কোন বাহনে যখন আমি আমার ডেরায় ফিরি তখন হাতে কিল মেরে উল্লাসে চেঁচিয়ে উঠি, আহ, এটা সোজা স্বর্গের দিকে যাচ্ছে।
অধিকাংশ সময়েই পাশ থেকেই চিলকণ্ঠে একজন বলে উঠেন, স্বর্গ না ছাই, নরক-নরক, আস্ত নরক!
তিনি আর কেউ নন, বাবুদের মা, ইস্তারি সাহেবা। ট্রেনে ওনার চিল-চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে ভেবে অস্থির হন। পারলে গার্ড সাহেব ছুটে আসেন, এমন!
ইস্তারি সাহেবার সাফ কথা, এই রাস্তা সোজা নরকে, পোড়ো বাড়ি-ভূতের বাড়ির দিকে যাচ্ছে। ভূতের বাড়ি নামের ওই 'খান্ডারা' নাকি অভিশপ্ত (আজিব, ১০০ বছর পুরনো হলেই বুঝি একটা বাড়ি ভূতের বাড়ি হয়ে যায়?)।
তো, আমি নাকি বুঝতে পারছি না, আমার অজান্তেই ওই অভিশপ্ত বাড়িটা আমাকে ফাঁদে আটকে ফেলেছে। ইচ্ছা করলেই আমি এখান থেকে পালাতে পারব না, প্রাণ না-যাওয়া অবধি আমার ছাড়াছাড়ি-নিস্তার নাই।
তো, আমি নাকি বুঝতে পারছি না, আমার অজান্তেই ওই অভিশপ্ত বাড়িটা আমাকে ফাঁদে আটকে ফেলেছে। ইচ্ছা করলেই আমি এখান থেকে পালাতে পারব না, প্রাণ না-যাওয়া অবধি আমার ছাড়াছাড়ি-নিস্তার নাই।
ভাগ্যিস, তিনি এটাকে ভূতের বাড়ি বলে দাবী করেন, পেত্নির বাড়ি বললে আবার আরেক ঝামেলায় পড়তাম। পেত্মির একটাই মাত্র চোখ, তাও আবার আমার দিকে, কী সর্বনাশ! আই বেট, পেত্মির সঙ্গে আমার কোন একটা সম্পর্ক খুঁজে বের করে ফেলতেন!
পারতপক্ষে কক্ষনই পেত্মির ছবি আঁকার চেষ্টা করি না। কী প্রয়োজন বাপু, খামাখা সন্দেহ বাড়িয়ে।
পিগমীদের মধ্যে একটা কাজের প্রথা চালু আছে। বিবাহিত পুরুষদের কপালে খোদাই করে তাদের স্ত্রীদের নাম লিখে দেয়া হয়। আফসোস, আমাদের এখানে বিবাহিত পুরূষদের সনাক্ত করার কোন উপায় চালু নাই! থাকলে বেশ হতো, পেত্মির চোখ এড়িয়ে থাকা যেত!
পারতপক্ষে কক্ষনই পেত্মির ছবি আঁকার চেষ্টা করি না। কী প্রয়োজন বাপু, খামাখা সন্দেহ বাড়িয়ে।
পিগমীদের মধ্যে একটা কাজের প্রথা চালু আছে। বিবাহিত পুরুষদের কপালে খোদাই করে তাদের স্ত্রীদের নাম লিখে দেয়া হয়। আফসোস, আমাদের এখানে বিবাহিত পুরূষদের সনাক্ত করার কোন উপায় চালু নাই! থাকলে বেশ হতো, পেত্মির চোখ এড়িয়ে থাকা যেত!
স্ত্রিয়াশ্চরিত্রম- "স্ত্রিয়াশ্চরিত্রং পুরুষ্যস্য ভাগ্যং দেবাঃ ন জানন্তি কুতো মনুষ্য:"! ওনার সমস্যার আদিঅন্ত নাই। আমার বিরুদ্ধে এনতার-একগাদা অভিযোগ। আমি বিবাহবার্ষিকী মনে রাখতে পারি না। বাচ্চাদের বয়স ভুলে যাই- এইসব নাকি আমার চালের একটা অংশ। কথায় কথায় চুতিয়া বলি এটাও নাকি খুব বড় ধরনের অপরাধ। আমার ছাতাফাতা লেখালেখি নিয়েও ওনার দেখি ভারী রাগ- ব্যাকরণ মানি না, এক পাতা লেখতে ১০টা বানান ভুল! বটে! তাহলে আপনি নিজেই লিখে ফেলুন না, আটকাচ্ছে কে?
প্রায়শ তিনি হিসহিস করে বলেন, এই দেশে নাকি আমার মত একটা জঘণ্য মানুষ খুঁজে বের করা যাবে না।
আমি মাথা দোলাই। চিঁ চিঁ করে বলি, ভুল। এই দেশে কেন এই গ্রহেই নাই। কেন, একটা বইয়ে আপনাকে উৎসর্গে লিখে দিয়েছি না, "বাবুর মা, আমার মত একজন পোকামানবের সঙ্গে বসবাস করার চেয়ে কঠিন কিছু আর এই গ্রহে নাই"।
সরল স্বীকারোক্তি করেও কোন ফায়দা-তারতম্য হয় না। ইদানিং তিনি আবার একটা ওয়েবসাইটে আমার নামে যা-তা, কুৎসা রটাচ্ছেন। আমি নাকি এই ভূতের বাড়িতে ওনাকে আটকে রেখেছি (হরর-রহস্য গল্প আর কী!), ওনার ভুবন, আত্মীয়-স্বজন এঁদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ অতি ক্ষীণ, ইত্যাদি ইত্যাদি!
ওই ওয়েবসাইটে অনেকে অনাবশ্যক সমবেদনা প্রকাশ করেছেন, তাই তো-তাই তো, এ অন্যায়-এ অন্যায়। কেউ কেউ অদেখা জন্তুর সঙ্গে আমার সাদৃশ্য খোঁজার চেষ্টা করেছেন! কেন রে বাপু, অন্য একজনের সংসারে আগুন লাগিয়ে দাম্পত্য জীবনে গন্ডগোল লাগাবার প্রয়োজনটা কী!
এই দম্পত্তিকে দেখিয়ে আমি হড়বড় করে ইস্তারি সাহেবাকে বোঝাবার চেষ্টা করি, ভালবাসার রসায়ন কাহাকে বলে, কত প্রকার ও কী কী।
ইস্তারি সাহেবা কাতর হয়ে অস্ফুটে বলে উঠেন, আহারে-আহারে, এত কষ্টেও এদের ভালবাসার রসায়ন কী অটুট!
আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচি...।
*কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না এই শর্তে আপনাদের কানে কানে বলি, এরা কিন্তু দম্পত্তি না কেবল একই পথের পথিক।
**ছবি-স্বত্ব: সংরক্ষিত।
**ছবি-স্বত্ব: সংরক্ষিত।
2 comments:
দিক্কার জানাই ! উনি কোন ওয়েবসাইটে কি লিখছে, তার লিঙ্কু চাই। :D
এটা লিখেই বড়ো বিপদে আছি! লিংক দিয়ে আর গৃহ-যুদ্ধ বাঁধাতে চাই না। :(
Post a Comment