এরশাদ-খালেদা জিয়ার সময় যেভাবে লেখা গেছে, ক্যারিকেচার, কার্টুন আঁকা গেছে আওয়ামী শাসনামলে সেটা ছিল স্রেফ একটা স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন! একদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (!) শহিদুল আলমকে নগ্ন পায়ে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেল। কোথায় নিয়ে গেল সেটা আবার অনেক পরে জানা গেল। কোর্টে আবার 'মাই লর্ড' বিচারক পুলিশকে জিজ্ঞেস করছেন, পুলিশ আসামীর (শহিদুল আলমের) ফোনের পাসওয়ার্ড নিয়েছে কিনা, সেদিনই লেখালেখির কফিনে পেরেক ঠোকা হয়ে গেল...!
Saturday, January 23, 2010
জীবনটাই যখন নিলামে: এক
বোর্ড মিটিং-এ সবাইকে ল্যাপটপ খুলে বসতে হয়।
সৈয়দ সাহেবের কঠিন নির্দেশ। তিনি যখন বকবক করবেন তখন সবাইকে তার বকবকানি নোট করতে হবে, অন্তত নোট করার ভান করতে হবে। কেউ ভুলে গেলে খরখরে গলায় বলবেন, এই জিনিসটা কি গলায় ঝুলিয়ে রাখার জন্য দেয়া হয়েছে?
শামসির আজ পর্যন্ত বুঝে উঠতে পারেনি মিটিং চলাকালিন এটা কী কাজে লাগে! সৈয়দ মানুষটা যে একজন অযোগ্য একজিকিউটিভ এতে অন্তত ওর কোন সন্দেহ নাই। শামসির আড়চোখে রাব্বির ল্যাপটপের স্ত্রীণে তাকালো। এ কি যেন একটা গেম খেলছে। সৈয়দ সাহেবের চোখে পড়লে কেয়ামত নেমে আসবে। ইশারায় কিছু একটা বলতে গিয়ে নিজের স্ত্রীণে চোখ পড়ল। অরি আল্লা, রাব্বি দেখি চ্যাটিং অপশনে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে। ইউনিকোডে এখন বাংলায় লেখা যায়, ম্যাসেজ পাঠানো যায়। লিখে আরাম। নিজের ভাষায় লেখার আনন্দ অন্য কোন ভাষায় কোথায়!
শামসির সাবধানে টাইপ করল, তোর কী মাথা খারাপ? সৈয়দ কাঁচা খেয়ে ফেলবে।
রাব্বির ফিরতি ম্যাসেজ, সৈয়দের মায়েরে বাপ। হারামজাদা কি করেছে জানিস, কাল তার ড্রাইভারকে আমরা যে লাঞ্চ খেতে দিয়েছিলাম এটা সে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেছে। ড্রাইভারকে বলেছে, এটা নাকি তার জন্য দেয়া হয়েছে। চিন্তা কর, শালা কেমন চুতিয়ার ঘরে চুতিয়া।
শামসির লিখল, যাহ, বানিয়ে বানিয়ে বলছিস, এটা কী করে হয়! সৈয়দ কেন তার ড্রাইভারের লাঞ্চ নিয়ে যাবে! মানুষটাকে পছন্দ করিস না ভাল কথা, তাই বলে যা-তা বলার মানে কী!
বিশ্বাস না হলে ওর ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করে দেখ। সত্য না হলে আজীবন তোর ময়লা আন্ডারওয়্যার ধুয়ে দেব, ‘সয়ার অন মাই বলস’।
শামসির ভেতর থেকে পাক খেয়ে উঠা হাসি চাপল। হেসে উঠলে বিপদ। সৈয়দ খরখরে চোখে তাকিয়েই ছেড়ে দেবে না, দাঁড় করিয়ে একগাদা প্রশ্ন করবেন। কালঘাম বের করে দেবেন। তার আগে ও কেন হেসেছে এটার একটা সদুত্তর না দেয়া পর্যন্ত ওনার প্রশ্ন চলতেই থাকবে। ত্যানা পেঁচাতে থাকবে!
এরিমধ্যে আরেকটা মেসেজ এসে হাজির, ওরি ব্রো, সৈয়দ বানচোদটাকে দেখ, কী টাইট প্যান্ট পরে এসেছে, ভেতরের আন্ডারওয়্যারের লাইনিং ভেসে উঠেছে! এ দেখি আরেক মাইকেল জ্যাকসন রে! জ্যকসন প্যান্টের উপর আন্ডারওয়্যার পরত আর খানিক পরপর ওই বিশেষ জায়গায় ওর হাত চলে যেত। আল্লা মালুম, জ্যাকসনকে কে এই বুদ্ধিটা দিয়েছিল! সৈয়দ অবশ্য প্যান্টের উপরে পরেনি কিন্তু আমি তো খুব একটা পার্থক্য দেখছি না। ইয়ে শামসির, তোর কি ধারণা আছে এ কি কালারের আন্ডারওয়্যার পরেছে? গোলাপি কি হতে পারে?
শামসির হাসি চেপে লিখল, না ধারণা নাই কারণ আমি এটা ওকে পরাইনি। শ্লা, তোর মাথা একেবারে গেছে।
এই হারামজাদার সঙ্গে চাকরি করলে আমি নিশ্চিত পাগল হয়ে যাব। ভালো কথা, তুই কি এটা জানিস, সানফ্রান্সিসকোতে নিজের আন্ডারওয়্যার দিয়ে নিজের গাড়ি পরিষ্কার করা বেআইনি?
ধুর, চাপা।
আরে না, সত্যি।
যাহ!
সয়্যার অন মাই, না-না তোর বলস। হা হা হা।
বলিস কী! শালারা পাগল নাকি!
এরিমধ্যে সৈয়দ সাহেব মার্চেন্ডাইজিং সম্বন্ধে রাব্বিকে কিসব জিজ্ঞেস করলেন। রাব্বির মুখে খই ফুটছে। শামসির মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। চ্যাটের ফাকে ঠিকই সৈয়দ সাহেবের ব্রিফিং-এর দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি রেখেছে। অবশ্য সৈয়দ সাহেব আর কাউকে কিছু জিজ্ঞেস না করলেও রাব্বিকে ধরবেনই। রাব্বির সঙ্গে সম্পর্কটা সাপে নেউলে। রাব্বিটাও একরোখা। সৈয়দ সাহেবকে খানিকটা ছাড় দিলেই হয়। কিন্তু না, সৈয়দ সাহেবের আজগুবিসব পাগলামি অন্যরা অবলীলায় হজম করলেও রাব্বি ছেড়ে কথা বলবে না। রাব্বিটা বুঝতে চায় না চাকরি করলে মেরুদন্ড হতে হয় জেলির মত, বহুজাতিক কোম্পানি হলে তো কথাই নেই। তার উপর কোম্পানির উপর মহলে সৈয়দ সাহেবের হাত অনেক দূর, ডিসিশন মেকারদের বিশেষ পছন্দের মানুষ তিনি। তার সব কথাই ঠিক এটা ধরে নিলেই তো আর সমস্যা থাকে না।
রাব্বি খুকখুক করে কাশল। শামসির তাকালে চোখ দিয়ে ল্যাপটপ দেখাল। নতুন ম্যাসেজ, এই শোন, আমেরিকার অঙ্গরাজ্য ফ্লোরিডায় শজারুর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করা অবৈধ, চিন্তা কর! ভাবা যায়?
ভাগ শালা! তুই-ই চিন্তা কর।
আরে সত্যি। সত্যি না হলে ৫০০০ টাকা বাজি। নগদ, এক হাজার টাকার কড়কড়ে নোটে।
তুই কোত্থিকা এইসব আজগুবি কথা বানাস!
খোদার কসম, সত্যি এমন একটা আইন ওই দেশে চালু আছে। দেখ দেখি কান্ড, এরা নাকি শিক্ষা-দীক্ষায় অতি সভ্য!
হুম। কিন্তু মিয়া, আমার মাথায় এটা ঢুকছে না, কার এমন শখ জাগবে?
আছে-আছে, কোন-না-কোন মামু আছে নিশ্চয়ই নইলে এমন আইন চালু হবে কেন?
বলিস কী, আবার এমন আইনও চালু আছে!
হুঁ, চালু আছে। আমার কি মনে হয় জানিস, সৈয়দের মত কোন এক মানুষ কখনও এমন একটা কান্ড করেছিল, তাই বাধ্য হয়ে এই আইনটা চালু করা হয়েছিল। কে জানে, সৈয়দও এটা করে কিনা? ইশ, শজারুর সঙ্গে রমনরত অবস্থায় সৈয়দ হারামজাদাকে যদি হাতেনাতে ধরতে পারতাম। আহা, সেদিন কী আনন্দ হবে আকাশে বাতাসে। ওদিন সেলিব্রেট করব, মঙ্গলের পানি দিয়া নিজের হাগা ধোব।
শামসিরের হাসি চাপতে আপ্রাণ চেষ্টা করতে হচ্ছে। হাসি চাপা দেয়ার জন্য অহেতুক নাক-টানা গলা টানার ভঙ্গি করছে। ভাগ্যিস, সৈয়দ তার প্রেজেন্টেশন নিয়ে ব্যস্ত নইলে ঠিক টের পেয়ে যেত।
রাব্বির এখন ইচ্ছা করছে সৈয়দকে ধরে একটা আছাড় দেয়। এ প্রেজেন্টেশনের নামে বিজবিজ করে কীসব জানি বকেই যাচ্ছে। খর্বাকৃতি মানুষটাকে বড়ো হাস্যকর লাগছে। মানুষটা বিচিত্রসব ভঙ্গি করছে। আবার ঢং করে হাতে একটা পয়েন্টার নিয়ে একটু পরপর বোর্ডে লাল আলো ফেলছে। খানিক পর পর পানিতে চুমুক দিচ্ছে, চায়ের কাপে মুখ রাখছে। এরিমধ্যে ওদের একটা টাস্ক দিয়ে দু-বার বাথরুম থেকে ঘুরে এসেছে অথচ ওদের বাথরুম যাওয়ার প্রয়োজন হলে বিরক্ত হয়ে বলবে, আপনারা এইসব মিটিং শুরু হওয়ার আগে সেরে ফেলতে পারেন না। মিটিং-এর সুরটাই কেটে যায়।
শোনো শালার কথা, কুতুয়া, সবাই কী তোর মতো হাত মারতে বাথরুম যায় রে। শালার চাকরি, বাথরুম চেপে বসে থাকতে হবে। রাব্বির খুব ইচ্ছা, একদিন মিটিং চলাকালীন সময়ে এখানেই বাথরুম সেরে ফেলে। সৈয়ত ওয়াক ওয়াক করবে, চিৎকার করতে থাকবে। ও মুখ শুকিয়ে বলবে, কি করব বস, হাগা-মুতা তো কারও কথা শোনে না। আপনার নির্দেশের কথা বলেছিলাম পাত্তাই দিল না।
দেখো কান্ড, এ আবার একটু পরপর বলছে, সো গাইজ বুঝতে পেরেছ তো? ব্যাটা বেতমিজ কোথাকার! বুঝতে পেরেছ না বলে বল আমি কি বোঝাতে পারলাম? এইসব নির্বোধ টাইপের মানুষরাই এদেশের সব কিছু চালাচ্ছে। রাব্বির এম.বি.এ করা নাই বলে কথায় কথায় এটা নিয়ে অপদস্ত করে অথচ এ নিজে স্রেফ বি.বি.এ করেছে। শ্লা, এই দেশে এখন এম.বি.এ করাটা আসমানি নিয়ম হয়ে গেছে- অসংখ্য রোবট বানাবার বুদ্ধি! অন্য সব ডিগ্রি একদিকে এম.বি.এ একদিকে! আচ্ছা, একটা রোবটের পশ্চাদদেশে এমবিএ ঢুকিয়ে দিয়ে অফিসে বসিয়ে দিলে কেমন হয়?
সৈয়দ নাকি এখন মার্কেট ট্যুরের কথা বলে চুপিচুপি এম.বি.এ ক্লাশ করছে। অথচ এই চালবাজির আদৌ কোন প্রয়োজন ছিল না। অফিসকে এটা জানালে অফিসই এই সুবিধাটা করে দিত। কিন্তু খাসলত যাবে কোথায়, অফিসের গাড়ির তেল পুড়িয়ে ব্যাটা করে ক্লাশ! এমনিতে খুব লম্বা লম্বা বাতচিত করে, গাইজ, তোমাদের কাছ থেকে আমি কিন্তু একশ ভাগ সততা চাই। শালা, তোর তো মামার জোরে চাকরি, কোন এমপি নাকি স্পিকার ওর কি যেন লাগে। অযথাই গোটা অফিসটা তটস্ত করে রাখে। আজ এর চাকরি খাচ্ছে তো কাল ওর।
একদিন রাত গভীর করে বাসায় ফিরে ড্রাইভারকে ছেড়েছে। বেচারা গভীর রাতে আসতে গিয়ে ছিনতাইয়ের কবলে পড়ল। আরেক দিন ড্রাইভার ছিনতাইয়ের ভয়ে রাত করে আসতে চায়নি বলে তাকে বাসার ছাদে শোয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। ড্রাইভার বেচারা সারাটা রাত মশার কামড় খেতে খেতে পায়চারি করে কাটিয়েছে। এ আবার বলে সততার কথা!
রাব্বির থেকে থেকে হাঁই উঠছে। মিটিং নামের এই যন্ত্রণার কবে সমাপ্তি হবে? কেয়ামতের আগ পর্যন্ত চলবে কিনা কে জানে!
*কিছু কথা, কিছু গান
বিভাগ
জীবনটাই যখন নিলামে
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
2 comments:
হা হা হা !!!
তন্ময়ের কথা মনে পড়ছে...
পুরো বইটা পড়ার অপেক্ষায়...
তন্ময়কে ঈর্ষা করি। লোকজন এখনও তাকে মনে রেখেছে...!
Post a Comment