খবরটা অতি সামান্য টমেটোর কেজি ১ টাকা। আমাদের আনন্দিত হওয়ার কথা। সেখানে ১ কেজি টমেটো মাত্র ১ টাকা, কোথাও ৫০ পয়সা। ৫০ পয়সা আজকাল ফকিরও নিতে চায় না!
ভাগ্যিস, মইন সাহেব নাই নইলে বলতেন, বেশি করে টমেটো খান, ভাতের উপর চাপ কমান।
কিন্তু বিষয়টা আমাদের দেশের চাকা যারা বনবন করে ঘোরান, সেইসব কৃষক-টমেটোচাষিদের ভালো লাগে নাই। তাঁরা সরকারের লোকজনের মুখের উপর টমেটো ফেলে এসেছেন, শালীন ভঙ্গিতে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ৩৫০০ কেজি টমেটো ফেলে দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। আমি আরও খুশি হতাম, টমেটোগুলো পচিয়ে আমাদের মুখে ছুঁড়ে মারলে।
কী ভয়াবহ একটা ঘটনা! এই দেশের কেউ কী এটা আঁচ করতে পারছেন না এই ক্ষুব্ধ টমেটোচাষিরা এর ঠিক শোধ নেবেন। আগামি বছর এঁরা টমেটো চাষে আগ্রহী হবেন না, এই টমেটোরই দাম হবে ন্যূনতম ১০০ টাকা কেজি! আমি নিশ্চিত, তখন বৈদেশ হতে টমেটো আমদানি হবে। আমাদের দেশের সুশীল লোকজন ওই টমেটো তাদের পশ্চাদদেশে রেখে, লম্বা লম্বা বাতচিত করবেন! আমাদের শেখাবেন, কেমন করে বৈদেশিদের পদলেহন করতে হয়।
আমাদের দেশের নব্য ধনীরা ১২০ টাকা কেজি আপেল খাবে কিন্তু টমেটো খাবে না। কোনটার পুষ্টিগুণ কত এটা জানার প্রয়োজন নাই, কারা কারা যেন এইসব শালাদের বুঝিয়েছে আপেল খেলে জাতে উঠা যায়।
পুষ্টিগুণের মূল্য বিচার করলে ৩০০ টাকার একটা হরলিক্সের বোতলে আছে ৫ টাকা মূল্যমানের পুষ্টিগুণ। এইসব চুতিয়াদের মাথায় আটকে গেছে হরলিক্স না খেলে চুতিয়াদের বাচ্চারা টলার-লংগার-স্ট্রংগার হবে না। শ্লা, বাপ ৫ ফুট, মা সাড়ে চার ফুট, আশা করে বসে থাকবে এদের বাচ্চা হবে সাড়ে ছয় ফিট!
টমেটোচাষিদের এই প্রতিবাদের ঘটনাটা ঘটেছে সিলেটে। আহ, সিলেট, এখানে আমার একটু বলার আছে। সিলেট বিভাগের লোকজন, প্রতি পরিবার থেকে কেউ না কেউ প্রবাসে আছেন। এরা দু-হাতে বললে ভুল হবে, অজস্র হাতে (অদৃশ্য আরও কিছু হাত থাকতে পারে, অবশ্য ঠিক কোথায় এ সম্বন্ধে আমার ধারণা নাই) টাকা কামাচ্ছেন। তা কামাক, এতে আমাদের হিংসা করে কী আছে!
এরা দেশে দূরের থাকুক, নিজের এলাকায় কি করেন? আলিশান যে বাড়িটা করেন, দেশে ফিরে কয়েক দিন সেখানে থাকেন। এমন উদাহরণও আছে বাড়ির একটা গেইটের পেছনেই খরচ করেছেন কোটি টাকা। তো, বছরের অন্য সময়ে ওই আলিশান বাড়িতে গরু চড়তে আমি নিজের চোখে দেখেছি। আর করেন কমিউনিটি সেন্টার, শপিং মল।
এরা কটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি করেছেন, কটা হিমাগার? আজ ওখানে হিমাগারের ছড়াছড়ি থাকলে এরি মধ্যে কোন-না-কোন একটা উপায় বেরিয়ে আসত।
এরা যেটা ভালো পারেন সেটা হচ্ছে, ব্যংকে অলস টাকা ফেলে ফেলে ব্যংক ধসিয়ে দেয়া, কয়েক স্ত্রীর গর্ভে বাচ্চা পয়দা করা, পান চাবানো (যুবক, ধামড়া ধামড়া ছেলেদের দেখেছি বেদম পান চিবিয়ে যাচ্ছে) আর আঞ্চলিকতার লেজ ধরে বসে থাকা।
এই দেশে একটা প্রাণ কোম্পানি যা করে দেখিয়ে দিচ্ছে, গোটা সিলেটের লোক মিলেও তা করতে পারেননি। যতটুকু মনে পড়ে ফি বছর এরা কৃষকের কাছ থেকে কেবল আমই কেনে ১০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। নইলে ঠিক আমচাষিরাও একদিন আমাদের মুখে পচা আম ছুঁড়ে মারতেন!
No comments:
Post a Comment