কখনও কোন নগরে গেলে আমি প্রথমেই খুঁজে বের করার চেষ্টা করি, পুরনো স্থাপনা। আমার কেবলি মনে হয়, আমার পূর্বপুরুষদের কেউ ডেকে ডেকে বলছে, কাছে আয়, গায়ে হাত বুলিয়ে দেই। এই অনুভূতিটা আমার নিজস্ব, কেউ হা হা করে হাসলে এতে আমার বয়েই গেছে!
শেকড়হীন, বৈদেশি সাহেবরা, যাদের পূর্বপুরুষ, বাবা-মা নিয়ে কোন বাড়তি আবেগ নাই তারাও আপ্রাণ চেষ্টা করে শেকড়-পুরনো স্থাপনাগুলো যথাসম্ভব সংরক্ষণ করার। আমাদের শেকড় ছড়িয়ে থাকে নারকেল গাছের মত কিন্তু এ নিয়ে আমাদের বিকার নেই! পূর্বপুরুষদের ছায়া ধরে রাখার আগ্রহ আমাদের নাই, আজিব!
আমাদের দেশে এখনও যেসব পুরনো স্থাপনাগুলো টিকে আছে সাধারণ মানুষদের দেখার যো নেই। কেউ-না-কেউ, কোন-না-কোন উপায়ে দখল করে রেখেছে। কোনটাকে স্কুল বানানো হয়েছে, কোনটা কলেজ, ডিসি সাহেবের অফিস, কালেক্টর সাহেবের অফিস। নয়েতো সরকার বাহাদুরের খাস কোন অফিস, 'দিঘাপাতিয়া রাজবাড়ি' কেন জনসাধারণের জন্য উম্মুক্ত থাকবে না? কেন আমি 'কার্জন হল' ঘুরে ঘুরে দেখতে পারব না? এটা দেখার জন্য কেন আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হতে হবে?
আমার স্পষ্ট মনে আছে, ময়মনসিংহে এক রাজবাড়ি দেখার জন্য গিয়েছিলাম। ঢুকতেই পারিনি। এটাকে মহিলা কলেজ বানানো হয়েছিল। উল্টো এক লক্ষ প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছিল, কেন আমি না বলে মহিলা কলেজের গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। নিশ্চয়ই আমার মনে কু আছে, আমি হয়তো বা কোন ছাত্রীকে 'আগওয়া'-অপহরণ করার মতলবে এসেছি।
আমি ভীতু টাইপের মানুষ কিন্তু ওদিনের পর থেকে আমার খানিকটা সাহস জন্মাল, যাক, লোকজন যখন এমনটা ভাবছে আমি ছাত্রী অপহরণ করতে পারি তাহলে মানুষটা আমি একেবারে পুতুপুতু না।
১৯২৭ সালের এই নয়নাভিরাম, সুরম্য স্থাপনাটিকে এখানকার সবাই চেনে পূবালী ব্যাংক বিল্ডিং নামে! কে এদের সঙ্গে তর্কে যাবে ১৯২৭ সালে পূবালী ব্যাংক ছিল, কি ছিল না।
বাইরে মানুষ এবং পোস্টারে সয়লাব। স্থাপনাটার ভেতরে ঘুরে দেখার ইচ্ছা ছিল, একেকটা জানালাই দেখছি ৬ ফুটের উপর। কিন্তু ব্যাংক ডাকাতির অভিযোগে আটকা পড়তে চাইনি এবং আটকা পড়লে আজ পোস্ট দেয়া সম্ভব হতো না এই ভাবনায় সোজা লম্বা দিলাম।
'রানীর কুঠি' বিশাল ধর্মসাগরেই পাশে। ছবি উঠাবো কি ছাই, সাইনবোর্ডের আড়ালে কুঠিটা দেখা গেল তো! এটার ভেতরেও যাওয়া সম্ভব হলো না কারণ এটা দখল করে রেখেছে 'বার্ড'। এটা তাদের অতিথিশালা। আচ্ছা, 'অতিথি শালা' এই জিনিসটা কি, অতিথিশালায় কারা কারা থাকে? না, নামটার সঙ্গে শালা শব্দটা আছে তাই গুলিয়ে ফেলেছি। আমি আরেক অভাগা, ইস্তিরি সাহেবার সন্তানের আপন মামা নাই কিনা! আহা, এই অতিথিশালায় থাকার কোন উপায় আমার নাই, আহারে!
'ড. আখতার হামিদ খান স্মারক বাসগৃহ' এটার দেখি আরেক কাহিনী। রানীর দিঘীর সংলগ্ন পুরনো একটা বাড়িতে ঠিক এমন একটা কথাই লেখা দেখলাম। ইনি কী পুরনো বিখ্যাত স্থাপনা বেছে বেছে কিছু কাল বাস করতেন নাকি? হতে পারে এগুলো ওনার আত্মীয়দের ছিল। তাই হবে।
গুগলে সার্চ দিলে ওনার সম্বন্ধে জানা যাবে কিন্তু আগ্রহ বোধ করছি না। এই দেশের নামী-দামী মানুষদের প্রতি আমার আগ্রহ কম। কারণ এদের মনন স্পর্শ করার ক্ষমতা, এদের সঙ্গে কথা বলার যোগ্যতা, এদর নিয়ে ভাবার মত যথেষ্ঠ ঘিলু আমার নাই।
আফসোস, থাকলে ভালো হতো।
No comments:
Post a Comment