গত দুই বইমেলায় যাওয়া হয়নি। কারণ অনেক। বিস্তারিত বলি না।
এমনিতেও বইমেলায় গেলে আমি এক ধরনের অস্থিরতা বোধ করি। ধবধবে পাঞ্জাবীতে কালো কালো ছোপ সহ্য করতে পারি না। আমার পরিচিত অনেক ব্লগার নামের দুর্ধর্ষ লেখকের বই বের হয় না অথচ ছাতাফাতা অনেকে প্রসবযন্ত্রণা সহ্য করে যাচ্ছেন। জন্তুর মত গাদা গাদা বাচ্চা-বই প্রসব করছেন। এইসব লেখকদের জরায়ুর জন্য আমি বেদনা অনুভব করি। আহা, বেচারারা, আহা। কী কষ্ট! অবশ্য যেখানে বইমেলা উদ্বাধনটাই একটা অশ্লীলতা সেখানে অন্য কথা বলার খুব একটা অবকাশ কই!
দুই সমকামী বুড়ার বিশেষ কর্মকান্ডের চেয়ে আমার কাছে অশ্লীল মনে হয় লেখকদের কিছু কাজকারবার দেখলে। ইলেকট্রনিক মিডিয়া দেখলেই এঁরা মুখ দেখাবার জন্য যে কস্তাকস্তি করেন, খদ্দের ধরার জন্য একজন কমার্শিয়াল সেক্স ভলন্টিয়ারও এতটা নির্লজ্জ হন না। লেখক মহোদয়গণ চামড়ায় মুড়িয়ে রাখা মল-বাক্সের (মতান্তরে পেট) কাছে যে ভঙ্গিতে নিজের বই ধরে ফটো খিঁচান; দৃশ্যটা দেখে আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি। ইচ্ছা করে গলায় আঙ্গুল দিয়ে বমি করি।
ভাগ্যিস, বইগুলো গলায় ঝুলিয়ে ফটোসেশন করা হয় না (অবশ্য হলে মন্দ হতো না) নইলে সন্ত্রাসীরা আপত্তি না করলেও র্যাব-ট্যাবরা আপত্তি করত।
নিজেকে ধন্যবাদ দেই আমি নিজেকে লেখক বলে স্বীকার করি না। লেখার রাজমিস্ত্রী হয়ে আছি, এই বেশ। লেখক হতে গিয়ে দিগম্বর হয়ে যাওয়া কোন কাজের কাজ না। বিশেষ মুহূর্ত ব্যতীত নগ্ন হওয়াটা ভালো দেখায় না।
এবারের মেলায় না গিয়ে উপায় ছিল না। অজ্ঞাত একজন আমার কাছে গিফট ভাউচার পাঠিয়েছেন, আমার জন্য। শর্ত একটাই, মেলায় ঘুরে ঘুরে আমি যেন বই কিনি, নিজের জন্য। কেবল বই-ই কেনার জন্য এই টাকাটা বিপুল!
কিন্তু এই টাকায় এক ঠোঙা বাদামও কেনা যাবে না, মহা মুসিবত তো। এইটা আবার কোন দেশের আইন, বাহে!
আমার এমন সময়ে এটা নেয়াটা আমার জন্য ভারী বিব্রতকর। ব্যাখ্যায় যাচ্ছি না। এই ভালবাসা নিতে না বলে খুব একটা সুবিধা করতে পারলাম না। আমি যুক্তির পিঠে যুক্তি চালাচালি করতে পারি না তার উপর কঠিন সব আবেগীয় যুক্তি। ভালবাসার দাবী- হার না মেনে, না নিয়ে উপায় কী!
আরেকটা কঠিন শর্ত, মানুষটার নাম আমি জানতে চাইতে পারব না। পর্দার আড়ালে থাকা এই মানুষটার পরিচয় বের করা আমার পক্ষে অসম্ভব না। কারণ এই গ্রহে আমাকে পছন্দ করে এমন মানুষের সংখ্যা খুব অল্প। খানিকটা আঁক কষলেই এই ছোট্ট বৃত্তটা ক্রমশ ছোট হয়ে আসবে। তখন এই মানুষটাকে অনায়াসে চেনা যাবে। কিন্তু আমার ইচ্ছা করছে না। থাকুন না বোকা-সোকা মানুষটা তাঁর বোকামী নিয়ে, তাঁর মত করে। অহেতুক আমাদের এই চালাক পৃথিবীতে তাঁকে এনে লাভ কী, আর কেনই বা বোকা-সোকা মুখটা ধূর্ততার চোখে দেখার চেষ্টা করা!
আহারে, এমন বোকাদের সঙ্গে থেকে থেকে এমন খানিকটা বোকামি যদি খানিকটা শিখতে পারতাম!
17 comments:
আড্ডা হলো কেমন?
বলিয়েন না, অনেক পুরনো পাপীর সঙ্গে দেখা হলো :)
Post a Comment