প্রসঙ্গটা আগুনসম! এই নিয়ে এখন কোন প্রশ্ন করাটা ভয়ংকর ঝুঁকিপূর্ণ। নব্য মুক্তিযোদ্ধাদের রে রে করে তেড়ে আসার সমূহ সম্ভাবনা। গেল রে, গেল, মুক্তিযুদ্ধ একটা কাঁচের বাসন; হাত থেকে পড়ামাত্র শতধা হল। একজন দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধা ঠেলা চালালে আমাদের বিকার হয় না, কেবল আমরা লাজে ক্রুদ্ধ হই এমন প্রশ্ন সমুখে এলে! অহেতুক রাগ কেবল শনৈ শনৈ বৃদ্ধি পায়!
ছফার এই বক্তব্যটা আমার পছন্দ হয়েছে,
"আমি এই পরিসংখ্যানটাকে প্রহসন মনে করি। সংখ্যাটার (৩০ লক্ষ) সঠিকত্ব নিয়ে আমি কোন প্রশ্ন তুলতে চাই না। কিন্তু সংখ্যাটার উৎস কোথায়? কিভাবে কোত্থেকে সংগ্রহ করা হল তা না থাকায় তা আমার কাছে ভিক্তিহীন মনে হয়। এখনও সময় আছে। সরকার ইচ্ছা করলে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দিয়ে দশ দিনের মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধে প্রকৃত মৃতের সংখ্যা নিপুনভাবে বের করতে পারবে।" (আহমদ ছফার চোখে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী)
মুহম্মদ জাফর ইকবাল তাঁর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বইয়ে লিখেছেন,
"মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা চলাকালে কতজন মানুষ মারা গিয়েছে সে সম্পর্কে গণমাধ্যমে বেশ কয়েক ধরনের সংখ্যা রয়েছে।
১৯৮৪ সালে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড আলমানাকে সংখ্যাটি ১০ লক্ষ। নিউইয়র্ক টাইমস (২২ ডিসেম্বর ১৯৭২) অনুযায়ী ৫ থেকে ১৫ লক্ষ। কম্পটনস এনসাইক্লোপিডিয়া এবং এনসাইক্লোপিডিয়া আমেরিকা অনুযায়ী সংখ্যাটা ৩০ লক্ষ।
প্রকৃত সংখ্যাটি কত, সেটি সম্ভবত কখনোই জানা যাবে না। তবে বাংলাদেশে এই সংখ্যাটি ৩০ লক্ষ বলে অনুমান করা হয়।"
(মুহম্মদ জাফর ইকবাল এই উপাত্তটা নিয়েছেন, Mathew White's, Death tells for the major wars and atrocites of twentieth century থেকে।)
ছফার সঙ্গে আমি একমত। ১০ দিনের মধ্যে হয়তো সম্ভব না, কিন্তু চেষ্টা করলে সম্ভব। এখনও সময় আছে, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে, এটার প্রকৃত সংখ্যাটা বের করে এই বিতর্কের অবসান করা। নইলে যুগ যুগ ধরে এই কুতর্ক চলতেই থাকবে।
একটা বইয়ে অসংখ্য বানান ভুল থাকলে যেমন বইটার মান নেমে যায়, লেখকেরও। বারবার মিথ্যা বললেও একদা সেটা সত্য মনে হয়। তেমনি একটা সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক চলতেই থাকলে সেই সংখ্যাটা প্রতি সন্দেহ পোষণ করা বিচিত্র কিছু না। আগামী প্রজন্মের জন্য এটা ভাল ফল বয়ে আনবে বলে আমি মনে করি না।
2 comments:
Il semble que vous soyez un expert dans ce domaine, vos remarques sont tres interessantes, merci.
- Daniel
:O @Daniel
Post a Comment