন। যার অনেকগুলোর অর্থ খোদেজার জানা নাই। খোদেজার এটাও বোধগম্য হচ্ছে না, মা তার শরীর হাতড়ে কি খোঁজার চেষ্টা করছেন!
খোদেজার মার গায়ের কাঁপুনি খানিকটা কমল। তিনি বিড়বিড় করলেন, আল্লা, আমার মাইয়ার ইজ্জত বাঁচাইছ, না খায়া হইলেও মসজিদে মোমবাতি দিমু।
মা, শফিক বাই এমুন করতাছিল ক্যান?
এইগুলা বদ কতা, আল্লাজী গুনা দেয়। হুন খোদেজা, আর কুনু সময় না কয়া বাইত থন দূরে যাইবি না আর শফিকের লগে ভুলেও কথা কইবি না।
কিন্তক মা, শফিক বাই এমুন করল ক্যান?
কইলাম না এইসব বদ কতা। আবার জিগাস।
মা, আমি কিছুই বুঝতাসি না।
এত বুঝার কাম নাই। তুই না কয়া কুনহানেও যাইবি না।
আমার হাসরে হামুক আইন্যা দিব কেডায়?
পিছা মারি তোর হাসের কপালে। হাস হাস হাস, হাস ছাড়া আর কতা নাই।
হাস তুমার কি অনিষ্ট করছে!
অই ছেমরি, অত কতার কাম নাই। তুই আমারে না কয়া কুনহানে যাইবি না। কতা শ্যাষ।
বাজানের খাওন লয়া যাইব কেডায়?
খোদেজার মা চিন্তায় পড়ে গেলেন, তাই তো? খোদেজা ছাড়া তো খাবার নিয়ে যাওয়ার মানুষ নাই। খোদেজার মা নিয়ে যেতে পারবেন না, নিয়ম নাই। গ্রামের নিয়ম কোন মহিলা ফসলের জমিতে পা রাখতে পারে না।
খোদেজা মাথা ঘামাচ্ছে অন্য বিষয় নিয়ে। খোদেজা বুঝে উঠতে পারছে না এইসব রহস্যময় আচরণ। মা কেন এমন করলেন! তার ভাবনার জগৎ এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
সহায়ক সূত্র:
১. খোদেজা: ১
খোদেজা ইচ্ছা করেই উত্তর দিচ্ছে না। মা-র উপরও ওর রাগ, কঠিন রাগ। মা কেন বাজানকে বুঝিয়ে বলেন না। মা বললে বাজান গুরুত্ব না দিয়ে পারবেন না।
ও বুঝতে পারছে মা খুব রেগে আছেন। এমনিতে মা ওকে ডাকলে সুর করে বলেন: কই রে আমার লেংটি বেডি, কই রে আমার ছেংটি বেডি। মা এটা অনেক আগে থেকেই বলে আসেন। খোদেজার সমস্যা হল, ও এখনও বিছানা ভাসিয়ে ফেলে। মা গুমগুম করে পিঠে কিল দিতেন আর বলতেন: থুয়া-থুয়া-থুয়া, এত্তো বড় মাইয়া বিছনায় মুতে! সকালে উঠে নিয়ম করে বলতেনই বলতেন: লেংটি বেডি-ছেংটি বেডি, লেংটা ভুতুনি খেতায় মুতুনি।
খোদেজা তীক্ষ গলায় চেঁচিয়ে উত্তর দিল, পদাপদি করবা না, ভালা লাগে না।
ইশ, আমার হড়ি-আম্মা, আমার সুয়ামির আম্মা গো, ডরাইছি।
মা, কতা কইবা না আমার লগে।
কি হইছে আপনের, এত চেত ক্যা? আপনে কি ধাইন্না মরিছ?
মা, আমার লগে কতা কইয়ো না কইলাম।
খোদেজার মা হাসি লুকিয়ে নরম গলায় বললেন, লবন দিয়া কানে ডলা দিলে বুঝবি। কি হইছে ক।
তুমার চোউক নাই?
আছে দুইডা, হইছে কী?
তুমি দেখো না, আমার হাসগুলা মইরা যাইতাছে।
তোর হাস কি আমি গলা টিইপ্যা মাইরা ফালাইতাছি?
খোদেজার এবার ধৈর্যচ্যুতি হল, তুমি বাজানরে কইতে পার না হাসগুলারে পশু হাসপাতালে লয়া যাইতে।
হুনো মাইয়ার কথা! এই ছেমরি, তুই হাগল নি কুনু, ডাক্তার তোর হাসের চিকিত্সা করার লাইগ্যা আক-কইরা বয়া রইছে, না?
হ। বয়া রইছে।
ইশশ, বয়া রইছে পিঁড়ি বিছায়া।
মা, রস করবা না।
হুনো মাইয়ার কতা। অই, তোর লগে রস করুম কা। ইস, আইছে আমার রসের নাগর।
বেডির ঘরে বেডি, তুমার লগে আমি মাতি না।
না মাতলে নাই, বুড়া তোর হাই।
মা, ভালা হইব না কইলাম।
যা-যা, তোর কপালে পিছার বাড়ি।
খোদেজা উত্তর দিল না। চোখের দৃষ্টিতে কেমন একটা ত্রাস! কি এক ভাবনায় তলিয়ে গেছে। খোদেজার মা তার সন্তানের ভাবান্তর লক্ষ করেন। মেয়েটার কি যেন হয়েছে ক-দিন ধরে কিছু বললে কেমন চমকে উঠে। কেমন সন্ত্রস্ত একটা ভাব।
কি হইছে আমার ফাগলি বেডির!
কিসসু না।
কিছু কইলে চমকায়া উঠস ক্যা? তোরে খন্কারের কাছ থিক্যা তাবিজ আইনা দিমু নে। আলগা দুষ থাকলে যাইব গা।
তাবিজ লাগব না।
এবার খোদেজার মা খোদেজার জট বাধা চুল মুঠ করে ধরলেন। জট ছাড়াতে ছাড়াতে বললেন, থুয়া, কেমুন হুডা হইয়া রইছে। তুই আউলা চুলে থাকস দেইখ্যাই আলগা দুষের লিগ্যা তাবিজ লাগব। সারাদিন খালি হাস হাস করলেই হইব, চুল বাংলা সাবান দিয়া ঘসাইলে কি হয়? আবার গোসল করলে কইস তোর মাথাডা ভালা কইরা ধুইয়া দিমু নে।
গোসলের কথা শুনে খোদেজা কুঁকড়ে যায়, অজান্তেই ওর শরীর কেঁপে কেঁপে উঠে। খোদেজার মা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকেন, কিরে, তোর কি হইছে? এমুন করতাছস ক্যা?
কিসসু হয় নাই।
হারামজাদি, থাপড়াইয়া কানপট্টি ফাটায়া ফেলাম। ক, কি হইছে?
খোদেজা চোখের নিমিষে মাকে জড়িয়ে ধরল। কান্নার দমকে হেঁচকি উঠে গেছে। মা একে শান্ত হওয়ার জন্য খানিকটা সময় দিলেন। গায়ে-পিঠে হাত বুলিয়ে ভাঙ্গা গলায় বলে যাচ্ছেন, কান্দে না, আমার মা কান্দে না। খোদেজা, আম্মা কন কি হইছে? মার কাছে কুনু ডর নাই। মার লগে হগ্গল কতা কওন যায়।
অনেকক্ষণ পর খোদেজা খানিকটা সুস্থির হয়। নিচু গলায় থেমে থেমে বলল, মা, কাইল না আমি হাসের শামুকের লিগ্যা বিলে গেছিলাম। গরম লাগতাছিল, ফানিতে ডুব দিলাম। শফিক ভাই-।
কোন শফিক, মাইঝ পাড়ার শফিক?
হ, মা।
হেষে?
শফিক ভাই আমারে দেইখা কেমুন কেমুন করতাছিল।
খোদেজার মা চেঁচিয়ে বললেন, হেষে কি হইল, হেইডা ক।
আমার শইল ধরতে চাইছিল।
হেষে?
টেরেনটা আয়া খাড়াইছে দেইখ্যা ছাইড়া দিল। আমি এক দৌড়ে বাড়িত আইলাম।
খোদেজার মার গা কাঁপছে। তিনি তার মেয়েকে একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছেন। যার অনেকগুলোর অর্থ খোদেজার জানা নাই। খোদেজার এটাও বোধগম্য হচ্ছে না, মা তার শরীর হাতড়ে কি খোঁজার চেষ্টা করছেন!
খোদেজার মার গায়ের কাঁপুনি খানিকটা কমল। তিনি বিড়বিড় করলেন, আল্লা, আমার মাইয়ার ইজ্জত বাঁচাইছ, না খায়া হইলেও মসজিদে মোমবাতি দিমু।
মা, শফিক বাই এমুন করতাছিল ক্যান?
এইগুলা বদ কতা, আল্লাজী গুনা দেয়। হুন খোদেজা, আর কুনু সময় না কয়া বাইত থন দূরে যাইবি না আর শফিকের লগে ভুলেও কথা কইবি না।
কিন্তক মা, শফিক বাই এমুন করল ক্যান?
কইলাম না এইসব বদ কতা। আবার জিগাস।
মা, আমি কিছুই বুঝতাসি না।
এত বুঝার কাম নাই। তুই না কয়া কুনহানেও যাইবি না।
আমার হাসরে হামুক আইন্যা দিব কেডায়?
পিছা মারি তোর হাসের কপালে। হাস হাস হাস, হাস ছাড়া আর কতা নাই।
হাস তুমার কি অনিষ্ট করছে!
অই ছেমরি, অত কতার কাম নাই। তুই আমারে না কয়া কুনহানে যাইবি না। কতা শ্যাষ।
বাজানের খাওন লয়া যাইব কেডায়?
খোদেজার মা চিন্তায় পড়ে গেলেন, তাই তো? খোদেজা ছাড়া তো খাবার নিয়ে যাওয়ার মানুষ নাই। খোদেজার মা নিয়ে যেতে পারবেন না, নিয়ম নাই। গ্রামের নিয়ম কোন মহিলা ফসলের জমিতে পা রাখতে পারে না।
খোদেজা মাথা ঘামাচ্ছে অন্য বিষয় নিয়ে। খোদেজা বুঝে উঠতে পারছে না এইসব রহস্যময় আচরণ। মা কেন এমন করলেন! তার ভাবনার জগৎ এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
সহায়ক সূত্র:
১. খোদেজা: ১
No comments:
Post a Comment