এবারে নাকি গাবতলিতে সাড়ে ১২ লক্ষ টাকার গরু মহাশয়কে খুঁজে পাওয়া গেছে। আসল গরুটার খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি! অপেক্ষায় আছি।
ভাল কথা, মনন নিয়ে ম্যাক্সিম গোর্কির চমৎকার একটা কথা আছে: "ইউক্লিডটা গাধা, আস্ত গাধা! আমি প্রমাণ করে দেব ওই নির্বোধ গ্রীকটার চেয়ে ঈশ্বরের মনন অনেক বেশি।"
কোরবানির সময়ে আমরা অসংখ্য হাজি মহসীন-ত্যাগবাজ পেয়ে যাই। আমার কৌতুহল কম, এলাকায় সবচেয়ে বেশি টাকার গরু কোরবানি কে দিচ্ছেন এটা জানার আগ্রহ বোধ করি না। কিন্তু এই সময়টাতে অন্য কোন আলোচনার বিষয় নাই! জনে জনে জানতে চাইবেন, গরু কিনছেন?
কাউকে জিজ্ঞেস করলেন, কই যান? সে হড়বড় করে বলবে, গরু বাজার।
কাউকে বললেন, ভাত খাইছেন। সে বলবে, না খাই নাই, খায়া গরুর বাজার যামু।
কাউকে বললেন, ভাত খাইছেন। সে বলবে, না খাই নাই, খায়া গরুর বাজার যামু।
বললেন, ইয়ে, আইজ কি বার? তিনি বলবেন, সুমবার, আইজ গরুর হাট নাই। ইত্যাদি।
তো গরু সংক্রান্ত তথ্য না-জানা অবধি নিস্তার নাই। ৭ জন মিলে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনবে কিন্তু প্রত্যেকে, একেকজন ৪৯ জনকে বলে বেড়াবে, বুঝলেন, গরুর এইবার যেই দাম, বাজারে গরুই নাই। অনেক যন্ত্রণা কইরা ৭০ হাজারে একটা লইলাম।
বা, ৭০ হাজার টেকায় গরু কিনলাম আর হালায় রওয়ানা লয়া কি প্যাচালটাই না করল, হালার আমি বাদাইম্যা নিহি!
মূল বিষয় হচ্ছে কোন-না-কোন প্রকারে আপনাকে জানতেই হবে, শুনতেই হবে। ছাড়াছাড়ি নাই।
আমার এলাকায় গতবার পর্যন্ত জানতাম, ৬৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল, এক সার্জেন্ট সাহেব কিনেছিলেন। তিনি নাকি ম্যালা বড়ো চাকরি করেন! বটে রে!
এইবার এটা আড়াই লক্ষ টাকা হয়েছে। কোরবানির আর ২দিন বাকি, এখনও এই রেকর্ড ভাঙ্গার সময় চলে যায়নি কিন্তু এটা ছোট জায়গা। আমার মনে হয় না এই রেকর্ড কেউ ভাঙ্গতে পারবে। ছোট জায়গা, এখানে আড়াই লক্ষ টাকার গরু মেলে না, উট পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই।
... ... ...
... ... ...
টুকটাক জিনিস কেনা হয় এখান থেকে। দিন দশেক আগে তাঁর দোকানে গেছি একটা সিক্স-বি পেন্সিল কিনব বলে।
বেচাকিনি বাদ দিয়ে মানুষটা দেখি বড়ো অস্থির। এক মাইকওয়ালার সঙ্গে কথা বলায় মহা ব্যস্ত। কি এক মাইকিং করাবেন। আমার মনে হলো, সামনে ঈদ, দোকানের বিজ্ঞাপন টিজ্ঞাপন দেবেন হয়তো। আমি হাসি গোপন করি, এক কাপ চায়ে দু'কাপ চিনি- দুই হাতের একটা দোকান তার আবার বিজ্ঞাপন!
বেচাকিনি বাদ দিয়ে মানুষটা দেখি বড়ো অস্থির। এক মাইকওয়ালার সঙ্গে কথা বলায় মহা ব্যস্ত। কি এক মাইকিং করাবেন। আমার মনে হলো, সামনে ঈদ, দোকানের বিজ্ঞাপন টিজ্ঞাপন দেবেন হয়তো। আমি হাসি গোপন করি, এক কাপ চায়ে দু'কাপ চিনি- দুই হাতের একটা দোকান তার আবার বিজ্ঞাপন!
অ আল্লা, ঘটনা দেখি এটা না! কাহিনি হচ্ছে, তাঁর দোকানের সামনে একটা পুটুলিতে তিনি কিছু স্বর্নের জিনিস পেয়েছেন, দোকানে কাগজে লিখে নোটিশ টাঙ্গিয়েছেন কিন্তু এখনও কেউ যোগাযোগ করেনি। অতএব ভরসা মাইকিং।
পরে জেনেছি, উদভ্রান্ত প্রকৃত মালিক উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে তার হারানো সম্পদ ফিরে পেয়েছিলেন। এই কিছু স্বর্নের জিনিস ছিল প্রায় ১০ ভরি, যার বাজারমূল্য আনুমানিক আড়াই লক্ষ টাকা! এমন লোভ সংবরণ!
পরে জেনেছি, উদভ্রান্ত প্রকৃত মালিক উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে তার হারানো সম্পদ ফিরে পেয়েছিলেন। এই কিছু স্বর্নের জিনিস ছিল প্রায় ১০ ভরি, যার বাজারমূল্য আনুমানিক আড়াই লক্ষ টাকা! এমন লোভ সংবরণ!
আমি কেবল ভাবছিলাম, এই মানুষটার স্থলে আমি হলে কি করতাম, আমি কি পারতাম এমন লোভ সংবরণ করতে? বুকে হাত দিয়ে বললে লজ্জার মাথা খেয়ে বলতে, আমি জানি না, এর উত্তর এখন আমার কাছে নাই!
আজ আমার একটা ইরেজার প্রয়োজন। আগেরটা নিয়ে বিরক্ত, ওটায় কার্বন লেপ্টে স্কেচের বারোটা বেজে যায়। ভিআইপিরা বড়ো যন্ত্রণা করছেন; তিতিবিরক্ত আমি, ভিআইপি গরুগুলোকে পাশ কাটাতে কাটাতে এগুতে থাকি।
আজ দেখি মানুষটা বড়ো বিষণ্ন! ব্যবসার অবস্থা নাকি ভাল না, এবার কোরবনি কি করবেন এই নিয়ে উদ্বিগ্ন।
আজ দেখি মানুষটা বড়ো বিষণ্ন! ব্যবসার অবস্থা নাকি ভাল না, এবার কোরবনি কি করবেন এই নিয়ে উদ্বিগ্ন।
আমি বলি, আচ্ছা, আমাদের এখানে আড়াই লক্ষ টাকা দিয়ে একজন কোরবানি দিল, জানেন? মানুষটা আকাশ থেকে পড়েন।
আমাকে বলেন, ভাই, কি কন, আড়াই লাখ টাকার গরু এইখানে পাইব কই? কে দিতাছে?
আমি বলি, মানুষটার নাম, আজাদ।
মানুষটা ভাবলেন, আমি বুঝি রসিকতা করছি। মানুষটাকে বুঝিয়ে বলি, এটা রসিকতা না, আমার প্রাণের কথা।
*মানুষটার অজান্তেই, বিনা অনুমতিতে তাঁর ছবি তুলেছি, এটা একধরনের অন্যায়। তাঁর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।
হোক অন্যায়, কিছু অন্যায়েও সুখ। এমন অন্যায় বারবার করলেই কী!
হোক অন্যায়, কিছু অন্যায়েও সুখ। এমন অন্যায় বারবার করলেই কী!
No comments:
Post a Comment