(শপথ আমার লেখালেখির, অহেতুক কোনো ধর্মকে আমি খাটো করতে চাই না। এবং কোনও ধর্মের প্রতি আমার কোনও অশ্রদ্ধা-বিরাগ নাই, কিন্তু বাড়তি অনুরাগ-আবেগও নাই। এই লেখায়ও।...
পাহাড়ের কোনও এক আদিমানুষের নিরেট একটা পাথরকে সৃষ্টিকর্তার আদলে নতজানু হওয়াকে ঠিক-বেঠিক বিশ্লেষণে যেতেও আগ্রহ বোধ করি না। তাঁর বিশ্বাস নিয়ে তিনি থাকুন না, সমস্যা কোথায়! ভলতেয়ারের এই কথাটা আমার অসম্ভব পছন্দের, 'আমি তোমার সঙ্গে একমত না কিন্তু তোমার মত প্রতিষ্ঠার জন্য আমৃত্যু লড়ব'।)
ভারতে যখন 'রামায়ন'-এর শুট্যিং চলছিল তখন রামের ভূমিকায় যে অভিনেতা অভিনয় করছিলেন শুট্যিং-স্পটে তার হাতে সিগারেট দেখে একজন ভক্ত মূর্ছা গিয়েছিলেন। তিনি কোন অবস্থাতেই দেবতার হাতে সিগারেট এটা মানতে পারছিলেন না। বিশ্বাস যেখানে প্রবল সেখানে যুক্তি অচল।
এই লেখায় নির্মোহ ভঙ্গিতে তাঁদের বিভিন্ন মানবিক, অমানবিক দিক নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা। একজন রাজা দশরথ। অযোধ্যার ওই রাজপরিবারের অনেক সদস্যের একজন রাম। এভাবে বিচার করলে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার করতে সুবিধে হয়।
কেবল বাবা দশরথের দেয়া কথার পালন করতে গিয়ে ১২ বছর রামের বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়াবার সিদ্ধান্ত এবং বাস্তবায়ন দেখে কেবল একটা ছোট্ট মন্তব্যই করা চলে, এ অতুলনীয়, এ অভূতপূর্ব! এটা কেবল সম্ভব, শ্রীরামের পক্ষেই!
তাঁর বিদায় পর্বে চোখের পানি ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে [১]। অন্য ধর্মের একজন পাঠকের চোখেও জল আসতে বাধ্য।
পরশুরাম রামকে 'দেখি তুমি কেমন ক্ষত্রিয়' বলে চরম অপমান করলেও বাগে পেয়েও রাম তাঁকে ক্ষমা করে দেন। এখানে রামের মহত্বই প্রকাশ পায়।
পাশাপাশি দুনিয়ার যাবতীয় অস্ত্র তাঁর কোঁচড়ে থাকার পরও এক রাক্ষস সীতাকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় মহাবীর রামের ফিচফিচ কান্না দেখে শ্রীরামকে অচেনা মনে হয়!
লক্ষ্ণণ পর্যন্ত বলতে বাধ্য হয়েছিলেন, 'দাদা, তুমি এতবড় বীর, তুমি কেন এমন করিয়া কাঁদিতেছ? এই দেখ, আমি রাক্ষস মারিয়া দিতেছি'।
সুগ্রীবের ভাই বালীকে যখন শ্রীরাম কোন প্রকার আগাম সতর্ক করা ব্যতীত প্রাণনাশী অস্ত্র ছুঁড়ে মারেন তখন তিনি অতি সাধারণ একজনের পর্যায়ে নেমে আসেন! এই শ্রীরাম আমাদের অচেনা!
তখন বালী হতবুদ্ধি-হতভম্ব হয়ে রামকে বলেছিলেন, 'তুমি কেমন লোক! চুরি করিয়া কেন আমার উপর বান মারিলে? সামনে আসিয়া যুদ্ধ করিতে, তবে দেখিতাম...'।
(যুদ্ধেরও কিছু নিয়ম আছে। অতি নিষ্ঠুর যোদ্ধাও সেই নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য থাকেন। ডুয়েল লড়তে গেলেও প্রতিপক্ষকে সাবধান করা হয়। মানবিকতা বাদ দিলেও শ্রীরাম এখানে যুদ্ধের নিয়মকে ছাড়িয়ে যান। এখানে রামকে পুরোপুরি অতি সাধারণ, অচেনা মনে হয়।)
রামায়ন কয়েক খন্ডে ভাগ করা: আদিকান্ড, অযোধ্যাকান্ড, অরণ্যকান্ড, কিষ্কিন্ধ্যাকান্ড, সুন্দরকান্ড, লঙ্কাকান্ড।
প্রত্যেক কান্ড নিয়ে আলাদা করে লেখার ইচ্ছা আছে, দেখা যাক। আজ কেবল আদিকান্ড নিয়ে।
আদিকান্ড: ভারতবর্ষের সরযু নদীর কাছে অযোধ্যা নামের এক নগরে দশরথ নামের এক রাজা ছিলেন। তাঁর কোন সন্তান ছিল না। মনের দুঃখে একদা মন্ত্রীদের বললেন, আমি দেবতাদের তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে যজ্ঞ করব। যজ্ঞের আয়োজন সম্পন্ন করা হলো।
(এখানে দশরথের শাসনকালের সময়কালটা আমরা জানতে পাই না। জানতে পারলে ভালো হতো)
প্রথমে করা হলো 'অশ্বমেধ যজ্ঞ'। ঘোড়ার মাংস দিয়ে এই যজ্ঞ করা হয়। জটিল এক প্রক্রিয়া, প্রথমে ঘোড়াটা ছেড়ে দেয়া হয়। এই ঘোড়া এক বছর যেখানে খুশী সেখানে ঘুরে বেড়ায় তারপর এটাকে ফিরিয়ে আনা হয়।
(আমাদের দেশে বিভিন্ন পীর সাহেবদের নামে ধামড়া-ধামড়া গরু বছরের পর বছর ধরে ছেড়ে রাখা হয়। এই গরু হতদরিদ্রের কলাটা-মুলোটা, ক্ষেতের ধান খেয়ে সাফ করে ফেলে। এই নিয়ে কারও কিচ্ছু বলার যো নেই। গরুবাবা বলে কথা! পীরসাহেবদের মুরীদদের এই ভাবনাটা কি 'অশ্বমেধ যজ্ঞ' থেকে ধার করা?)
অশ্বমেধ যজ্ঞের পর ঋষ্যশৃঙ্গ বললেন, 'এরপর পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করিলে মহারাজের ছেলে হইবে'।
যজ্ঞের ফলে অলৌকিক পায়েস আসল। সেই পায়েস রানিদের খেতে দেয়া হলো। দশরথের তিন রানি কৌশল্যা, কৈকয়ী, সুমিত্রা।
কিছুদিন পর তাঁদের ছেলে হলো। কৌশল্যার একটি, নাম রাখা হয় রাম। কৈকয়ীর একটি, নাম ভরত। সুমিত্রার দুই ছেলে লক্ষ্ণণ এবং শত্রুঘ্ন। এরা দিনে দিনে বড়ো হলেন।
মারীচ নামের এক রাক্ষসের উপর বিশ্বামিত্র প্রচন্ড ক্রদ্ধ ছিলেন কারণ যজ্ঞের সময় মারীচ এবং সুবাহু এই দুই রাক্ষস মিলে মাংস ঢেলে যজ্ঞ পন্ড করেছিল। তাড়কা রাক্ষসী হচ্ছে মারীচের মা। মা বেটা মিলে সব খেয়ে দেশটাকে জঙ্গলে পরিণত করেছে। তাড়কা রাক্ষসীর বেজায় জোর, বর্ণনামতে, তার গায়ে হাজার হাতির জোর! তাড়কা নামের রাক্ষসীকে মারার জন্য বিশ্বামিত্র রামকে সাথে নিয়ে গেছেন।
(বাংলা সাহিত্যে ভয়ংকর মহিলা বোঝাতে 'তাড়কা রাক্ষসী' শব্দটা প্রায়ই ব্যবহৃত হয়। আমি নিজেও লেখায় প্রায়শ শব্দটা ব্যবহার করি। সম্ভবত অভিধানে শব্দটা যোগ হয়েছে রামায়ন থেকে।)
বিশ্বামিত্র রামের প্রতি তুষ্ট হয়ে যে অস্ত্রগুলো দিয়েছিলে তার তালিকা অনেক লম্বা। অস্ত্রগুলো হচ্ছে: বলা, অতি-বলা, ধর্মচক্র, কালচক্র, বিষ্ণুচক্র, ইন্দ্রচক্র, ব্রক্ষশির, ঐষিক, ব্রক্ষাস্ত্র, ধর্মপাশ, কালপাশ, বরুণ পাশ, শুষ্ক অশনি, আর্দ্র অশনি, পৈনাক, নারায়ন, শিখর, বায়ব্য হয়শির, ক্রৌঞ্জ, কঙ্কাল, মুষল, কপাল, শক্তি, খড়গ, গদা, শূল, বজ্র, কিঙ্কিণী, নন্দন, মোহন, প্রস্বাপন, প্রশমন, বর্ষণ, শোষণ, সন্তাপন, বিলাপন, মাদন, মানব, তামস, সৌমন, সংবর্ত। আরও অনেক নাম-না-জানা অস্ত্র!
(এমন বিপুল অস্ত্র কারও কাছে থাকলে এ গ্রহে তাঁকে রুখবে এমন সাধ্যি কার! এমন অস্ত্রে সজ্জিত একজনকে মহামানব হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না, অতি সাধারণ হলেই চলে। কেবল এক ব্রক্ষ্ণাস্ত্রই নাকি কাফি। ব্রক্ষ্ণাস্ত্র একবার ছুঁড়লে নাকি ফিরিয়ে নেয়া যায় না। যার সঙ্গে অনেকটা মিল পাওয়া যায় আধুনিক পারমাণবিক অস্ত্রের!)
বিশ্বমিত্র মহারাজ জনককে বললেন, 'মহারাজ, সেই ধনুকখানি রাম-লক্ষ্ণণ দেখিতে চাহেন’।
জনক বলিলেন, 'এই ধনুক আগে ছিল শিবের...। একদিন আমি লাঙ্গল দিয়া যজ্ঞের স্থান চসিতেছিলাম। এমন সময় আমার লাঙ্গলের মুখের কাছে পৃথিবী হইতে এক পরমা সুন্দরী কন্যা উঠল। লাঙ্গলের মুখে উঠিয়াছিল বলিয় আমি তাহার নাম রাখিয়াছি সীতা। আমার প্রতিজ্ঞা এই যে, এই শিবের ধনুকে যে গুণ পরাইতে পারিবে তাহার সঙ্গেই এই,মেয়ের বিবাহ দিব'।
(লাঙ্গলের মুখের আঁচড়ে মাটিতে যে দাগ পড়ে তার নাম সীতা।)
রাম সেই ধনুকে গুণ পরালেন। টান দিলেন এবং ধনুক ভেঙ্গে দু-টুকরা! তখন যে শব্দ হয়েছিল সেই শব্দের কারণে বিশ্বামিত্র, জনক, রাম, লক্ষ্ণণ ব্যতীত অন্য সবাই অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন।
অতঃপর রাম সীতাকে বিয়ে করলেন। জনক রাজার আরেক মেয়ে এবং ভাইয়ের মেয়েদের বিয়ে করলেন, লক্ষ্ণণ, ভরত, শত্রুঘ্ন।
...
ঋণ:
The RAMAYAN of VALMIKI: Ralph T. H. Griffith
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
সহায়ক লিংক:
১. রামায়ন: অযোধ্যাকান্ড: http://www.ali-mahmed.com/2010/07/blog-post_31.html
পাহাড়ের কোনও এক আদিমানুষের নিরেট একটা পাথরকে সৃষ্টিকর্তার আদলে নতজানু হওয়াকে ঠিক-বেঠিক বিশ্লেষণে যেতেও আগ্রহ বোধ করি না। তাঁর বিশ্বাস নিয়ে তিনি থাকুন না, সমস্যা কোথায়! ভলতেয়ারের এই কথাটা আমার অসম্ভব পছন্দের, 'আমি তোমার সঙ্গে একমত না কিন্তু তোমার মত প্রতিষ্ঠার জন্য আমৃত্যু লড়ব'।)
ভারতে যখন 'রামায়ন'-এর শুট্যিং চলছিল তখন রামের ভূমিকায় যে অভিনেতা অভিনয় করছিলেন শুট্যিং-স্পটে তার হাতে সিগারেট দেখে একজন ভক্ত মূর্ছা গিয়েছিলেন। তিনি কোন অবস্থাতেই দেবতার হাতে সিগারেট এটা মানতে পারছিলেন না। বিশ্বাস যেখানে প্রবল সেখানে যুক্তি অচল।
এই লেখায় নির্মোহ ভঙ্গিতে তাঁদের বিভিন্ন মানবিক, অমানবিক দিক নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা। একজন রাজা দশরথ। অযোধ্যার ওই রাজপরিবারের অনেক সদস্যের একজন রাম। এভাবে বিচার করলে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার করতে সুবিধে হয়।
কেবল বাবা দশরথের দেয়া কথার পালন করতে গিয়ে ১২ বছর রামের বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়াবার সিদ্ধান্ত এবং বাস্তবায়ন দেখে কেবল একটা ছোট্ট মন্তব্যই করা চলে, এ অতুলনীয়, এ অভূতপূর্ব! এটা কেবল সম্ভব, শ্রীরামের পক্ষেই!
তাঁর বিদায় পর্বে চোখের পানি ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে [১]। অন্য ধর্মের একজন পাঠকের চোখেও জল আসতে বাধ্য।
পরশুরাম রামকে 'দেখি তুমি কেমন ক্ষত্রিয়' বলে চরম অপমান করলেও বাগে পেয়েও রাম তাঁকে ক্ষমা করে দেন। এখানে রামের মহত্বই প্রকাশ পায়।
পাশাপাশি দুনিয়ার যাবতীয় অস্ত্র তাঁর কোঁচড়ে থাকার পরও এক রাক্ষস সীতাকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় মহাবীর রামের ফিচফিচ কান্না দেখে শ্রীরামকে অচেনা মনে হয়!
লক্ষ্ণণ পর্যন্ত বলতে বাধ্য হয়েছিলেন, 'দাদা, তুমি এতবড় বীর, তুমি কেন এমন করিয়া কাঁদিতেছ? এই দেখ, আমি রাক্ষস মারিয়া দিতেছি'।
সুগ্রীবের ভাই বালীকে যখন শ্রীরাম কোন প্রকার আগাম সতর্ক করা ব্যতীত প্রাণনাশী অস্ত্র ছুঁড়ে মারেন তখন তিনি অতি সাধারণ একজনের পর্যায়ে নেমে আসেন! এই শ্রীরাম আমাদের অচেনা!
তখন বালী হতবুদ্ধি-হতভম্ব হয়ে রামকে বলেছিলেন, 'তুমি কেমন লোক! চুরি করিয়া কেন আমার উপর বান মারিলে? সামনে আসিয়া যুদ্ধ করিতে, তবে দেখিতাম...'।
(যুদ্ধেরও কিছু নিয়ম আছে। অতি নিষ্ঠুর যোদ্ধাও সেই নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য থাকেন। ডুয়েল লড়তে গেলেও প্রতিপক্ষকে সাবধান করা হয়। মানবিকতা বাদ দিলেও শ্রীরাম এখানে যুদ্ধের নিয়মকে ছাড়িয়ে যান। এখানে রামকে পুরোপুরি অতি সাধারণ, অচেনা মনে হয়।)
রামায়ন কয়েক খন্ডে ভাগ করা: আদিকান্ড, অযোধ্যাকান্ড, অরণ্যকান্ড, কিষ্কিন্ধ্যাকান্ড, সুন্দরকান্ড, লঙ্কাকান্ড।
প্রত্যেক কান্ড নিয়ে আলাদা করে লেখার ইচ্ছা আছে, দেখা যাক। আজ কেবল আদিকান্ড নিয়ে।
আদিকান্ড: ভারতবর্ষের সরযু নদীর কাছে অযোধ্যা নামের এক নগরে দশরথ নামের এক রাজা ছিলেন। তাঁর কোন সন্তান ছিল না। মনের দুঃখে একদা মন্ত্রীদের বললেন, আমি দেবতাদের তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে যজ্ঞ করব। যজ্ঞের আয়োজন সম্পন্ন করা হলো।
(এখানে দশরথের শাসনকালের সময়কালটা আমরা জানতে পাই না। জানতে পারলে ভালো হতো)
প্রথমে করা হলো 'অশ্বমেধ যজ্ঞ'। ঘোড়ার মাংস দিয়ে এই যজ্ঞ করা হয়। জটিল এক প্রক্রিয়া, প্রথমে ঘোড়াটা ছেড়ে দেয়া হয়। এই ঘোড়া এক বছর যেখানে খুশী সেখানে ঘুরে বেড়ায় তারপর এটাকে ফিরিয়ে আনা হয়।
(আমাদের দেশে বিভিন্ন পীর সাহেবদের নামে ধামড়া-ধামড়া গরু বছরের পর বছর ধরে ছেড়ে রাখা হয়। এই গরু হতদরিদ্রের কলাটা-মুলোটা, ক্ষেতের ধান খেয়ে সাফ করে ফেলে। এই নিয়ে কারও কিচ্ছু বলার যো নেই। গরুবাবা বলে কথা! পীরসাহেবদের মুরীদদের এই ভাবনাটা কি 'অশ্বমেধ যজ্ঞ' থেকে ধার করা?)
অশ্বমেধ যজ্ঞের পর ঋষ্যশৃঙ্গ বললেন, 'এরপর পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করিলে মহারাজের ছেলে হইবে'।
যজ্ঞের ফলে অলৌকিক পায়েস আসল। সেই পায়েস রানিদের খেতে দেয়া হলো। দশরথের তিন রানি কৌশল্যা, কৈকয়ী, সুমিত্রা।
কিছুদিন পর তাঁদের ছেলে হলো। কৌশল্যার একটি, নাম রাখা হয় রাম। কৈকয়ীর একটি, নাম ভরত। সুমিত্রার দুই ছেলে লক্ষ্ণণ এবং শত্রুঘ্ন। এরা দিনে দিনে বড়ো হলেন।
মারীচ নামের এক রাক্ষসের উপর বিশ্বামিত্র প্রচন্ড ক্রদ্ধ ছিলেন কারণ যজ্ঞের সময় মারীচ এবং সুবাহু এই দুই রাক্ষস মিলে মাংস ঢেলে যজ্ঞ পন্ড করেছিল। তাড়কা রাক্ষসী হচ্ছে মারীচের মা। মা বেটা মিলে সব খেয়ে দেশটাকে জঙ্গলে পরিণত করেছে। তাড়কা রাক্ষসীর বেজায় জোর, বর্ণনামতে, তার গায়ে হাজার হাতির জোর! তাড়কা নামের রাক্ষসীকে মারার জন্য বিশ্বামিত্র রামকে সাথে নিয়ে গেছেন।
(বাংলা সাহিত্যে ভয়ংকর মহিলা বোঝাতে 'তাড়কা রাক্ষসী' শব্দটা প্রায়ই ব্যবহৃত হয়। আমি নিজেও লেখায় প্রায়শ শব্দটা ব্যবহার করি। সম্ভবত অভিধানে শব্দটা যোগ হয়েছে রামায়ন থেকে।)
বিশ্বামিত্র রামের প্রতি তুষ্ট হয়ে যে অস্ত্রগুলো দিয়েছিলে তার তালিকা অনেক লম্বা। অস্ত্রগুলো হচ্ছে: বলা, অতি-বলা, ধর্মচক্র, কালচক্র, বিষ্ণুচক্র, ইন্দ্রচক্র, ব্রক্ষশির, ঐষিক, ব্রক্ষাস্ত্র, ধর্মপাশ, কালপাশ, বরুণ পাশ, শুষ্ক অশনি, আর্দ্র অশনি, পৈনাক, নারায়ন, শিখর, বায়ব্য হয়শির, ক্রৌঞ্জ, কঙ্কাল, মুষল, কপাল, শক্তি, খড়গ, গদা, শূল, বজ্র, কিঙ্কিণী, নন্দন, মোহন, প্রস্বাপন, প্রশমন, বর্ষণ, শোষণ, সন্তাপন, বিলাপন, মাদন, মানব, তামস, সৌমন, সংবর্ত। আরও অনেক নাম-না-জানা অস্ত্র!
(এমন বিপুল অস্ত্র কারও কাছে থাকলে এ গ্রহে তাঁকে রুখবে এমন সাধ্যি কার! এমন অস্ত্রে সজ্জিত একজনকে মহামানব হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না, অতি সাধারণ হলেই চলে। কেবল এক ব্রক্ষ্ণাস্ত্রই নাকি কাফি। ব্রক্ষ্ণাস্ত্র একবার ছুঁড়লে নাকি ফিরিয়ে নেয়া যায় না। যার সঙ্গে অনেকটা মিল পাওয়া যায় আধুনিক পারমাণবিক অস্ত্রের!)
বিশ্বমিত্র মহারাজ জনককে বললেন, 'মহারাজ, সেই ধনুকখানি রাম-লক্ষ্ণণ দেখিতে চাহেন’।
জনক বলিলেন, 'এই ধনুক আগে ছিল শিবের...। একদিন আমি লাঙ্গল দিয়া যজ্ঞের স্থান চসিতেছিলাম। এমন সময় আমার লাঙ্গলের মুখের কাছে পৃথিবী হইতে এক পরমা সুন্দরী কন্যা উঠল। লাঙ্গলের মুখে উঠিয়াছিল বলিয় আমি তাহার নাম রাখিয়াছি সীতা। আমার প্রতিজ্ঞা এই যে, এই শিবের ধনুকে যে গুণ পরাইতে পারিবে তাহার সঙ্গেই এই,মেয়ের বিবাহ দিব'।
(লাঙ্গলের মুখের আঁচড়ে মাটিতে যে দাগ পড়ে তার নাম সীতা।)
রাম সেই ধনুকে গুণ পরালেন। টান দিলেন এবং ধনুক ভেঙ্গে দু-টুকরা! তখন যে শব্দ হয়েছিল সেই শব্দের কারণে বিশ্বামিত্র, জনক, রাম, লক্ষ্ণণ ব্যতীত অন্য সবাই অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন।
অতঃপর রাম সীতাকে বিয়ে করলেন। জনক রাজার আরেক মেয়ে এবং ভাইয়ের মেয়েদের বিয়ে করলেন, লক্ষ্ণণ, ভরত, শত্রুঘ্ন।
...
The RAMAYAN of VALMIKI: Ralph T. H. Griffith/ p: 789 |
ঋণ:
The RAMAYAN of VALMIKI: Ralph T. H. Griffith
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
সহায়ক লিংক:
১. রামায়ন: অযোধ্যাকান্ড: http://www.ali-mahmed.com/2010/07/blog-post_31.html
11 comments:
Kono mahaakaabyer proti eheno obogga o tachchhilya prokaash lekhonmoner sonkirnota kei prokot kore dey, bisheshoto jakhan ta opor kono dhormiya matabaader sange samparkito.Mahakaabye atiloukikota aar ghotonaprobaaher aloksamanya baichitro jekono sabhyatatei sweekrito satya....tate sahityer ras baare boi kichhu matra kome na ..borong eke byngo kora nimna ruchi, samkinrno dhormiyo drishtikon aar hin maanositakakei prokaash kore.
Lekhok atyanta suchatur bhabe nijeke doshmukto korte cheyechhen lekhaar shuretei....aar nijeke kichhuta dhormonirepekhkhho bole jahir korar o chesta korechhen...kintu sankirno dhormiyo moulobaad taar rachanaashaili te suspasta....eta nichhok anya dharmeeya matamat ke aaghaat korar heen sorojontro...jadio apato niriho ekta aaboho rakhar chesta aachhe
"ওহে Anonymous, বটে-
এতো বুদ্ধি ঘটে!
চিবুচ্ছেন গাছটি নটে
দাদা বেজায় চটে!"
একজন মানুষের একটা নাম থাকে, থাকে না কেবল...। যাদের নাম নাই তাদের প্রতি আমি যেমন করুণা বোধ করি তেমনি যাদের ভাষা নাই তাদের প্রতিও।
যেমনটা আমি করুণা বোধ করি শ্রীরামের কাছে ব্রক্ষ্ণাস্ত্রের মত ভয়াবহ অসংখ্য অস্ত্র থাকার পরও তাঁর কান্নাকাটি দেখে!
'বাংলিশ' নামের যে ভাষায় মন্তব্য, এটার মর্ম উদ্ধার করতে আমাকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। মর্ম উদ্ধারের পর আমার গোটা সাইটটা জ্ঞানে ম-ম করছে।
অপচয় বিষযটা আমার অপছন্দের। ঠিক কোন জায়গাটায় আপনার আপত্তি এটা সুনির্দিষ্ট করে বললে আমি ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করতাম কিন্তু গোটা বিষয়টাই আপনার কাছে আপত্তিকর। তো, এমন একজন জ্ঞানবাজের সঙ্গে আর যাই হোক কথা চলে না।
জ্ঞান গড়িয়ে পড়ছে এমন একটা জিনিসের সঙ্গে (কারণ জিনিসটার নাম নাই) কথা বাড়াবার অর্থ হচ্ছে, মর্মান্তিক বেকুফি- শব্দের অপচয়!
গুড বাই, ডিয়ার Anonymous...
আর আমি করুণা বোধ করি পল্লবগ্রাহীদের বাগাড়ম্বরকে|উপেন্দ্রকিশোর রামায়ণের যে অনুবাদ করেছিলেন তা শিশুপাঠ্য। সেই অনুবাদ কে হাতিয়ার করে রাম চরিত্র বা রামায়ণের মত সুবিশাল মহাকাব্যের বিশ্লেষণ বা সমালোচনা করার এই অপচেষ্টাকে ছেলেমানুষি দেয়ালা বলবো না দু্র্বীনিতের অসহ্য স্পর্ধা সেটাই বিচার করে দেখার।আর উপেন্দ্রকিশোরের রামায়ণের philosophy বোঝার ও জ্ঞান, পরিশীলন বা maturity আপনার যে আছে তাও তো মনে হয় না। যা আপনার জ্ঞান,বোধ আর ক্ষমতার বাইরে তা নিয়ে সস্তা কিছু মন্তব্য সাধারণ্যে এরকমভাবে করার চেষ্টা ....সস্তা জনপ্রিয়তা ও যদি এত সস্তা হত! মূল সংস্কৃত কাব্যটি না পড়েই কেবল উপেন্দ্রকিশোর কে ভেলা বানিয়ে রামায়ণ সমালোচনার সমুদ্রে লাফ দেওয়া তো বাতুলের আত্মঘাতী স্পর্ধা, অকল্পনীয় ধৃষ্টতা। অবশ্য সংস্কৃত তো আপনাদের কাছে ...........।
Benglish...?আমি ত আমার মাতৃভাষাতেই লিখেছিলাম ভাই, হরফটা আমার দুর্ভাগ্যক্রমে রোমান। দেখলেন তো এখানেও আপনি নিজের পরিধি কত তা জানিয়ে দিয়েছেন।তা আপনার পড়তে কষ্ট হয়েছিল, এবার তাই পুরো বাংলা হরফেই লিখলাম।
জ্ঞানবাজ ( ? শব্দটির ব্যাকরণগত শুদ্ধতা যদিও বিচার্য) বলেছেন, তা আমি তো ভাই পল্লবগ্রাহী জ্ঞান নিয়ে কোনো সাহিত্যকর্মের মুণ্ডপাত করতে বসিনি বা কারো ধর্মীয় ভাবাবেগ নিয়ে বিদ্রুপ করার অশিষ্টতা ও করিনি , সেরকম দুরভিসন্ধি ও নেই|
Anonymous ভেবে দুঃখ করবেন না। উপেন্দ্রকিশোরের রামায়ণ যখন পড়েছেন, মেঘনাদ কে নিশ্চয় মনে আছে! আমাদের মধুকবি ও একটা গোটা 'মেঘনাদবধ কাব্য' লিখেছিলেন (ভাগ্যে তাঁর রচনাটিকে আর আপনার হাতে ধর্ষিত হয়নি!), সেরকম ই কিছু ভেবে নিন না।
তবে আপনার ছড়া কাটার সহজ প্রতিভা অভিনন্দন যোগ্য । চালিয়ে যান,এতে উন্নতি করবেন।
"তবে আপনার ছড়া কাটার সহজ প্রতিভা অভিনন্দন যোগ্য...।"
:)। ধন্যবাদ। আপনার মুখে ফুল-চন্দন...।
মত প্রকাশের স্বাধীনতার খোলসে আপনি আপনার মতামত জানিয়েছেন। বেশ, তবে আপনার আর কোন মন্তব্য আমি এখানে আশা করছি না।
গুড বাই, ডিয়ার Anonymous. গুড বাই এগেইন...।
শুভ ভাই,আমি অবাক হলাম আপনি এই নির্বোধ মানুষটার সঙ্গে হুদাহুদি বাক্যালাপ করেছেন দেখে। এর মাথায় গরুর গোবর এটা নিয়ে আপনার সন্দেহ থাকলেও আমার নেই। এই শালাকে কে বোঝাবে কোনও মহাপুরুষ চোদ্দটা বিয়ে করলেই তার এই কর্মকান্ড নিয়েও নাচা যায় না।
Nuan, chagu-te vore jasse blogspher!
@Nuhan, আমি যখন সম্মানের সঙ্গে লিখি তখন অজ্ঞাত লোকজনের গাত্রদাহ হয় কিন্তু পাশের দেশের লোকজনেরা যখন লেখেন তখন তা ঘটা করে ছাপানো হয়!
সানন্দায় (৭.১.৯৪, পৃ নং: ২৮) ঈশিতা মুখোপাধ্যায় লিখেছিলেন:
"...রামকে বলা হয় দেবতা। আর পঞ্চপান্ডবদের প্রায় দেবতারই সমকক্ষ ধরা হয়। আমার তো মনে হয়, রামের মত স্বার্থপর আর পান্ডবদের মত নপুংসক আর হয় না..."
আমি এখন এগুলো পড়লাম
'যুদ্ধেরও কিছু নিয়ম আছে।' আবার যে 'যুদ্ধে ও অন্য একটা ব্যপারে নিয়ম নাস্তি' এমনও লোকে বলে। দুটোই চলুক। -- ইতি ---- বুদ্ধুরাম
Post a Comment