৩০০ যাত্রি নিয়ে লঞ্চ ডুবে গেছে। সরকার বাহাদুরের পক্ষে তখনকার নৌ পরিবহন মন্ত্রী বাহাদুর ঘোষণা করেছিলেন, উদ্ধার কাজ পরিত্যাক্ত। স্বজনরা তাদের লাশটিও পাননি।
মন্ত্রী বাহাদুর এসি অফিসে বসেও দরদর করে ঘামছিলেন বলেই সম্ভবত চেয়ারের পেছনে তোয়ালে রেখেছিলেন, টিভিতে তোয়ালেসহ-ই ওনাকে দেখা যাচ্ছিল। (চেয়ারের পেছনে তোয়ালে থাকার নিয়ম আছে)।
সবেক সামরিক অফিসার এই মন্ত্রী বাহাদুরের আবার জোশ বেশি তিনি মিডিয়ার কাছে প্রকাশ্যে বলেছিলেন, 'আমি ১২ বছর পর্যন্ত মার দুধ খেয়েছি, আমার ছেলেও ৬ বছর বয়স পর্যন্ত মার দুধ খেয়েছে'।
এমন জোশবান মানুষের কাছ থেকে আমরা 'জোশিলা' সিদ্ধান্ত আশা করতেই পারি। তিনি তরল থেকে তরলায়িত হয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন, লঞ্চ ডুবিতে যারা মারা গেছে তারা না, তাদের পরিবার একটা করে ছাগল পাবে। এটা মিডিয়ায় এসেছিল কিন্তু যেটা আসেনি সেটা হচ্ছে ছাগলের সঙ্গে রশিও দেয়া হবে এই গোপনাঙ্গসম তথ্য!
সেসব পুরনো কাহিনী। আমাদের নতুন কাহিনী প্রয়োজন। আবারও বৈশাখ-বর্ষা আসছে। আবারও লঞ্চ ডুববে। স্বজনরা আবারও লাশের জন্য নদীর দিকে, আকাশপানে তাকিয়ে থাকবেন। না থাকার কোন কারণ নাই।
শুনলে ভয়ে গা কাঁপে আমাদের দেশে সত্যিকার অর্থে উদ্ধারকারি কোন জাহাজ নাই। 'রুস্তম' এবং 'হামজা' নামের যে ২টা উদ্ধারকারি জাহাজ আছে এই বুড়া হাবড়াদের দিন শেষ। একটাকে টেনে নিয়ে যেতে হয়। অন্যটাকে ঠেলে।
আরও কথা আছে, এদের ক্ষমতা ১২০ মেট্রিক টন অথচ এখন যেসব জাহাজ চলাচল করে অধিকাংশই ১২০ মে. টনের উপরে।
এবার সবচাইতে ভয়ংকর তথ্য এই রুস্তম এবং হামজার উদ্ধার কাজে আসা যাওয়াসহ তেলের খরচ দিতে হয়, ডুবন্ত জাহাজের মালিককে। ফল যা হওয়ার তাই হয়, কার দায় পড়েছে শস্তা লাশের জন্য জাহাজ পানি থেকে উঠাবার।
আজও উদ্ধারকারি জাহাজ কেনা হয়নি!
এখন শুনতে পাই আরও ফ্রিগেট-ট্রিগেট টাইপের জিনিসপত্র, মিগ কেনা হবে। আগামিতেও জাহাজ ডুববে, লাশ মিসিং হবে, ছাগলের বদলে কী পাওয়া যাবে সেটাই দেখার বিষয়। এবার সম্ভব ছাগলের সঙ্গে রশি ফ্রি এটা আগেভাগেই প্রকাশ্যে ঘোষণায় আসবে। কারণ এই তথ্য আমরা ওয়েবেই পেয়ে যাব- ডিজিটাল তথ্য!
কাল বসুন্ধরা সিটিতে আগুন লাগল। নিমিষেই পিপড়ার মত লাখ-লাখ মানুষ চলে এসেছে। বসুন্ধরার ২৫০০ দোকানের গড়ে ৫ জন করে ধরলে ১২,৫০০ উদ্বিগ্ন মানুষ বাদ দিলে, অধিকাংশই এসেছে তামাশা দেখতে। এমন তামাশা তো আর হররোজ হয় না। আগুনের লেলিহান শিখার লাল রঙটার অন্য ভুবনের এক আকর্ষন আছে। অনেকের ভেতরের পশুটা হা-হুতাশ করেছে, কেবল ৭ তলা পুড়েই হাল ছেড়ে দিল! লাশ মাত্র ৭!
ওয়াও, গ্রেট শো!
আমার মত হতভাগা যারা ঢাকায় থাকে না এদের ভরসা ইলেকট্রনিক মিডিয়া- আমার ভেতরের পশুটাই বা বাদ যাবে কেন? কোন মিডিয়া কতটা আকর্ষনীয় করে কাভার করতে পারে, চ্যানেলের পর চ্যানেল বদলাও। চ্যানেলগুলো পারলে এটাও জেনে আমাদেরকে জানিয়ে দেয়, আচ্ছা, শেষ নি:শ্বাসটা যখন ত্যাগ করলেন তখন আপনার কেমন লাগছিল?
মিডিয়ার জন্য বেশ জাঁকালো একটা খবর হলে, মিডিয়ার রগরগে খবর না থাকলে চলবে কেন বলুন? আমরা প্রায়শ বিস্মৃত হওয়ার চেষ্টা করি, তথ্যও একটা পণ্য। ভয়াবহ লাভজনক পণ্য! স্বীকার করতে অহেতুক লজ্জার কিছু নেই!
দমকল বাহিনীর ব্রন্টো স্কাই লিফট ১৪ তলার পর যাওয়ার সাধ্য নাই অথচ ভবনটি ২১ তলার। আমার জানামতে ২১ তলার চেয়েও উঁচু ভবন ঢাকায় অনেকগুলো। ২ বছর আগে এনটিভিতে আগুন লাগার সময় যে হাইড্রলিক ল্যাডার ছিল তা ১১ তলা পর্যন্ত যেতে পারত। এই ২ বছরে এই একটি ল্যাডারই যোগ হয়েছে। ২ বছরে আমরা ৩ তলা পর্যন্ত এগুতে পেরেছি!
আমি এ সম্বন্ধে বিশেষ জানি না। কেবল ল্যাডারই কেন? হেলিকপ্টার থেকে অগ্নি নির্বাপক পাউডার বা ফোম ছিটিয়ে দেয়ার কোন না কোন পদ্ধতি নিশ্চয়ই আছে। বা ফাঁক-ফোকর দিয়ে মিসাইল, হারপুন টাইপের কিছু দিয়ে অগ্নি নির্বাপক সামগ্রী ছুড়ে দেয়া? চীন ৯২ সাল থেকেই বজ্রবৃষ্টিকে লক্ষভ্রষ্ট করতে রকেট ছুড়ছে।
সরকারের সদিচ্ছার কথা বাদ দিলেও ব্যক্তি মালিকানায়ও তো এইসব হাইটেক সামগ্রী এনে বানিজ্যিক ভাবে হাই-রাইজ বিল্ডিং বা এই ধরনের শপিং মলের অগ্নি নির্বাপন করা যেতে পারে। যমুনা ফিউচার পার্কের মত অথর্ব একটা কাঠামো বানানো হবে- কারখানা করা হবে কিন্তু কাঁচামালের কথা মাথায় না থাকলে মাথা থেকে লাভ কী?
আমরা এমন আরেকটা শোর জন্য অপেক্ষা করব। গ্রেটেস্ট শো!
তো, তদন্ত কমিটি হবে, কোন এক মন্ত্রী সাহেব চেয়ারের পেছনে তোয়ালে ঝুলিয়ে বলবেন, আগামিতে যেন এমন দুর্ঘটনা না ঘটে...।
ছবিঋণ:
উদ্ধারকাজ পরিত্যক্ত: মো: ইব্রাহিম (পত্রিকার নাম পাওয়া যায়নি)
বসুন্ধরা সিটি: পল্লব মোহাইমেন, প্রথম আলো
মন্ত্রী বাহাদুর এসি অফিসে বসেও দরদর করে ঘামছিলেন বলেই সম্ভবত চেয়ারের পেছনে তোয়ালে রেখেছিলেন, টিভিতে তোয়ালেসহ-ই ওনাকে দেখা যাচ্ছিল। (চেয়ারের পেছনে তোয়ালে থাকার নিয়ম আছে)।
সবেক সামরিক অফিসার এই মন্ত্রী বাহাদুরের আবার জোশ বেশি তিনি মিডিয়ার কাছে প্রকাশ্যে বলেছিলেন, 'আমি ১২ বছর পর্যন্ত মার দুধ খেয়েছি, আমার ছেলেও ৬ বছর বয়স পর্যন্ত মার দুধ খেয়েছে'।
এমন জোশবান মানুষের কাছ থেকে আমরা 'জোশিলা' সিদ্ধান্ত আশা করতেই পারি। তিনি তরল থেকে তরলায়িত হয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন, লঞ্চ ডুবিতে যারা মারা গেছে তারা না, তাদের পরিবার একটা করে ছাগল পাবে। এটা মিডিয়ায় এসেছিল কিন্তু যেটা আসেনি সেটা হচ্ছে ছাগলের সঙ্গে রশিও দেয়া হবে এই গোপনাঙ্গসম তথ্য!
সেসব পুরনো কাহিনী। আমাদের নতুন কাহিনী প্রয়োজন। আবারও বৈশাখ-বর্ষা আসছে। আবারও লঞ্চ ডুববে। স্বজনরা আবারও লাশের জন্য নদীর দিকে, আকাশপানে তাকিয়ে থাকবেন। না থাকার কোন কারণ নাই।
শুনলে ভয়ে গা কাঁপে আমাদের দেশে সত্যিকার অর্থে উদ্ধারকারি কোন জাহাজ নাই। 'রুস্তম' এবং 'হামজা' নামের যে ২টা উদ্ধারকারি জাহাজ আছে এই বুড়া হাবড়াদের দিন শেষ। একটাকে টেনে নিয়ে যেতে হয়। অন্যটাকে ঠেলে।
আরও কথা আছে, এদের ক্ষমতা ১২০ মেট্রিক টন অথচ এখন যেসব জাহাজ চলাচল করে অধিকাংশই ১২০ মে. টনের উপরে।
এবার সবচাইতে ভয়ংকর তথ্য এই রুস্তম এবং হামজার উদ্ধার কাজে আসা যাওয়াসহ তেলের খরচ দিতে হয়, ডুবন্ত জাহাজের মালিককে। ফল যা হওয়ার তাই হয়, কার দায় পড়েছে শস্তা লাশের জন্য জাহাজ পানি থেকে উঠাবার।
আজও উদ্ধারকারি জাহাজ কেনা হয়নি!
এখন শুনতে পাই আরও ফ্রিগেট-ট্রিগেট টাইপের জিনিসপত্র, মিগ কেনা হবে। আগামিতেও জাহাজ ডুববে, লাশ মিসিং হবে, ছাগলের বদলে কী পাওয়া যাবে সেটাই দেখার বিষয়। এবার সম্ভব ছাগলের সঙ্গে রশি ফ্রি এটা আগেভাগেই প্রকাশ্যে ঘোষণায় আসবে। কারণ এই তথ্য আমরা ওয়েবেই পেয়ে যাব- ডিজিটাল তথ্য!
কাল বসুন্ধরা সিটিতে আগুন লাগল। নিমিষেই পিপড়ার মত লাখ-লাখ মানুষ চলে এসেছে। বসুন্ধরার ২৫০০ দোকানের গড়ে ৫ জন করে ধরলে ১২,৫০০ উদ্বিগ্ন মানুষ বাদ দিলে, অধিকাংশই এসেছে তামাশা দেখতে। এমন তামাশা তো আর হররোজ হয় না। আগুনের লেলিহান শিখার লাল রঙটার অন্য ভুবনের এক আকর্ষন আছে। অনেকের ভেতরের পশুটা হা-হুতাশ করেছে, কেবল ৭ তলা পুড়েই হাল ছেড়ে দিল! লাশ মাত্র ৭!
ওয়াও, গ্রেট শো!
আমার মত হতভাগা যারা ঢাকায় থাকে না এদের ভরসা ইলেকট্রনিক মিডিয়া- আমার ভেতরের পশুটাই বা বাদ যাবে কেন? কোন মিডিয়া কতটা আকর্ষনীয় করে কাভার করতে পারে, চ্যানেলের পর চ্যানেল বদলাও। চ্যানেলগুলো পারলে এটাও জেনে আমাদেরকে জানিয়ে দেয়, আচ্ছা, শেষ নি:শ্বাসটা যখন ত্যাগ করলেন তখন আপনার কেমন লাগছিল?
মিডিয়ার জন্য বেশ জাঁকালো একটা খবর হলে, মিডিয়ার রগরগে খবর না থাকলে চলবে কেন বলুন? আমরা প্রায়শ বিস্মৃত হওয়ার চেষ্টা করি, তথ্যও একটা পণ্য। ভয়াবহ লাভজনক পণ্য! স্বীকার করতে অহেতুক লজ্জার কিছু নেই!
দমকল বাহিনীর ব্রন্টো স্কাই লিফট ১৪ তলার পর যাওয়ার সাধ্য নাই অথচ ভবনটি ২১ তলার। আমার জানামতে ২১ তলার চেয়েও উঁচু ভবন ঢাকায় অনেকগুলো। ২ বছর আগে এনটিভিতে আগুন লাগার সময় যে হাইড্রলিক ল্যাডার ছিল তা ১১ তলা পর্যন্ত যেতে পারত। এই ২ বছরে এই একটি ল্যাডারই যোগ হয়েছে। ২ বছরে আমরা ৩ তলা পর্যন্ত এগুতে পেরেছি!
আমি এ সম্বন্ধে বিশেষ জানি না। কেবল ল্যাডারই কেন? হেলিকপ্টার থেকে অগ্নি নির্বাপক পাউডার বা ফোম ছিটিয়ে দেয়ার কোন না কোন পদ্ধতি নিশ্চয়ই আছে। বা ফাঁক-ফোকর দিয়ে মিসাইল, হারপুন টাইপের কিছু দিয়ে অগ্নি নির্বাপক সামগ্রী ছুড়ে দেয়া? চীন ৯২ সাল থেকেই বজ্রবৃষ্টিকে লক্ষভ্রষ্ট করতে রকেট ছুড়ছে।
সরকারের সদিচ্ছার কথা বাদ দিলেও ব্যক্তি মালিকানায়ও তো এইসব হাইটেক সামগ্রী এনে বানিজ্যিক ভাবে হাই-রাইজ বিল্ডিং বা এই ধরনের শপিং মলের অগ্নি নির্বাপন করা যেতে পারে। যমুনা ফিউচার পার্কের মত অথর্ব একটা কাঠামো বানানো হবে- কারখানা করা হবে কিন্তু কাঁচামালের কথা মাথায় না থাকলে মাথা থেকে লাভ কী?
আমরা এমন আরেকটা শোর জন্য অপেক্ষা করব। গ্রেটেস্ট শো!
তো, তদন্ত কমিটি হবে, কোন এক মন্ত্রী সাহেব চেয়ারের পেছনে তোয়ালে ঝুলিয়ে বলবেন, আগামিতে যেন এমন দুর্ঘটনা না ঘটে...।
ছবিঋণ:
উদ্ধারকাজ পরিত্যক্ত: মো: ইব্রাহিম (পত্রিকার নাম পাওয়া যায়নি)
বসুন্ধরা সিটি: পল্লব মোহাইমেন, প্রথম আলো
1 comment:
Post a Comment