Search

Wednesday, March 3, 2010

মুক্তিযুদ্ধে, একজন ট্যাংক-মানব!


বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ জব্বার।
এই মানুষটা আমার জন্য অসাধারণ এক উপহার নিয়ে এসেছেন। ১৯৭১ সালের গুলির বাক্স।
(আমার জীবনে এমনিতেই জটিলতার শেষ নাই। তাই জটিলতা এড়াবার জন্য আমাদের দেশের চৌকশ গোয়েন্দাদের আগাম বলে রাখি, এই গুলির বাক্সটা খালি।)
এমন একজন মানুষ এসেছেন এই আনন্দ কোথায় রাখি! মন্ত্রী-ফন্ত্রী কোন ছার।
 
১৯৭১ সালে এই মানুষটাই পাকিস্তান থেকে আস্ত একটা রাশিয়ান T-55 ট্যাংক নিয়ে পালিয়ে এসেছিলেন। জিটি রোড, ওয়াগা সেক্টরে মাইলের পর মাইল ট্যাংক চালিয়ে পাকিস্তান থেকে ভারতীয় সীমান্তে চলে এসেছিলেন।জব্বার ভাইয়ের সঙ্গে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব, হানিফ, জহির, হাবিব, তরিকুল ইসলাম চিনু সহ ৬ জন। কিন্তু পালাবার সময় যে ঝামেলাটা হলো তাঁদের কাছে বের হবার পাসওয়ার্ড নাই, তখন বাঙালিদেরকে দেয়া নিষেধ ছিল। পাসওয়ার্ড বলতে না-পারলে গেইটে আটকে দেবে! এরপর পরিণাম কোর্ট-মার্শাল। সামরিক আইনে বিচার!
এরপর চিনু ভাই একটা বুদ্ধি বের করলেন। মুলতান রোডে যে অ্যামুনেশন ডিপো ছিল ওখানে সবাই লুকিয়ে রইলেন।
যখন অবাঙালি অফিসার জিপে করে আসলেন গেটের সেন্ট্রি যথারীতি তাকেও আটকে দিল, পাসওয়ার্ড জানতে চাইল? তখন সে অফিসার বলল, 'আসমান জমিন'। এভাবেই জব্বার ভাইরা পাসওয়ার্ড জেনে গেলেন।
কী এক পাগলামী, কী অকল্পনীয় এক কান্ড! একটা রগরগে মুভিকেও হার মানায়! ভারতীয় সেনার কাছে আত্মসমর্পণ করার পর চলে বিরামহীন জিজ্ঞাসাবাদ- মানুষটা কি পাকিস্তানী চর? ভারতীয় সেনার হাত থেকে ছাড়া পেয়ে ঝাপিয়ে পড়েন যুদ্ধে

মানুষটা বলে যাচ্ছেন। আমি শ্বাস আটকে শুনি সেইসব আগুন দিনের কথা, তাঁর অসম সাহসীকতার কথা। কতশত অজানা কথা! আমাদের মহান মুক্তিযোদ্ধা হোমো এরশাদ সাহেবের বীরত্বের(!) কাহিনী। তিনি এবং রওশন এরশাদ তখন পাকিস্তানে। ওখানে ওনারা উর্দুতে বাতচিত করতেন। যারা পালিয়ে আসার জন্য ফাঁকফোকর খুঁজতেন তাদের প্রতি উষ্মাও প্রকাশ করতেন উর্দুতে, 
'শালে, তুমলোগ কে লিয়ে আমলোগ কা জিনা হারাম হো যাতা। ইন্ডিয়া তুমলোগ কা দিমাগ ঘুমা দিয়া'। 
এরশাদ সাহেবের এইসব বাতচিত বাংলাতে অনুবাদ করলে অনেকটা দাঁড়াবে এমন: 'শালা, তোমাদের জন্য আমাদের জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে গেছে। ভারত তোমাদের মাথা এলোমেলো করে দিয়েছে'।
 
মানুষটা এখন একজন সুখি মানুষ। তার আছে ভদ্রস্থ জীবন-যাপন করার সুযোগ। শুনে ভালো লাগে। তার গোলায় আছে ধান, পুকুরে মাছ, চলে যায়। তবুও মানুষটার কী এক হাহাকার! তাঁর সাহসীকতার জন্য তাঁকে বীরপ্রতীক খেতাব দেয়া হয়েছিল। লিখিতাকারেও আছে কিন্তু পরবর্তীতে তিনি প্রবাসে চলে গেলে এই বীরপ্রতীক খেতাবটা গেজেটে উঠেনি তদ্বিরের অভাবে। আজ তিনি একজন খেতাববিহীন মানুষ! সোজা বাংলায় রাষ্ট্র তাঁকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকার করে না!
তাঁর আক্ষেপ আমার কানে তালা লাগিয়ে দেয়:
"কেন আমাকে খেতাবের জন্য তদ্বির করতে হবে? কেন? আমি কি এই জন্য আস্ত একটা ট্যাংক নিয়ে পাকিস্তান থেকে দেশে চলে এসেছিলাম?ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান একটা T-33 বিমান নিয়ে পালিয়ে আসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন, তিনি এই দেশের বীরশ্রেষ্ঠ। তাঁকে আমি স্যালুট করি। আর আমি ট্যাংক নিয়ে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসতে সফল হই কিন্তু আমাকে তদ্বির না করার অপরাধে একজন খেতাব বিহীন মানুষ হয়ে থাকতে হবে, কেন?"
 আমি ক্রমশ নগ্ন হয়ে পড়ি- এক চিলতে কাপড়ের যে বড় প্রয়োজন! এইসব ক্ষেত্রে আমি চুপ করে থাকি, আকাশ দেখি। ভুলেও সামনের মানুষটার চোখে চোখ রাখি না।
 
...
 
(কারও কাছ থেকে অটোগ্রাফ নিতে আমি আগ্রহ বোধ করি না কিন্তু এই মানুষটার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ! জোর করে আমার লেখা 'জীবনটাই যখন নিলামে' বইটায় তাঁর একটা অটোগ্রাফ নিয়েছিলাম।)

*বক্তব্যগুলো জনাব এম, এ, জব্বারের নিজস্ব। তাঁর এইসব বক্তব্যর সপক্ষে প্রমাণ এবং সচিত্র-চলমান চিত্র (চালু নাম ভিডিও ক্লিপিংস) আমার কাছে সংরক্ষিত।
**আমার মাথায় নতুন এক ভূত আসন গেড়েছে। এখন থেকে এইসব আগুন-মানুষদের আনন্দ-বেদনা ভিডিও করে রাখব। এঁদের সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে, পাল্লা দিয়ে কমছে আমার আয়ু। এ ব্যতীত আমার গতি কী! সুরুয মিয়ার (তাঁর প্রতি সালাম), যে মানুষটা ২০০৫ সালে, ঠিক ১৬ ডিসেম্বরে আত্মহত্যা করেন। ওইসব অজানা কথা তখন সেলফোনে ধারণ করে না রাখলে আজ কোথায় পেতাম?
জনাব, এম, এ, জব্বারকে নিয়ে একটা সিরিজ লেখার ইচ্ছা আছে, দেখা যাক।

15 comments:

মুকুল said...

অসাধারণ ব্যাপার! ধন্যবাদ পোস্টের জন্য।

ফেসবুকে শেয়ার করলাম।

Sharif said...

আমিও শেয়ার করলাম

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

অশেষ ধন্যবাদ, আপনাদের দুজনকেই।

omipial said...

darun post shuvo, eita onno r o jaygay parle den, osadharon ekta kaj hoise

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

অসাধারণ কিনা জানি না কিন্তু এঁদের ভিডিও করে রাখা শুরু করেছি।
জব্বার ভাইয়েরটা করলাম। আর করলাম নৌ-কমান্ডোরটা।

মুশকিল হচ্ছে,সময় মতো,কাজের সময় ক্যাম-কর্ডার পাওয়া যায় না। এতে করে আমার কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে।
কম দামের মধ্যে পুরনো ক্যাম-কর্ডার পাওয়া গেলে জানাবেন, উপকার হয়। @পিয়াল

nunam, usa said...

jabbar sir-ke amar salam poichaiya dean

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

অবশ্যই, মানুষটা অসম্ভব খুশী হবেন।

বোহেমিয়ান said...

চমৎকার কাজ!
আপনাকে স্যালুট!

Anonymous said...

ফেসবুক এ শেয়ার দিলাম , অনেক অনেক ধন্যবাদ,
কিছু দিন আগে আপনাকে বনানী দেখলাম, দুক্ষিত দেখা করতে পারিনি, ভালো থাকবেন

তায়েফ said...

অসাধারন......

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

স্যালুটটা আমাকে কেন রে, ভাই! এটা তো ওই মানুষটার পাওনা। তাঁর সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়, তাঁকে আপনার ভালবাসার কথা জানিয়ে দেব। @বোহেমিয়ান

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

"ফেসবুক এ শেয়ার দিলাম...।"
অজস্র ধন্যবাদ আপনাকে। এই সব মানুষদের কথা ছড়িয়ে দিতে হবে এই গ্রহের সব জায়গায়।

"কিছু দিন আগে আপনাকে বনানী দেখলাম, দুক্ষিত দেখা করতে পারিনি...।"
ঠিক ঠিক আমাকে দেখেছেন তো? :)

আপনিও ভাল থাকুন। @Anonymous

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

ধন্যবাদ। @তায়েফ

Anonymous said...

Wow this is a great resource.. I’m enjoying it.. good article

Anonymous said...

found your site on del.icio.us today and really liked it.. i bookmarked it and will be back to check it out some more later