বাংলাদেশ যখন বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়, বুকটা তখন ভরে যায়, বুঝলেন। আল্লা রে, ভাঙ্গা ঘরে চাঁদের আলো না, স্বয়ং চাঁদ- কোথায় যে বসতে দেই ভেবে কূল পাই না! সমগ্র বিশ্বে একবার বিশ্ব-রেকর্ড করলেই আমরা বর্তে যাই সেখানে আবারও বিশ্ব-রেকর্ড! এ আনন্দ কোথায় রাখি?
এমন নজির বিশ্বের আর কোথাও আছে বলে আমার জানা নাই। এই রেকর্ড অন্য কোন দেশ কখনও ভাঙ্গতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি না, গলায় ভোঁতা ছুরি ধরলেও। কেউ আমাকে লক্ষ করে তোপ দাগুক, ইরান হালের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করলেও না, কাভি নেহি।
"...হাইকোর্টে...মিনিটে অন্তত একটি করে জামিন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে আবারও। ২দিনে দন্ডপ্রাপ্তদের জামিনের আবেদন ছিল এক হাজার একটি। এর মধ্যে অন্তত ২ দিনে যদি ৭০০ আবেদনের আদেশ হয়, তাহলে কমপক্ষে ৭০০ দন্ডিত ব্যক্তি অবশ্যই জামিন পেয়েছেন। ...৩৭টি ক্ষেত্রে (সবগুলোর তথ্য জানা সম্ভব হয়নি) খুনের দায়ে যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত অপরাধীরা যে জামিন পেয়েছেন, তা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়েছে। ...বিচারপতি এ এফ এম আবদুর রহমান এবং বিচারপতি ইমদাদুল হক আজাদের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এসব জামিন দেন।" (প্রথম আলো/ ০২.১২.০৯)
এই বেঞ্চের বিচারপতিদের লাল গোলাপ শুভেচ্ছা! তাঁদের মস্তিষ্কের তারিফ না করে উপায় নাই! আমাদের দাবী, এহেন মস্তিস্ক অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে। সরকার, আমাদের দাবী মানতে হবে, মেনে নাও; নইলে আগুন জ্বলবে ঘরে ঘরে।
মিনিটে একটি করে জামিন দেয়ার ঘটনা আগেও একবার ঘটেছিল। যেটা নিয়ে এই পোস্টটা দিয়েছিলাম। আমি কল্পনাও করিনি আমি বেঁচে থাকতে থাকতে আবারও এটা নিয়ে পোস্ট দেয়ার দূর্লভ ভাগ্য আমার ঘটবে। আমার জীবন সার্থক- এখন মরে গেলেও অন্যরা কাঁদলেও আমি নিজে কাঁদব না!
বছরখানেক আমি আইনের কিলাশ(!) করেছিলাম। ভাসা ভাসা মনে পড়ে, আমাদের পড়ানো হতো: আইন অন্ধ। হাতে ধরে ধরে (অকাট্য প্রমাণ দিয়ে) তাকে চেনাতে হয়, এ বাদী, এ বিবাদী, এটা চেয়ার, এটা টেবিল ইত্যাদি ইত্যাদি। আগের একটা পোস্টে লিখেছিলাম হাইকোর্টে একটা রিটের সুবাদেও খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল। চাহিদামত একগাদা প্রয়োজনীয় কাগজ দেয়ার পরও এই কাগজ লাগছিল, ওই কাগজ লাগছিল। আমার কালো ঘাম বেরিয়ে যাচ্ছিল! একটা বেঞ্চ কাগজপত্র খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে 'নট-প্রেস' করে দিলেন। পরে আমরা অন্য একটা বেঞ্চে গেলাম। বিস্তর সময় লেগেছিল।
একেকটা মামলা ঝড়ের গতিতে উঠাও, নামাও করলেও মিনিটে একটি মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব কিনা জানি না কিন্তু এই অসাধ্য কাজটা হয়েছে বলেই বিশ্বে আমরা রেকর্ডটা করতে পেরেছি! আফসোস, এহেন ঝড়ের গতিতে কাজ হওয়ার পরও একজন প্রেসিডেন্টের বিচার নিষ্পত্তি হতে ৩৪ বছর লাগে। রাহেলা মামলার আজও কোন গতি হয়নি!
অফ-টপিক: জানি না কেন আমার চার্লস ডিকেন্সের 'আ টেল অভ টু সিটিজ'-এর কথা মনে পড়ছে:
"...প্রথম বন্দীকে ওঠানো হলো গিলোটিনে।
ঘ্যাচ!
প্রথমবারের মত নেমে এলা ভারি ধারালো ফলাটা। দর্শকরা গুণলো 'এক'।
দর্শকরা গুণলো 'দুই'।
ঘ্যাচ! ঘ্যাচ! ঘ্যাচ!
'তিন...চার...পাঁচ' বিরামহীনভাবে দর্শকরা গুণছে। নিমিষেই প্রথম গাড়ি শূণ্য হয়ে গেল। দ্বিতীয় গাড়ি থেকেও বন্দীদের নামানো শুরু হলো। অল্পক্ষণেই শূণ্য হয়ে গেল সেটাও। এবার পালা তৃতীয় গাড়ির বন্দীদের।..."
এরশাদ-খালেদা জিয়ার সময় যেভাবে লেখা গেছে, ক্যারিকেচার, কার্টুন আঁকা গেছে আওয়ামী শাসনামলে সেটা ছিল স্রেফ একটা স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন! একদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (!) শহিদুল আলমকে নগ্ন পায়ে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেল। কোথায় নিয়ে গেল সেটা আবার অনেক পরে জানা গেল। কোর্টে আবার 'মাই লর্ড' বিচারক পুলিশকে জিজ্ঞেস করছেন, পুলিশ আসামীর (শহিদুল আলমের) ফোনের পাসওয়ার্ড নিয়েছে কিনা, সেদিনই লেখালেখির কফিনে পেরেক ঠোকা হয়ে গেল...!
Thursday, December 17, 2009
অভিনন্দন বাংলাদেশ, আবারও বিশ্ব-রেকর্ড!
বিভাগ
সত্য কাহিনি অবলম্বনে
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment