ভার্চুয়াল ব্লগার গাতক না যে 'ডিসকো বান্দর' টাইপের একটা ঘান (!) গেয়েই আকাশের স্টার ধরায় নেমে আসবে। ধামাধাম তার ফটো ক্যামেরার সাহায্যে উঠিয়ে ফিজুল-অযথা অপচয় করা হবে। এর জন্য 'পেত্রিকাওয়ালাদের' আলাদা কোন বাজেট নাই।
কী আর করা, এদের ছবি বিকল্প উপায়ে বিনে পয়সায় হাতে আঁকা হয়।
এটা ওই ব্লগারের ছবি বলে অনেকের ধন্ধ থাকতে পারে। কেন রে বাপু, এস, এম, সুলতান বলশালী কৃষক-মজুরের স্বপ্ন দেখতে পারলে আমরা বলশালী ব্লগারের স্বপ্ন দেখতে পারব না, কেন?
সত্যিকার লেখকের কাঠামো থাকে নড়বড়ে। কিন্তু এখানে গুলিয়ে ফেলার অবকাশ নাই, ব্লগার লেখক নন। লেখক কৌপিন পরে উবু হয়ে লিখে দেশ-উদ্ধার করেন! জীবনানন্দ দাদার কবিতা ধার করে বলি:
"...পৃথিবী থেকে আনন্দ সংগ্রহ করছে
সবাইকে ভরসার কথা শোনাচ্ছে
ভালবাসার জয়গান করছে
হলদে দাঁতের ভেতর থেকে পিত্তের দুর্গন্ধ
বিড়ি হচ্ছে খোরাক...।"
ওই দুঁদে সাংবাদিক সাক্ষাৎকার নিতে আবারও এসেছেন, পেটের দায়ে, আবর্জনা ব্লগারের ১৪ গোষ্ঠী উদ্ধার করতে করতে। দেশটা চোর চোট্টায় ভরে গেছে। তার নিজের ব্যতীত সবারই একজন করে মামা, চাচা আছে। এই আবর্জনা ব্লগারের মামা নামের খুটির জোর তাকে বাধ্য করেছে আবারও এই নরকের কীটটার সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য এখানে আসতে।
সাংবাদিক মহোদয় যে পত্রিকায় কাজ করেন, ওই পত্রিকার সম্পাদক নাকি এর সঙ্গে পাগলা পানি খান, সুইমিং পুলে পানি ছিটাছিটি খেলেন!
ওই সাংবাদিক মুখ অসম্ভব লম্বা করে রেখেছেন। এ বিরাট হারামজাদা, এ কিরপিন-কিপটার এক শেষ! চার সঙ্গে যে টোস্ট বিস্কুট দিয়েছে, কোন শালা এটাকে টোস্ট বিস্কুট বলে! ওই শালাকে নাগালে পেলে কল্লা নামিয়ে ফেলতেন। ইয়ের টোস্ট বিস্কুট, এটা লোহার বিস্কুট, কামড় দিয়ে দাঁত নড়ে গেছে, চায়ে চুবিয়েও নরম করা যাচ্ছে না! হাতুড়ি থাকলে পিটিয়ে দেখা যেত!
ফাজিলটা আবার একটু পরপর বলছে, আরে-আরে, আপনি দেখি কিছুই নিচ্ছেন না। শোনো, ব্যাটার কথা, এই লোহার চাকতি ছাড়া আছে কী খাওয়ার!
সাংবাদিক চেষ্টাকৃত সশব্দে ঢেকুর তুলে, দাঁত বের করে বললেন, না না, অনেক হয়েছে, পেটে আর জায়গা নাই। আরেকদিন আসলে খাওয়া যাবে নে (মনে মনে, তোর এখানে আমি মুত্রও ত্যাগও করতে আসব না, প্রয়োজন হলে প্যান্ট নষ্ট করব, তবুও তোর এখানে না। 'ইয়ে মেরা আখন্ড প্রতিজ্ঞা'...ই ই ই)।
সাংবাদিক: আমরা শুরু করি, আপনার নামে।
আবর্জনা ব্লগার: করেন, কি আর করা, আপনি যখন ছাড়বেন না!
সাংবাদিক: দেখুন, দয়া করে একটু ঠিকঠাক উত্তর দিবেন। গতবার ওই সাক্ষাৎকার নিয়ে লোকজন খুব হাসাহাসি করেছিল, লজ্জায় আমার মাথা কাটা গেছে। মান সম্মান নষ্ট হয়েছে! এটা নাকি সাক্ষাৎকারের স-ও হয়নি।
আবর্জনা ব্লগার: আচ্ছা, সাক্ষাৎকার কেমন হয় তাহলে?
সাংবাদিক: ভাল ভাল কথা বলা হয়। টিভিতে দেখেন না? সেলিব্রেটিরা এসে ঝলমলে মুখে বলেন, 'আমি কোন দিন কোন শিশুর গায়ে হাত তুলিনি, আপনিও তুলবেন না'।
আবর্জনা ব্লগার: এরা যখন খুল্লামখুল্লা-উমুক্ত যন্ত্র ঝুলিয়ে হাঁটতেন তখনও কি কোন শিশুর গায়ে হাত তুলেনি!
সাংবাদিক: আহা, তখন তো এরাও শিশু ছিলেন। তা আপনি এ ক্ষেত্রে কি বলতেন?
আবর্জনা ব্লগার: হুম। আমি বলতাম, আমি শিশুর গায়ে হাত তুলেছি। অন্যায় করেছি, এ অন্যায় আর করব না।
সাংবাদিক: যাগ গে, সবাই বলাবলি করছিল, আপনি নাকি গাঁজা খেয়ে এ সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন।
আবর্জনা ব্লগার: বাহ, নওগার জলিল ব্যাপারী গাঁজা চাষ করতে পারবেন, সেলিব্রেটিরা গাঁজা খেলে বাজবে তালি, আমি গাঁজা খেলে মুখে ছালি! আর আপনার মান সম্মান নষ্ট হয়েছে, তাতে কি, চরিত্র তো আর নষ্ট হয় নাই। আপনি তো আর কোন নায়িকার সাক্ষাৎকার নেন নাই, যে আপনার চরিত্র নিয়ে লোকজন সন্দেহ প্রকাশ করবে।
সাংবাদিক (মনে মনে, এই মাটন হেডটার সঙ্গে কথা বাড়িয়ে লাভ নাই, তবুও মুখ ফসকে বলে ফেললেন): না, অনেকেই বলেছে, এই সাক্ষাৎকার দিয়ে ইয়ে ফেললে ভালো হতো।
আবর্জনা ব্লগার: কোথাকার ইয়ে, কার ইয়ে, কিসের ইয়ে? যদি গরুর ইয়ে হয়ে থাকে তা মন্দ কী! গ্রামে দেখবেন, লোকজন গরুর ইয়ে কালেক্ট করার জন্য গরুর পেছনে পেছনে ঘুরছে।
সাংবাদিক (মনে মনে, ব্যাটা লেদার হেড, বঙ্গালকে চেনায় বাঁশ): জ্বী না, গ্রামের খবর জানি না, আমরা শহর নিয়ে আলাপ করি সেটাই মঙ্গল! গতবার আপনার একটা বক্তব্য নিয়ে ম্যাংগো পিপল-আম জনতাকে আমি কোন সদুত্তর দিতে পারিনি। সেটা হচ্ছে, আপনার পছন্দের খাবার তিমি মাছের ঝোল! দয়া করে, ঠিক করে বলুন, আসলে আপনি কোন রান্না পছন্দ করেন?
আবর্জনা ব্লগার: যে কোন সুন্দরীর হাতের রান্না। ধরুন, আপনার বউয়ের ...।
সাংবাদিক (দাঁতে দাঁত ঘসতে গিয়ে কুঁইকুঁই করে উঠবেন, মনে পড়ে যাবে, টোস্ট বিস্কুট নামের সেই লোহার চাকতিগুলোর কথা ): আমি আপনাকে গতবারও বলেছিলাম, আমার কোন বউ নাই!
আবর্জনা ব্লগার: অ, আচ্ছা, বলেছিলেন নাকি! আসলে আমার কিচ্ছু মনে থাকে না! বুঝলেন, ব্লগাররা এমনই হয়, আলাভোলা! আপনার বউ না থাকলে, আপনার গার্ল ফ্রেন্ডের হাতের রান্না...।
সাংবাদিক (মনে মনে, তোর মনে থাকে না আবার, বা...(সেন্সর) থাকে না, ব্যাটা দু-লাইন লিখতে পারে না, লম্বা লম্বা বাতচিত): দেখুন, আমার গার্ল ফ্রেন্ডও নাই।
আবর্জনা ব্লগার: বিষয় কি, আপনার কোন সমস্যা আছে নাকি? ইয়েতে নিয়মিত মান্ডার তেল মালিশ করবেন...(সেন্সর)। নইলে ধনেশ পাখির তেল... (সেন্সর)।
সাংবাদিক (রাগ কমাবার জন্য গুনছেন ১০..৯..৮..৭..৬..৫): দেখুন আমি আমার সমস্যা নিয়ে আপনার কাছে আসিনি। আর মান্ডার তেল, না গন্ডারের তেল মালিশ করব, ধনেশ পাখি খাব নাকি চড়ুই; এ বিষয়ে আপনার পরামর্শ চাচ্ছি না।
আবর্জনা ব্লগার: শুনুন, আপনি যে রাগ কমাবার জন্য উল্টা সংখ্যা গুনছিলেন, আবার গুনলে নি:শব্দে গুনবেন, লোকজন শুনতে পায়। আর আপনার জন্য আমি আরেকটা বুদ্ধি দিতে পারি রাগ কমাবার জন্য। আপনার আব্বা সম্পাদক সাহেব... সুইমিং পুল... পানি ছিটাছিটি... হে হে হে!
সাংবাদিক: (মনে মনে, সাংবাদিকতার আমি গুষ্টি কিলাই): আপনার প্রেমিকার নাম বলুন?
আবর্জনা ব্লগার: আমার প্রেমিকার নাম হচ্ছে, আচ্ছা, ভাল কথা, আপনার প্রেমিকার নাম তো বললেন না!
সাংবাদিক: আবার...!
আবর্জনা ব্লগার: আহা চটাচটি করছেন কেন! আমি তো আবার বিশ্ব প্রেমিক, আপনার প্রেমিকা আমার লিস্টে থেকে থাকলে বাদ দিয়ে বলতাম আর কি!
সাংবাদিক: (মনে মনে, এ চিকিৎসার বাইরে): এই চাপ্টার থাকুক। এবার আমি দেশ নিয়ে আপনাকে কিছু প্রশ্ন করব। আকবরিয়া নামের একজন মন্ত্রী বলেছিলেন, ঢাকা চট্টগ্রাম হাইওয়ে ভেঙ্গে চাষাবাদ করা হোক, আপনি নিশ্চয়ই এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন?
আবর্জনা ব্লগার: পাগল! আমি এর সঙ্গে ১০০০ভাগ একমত। ১০০০ভাগ বললাম এ কারণে। আমি তো বলি, এ দেশের সমস্ত রাস্তাঘাট ভেঙ্গে ফেলা হোক, ধান চাষ করা হোক। ধন্য ধান্যে... ধানে ধানে...পে এ এ এ!
সাংবাদিক: কিন্তু এটা কি ঠিক হবে! দেশে এতো ধান হলে, খড়গুলোর কি হবে?
আবর্জনা ব্লগার: আজিব! আমি তো মানুষের খাদ্য নিয়ে কথা বলছি, আপনার খাদ্য নিয়ে না!
সাংবাদিক (ভগবান ভগবান): আচ্ছা, একবার আপনি একটা পোস্ট দিয়েছিলেন, একটার সঙ্গে দুইটা ফ্রি, এটা আপনি বলেছিলেন পার্শ্ববর্তী একটা দেশের একটা প্রডাক্টে নিয়ে, ওই প্রডাক্টটার নাম কি?
আবর্জনা ব্লগার: এ তো পুরনো কাহিনী। এখন তো আমাদের দেশেও দিচ্ছে। স্টিমারডুবিতে কেউ মারা গেলে একটা ছাগল দেয়া হয়। অবশ্য তাকে না, তার পরিবারকে। তো, ছাগলের সঙ্গে ছাগলা দাড়ি আর ছাগলের রশি ফ্রি! আর শুনেন, ভগবানকে খামাখা ডেকে বেচারাকে কষ্ট দিচ্ছেন কেন? সে কি মনমোহন সিং-এর কথা শুনবে, না তেলিবেলি আপনার কথা! আর শোনেন, আপনাকে আমি একটা প্রশ্ন করি, দুজনকে একটা কলা না ভেঙ্গে, তাদের চাহিদামতো কিভাবে ভাগ করে দেবেন? বাজী কিন্তু, এক পেকেট বেনসন লাইটস।
সাংবাদিক: দেখুন সাক্ষাৎকার নিচ্ছি আমি, আপনি না!
আবর্জনা ব্লগার: সম্পাদক...সুইমিং পুল...পানি ছিটাছিটি...হে হে হে!
সাংবাদিক: (দাঁত ঘসতে গিয়ে টোস্ট বিস্কুটের কথা মনে পড়ে যাবে, মনে মনে বলবেন, এক টোস্ট বিস্কুট 'আদমীকো হিজড়া বানা দেতা হে'। অদম্য রাগ চেপে): জানি না।
আবর্জনা ব্লগার: সিম্পল! একটা কলা, দু-জনকে বলেছি। একজন মানে একটা ছাগলকে খোসাটা ধরিয়ে দেবেন, নিজে আস্ত কলা কপকপ করে খেয়ে ফেলবেন। হারছেন, নেক্সট টাইমে আসলে সিগারেটটা নিয়া আইসেন। অবশ্য ইচ্ছা করলে আপনি কলাটা ছাগলকে ধরিয়ে খোসাটা নিজে খেতে চাইলে আমার আপত্তি নাই।
সাংবাদিক: (মনে মনে, ফাজিল কাঁহিকা) আপনি কি বাজার করেন বা যান?
আবর্জনা ব্লগার: এখন করি না, ছোটবেলায় করতাম, তখন ব্যাপারটা খুব লাভজনক ছিল, মাকে হিসাবে গন্ডগোল লাগিয়ে ভালই ইনকাম হতো।
সাংবাদিক: তাহলে তো আপনি বাজার দর জানেন না! মন্ত্রী মহামতি ছাইফু বলেছিলেন, চিনি বেশি খেলে ডায়বেটিস হয়, এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আবর্জনা ব্লগার: যথার্থ বলেছেন, মিথ্যা তো আর বলেননি, কি দরকার বাবা খামাখা শরীর নষ্ট করার। আমি বলি কি, চিনি উপর চাপ কমাবার আরেকটা বুদ্ধি আছে। যারা ডায়বেটিস রোগী, এদের পেছনে লোক লাগিয়ে দেয়া, পট দিয়ে কালেক্ট করবে...ছেকে...।
সাংবাদিক (গা গুলাবে, খানিকটা সামলে নিয়ে): মহামতি ছাইফু আরও বলেছিলেন, বিদ্যুত এবং তেল বাঁচাবার জন্য এবং বাড়িতে গিয়ে চাষবাস করার কারণ দেখিয়ে, সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন করা হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কি?
আবর্জনা ব্লগার: আমি তো বলব, ৬দিন ছুটি রাখা হোক, ১দিন খোলা! আর বাড়িতে গিয়ে চাষবাসটা একটু কম করতে হবে। এমনিতেই দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৪ কোটি, ২৮ কোটি হতে বেশী সময় লাগবে না!
সাংবাদিক: বুঝলাম না, কিসের মধ্যে কি!
আবর্জনা ব্লগার: ওহো, আমি ভুলেই গিয়েছিলাম, আপনার তো আবার ইয়ের ওই ক্ষমতাই নাই। আফসোস, বুঝবেন কেমন করে? একটু বসেন, আমি আপনার জন্য মান্ডার তেল নিয়ে আসি। তবে মালিশটা আমার এখানে না, বাড়িতে গিয়ে। ভাল কথা, আপনার জন্য চা টোস্ট বিস্কুট দিতে বলি?
আবর্জনা ব্লগার ভেতরে যাওয়ামাত্র ওই সাংবাদিক অবিকল বাংলা সিনেমার মতো উপর থেকে লাফ দিলেন, ইয়ালী ডাক ছেড়ে। নীচে দাঁড়ানো ছিল তার মটর সাইকেল, পড়লেন ঠিক এটার উপর। চালাবার সময় চাকা একটা না দুইটা উপরে উঠে গিয়েছিল, এটা জানা যায়নি।
*স্কেচ-স্বত্ব: আলী মাহমেদ।
No comments:
Post a Comment