ঠাকুর, তেরে দো হাত দে দে... (ঠাকুর, তোর দুই হাত আমায় দিয়ে দে)। ‘শোলে’ মুভির বিখ্যাত সংলাপ! বালকবেলায় যখন এটা বড় পর্দায় দেখছিলাম, উত্তেজনায় দাঁড়িয়ে গিয়েছিলাম। বুকে জগদ্দল পাথর। চোখে জল। আহা-আহা, ঠাকুরের হাত কী সত্যি সত্যি কেটে ফেলবে! ঠাকুর বেচারার কী হবে, খাবে কেমন করে? কী কষ্ট-কী কষ্ট!
কিন্তু এখন ভাবি, মানুষ হাত দিয়ে কী কেবল খায়-ই? কেউ কেউ লেখালেখিও করেন। আবার কেউ-বা, আমার মতো তিন টাকা দামের কলমবাজ লেখার চেষ্টাও করে। হায়, লেখার চেষ্টা...! এই চেষ্টাটা কত কাল ধরে চলবে?
আমি কম্পিউটার নামের যে বস্তুটায় এক আঙ্গুলে টাইপ করি, মানে করতাম, সেটার বাহারী নাম বটে ল্যাপটপ। পৃথুল- ‘গাবদা-গোবদা’ টাইপের, তিন কেজির উপরে ওজন, ১ ন্যানো সেকেন্ডের ব্যাকআপের জন্য কুখ্যাত, এই জিনিসটা নিশ্চিত ল্যাপটপ নামের কলঙ্ক। সম্ভবত এই পৃথিবীর তাবৎ ল্যাপটপ একে অনবরত অভিসপ্তাত বর্ষণ করে। জিনিসটার কোন বিকার নেই- এ চলে এর নিজের মত করে, গদাইলস্কর চালে।
যথারীতি আবারও বিগড়ে গেল। এইবার এই অবুঝকে কোন ভাবেই মানানো গেল না, বিগড়ে গেল তো গেলই। এই পোড়ার মফঃসলে সাইবার ক্যাফে দূরের কথা কাজ চালাবার মত একটা কম্পিউটারই খুজেঁ পাওয়া মুশকিল। যাদের আছে এরা খুলেও দেখেন না। আমার হাত গুটিয়ে বসে থাকা ব্যতীত কিই-বা করার ছিল? এমনিতে বোমা মারলেও লেখা বের হয় না কিন্তু্ এ সময়টাকে কী হাহাকার, আহারে, কত কিছু যে লেখার ছিল! যেমনটা চলে যাওয়া ট্রেন দেখলে মনে হয় আমার যেন কোথাও যাওয়ার ছিল কিন্তু ট্রেনে চেপে বসলে কেবলই মনে হয়, আমি তো কোথাও যেতে চাই না।
লিখতে না পেরে আমার তখন কেবলই মনে হচ্ছিল আমার যেন হাত থেকেও নেই।
ওদিন হঠাৎ একজন ফোনে জানতে চাইলেন, আচ্ছা, কলম দিয়ে লেখেন না কতদিন? মানুষটা ভালই চমকে দিতে পেরেছিলেন। তাই তো! লম্বা শ্বাসও ফেললাম, আমার মত কলমচির কলমে লেখার সুযোগ কই- পত্রিকার জন্য লেখা, নাতিন, সেই দিন আর নাই!
একজন আবার বলেই বসলেন, মিয়া, রঙ্গ করো, তোমার লেখা পড়ার জন্য কে মুখিয়ে বসে আছে।
যাই হোক, ল্যাপটপের ডাক্তাররাসব আবার আসন গেড়েছেন ঢাকায়। কী যন্ত্রণা, ল্যাপটপ বগলে চেপে ঢাকায়- এ্যাহ, বললেই হলো আর কী! এই হয়েছে এক যন্ত্রণা- গোটা বাংলাদেশ ঢাকার চারপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে। সমস্ত কিছু ঢাকাকেন্দ্রিক। আহ ঢাকা, দেশের ১৫ কোটি লোক সব্বাই ঢাকায় বসবাস করছে, এটা দেখব সেই দিন আর দূরে নাই। যারা এর ব্যতয় করবে, ঢাকায় হিজরত করবে না তাদের কপালে চটি-খড়গ!
শাহাদুজ্জামানের মত অল্প-কিছু মানুষ ঠিকই আঁচ করতে পারছেন ঢাকা কলাপস করবে। তাঁকে আন্তরিক সেলাম।
যেটা ওই পোস্টে লিখেছিলাম:
“কোন এক লেখায় আমি লিখেছিলাম, আমরা সব লাটিম বনবন করে ঘুরাচ্ছি ঢাকাকে কেন্দ্র করে! এটা দ্রুত বন্ধ করতে হবে। ঢাকার উপর থেকে যত দ্রুত সম্ভব চাপ কমানো অতি আবশ্যক। এখান থেকে সরাতে হবে ক্যান্টনমেন্ট, সরকারি যত আপিস। তারচেয়ে জরুরি হচ্ছে কল-কারখানাগুলো সরানো।
সরানো মানে নতুন করে হতে না দেয়া, সরিয়ে নিতে লোভ দেখানো। জোর করে তো এটা করা যাবে না। এ জন্য মোটা মাথা থেকে চিকন বুদ্ধি প্রসব করতে হবে, যারা রংপুর, খুলনায় শিল্প-প্রতিষ্ঠান করবেন তাদের জন্য থাকবে ট্যাক্সসহ অন্যান্য কর আদায়ের বেলায় বিরাট ছাড়। এবং রাষ্ট্রীয় বিশেষ সম্মান থাকবে এদের জন্য। আমার ধারণা, এরা প্রয়োজনে বায়ারকে হেলিকপ্টার ভাড়া করে উড়িয়ে নিয়ে যাবে।”
...ঢাকায় ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে গাড়িতে আটকে থাকার চেয়ে দু-চার ঘন্টার জন্য হেলিকপ্টারে চাপতে চাইবেন না এটা আমি বিশ্বাস করি না। আরেকটু আগ বাড়িয়ে যোগ করি, দেখা যাবে, ওই বায়ার হয়তো ফার্স্ট ক্লাসে লক্ষ মাইল প্লেনে ভ্রমণ করেছেন কিন্তু হেলিকপ্টারে চড়ার সৌভাগ্য কখনই হয়নি। যেটা হবে এই দেশে এসে। দেশে ফিরে বায়ার তাঁর পরিচিত লোকজনদের, জনে জনে বলে বেড়াবেন, হেই ম্যান, বুঝলা... গেসিলাম বেংলাডেসে, ইমাজিন, হেলিকাপ্টারে করিয়া ফ্যাক্টারিতে নিয়া গেল। বিলিভ মী, হোল হেলিকাপ্টার হামার জইন্যে...।
No comments:
Post a Comment