কবি নজরুল। আমার অসম্ভব পছন্দের কবি এটা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি না। কিন্তু "খেলিছো এ বিশ্ব লয়ে, বি-রা-ট শিশু..." তাঁর এই অমর সৃষ্টি যখন অনুপ জালোটার গলায় শুনি তখন মনে হয় এটা গান না, অসাধারণ এক প্রার্থনা। এটা লেখার পর নজরুল আর এক লাইনও না লিখলে সমস্যা ছিল না। এমনিতেই অমর হয়ে থাকতেন।
আমাদের দেশে অনেকে কখনও কখনও নজরুলকে নিয়ে মাতামাতি করতে গিয়ে অনাবশ্যক বাড়াবাড়ি করে ফেলেন। প্রতিপক্ষ হিসাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে দাঁড় করিয়ে আরাম পান কারণ রবিদাদা হিন্দু। অনেক শিক্ষিত মানুষের মুখে যখন এইসব শুনি তখন মনে হয়, গোবর খেয়ে প্রায়শ্চিত্ত করার পরামর্শ না দিয়ে গতি কী!
নজরুল বেশ কিছু দিন কুমিল্লায় ছিলেন। এটা ভাসা ভাসা জানতাম।
এবার রাণীর দিঘীর পাড়ে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম, আচ্ছা, মানুষটা যখন এখানে এসে বসতেন, লিখতেন, আড্ডা দিতেন তখন কি মানুষটার বাবরি চুল ছিল? ছিল কি মানুষটা ভাবুলতায় মাখামাখি দু-চোখ?
আচ্ছা, মানুষটা কি এই দিঘীতে পা ডুবিয়ে বসতেন? আচ্ছা, এখানে কি মাধবী লতার গাছ ছিল? আচ্ছা, প্রমিলাকে যখন চিঠি লিখতেন তখন তাঁর মনে কি ভাব খেলা করত? আচ্ছা, তিনি কি ভুল করেও কখনও প্রমিলাকে চিঠিতে লিখে ফেলেছিলেন, প্রাণসখি চুম্বন লইয়ো...। লিখে ফেলে ভারী বিব্রত হয়ে ওই কাগজটা কুচিকুচি করে দিঘীর জলে ফেলে দিয়েছিলেন? আচ্ছা, ...?
এই ছবিগুলো উঠাতে আমাকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে কারণ এর নীচে বসে কেউ-না-কেউ ব্লাডার খালি করছে, যার চালু নাম পেশাব করা।
এই কুৎসিত দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করতে আগ্রহ হয়নি কারণ এদের দোষে দেই কেমন করে! পেছনে অতি নিকটে কালো যে দেয়ালটা দেখা যাচ্ছে এটা হচ্ছে এই শহরের সভ্য মানুষদের বানানো পাকা ডাস্টবিন! রাজ্যের আবর্জনা ফেলা হয় এখানে।
আমরা বড়ো বিচিত্র জাতি, এ দেশের সেরা সন্তানদের কত রকমে অসম্মান করা যায় এই নিয়ে আমাদের প্রতিযোগীতার শেষ নাই!
ভিক্টোরিয়া কলেজের আয়ত্বের ভেতর নজরুলের এই স্তম্ভটা। যে কলেজ নামের কারখানা থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে বের হচ্ছে, এরা স্বাধীনতার সৌধে কুৎসিত কথাবার্তা লিখবে, ততোধিক কুৎসিত ছবি আঁকবে এতে বিস্মিত হওয়ার কী আছে! ধুতুরা গাছে ধুতুরাই তো ধরবে, কেন এটায় স্ট্রবেরি ধরে না এ নিয়ে ফিজুল অস্থির হওয়ার মত বোকামী আর কিছু নাই।
1 comment:
কুমিল্লা খুব কাছেই বলা যায়। এই শহরের উপর দিয়ে কতবার ঢাকা আসা যাওয়া করলাম, অথচ কুমিল্লা ঘুরে দেখা হলোনা!
Post a Comment