Search

Saturday, January 30, 2010

বইমেলা উদ্বোধন

বাংলা একাডেমীর বইমেলা সরকার প্রধান উদ্বোধন করেন। কেন? এটা কী আমাদের কলচর(!) হয়ে গেছে, রাজনীতি এবং পলিটিক্স মিশিয়ে চানাচুর বানিয়ে কুচুমুচুর করে না-খেলে আরাম পাই না? নাকি সব আঙ্গুল ঘিয়ে ডুবিয়ে না-রাখলে আমাদের চলে না? যে কোন সরকার প্রধান যখন ক্ষমতার জোরে বাংলা একাডেমীর বইমেলা উদ্বোধন করেন তখন দৃশ্যটা আমার কাছে অশ্লীল-কুৎসিত মনে হয়। আমি টিভিতে দৃশ্যটা দেখে চোখ বন্ধ করে ফেলি।

এইবার কেয়ার-টেকার সরকারের সময় খুব আশায় আশায় ছিলাম এই অবস্থার পরিবর্তন হবে কিন্তু কিসের কী! ফকরুদ্দিন সাহেবকে দেখলাম চকচকে লম্বা একটা পাঞ্জাবী গায়ে দিয়ে, চাদর নাকি ওড়না (ভালো করে লক্ষ করতে পারিনি বলে ক্ষমা চাচ্ছি) গলায় দিয়ে ঠিকই চলে এসেছিলেন মেলা উদ্বোধন করতে। যথারীতি আমি চোখ বন্ধ করে ফেলেছিলাম।
এসব তামাশা দেখে তারপরও না-হয় দাঁতে দাঁত চেপে চোখ বন্ধ করে থাকা যায় কিন্তু বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালকের মত মানুষ যখন একবার দুম করে বলে বসেছিলেন, "এইবার সরকার প্রধান মেলা উদ্বোধন করছেন একজন বিশিষ্ট লেখক হিসাবে" তখন আমার দাঁত কপাটি লেগে গিয়েছিল। সহজে আর জ্ঞান ফেরেনি! জ্ঞান ফেরার পর ইমদাদুল হক মিলনের চাটুকারী লেখা পড়ে আবারও জ্ঞান হারাই।

শামসুর রাহমানকে যখন দেখতাম উদ্বোধন করতে আসা সরকারপ্রধানের পিছু পিছু হাসিমুখে মেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন তখন বুক ভেঙ্গে আসত, আহা কবি, তুমিও! পদের এতো লোভ?
লেখকদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা আকাশচুম্বি, এঁদের লেখা পড়ে আলোকিত হই কিন্তু এঁদের নিয়ে ভাবার আগ্রহ
কারও নাই। শামসুর রাহমানের এই আচরণ নিয়ে কথা বলতে খুব আরাম পাই কিন্তু ক্রমশ অন্ধ হয়ে যাওয়া এই মানুষটা চোখের ভয়াবহ অসুখে ভুগছিলেন; তাঁর অষুধ কেনার টাকা প্রায়ই থাকত না, এই অন্ধকার দিক জানার কোন প্রয়োজন আমাদের নাই। আমাদের কাজ হচ্ছে কেবল তাঁর কবিতা আউড়ে যাওয়া।
আগেও কোথাও লিখেছিলাম, লেখকরা অন্য গ্রহ থেকে আসবেন, নেংটি পরে উবু হয়ে লিখে যাবেন, লি খে ই যা বে ন!  আজব একটা দেশ- এই দেশে একজন মেথরও মেথরগিরি করে তাঁর জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন কিন্তু একজন লেখক পারবেন না (দু-একজন ব্যতীত)।
কেউ কেউ উষ্মা প্রকাশ করতে পারেন, চু ভাইদের বলে কে লিখতে, সে অন্য প্রসঙ্গ, লাখ টাকার প্রশ্ন। অবশ্য আমি বলি, লেখালেখি করাটা একটা অসুখ।

কোন সরকারের কাছেই আমার কোন জোর আশা নেই। এই দেশে রাজনীতিবিদরা অনায়াসে জমির প্লট পেয়ে যান, হালে জানা গেছে মিথ্যা হলফনামা দিয়ে ১৮ জন সংসদ সদস্য প্লট নিয়েছেন- অথচ এদের সবারই ঢাকায় একাধিক বাড়ি আছে। তারপরও এঁদের ফকির-ফকির ভাব যায় না! অভাগা দেশ, এঁরা আবার সংসদ সদস্য পদ ধরে ঝুলে থাকেন, থাকতে দেয়া হয়!
সরকার কখনও লেখকদের নিয়ে এমন ভাবনা ভেবেছেন বলে অন্তত আমার জানা নাই। ভাবলেও সেই লেখকের গায়ে সরকারী দলের চামড়া আছে কিনা এটা নিশ্চিত হওয়ার প্রয়োজন হয়েছে। এই এক চুতিয়াগিরি হয়েছে, একজন মানুষকে কোন-না-কোন দলের সঙ্গে জড়াজড়ি করে থাকতে হবে!

দরিদ্র দেশ, আমাদের ভাবনাগুলোও অতি দরিদ্র! এমন একটা উদাহরণ দেয়া অনেকের কাছে হাস্যকর ঠেকবে। লেখক মিরোশ্লাফ হোলুবকে মোটা অংকের স্কলারশীপ দিয়ে সসম্মানে বার্লিন নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। হোলুব ঘুরেফিরে বেড়াবেন, ইচ্ছা হলে লিখবেন, যা খুশি। হোলুব এক বছরে মাত্র একটি কবিতা লিখেছিলেন এবং ওই কবিতা ঘষামাজা করেছিলেন আরও এক বছর লাগিয়ে!

এই দেশে কতশত বিত্তবান আছেন, কাউকে আজও দেখলাম না লেখকদের জন্য কিছু করতে। এটা তো কঠিন কিছু না, কোন এক ফ্ল্যাট কোম্পানি বাংলাদেশের অন্তত একজন লেখককেও একটা ফ্ল্যাট উপহার দিয়ে বলত, স্যার, এইবার আপনি একটু নিরিবিলিতে লেখালেখি করেন। সরদার ফজলুল করিমের মত একজন মানুষকে একটা কোম্পানির ফ্ল্যাটে রাখতে পারাটা যে কী সম্মানের এটা এই সব নির্বোধদের কে বোঝাবে?

মূল প্রসঙ্গ থেকে সরে এসেছি, আমার সাফ কথা, মানুষের বাচ্চা মানুষের দুধ খাবে, পশুর দুধ না। বইমেলা উদ্বোধন করবেন লেখালেখি জগতের মানুষ, কোন রাজনীতিবিদ না।

আমার সুতীব্র ইচ্ছা, মারা যাওয়ার আগে এটা দেখে যেতে চাই, প্রধান অতিথিকে নিয়ে প্যা-পো আওয়াজ তুলে নিরাপত্তার দায়িত্বের থাকা লোকজন ঝড়ের গতিতে ছুটছে। অপ্রয়োজনীয় তবুও, র‌্যাব নামের মুখোশ পরা লোকগুলো আজ হাসি-হাসি মুখে মানুষটাকে ঘিরে রাখতে পেরে কী আনন্দই না বোধ করছে। প্রধান অতিথি, সরদার ফজলুল করিমের মত খর্বাকৃতি একজন মানুষ গাড়ি থেকে নেমে ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে এগিয়ে আসছেন। আজ মেলার সমস্ত আলো তাঁর জন্য, মেলায় আসা সব দুবির্নীত পা আজ টানটান। মা সন্তানকে বকা দিচ্ছেন, খোকা, আমাদের প্রধান অতিথি চলে এসেছেন, দাঁড়িয়ে সম্মান দেখাতে হয় রে বেটা। লেখক রে বেটা, অনেক বড় লেখক...!

এমন একটা দিনে মরেও সুখ, নাই-বা হলো জ্যোৎস্না রাত!

3 comments:

Unknown said...
This comment has been removed by the author.
Unknown said...

আপনার কথার সাথে আমিও একমত কিন্তূ যেহেতু এটি একটি দেশের জাতীয় বই মেলা আর আমাদের দেশে পুজিবাদ অর্থনীতি চলমান, আমাদের পক্ষে অসম্ভব রাজনীতিবিদদের (চোর বা সাধু) অবগ্গা করা তবে যদি মেলার ফিতাটা একসাথে কাটেন রাজনীতিবিদ এবং একজন লেখক/কবি আমার মনে হয় মন্দ হয় না.

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

আবারও বলি:
আমার সাফ কথা, মানুষের বাচ্চা মানুষের দুধ খাবে, পশুর দুধ না। বইমেলা উদ্বোধন করবেন লেখালেখি জগতের মানুষ, কোন রাজনীতিবিদ না।

এমন কি, হাজার বছরের কোন শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী কিন্তু রাজনীতিবিদ- বইমেলা উদ্বোধন করার জন্য তিনি কবর থেকে উঠে এলেও আমার আপত্তি আছে।