পার্শ্ববর্তী দেশে উপাসনালয় (বাবরি মসজিদ) ভাঙ্গলে আমাদের দেশে রক্তগঙ্গা বয়ে যায়। একেকজনের শরীরে তখন কী জেহাদী জোশ! এই দেশের যে মানুষটি দাঁড়াবার ভঙ্গিই এখনও শেখেনি, শেখেনি কারও দিকে তাকালে মুখ বন্ধ রাখার ভব্যতা। পেশাবের পর যে মানুষটি প্রকাশ্যে যন্ত্র ধরে হাঁটাহাটিঁ করে, কাশাকাশি করে; সেই মানুষটার হাতেও নাঙ্গা তলোয়ার শোভা পায়।
অথচ এখন এই আমাদের দেশেই উপাসনালয় আগুনে পুড়িয়ে দিচ্ছে, পদদলিত করছে এটা তেমন কোনো বিষয় না। কারণ, এঁদের প্রতিরোধ করার সেই ক্ষমতা কই!
পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঘাইহাটে যে কান্ডটা ঘটে গেল এটা দেখার পর একজন ইসরাইলির সঙ্গে নিজের খুব একটা তফাত খুঁজে পাচ্ছি না। এবং প্যালেস্টাইনদের প্রতিও আলাদা করে মমতা দেখাবার উৎসাহ পাচ্ছি না। আদৌ এই নিয়ে আদিখ্যেতা দেখাবার প্রয়োজন আছে বলেও আমার মনে হয় না।
বাঙ্গালিরা আদিমানুষদের (আমরা এদের অবজ্ঞা করে কখনও উপজাতি বলি, কখনও আদিবাসি) প্রতি তাদের ক্ষোভ জানিয়েছেন। সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। কিন্তু আদিমানুষদের ভয়ংকর অভিযোগ আছে, (যেটা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এসেছে ) সেনাবাহিনী বাঙ্গালীদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেছে, আদিমানুষদের সঙ্গে নৃশংস আচরণ করেছে!
মা-হারা সুনীতার চোখের সামনে যখন তার মার মৃত্যু হচ্ছিল তখন তার মাকে উদ্ধার করার চেষ্টা করলে আর্মি তাদের দিকে বন্দুক তাক করে। তারা বাধ্য হন বন্দুকের মুখে মুমূর্ষু এই মাটাকে মৃত্যুর কোলে ফেলে পালিয়ে যেতে। এমন অজস্র উদাহরণ!
এই ঘটনাগুলো ঘটল ২০ ফেব্রুয়ারি, যখন গোটা জাতি তাদের ভাষার লড়াই, অস্তিত্বের লড়াইয়ের দিনটাকে নতজানু হয়ে স্মরণ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে আমরা আমাদের সেই লড়াইটা নিয়ে অহংকার করি কারণ আজ আমরা বাঙালিরা বিজয়ী, শক্তিশালী। পাকিদের বিরুদ্ধে লড়াইটা আমরা জিতে গেছি, না-জিতলে এই পাহাড়িদের মতই হতো আজ আমাদের অবস্থা।
এই পাহাড়ি নামের আদিমানুষদের ভুবনটা তছনছ করা শুরু করি আমরা আশির দশকে। এর পুরোটা ক্রেডিট দিতে হয় জিয়াউর রহমান সাহেবকে। তিনি পুনর্বাসনের নামে পাহাড়ে বাঙ্গালিদের পাঠাতে শুরু করেন। ধুতুরা গাছটা তখনই লাগানো হয়ে গিয়েছিল, কালে কালে এতে ধুতুরা ফল ধরবে এতে অবাক হওয়ার কী আছে?
আজ আমরা পাহাড়িদের খুঁত ধরি। কিন্তু কোনঠাসা, পাহাড়ের এইসব মানুষদের পিঠ ঠেকাবার জন্য পেছনের গাছও অবশিষ্ট রাখছি না আমরা।
আমরা এইসব আদিমানুষদের ভব্যতা শেখাবার নাম করে আমাদের মত করে কথা বলাবো, আমাদের মত পোশাক পরাবো, আমাদের মত করে ভাবতে শেখাবো। একদা এদের ভাষা কোনো এক পাহাড়ে হারিয়ে যাবে।
আহারে, এদের তো একজন মতিউর রহমান নাই যে, জন রীডের ভাবনা ধার করে গ্রামীনের মত জোঁকের হাত ধরে, 'পাহাড় কাঁপানো ২০ ফ্রেব্রুয়ারি' নামে একটা সার্কাসের আয়োজন করবেন। বা আমাদের গাফফার চৌধুরী সাহেব ফেনীর জয়নাল হাজারীকে নিয়ে গান রচনা করা থেকে অবসর পেলে একটা গান রচনা করে ফেলবেন, 'আমার পাহাড়িদের বাড়তি রক্তে রাঙানো...'।
খর্বাকৃতির চেয়েও ক্ষুদ্র খুঁজে পাওয়া যায়। পাকিদের কাছে অনেক মার খেয়েছি দুর্বল আমরা, আর না। এবার আমাদের পালা। বিশ্বের কাছে সেই ক্ষুদ্র আমরা পদে পদে অপদস্ত হই। এবার আমাদের পালা। আমাদের আছে ট্রেনিংপ্রাপ্ত মার্সেনারি, আছে সুশীল সমাজের বুদ্ধি। এবার আমাদের আর পায় কে?
অসহ্য ক্ষিধা নিয়ে সভ্যতা-লোভ-যান্ত্রিকতার কাঁধে ভর দিয়ে শহর ক্রমশ এগিয়ে আসছে। গ্রাস করে ফেলছে প্রকৃতি, প্রকৃতির আদি-সন্তানদের। পাহাড় থাকল, না আদিমানুষ তাতে কী আসে যায়! এই দানবকে থামাবার সাধ্যি কার? সহসাই আমরা সগর্বে বলব, 'দিস ইজ মাই ল্যান্ড, নো পাহাড়ি রাইডস হিয়া(র)'।
*ছবি ঋণ: রবি শংকর, কালের কন্ঠ
** জামাল ভাস্করের ধারাবাহিক লেখা। হেথাক তুকে মানাইছে নারে: http://www.amrabondhu.com/vashkar/1591
সহায়ক সূত্র:
১. ইসরাইল...: http://www.ali-mahmed.com/search/label/%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%B2
২. মতিউর...:
2 comments:
এ লজ্জা কোথায় রাখি! :(
আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, পাকিদের খামাখা গালি দিয়ে লাভ নাই। ওরাও দেশপ্রেমিক, আমরাও! @মুকুল
Post a Comment