একদিন রতিক্রিয়াকালে মহাদেব যখন প্রিয়ার (পার্বতি) মুখকমলের মধুপানে মত্ত ছিলেন তখন দেখলেন, একটি পারাবত রতিমন্দিরে প্রবেশ করছে।
...
পরক্ষণেই দেবাদিদেব মহাদেব পারাবতের অলৌকিক আকৃতি দেখে সন্দিহান হয়ে তার তথ্য জানার জন্য চিন্তা করে দেখলেন, অগ্নিদেবই এই মায়া বিহঙ্গমূর্তি ধারণ করে এসেছেন। তখন তিনি তার সম্ভোগ নিকেতনে অগ্নির গুপ্তভাবে ছদ্মবেশে প্রবেশের জন্য ক্রোধে ভ্রূভঙ্গি করে রুদ্রমূর্তি হয়ে উঠলেন।
তা দেখে দেবহুতাশন (অগ্নিদেব) নিজমূর্তি ধারণ করে ত্রাসে কম্পিত ও স্খলিত অঞ্জলিপুটে স্মরশাসন মহাদেবকে বলতে লাগলেন:
'হে প্রভু, আপনি ত্রিজগতের একমাত্র অধিশ্বর। আপনি সর্বদাই স্বর্গবাসী দেবতাদের বিপদ বিনাশ করে থাকেন।
...
আপনি প্রিয়ার প্রেমাবেশবশে থেকে নিভৃতে নির্জনে কতকাল অতিবাহিত করলেন। দেবরাজ ও অন্যান্য দেবগণ আপনার দর্শন না পেয়ে অত্যন্ত কাতর হয়ে পড়েছেন।
...
হে সর্বজ্ঞ, আপনার সেবার অবসর প্রতীক্ষা করার পর ইন্দ্রানি দেবগণ আমাকে অনুরোধ করায় আমি সময়োচিত বিহঙ্গরূপ ধারণ করে আপনার অন্বেষণে এখানে এসেছি।'
...
শঙ্কর তখন দেব হুতাশনের সেই সঙ্গত প্রার্থনা শুনে প্রসন্ন হলেন।
...
এদিকে উর্ধ্বনেত্রা মহাদেবের সুরতক্রিয়ায় ব্যাঘাত হওয়ায় যুগান্তকালাগ্নির মত অসহনীয় রেতঃ স্খলিত হলো। তখন তিনি সেই অমোঘ বীর্য অগ্নিতে নিক্ষেপ করলেন।
রুদ্রুদেবের জ্বলন্ত অনলসদৃশ অমোঘবীর্য নিক্ষেপের ফলে অগ্নির বিশুদ্ধ দেহ সহসা উষ্ণনিঃশ্বারসর বাতাসে দূষিত মুকুরের মত অতিশয় বিবর্ণ হয়ে উঠল।
(কুমারসম্ভব, নবম সর্গ)
এদিকে বহ্নি মহাদেবের নিক্ষিপ্ত মহাতীব্র রেতঃ শরীরের মেখে দেবসভা মধ্যে সুরগণপরিবৃত দেবরাজের নিকট উপস্থিত হলেন।
...
দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে বহ্নি বলতে লাগলেন...। '(মহাদেবের) কামকেলি অকস্মাৎ ভঙ্গ হওয়ায় তাঁর দুর্বিসহ অমোঘ বীর্য স্খলিত হলো। কিন্তু ত্রিজগদ্দাহক সেই অসহ্য বীর্যধারণক্ষম অন্য কোন আধার না পেয়ে উপস্থিত আমার দেহের উপর নিক্ষেপ করলেন।...হে বাসব, অজস্র ও অতি মহৎ সেই বীর্য দ্বারা আমি অতিশয় দগ্ধ হচ্ছি।'
...
দেবরাজ অগ্নিকে বললেন, হে হব্যবাহন, তুমি আর বিলম্ব করো না গঙ্গায় গমণ করো।...তুমি তাঁর সলিলমধ্যে নিমগ্ন হলে তিনি তোমার উৎকট তাপ নির্বাপিত করবেন।
...
অগ্নি তাঁর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সুরতরঙ্গিনীর অভিমুখে যাত্রা করলেন।
...
তখন তাপার্ত অগ্নি গঙ্গার জলে নিমগ্ন হলেন।...। অগ্নি তখন বিপদনাশিনী উত্তালতরঙ্গময়ী তাঁর অন্তর্গত তাপরূপ মহেশ্বরের (মহাদেব) তেজ (রেতঃ) সংক্রামিত করলেন।
...
এদিকে আকাশবাহিনী গঙ্গা দেবাদিদেব মহাদেবের দুর্বিসহ মহৎ তেজ ধারণ করে অতিশয় পরিতপ্ত (অতি তাপ)হয়ে উঠলেন। ...গঙ্গার মধ্যে যেসব জন্তুরা বাস করত তারা সেই অসহনীয় উত্তাপে কাতর হয়ে নদীর জল থেকে বেরিয়ে এল।
...
কৃত্তিকা নামে ছয়টি নক্ষত্র গঙ্গস্নানের জন্য সুরধুনীতে গমন করলেন।
...
গঙ্গাজলে অভগাহন স্নান করার ফলে মহাদেবের সেই অমোঘ রেতঃ ছয়জন কৃত্তিকার দেহের অভ্রন্তরে তৎক্ষণাৎ সঞ্চারিত হলো।
...
...সেই তীব্র অমোঘ শৈববীর্য তাদেঁর উদরমধ্যে সংস্থিত হওয়ায় তাঁরা গর্ভত্ব প্রাপ্ত হলেন।
...
গর্ভ হয়েছে জেনে তা বহনে অসমর্থ হয়ে স্বামীর ভয়ে ও লজ্জায় অত্যন্ত বিষণ্ন হয়ে পড়লেন।
...
তাঁরা সেই শরবনে চন্দ্রকলার মত সুকোমল সেই গর্ভ পরিত্যাগ করে ক্ষণকালমধ্যো আকাশে নিক্ষেপ করলেন।...সেই অপরিমেয় তেজ ...ছয়টি মুখ প্রাপ্ত হয়ে জন্মগ্রহন করল (মহাদেবের সন্তান ষড়ানন কুমার)।
(দশম সর্গ, কুমারম্ভব/ কালিদাস)।
No comments:
Post a Comment