খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ি নিয়ে গোটা দেশ দু-ভাগ হয়ে আছে এতে কোন সন্দেহ নেই। উঠতে বসতে একে অপরের বাপান্ত করছেন। দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে আমি খুব একটা অবাক হব না। সামান্য ঔচিত্য বোধ থাকলে বাড়িটা অনেক আগেই ছেড়ে দেয়া উচিৎ ছিল। কেননা, এ নিয়ে আগেও কম 'বাহাস' হয়নি।
আর এটাও আমার বোধগম্য হয় না, এই বাড়ির ইস্যুটা নিয়ে এখনই কেন? দেশে যেখানে অনেক বড় বড় ইস্যু রয়ে গেছে। পাওয়ারের সমস্যায় গুটিকয়েক মানুষ ব্যতীত, দেশের মানুষ রাতে ঘুমাতে পারছে না। দেশ চলছে কেমন করে আল্লা মালুম! রাতে না-ঘুমাবার ছাপ কী পড়ছে না?
তো, ওই যে বললাম, ঔচিত্য বোধ। এটার আশা করার অর্থ হচ্ছে, বাতুলাগারে থেকে বাতুল খোঁজা। আমরা কী অনায়াসে না বিস্মৃত হই, ইনি, ইনার অর্থমন্ত্রী কালো টাকা সাদা করেছিলেন। যখন শেখ হাসিনাকে ১ কোটি টাকা দামের গাড়ি উপহার দেয়া হয় তখন দেখি তিনি অস্বস্তি বোধ করেন না। কই, আমাদের তো কেউ 'টাটা ন্যানো', নিদেন পক্ষে এক ঠোঙা বাদামও দেয় না। আমাদের মেমরি গোল্ড-ফিসের মত। নিমিষেই সব ভুলে বসে থাকি!
গীতিকার, মহাকবি, ঘাতক (আর কিছুদিন ক্ষমতায় থাকলে নিশ্চিত গাতকও হতেন) হোমো এরশাদ যখন বলেন, 'আমি ক্ষমতায় থাকাকালিন যে বাড়িটা বেগম খালেদাকে দিয়েছিলাম, আমি যদি জানতাম তিনি এই বাড়িতে বসে রাজনীতি করবেন তাহলে দিতাম না'।
শুনে মনে হবে এটা ওনার বাপ-দাদার তালুক! অনেকে তার এই বক্তব্য সহজে গ্রহন করতে পারেননি, ঔদ্ধত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। তিনি বাড়ি দেয়ার কে? কিন্তু তার এমন ভাবনা আমাকে ভাবায় না কারণ আমরা এতে অভ্যস্থ। এই নিয়ে সবাই ভাবিয়ে ভাবিয়ে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে গেছে এখন এইসব নিয়ে ভাবাভাবির কিছু নাই।
হুমায়ূন আহমেদ পর্যন্ত ঘটা করে কলাম (হায়রে বাংলাদেশ!) লিখে বলেন, 'মন্ত্রী-মিনিষ্টারদের আমার ট্রাকের মতো মনে হয়। তাদের কাছ থেকে একশ এক হাত দূরে থাকতে আমি পছন্দ করি কিন্তু নাজমুল হুদা সাহেব আমাকে ছবি বানাবার অনুদান দিয়েছিলেন...'।
মন্ত্রী হলেও নাজমুল হুদা সাহেবের প্রতি তাঁর বিশেষ পক্ষপাতিত্বের কারণ নাজমুল হুদা সাহেব যখন তথ্যমন্ত্রী ছিলেন তখন হুমায়ূন আহমেদকে ছবি বানাবার জন্য বিশেষ সরকারী অনুদানের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। এজন্য হুমায়ূন আহমেদের কৃতজ্ঞতার শেষ নাই। তাই তেলতেলে, বিগলিত হয়ে বলেন, 'আমাকে ছবি বানাবার অনুদান দিয়েছিলেন...'।
প্রশ্ন দাঁড়ায়, ওই বিশেষ অনুদানের টাকা কি নাজমুল হুদা সাহেব নিজের পকেট থেকে (মতান্তরে সাফারির পকেট থেকে) দিয়েছিলেন? অবশ্যই না, কারণ সেটা সরকারী টাকা প্রকারান্তরে জনগনের টাকা। এই দেশের অধিকাংশ মানুষ যেটা বুঝতে চান না সেটা হচ্ছে, সরকারের পক্ষে কেউ স্কুল, কলেজ, ব্রীজ, রাস্তার জন্য যেসব টাকা খরচ করেন সেইসব টাকা সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওইসব লোকজনের না, এই দেশেরই জনগনের ট্যাক্সের টাকা।
এই আমি যে এখন নেট ববেহার করছি, সরকার বাহাদুর কিন্তু ব্যবহারের পূর্বেই শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাটের নামে তাদের ট্যাঁকশালে জমা করে নিয়ে নিয়েছেন। যিনি লেখাটা পড়ছেন, তাঁরটাও। প্রবাসি হলে অন্য কথা। হুমায়ূন আহমেদ যখন একের পর এক সিগারেট টানেন, ধোঁয়া জমা হয় বায়ুমন্ডলে আর ট্যাক্সের টাকা জমা হয় সরকারের ট্যাঁকে।
এই দেশের পাবলিক কখনই বিদেশের মতো পাবলিক সার্ভেন্টের কাছে জানতে পারে না তার ট্যাক্সের টাকা কিভাবে খরচ হচ্ছে, মেরুদন্ড হয়ে যায় জেলীর মতো। কী অহংকার করেই না আমরা বলি, এ রাস্তা অমুক মন্ত্রী করেছেন, ওই ব্রীজ তমুক মন্ত্রী করেছেন। যেন রাস্তা, ব্রীজগুলো তাদের তালুকের টাকায় করা।
লেখক হুমায়ূন আহমেদের মতো মানুষও যখন মনে করেন, এই ব্রীজ, রাস্তা ওমুক মন্ত্রী করেছেন, তমুক মন্ত্রী ছবি বানাবার অনুদান দিয়েছেন তাঁদের টাকায়। তখন এরশাদ সাহেব এটা বললে আর যে কেউ অবাক হোক; আমি হই না। কেবল বলি, ওরে দুঃখ, তোরে কোথায় রাখি!
No comments:
Post a Comment