এরশাদ-খালেদা জিয়ার সময় যেভাবে লেখা গেছে, ক্যারিকেচার, কার্টুন আঁকা গেছে আওয়ামী শাসনামলে সেটা ছিল স্রেফ একটা স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন! একদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (!) শহিদুল আলমকে নগ্ন পায়ে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেল। কোথায় নিয়ে গেল সেটা আবার অনেক পরে জানা গেল। কোর্টে আবার 'মাই লর্ড' বিচারক পুলিশকে জিজ্ঞেস করছেন, পুলিশ আসামীর (শহিদুল আলমের) ফোনের পাসওয়ার্ড নিয়েছে কিনা, সেদিনই লেখালেখির কফিনে পেরেক ঠোকা হয়ে গেল...!
Saturday, March 21, 2009
বিজ্ঞাপনতরঙ্গ-লেখকরঙ্গ!
এই বঙ্গাল দেশে বই ছাপা হয়নি এমন অ-লেখকদের লেখালেখির তেমন গুরুত্ব নাই। বই প্রকাশ না হলে লেখক হওয়ারও যো নাই।
বই প্রকাশের কর্মকান্ডটা আবার ফ্রেবুয়ারির একুশের বইমেলাকে ঘিরে।
লেখক লিখেই খালাস। বই ছাপা-নাড়াচাড়া করেন প্রকাশক মহেদয়গণ। প্রকাশক, এঁরা নাড়েন বলেই একজন নড়ে, এঁরা নাড়ানাড়ি করেন বলেই একজন ক্রমশ লেখক হয়ে উঠে।
রনজিৎ দাসের কবিতার ভাষায় বলতে হয়,
"...শুঁয়োপোকাটির সঙ্গে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছি, ঠিক তারই মত
স্থূল ও মন্থর, ও পাখিদের খাদ্য হয়ে, আত্মবিষসহ
যদি তার মতো কোনো অবিশ্বাস্য রূপান্তর পেয়ে যাই শুধু এই লোভে..."।
একজন অ-লেখক, অ-লেখক থেকে লেখক হওয়ার অবিশ্বাস্য রূপান্তর পাওয়ার লোভে এগিয়ে যান অমর্যাদাসহ, নির্বোধের কাছে।
বইয়ের বিজ্ঞাপন, এটা এক জটিল বিষয়। কখনও কখনও আমি ধন্ধে পড়ে যাই। এক বইমেলায়, এই দেশের ১নং জনপ্রিয় এক লেখকের একটা বইয়ের বিজ্ঞাপন গেল পত্রিকায়, "প্রথম মুদ্রণ শেষ, দ্বিতীয় মুদ্রণের কাজ চলছে"। অসম্ভব জনপ্রিয় এই লেখকের জন্য এটা বিচিত্র কিছু না কিন্তু ওই পত্রিকা পড়েই আমরা জানলাম ওই বই সেদিন পর্যন্ত মেলায় আসেনি। সাংবাদিক বেচারার চাকুরি যায় যায় অবস্থা কারণ ওই লেখকের দবদবার শেষ নাই, তিনি পত্রিকা অফিস কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন।
এই নিয়ে কেউ কেউ হাসি গোপন করেছিলেন। হাসাহাসির কিছু ছিল না। এমনটি কী হতে পারে না ছাপাখানা থেকে মেলা পর্যন্ত আসতে আসতে বইয়ের সমস্ত কপি নিঃশেষিত। কেন রে বাপু, রাস্তায় ফুল বিক্রি হতে পারলে বই বিক্রি হতে দোষ কী?
যেসব লেখক মর্যাদাবান, জনপ্রিয় এঁরা তাঁদের বইয়ের বিজ্ঞাপন নিজে দেয়ার কথা ভাবনায়ও আনেন না। কিন্তু বিজ্ঞাপন তো যেতে হবে। বিজ্ঞাপন না দেয়া আর অন্ধকারে কোন রূপসী-খুবসুরাত নারির প্রতি মোহনীয় ভঙ্গিতে হাসার মধ্যে কোন পার্থক্য নাই।
জনপ্রিয় লেখকদের বইয়ের বিজ্ঞাপন প্রকাশক মহোদয়ই দেন। উত্কট সমস্যা দেখা দেয়, যখন একই লেখকের কয়েকটি বই প্রকাশিত হয় বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে, তখন। তখন প্রকাশকেরা তাদের খরচ বাঁচাবার জন্য যৌথ চেষ্টায় একই পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন। বিষয়টা বলা যত সহজ কাজটা কিন্তু খুবই কঠিন।
ওই লেখকের বিজ্ঞাপন ছাপা নিয়ে প্রকাশকদের মধ্যে বিস্তর ফোন, মেইল, চিঠি চালাচালি হয়। তারপর তারা বিজ্ঞাপন প্রকাশের জন্য উম্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করেন। বিভিন্ন পত্রিকা ওই দরপত্রে অংশগ্রহন করে। এখানে আবার প্রকাশকরা সূক্ষ কারচুপির আশ্রয় নেন। যে পত্রিকার দর সর্বনিম্ন সে কিন্তু কাজ পায় না। বেছে বেছে ওই পত্রিকাকে কাজ দেয়া হয় যাদের অফিস সেন্ট্রাল এসি, নিদেনপক্ষে কনফারেন্স রুমটা এসি।
কেন? বলছি।
কনফারেন্স রুমে গোলটেবিল আলোচনায় বসেন প্রকাশকবৃন্দ। ওই পত্রিকার সরবরাহকৃত নানাপ্রকার চর্ব্য-চোষ্য-লেহ্য-পেয় দ্বারা আপ্যায়িত হয়ে আলোচনা শুরু করেন। ধরা যাক, প্রকাশকদের মধ্যে আছেন, ৭ জন। স্থির হলো, এরা ১ কলাম ৮ ইঞ্চি বিজ্ঞাপন দেবেন ওই পত্রিকায়। বিজ্ঞাপন খরচ আসবে কমিশন-টমিশন বাদ দিয়ে ৭ হাজার টাকা। মাথাপিছু ১ হাজার করে। এদের কত্তো টাকা বেঁচে গেল!
গোল বাঁধবে লেখকের ছবি নিয়ে, কোন ছবিটা যাবে? যেটায় চোখ ঢুলুঢুলু সেটা, নাকি যেটায় চোখ ঝকঝকে, ওইটা? নাকি...? কোন ছবিটা যাবে এটা নিয়ে লটারি হবে। এখানেও সূক্ষ কারচুপি (এটা বঙ্গালদেশে নাহক কিন্তু গা সওয়া একটা বিষয়)। এক প্রকাশকের আবার ঢুলুঢুলু-ঝকঝকে চোখের কোন ছবিটাই পছন্দ না, তার পছন্দ অন্যটা। যেটায় হাসিটা নাগরালি- মোনালিসা টাইপের, সেটা।
তিনি আবার প্রকাশক হিসাবে অন্যদের চেয়ে খানিকটা কম আলোচিত তাই দায়ে পড়ে প্রতারণার আশ্রয় নেয়া। নাম লেখার দায়িত্বে তিনি ছিলেন বিধায় সবার অলক্ষ্যে লটারির ৭ জনের জায়গায় প্রত্যেকটাতেই নিজের নাম লিখে রাখলেন।
লটারির কাগজ টানার জন্য সম্পাদক সাহেবকে ডেকে আনা হলো (তিনি তখন আবার জরুরি মিটিং-এ সেনানিবাসে ছিলেন জেনারেলদের সঙ্গে)। তিনি ঝড়ের গতিতে ছুটে এসে বিমলানন্দে যে কাগজটি উঠালেন সেটায় ওই প্রকাশকেরই নাম লেখা। পত্রিকায় পুরুষ মোনালিসা মার্কা ছবির বিজ্ঞাপনটাই যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলো।
এই বিজ্ঞাপনে কোন প্রকাশকের বই আগে থাকবে কারটা পরে এই নিয়েও ঘন্ট-জট বাঁধল। পত্রিকা অফিস থেকে 'চিন্তাজট' নামের এক ধাঁধার মাধ্যমে এই সমস্যারও সমাধান হলো। ফাঁকতালে পত্রিকাটি পরদিনের চিন্তাজটের আইডিয়াটাও এখান থেকে পেয়ে গেল।
যাইহোক, তখনও পত্রিকা অফিস ছেড়ে কিন্তু প্রকাশকরা যাননি। বিজ্ঞাপনটা যেন প্রথমেই চোখে পড়ে (এর আবার অনেক কায়দা-কানুন আছে। পাঠক পত্রিকাটা হাতে নিলে পত্রিকার ভাঁজ কোন দিকে থাকবে এটাও সরু চোখে লক্ষ রাখা হয়) এমন একটা জায়গায় ছাপাবার জন্য পেস্টিং পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন। রাত গড়ায়। গভীর রাতে প্রকাশকরা বাড়ি ফিরে তৃপ্তির নি:শ্বাস ফেলে ঘুমাতে যান, ছিনতাইকারিদের চোখ এড়িয়ে।
জনপ্রিয় লেখকদের বই ছাপাবার অনেক হ্যাপা সহ্য করতে হয় বেচারা প্রকাশকদের...।
*ছবি সূত্র: প্রথম আলো
** পোস্টের ছবিটার তেমন গুরুত্ব নাই। উদাহরণের জন্য নেয়া।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
3 comments:
Guru tomake salam.
Thumbs Up!!
Post a Comment