এই দেশের জন্য সবচেয়ে বেশি মায়া কার, বলুন তো? বেনিয়াদের মধ্যে অন্যতম সেল কোম্পানিগুলোর। এদের চোখের জলে কপাল, কপোল দুই-ই ভিজে যায়! সেল কোম্পানিগুলো আক্ষরিক অর্থে এই দেশকে শুষে ছিবড়ে বানিয়ে দিচ্ছে।
আহা, এদের একেকটা বিজ্ঞাপন দেখে স্থির থাকি কেমন করে? কীসব টাচি বিজ্ঞাপন! 'কাছাকাছি থাকুন' কাছা খুলে। এতে কাছা খুলে কেউ নগ্ন হলে কী আসে যায! চিকন-চিকন পায়ের মাঝে ঝুলে আছে বিষয়টা খুব একটা দৃষ্টিনন্দন না, এই যা।
ডিজুস, ফান-ডোজ টাইপের অফারগুলো আমাদের কতটা অসভ্য করে তুলছে এর খোঁজ রাখার কী দায় আমাদের! যেখানে কাছা খুলে নগ্ন পশ্চাদদেশ দৃশ্যমান সেখানে এইসব নিয়ে ভাবার অবকাশই বা কই! উদ্ভটসব অফার, এই প্রজন্ম এখন রাত জেগে বিজবিজ করে কথায় কথায় রাত ভোর করে দেয়। মধ্যরাতে অনুমান করে নাম্বার টিপে টিপে অজ্ঞাত কাউকে অনবরত ফোন করা, 'বাই, এইডা কুন জাগা'? দিনে রোগা মুরগির মত ঝিমানো। এইসব নাকি বন্ধুত্ব বাড়াবার চেষ্টা।
এদের সঙ্গে যোগ দেয় আমাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন মিডিয়া- এরা ভাল পয়সা পেলে নিজ মাকেও বিক্রি করে দেবে, আই বেট। গ্রামীন ফোনের শাহেদের করা ললিপপ চোষার বিজ্ঞাপন, ডানোর ছাতা নিয়ে লাফিয়ে পড়ার বিজ্ঞাপন দেখে এ নিয়ে সন্দেহের আর অবকাশ থাকে না।
সম্প্রতি গ্রামীন ফোন এবং প্রথম আলোর উদ্যেগে 'একাত্তরের চিঠি' সংকলন করে বই আকারে প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আজ মোড়ক উম্মোচনের দিন। সাধু, উদ্যোগটা নি:সন্দেহে, অসাধারণ এতে কোন দ্বিমত নাই। মল খসার মত গ্রামীনের টাকা খসছে এও মন্দের ভাল।
কিন্তু ওই যে শিরোনামে বললাম সাপ আর বেনিয়া...।
এদের উদ্দেশ্যটা আসলে মুক্তিযুদ্ধের আবেগের মোড়কে ধান্দাবাজি। বইটার দাম ধরা হয়েছে ২৫০ টাকা। অনুষ্ঠানটা হচ্ছে শেরাটন হোটেলের বলরুমে। এই দেশের তাবড়-তাবড় লোকজনরা আসবেন, নানাপ্রকার চর্ব্য-চোষ্য-লেহ্য-পেয় দ্বারা আপ্যায়িত হবেন, ফটাফট ছবির পর ছবি তোলা হবে, বেনিয়াদের গৃহপালিত বুদ্ধিজীবীরা আগুনের বাণী বর্ষন করবেন (কিন্তু বইয়ের দাম কম রাখা বিষয়ে টুঁ-শব্দও করবেন না! লাগবেন বাজী?)।
ব্যস, কেল্লাফতে! এই প্রজন্মের আমরা ছলছল চোখে মনিটর ভিজিয়ে ফেলব, আহা, এদের মনে কী মায়া গো!
কিন্তু এই প্রজন্মের, যারা এই বইটা পড়বেন এদের জন্য কী? কচু-ঘেঁচু! আমাকে বলুন, এই দেশে ক-জনের সামর্থ্য আছে ২৫০ টাকা দিয়ে একটা বই কেনার?
এই বইয়ের দাম যেকোন ভাবেই ১০০ টাকার বেশি হওয়াটা অনুচিত। এরা বলবে আমরা রয়েল সাইজ করেছি। রয়েল সাইজ করেন আর মখমল দিয়ে বাঁধান সেটা অন্য কথা।
জাফর ইকবালের মত মানুষ ২২ পৃষ্ঠার বই ১০ টাকায় বিক্রি করতে পারলে প্রথম আলো ওরফে প্রথমা ১২৭ পৃষ্ঠার বই ২৫০ টাকায় বিক্রি করবে কেন? যেখানে এদের পেছনে আছে গ্রামীন ফোনের বেসুমার টাকা। এদের পক্ষেই সম্ভব ছিল বইটার দাম ৫০ টাকা রেখে একটা সু-উদাহরণ সৃষ্টি করা।
শেরাটনে না করে জাদুঘর মিলনায়তন টাইপের কোথাও করলে কেউ এদের প্রতি রে রে করে তেড়ে আসত বলে মনে হয় না। এই প্রজন্মের জন্য উম্মুক্ত রাখা যেত এই অনুষ্ঠান এবং সঙ্গে একটা ঘোষণা, যারা অনুষ্ঠানে আসবেন তারা ৫০ টাকার বিনিময়ে এই বইটা ক্রয় করতে পারবেন।
জাস্ট একটু খোঁজ নিলেই জানা যাবে এই বইটা বের করার পেছনে কী বিপুল টাকাই না খরচ হয়েছে। আমার ধারণা, সঠিক অংকটা জানা গেলে অনেকে ভিমরি খেয়ে জ্ঞান হারাবেন। অথচ বইটা দাম সাধারণের নাগালে রাখার কোন ভাবনা-দায় এদের নাই।
ওই যে বললাম, বেনিয়ার ধান্দাবাজি-চালবাজি। খাসলত কোথায় যাবে? সাপ এবং বেনিয়া, এদের বড় কষ্ট- এরা ইচ্ছা করলেই নিজেদের বদলাতে পারে না।
পরিশেষে এও জানতে খুব ইচ্ছা করে, এই চিঠিগুলোর মালিকদের জন্য কি করা হবে? এই চিঠিগুলোর মালিক এখন কে? আর এইসব ব্যাক্তিগত চিঠি জনসমক্ষে প্রকাশ করাটাই বা কতটুকু সমীচীন? এইসব ফাজলামি না করলে ব্যবসাটা খুব একটা ভালো জমছিল না, না?
No comments:
Post a Comment