আমরা দূর থেকে লেখালেখির ভুবনটা দেখে হাঁ করে তাকিয়ে থাকি। ভুবনটা এক অদেখা স্বপ্নের ভুবন মনে হয়।
একজন লেখককে মনে হয় অন্য ভুবনের কেউ। এ ধারণার উৎস কী আমি জানি না। ভাবখানা এমন, একজন লেখক অন্য ভুবন থেকে এসে এই ভুবন উদ্ধার করবেন। চাড্ডি পরে উবু হয়ে লিখেই যাবেন। (এমনিতে চাড্ডি জিনিস আরামদায়ক কিনা জানি না তবে এটা পরে জনসমক্ষে বের হওয়াটা শোভন হবে না মনে হয়!)
তো, টাকা-পয়সার তার কাছে বাদামের খোসা, এর ব্যতয় হলেই চিড়বিড় করে বলা হবে, টাকা কেন আপনার প্রয়োজন? চাউল কিনবেন, নাকি বেশ্যালয়ে গমন করবেন?
কেন রে বাপু, তার জাগতিক কোন চাওয়া-পাওয়া থাকতে নেই! কস্মিনকালেও না, কেন?
একজন লেখালেখি করে তার ন্যূনতম চাহিদাও মেটাতে পারবেন না, কেন?
টাকা-পয়সা সংক্রান্ত কোন প্রসঙ্গ এলে চোখ ছোট করে তার দিকে তাকাতে হবে, কেন?
একজন মেথর গু ফেলার কাজ করে, একজন পেটকাটা রমজান পেট কেটে, এটাকে পেশা হিসাবে বেছে নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবেন কিন্তু একজন লেখালেখি করে লেখাকে পেশা হিসাবে নিয়ে বাঁচতে পারবেন না, কেন?
একজন লেখক লেংটি পরে, জ্যোস্নায় গোসল সেরে, জ্যোৎস্না কপকপ করে খেয়ে দিন কাবার করে দেবেন, কেন?
লেখক যেন তিনি-এর মত, তাকে কোন ভাবনা কাবু করার যো নেই!
জীবনানন্দ দাদার কথা ধার করে বলি:
"...কবিকে দেখে এলাম
দেখে এলাম কবিকে
...শীতের সকালে চামসে চাদরখানা ভালো করে জড়িয়ে নেয় গায়
ঘড়ি ঘড়ি মুখে একবার হাত বুলায়
মাজনহীন হলদে দাঁত কেলিয়ে একবার হাসে
মাইনাস এইট লেন্সের ভিতর আধমরা চুনো মাছের মতো দুটি চোখ:
বেঁচে আছে! না মরে?
কোনদিন যৌবনের স্বাদ পেয়েছিল? পায়নি?
...পৃথিবী থেকে আনন্দ সংগ্রহ করছে
সবাইকে ভরসার কথা শোনাচ্ছে
ভালোবাসার জয়গান করছে।"
দেখে এলাম কবিকে
...শীতের সকালে চামসে চাদরখানা ভালো করে জড়িয়ে নেয় গায়
ঘড়ি ঘড়ি মুখে একবার হাত বুলায়
মাজনহীন হলদে দাঁত কেলিয়ে একবার হাসে
মাইনাস এইট লেন্সের ভিতর আধমরা চুনো মাছের মতো দুটি চোখ:
বেঁচে আছে! না মরে?
কোনদিন যৌবনের স্বাদ পেয়েছিল? পায়নি?
...পৃথিবী থেকে আনন্দ সংগ্রহ করছে
সবাইকে ভরসার কথা শোনাচ্ছে
ভালোবাসার জয়গান করছে।"
বলছিলাম লেখালেখি ভুবনের অন্ধকার দিকের কথা। 'আলুয়া-ঝালুয়া' টাইপের একটা লেখা নিয়ে ’এসব নিয়েই’ নামে একটা উপন্যাস বের হয়েছিল ৯২ একুশে বইমেলায়। দাম্পত্য কলহ নিয়ে সরল একটা লেখা। এখনও গুছিয়ে লিখতে পারি এটা দাবী করি না আর তখন তো লিখতেই জানতাম না। দাম্পত্য কলহ দূরের কথা দাম্পত্য কী এটাই কী জানি ছাই!
কি কারণে জানি না এই বইটার কিছু রিভিউ বের হয়েছিল। কোথায়-কোথায় সবটা তো জানি না, 'রহস্য পত্রিকা' এবং 'উপমা ডাইজেস্ট' হাতের নাগালে পেয়েছিলাম।
রহস্য পত্রিকার সমালোচনায় জানলাম, এটা মুলত প্রেমের উপন্যাস। আমি আনন্দিত, বাহ, আমি দেখি প্রেমের উপন্যাস লিখতে পারি; প্রেম না-করেও (এটা আমার দাবী কিন্তু নিজেরই ঘোর সন্দেহ আছে)। যাগ গে, দাম্পত্য কলহ নিয়ে লেখাকে প্রেমের উপন্যাস বলে, বাহ, বেশ তো!
ওই সমালোচনা পড়ে অন্তত এটা ধারণা করা চলে ভদ্রলোক শেষ-অবধি বইটা পড়ার জন্য যথেষ্ট ক্লেশ স্বীকার করেছেন। কেউ আমার বই শেষ করতে পেরেছেন এটা আমার জন্য অভিভূত হওয়ার মত একটা বিষয়!
কিন্তু 'উপমা ডাইজেস্ট'-এর সমালোচনা পড়ে আমি আকাশ থেকে পড়লাম। আমি নিজের প্রতি সন্দেহের চোখে তাকালাম। আমিই কী সেই ব্যক্তি যে 'এসব নিয়েই' নামের আবর্জনা সৃষ্টি করেছে?
সমালোচক ভদ্রলোক লিখেছেন: "এটি একটি উপন্যাস। বইটি লিখেছেন আলী মাহমেদ। আমরা প্রতিনিয়ত আবর্তিত হচ্ছি বিভিন্ন সমস্যার দ্বারা। এ সমস্যা আমাদের ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত বিদ্যমান আর এতসব সমস্যার মোকাবেলা করেই বেঁচে থাকে মানুষ। স্বপ্ন দেখে জীবনের। কখনও কোন সমস্যা আমাদের যন্ত্রণা দেয় ভীষণভাবে। আবার সেই সমস্যার সমাধান করতে পারলে আনন্দিত হই। আর এই সুখ-দু:খ, হাসি-বেদনা নিয়েই আমাদের প্রতিদিনের জীবন। এরই প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করেছেন লেখক তার এসব নিয়েই উপন্যাসে।”
লেখকের এবং বইয়ের নাম ব্যতীত এই সমালোচনার একটা অক্ষরও ৯২ সালে বুঝিনি, ২০০৯-এ এসেও! ইনশাল্লাহ, ২০৫০- এ এসেও বুঝব না।
হা হা হা। প্রকারান্তরে নিজের অতি লম্বা আয়ু চেয়ে নিলাম আর কী। হুদাহুদি, লম্বা সময় দূরের কথা জীবনটাই আমার কাছে ক্লান্তিকর! ব্লাস্টার দিয়ে পাখি শিকার করতে আমার ভাল লাগছে না। কেবল ঝুম বৃষ্টিতে আমি মরতে চাই না!
যাই হোক, আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, এই সমালোচক মহোদয় এই বইয়ের একটা লাইনও পড়েননি। অথচ এ আস্ত একটা বইয়ের সমালোচনা লিখে বসে আছে এবং যথারীতি তা ছাপাও হয়েছে। এইসব চালবাজি করে তিনি দিনের পর দিন, মাসের পর মাস পার করেছেন, অজস্র বইয়ের সমালোচনা লিখেছেন।
আফসোস, এরাই একজন লেখকের লেখার মান নির্ধারণ করে দেন। এরাই নিশ্চিত করেন কে লেখক, কে লেখক নন! বড় বিচিত্র দেশ আমাদের, ততোধিক বিচিত্র এ দেশের মানুষ, তারচেয়েও বিচিত্র লেখালেখি ভুবনের মানুষ!
5 comments:
হা হা হা
Lengta koira desen
:-)
আমার ব্লগিং এর অভ্যেস নেই। নিজে তো লিখতে পারিই না, অন্যদের ব্লগও পড়া হয়না খুব একটা। আপনার সাইটে আজই প্রথম ঢুঁ দিলাম। ছাড়া ছাড়াভাবে কয়েকটা লেখা পড়লাম। ভালো লাগলো লেখাগুলো। তবে, এ লেখাটা পড়ার আগে কোনো মন্তব্য লিখবো বলে ভাবি নি। আসলে, আপনার এই লেখাটা পড়তে গিয়ে 'সমালোচক'দের নিয়ে পুরনো একটা কৌতুক মনে পড়ে গেলো আর সেটা আপনাকে শোনানোর লোভ সামলাতে পারলাম না। হতে পারে আপনি আগেও এটা শুনেছেন, বা পড়েছেন কোথাও। তারপরও বলি...
পৃথিবীতে তিন শ্রেণীর সমালোচক আছেন (ধরা যাক ক, খ এবং গ শ্রেণী)। ক শ্রেণীর সমালোচকেরা যখন কোনো বই,চিত্রকর্ম বা সিনেমা সম্পর্কে লেখেন- পড়ে বা দেখেই (এবং অবশ্যই বুঝে) সেটা করেন। খ শ্রেণীর সমালোচকেরা কাজটা করেন খানিকটা পড়ে বা দেখে এবং খানিকটা "বৃষ্টি বুঝে ছাতা ধরে"। আর গ শ্রেণীর সমালোচকদের পড়া বা দেখার দরকার হয়না। এরা পয়সা নিয়ে ফরমায়েশী "রিভিউ" লেখেন। যদি কোন দিক-নির্দেশনা থাকে তো সে' অনুযায়ী নয়তো "উত্তরাধুনিক বাংলা কবিতা স্টাইল"।
আপনার ও আপনার লেখার দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
হা হা হা। ভাল বলেছেন, "উত্তরাধুনিক বাংলা কবিতা স্টাইল..."। :)
ধন্যবাদ। আপনিও ভাল থাকুন, অনেক। @Quarmal
Post a Comment