আমি খুব একটা অবাক হইনি! আসলে অবাক হওয়ার ক্ষমতাটাই নষ্ট হয়ে গেছে এখন। কাল যদি শুনি, বিগত ২ বছর সেনাপ্রধান দেশে ছিলেন না, এতেও আমি অবাক হব না।
নিজের জাগতিক ছোট-ছোট বেদনার সঙ্গে যোগ হয় দেশের বড় বড় অসঙ্গতি, সব মিলিয়ে পাগল পাগল লাগে নিজেকে। কেবল মনে হয় ইচ্ছামৃত্যু থাকলে বেশ হত। সুইচ টিপলাম, আহ, আরামের ঘুম।
কালে কালে অবাক হই না আর!
সাম্প্রতিক ঘটনা, আমার এই দু:সময়ে যেখানে ১০০ পয়সায় ১ টাকা হয়, কাছের মানুষদের হাত ধরে কাতর হয়ে যখন বলি, আমাকে একটা চাকরি-বাকরি যোগাড় করে দেন তখন মানুষগুলো হা হা করে হাসেন। একজন তো বললেন, 'এইটা নিয়া একটা লেখা দেন'।
সেখানে দূরের একজন মোটা অংকের চেক ধরিয়ে ম্রিয়মান হয়ে, বিমর্ষমুখে যখন বললেন, এই সামান্য টাকা...আমার ক্ষমতায় কুলালে।
আমার উচিৎ ছিল, মানুষটার কাছে এমন একটা কিছু ভঙ্গি করা যাতে তিনি অন্তত আমাকে অকৃতজ্ঞ না ভাবেন। কিন্তু ওই যে বললাম, অবাক হওয়ার ক্ষমতাটাই নষ্ট হয়ে গেছে, পুরোপুরি!
মূল প্রসঙ্গ থেকে সরে এসেছি। আমি ৫০০ টাকার বাজীতে হেরে গিয়েছিলাম। ৫০০ (ভাগ্যিস বেশি ধরিনি। নিয়মানুযায়ী দু-পক্ষকেই টাকাটা নগদ তৃতীয় পক্ষের কাছে জমা রাখতে হয়েছিল। খোদা মেহেরবান, এরচে বেশী টাকা তখন আমার কাছে ছিল না) টাকা হেরে যাওয়ার প্রসঙ্গটা বলি, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরপরই আমি আমার এক সুহৃদের সঙ্গে বাজী ধরেছিলাম, জয়নাল হাজারীরা আর পুনর্বাসিত হবে না। আমার ট্রাম-কার্ড ছিল (এটা আবার বহুল বিতর্কিত শব্দ, জলিল সাহেব এটার পেটেন্ট নিয়ে রেখেছেন কিনা কে জানে?) বিগত ২ বছরে আমরা সবাই কিছু না কিছু শিখেছি। দিনশেষে দেখা গেল, আমরা কিছুই শিখিনি। কেউ কেউ আসলে কখনও শেখে না, মৃত্যুর আগপর্যন্ত। পুনর্মূষিকোভব। দেশের কী হল, যা হওয়ার তাই হল, আমি গরীব বেচারার ৫০০ টাকা জলে গেল।
ফুটবলার, হালের ফুটবলের হালধারী সালাউদ্দিন সাহেব আবার এককাঠি সরেস। তিনি বলেছেন, 'আমি আবার নিয়ম খু্ব মানি।...বসুন্ধরার কাছ থেকে টাকা নেয়ায় আমি বিব্রত না। এমন প্রশ্ন উঠেছে বলে দু:খিত'।
বেশ-বেশ। ইনার সাফ কথা, টাকার গায়ে কারও নাম লেখা থাকে না, কেবল লেখা থাকে বাংলাদেশ গভর্নরের নাম।
গুণদাদার কবিতা থেকে ধার করে বলতে হয়:
"'টাকা হ'লে বাঘের চোখও মেলে'
এই কথাটার যথার্থতা প্রমাণ করতে হ'লে
যেতে হবে সুদূর সুন্দরবনে। নব্য ধনিক
পুঁজিপতি ভাবেন মনে মনে, যাই দেখি গে
ওখানে তো অনায়াসেই বাঘের দেখা মেলে।"
(শান্তির ডিক্রি, নির্মলেন্দু গুন)
এই কথাটার যথার্থতা প্রমাণ করতে হ'লে
যেতে হবে সুদূর সুন্দরবনে। নব্য ধনিক
পুঁজিপতি ভাবেন মনে মনে, যাই দেখি গে
ওখানে তো অনায়াসেই বাঘের দেখা মেলে।"
(শান্তির ডিক্রি, নির্মলেন্দু গুন)
শুনেছিলাম টাকা দেখলে নাকি কাঠের পুতুলও হাঁ করে। আসলেই তো, টাকার চেয়ে জোর আর কিছুতে নাই- টাকা থাকলে একজন মানুষকে কোন রশারশিই আটকে রাখতে পারে না।
শাহআলম সাহেবের সুযোগ্য পুত্রধন 'সানবীর' কোন এক ককটেল পার্টিতে রসিয়ে রসিয়ে-তারিয়ে তারিয়ে বলবেন, জানিস, বান...কে মেরে যে গন্ডগোলটা হল না। শ্লা, ড্যাডের ২০০ খরচ হল। কাট মাই শিট!
২০০ মানে ২০০ কোটি।
ছবিসূত্র: প্রথম আলো।
No comments:
Post a Comment