২০০৬ সালের ২ অক্টোবর, অতি তুচ্ছ কারণে শ্যুটিং কমপ্লেক্সে ঢুকে কমনওয়েলথ গেমসে সোনাজয়ী সোনার ছেলে আসিফসহ কয়েকজন জাতীয় শ্যুটারকে পিটিয়েছিল পুলিশ।
আমরা হতভম্ব হই না, দিগম্বর হই!
কমপ্লেক্সের ভেতর ঢোকার সাহস আসে কেমন করে এদের, পুলিশ কোত্থেকে এমন দুঃসাহস পায়! এরা কেবল ভেতরেই ঢোকেনি, পিটিয়ে হাত ভেঙ্গে দিয়েছিল আসিফের! যে হাতে আসিফ তাঁর অন্য রকম অস্ত্রটা তুলে নেন দেশের সম্মান আনার জন্য। তাঁর সহযোদ্ধা শিপুর ভাঙ্গা হাত এখনো ঠিক হয়নি!
একটা সভ্য দেশে কেমন করে এটা সম্ভব? ভাবতেই আমি শিউরে উঠি। এই দেশের একজন নাগরিক হিসাবে আমরা জানি না ওই পুলিশ নামের মাস্তানদের কী শাস্তি হয়েছিল?
পুলিশ নামের মাস্তানদের শাস্তির খবর না-জানলেও এটা জানি, এই মাস্তানরা উল্টো আসিফদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল! আমাদের দেশের মামলা- এই সব মামলা কবে শেষ হবে এটা কেউ জানে না!
সেটা ছিল ২০০৬ সালের ঘটনা। ২০১০ সালেও এই মামলা যথারীতি চলছে। এই মামলায় আসিফকে সশরীরে নিয়মিত কোর্টে হাজিরা দিতে হয়। একের পর এক তারিখ পড়ে আর তিনি সব ছেড়েছুঁড়ে হাজিরা দিতে চলে আসেন।
এই সোনার ছেলেদের কাছ থেকে আমরা আবার আশা করি, এঁরা এমন দুর্দান্ত নমুনা দেখাবেন যা দেখে আমরা হাঁ হয়ে যাব!
আমাদের দেশে কি এমন কেউ নাই যিনি এঁদের প্রতি না-হোক অন্তত আমাদেরকে নিদারুণ লজ্জার হাত থেকে বাঁচাতে পারেন?
আর কেউ না পারলেও, রাষ্ট্রপতি-রাষ্ট্রপিতা পারেন। রাষ্ট্রপিতা তাঁর সন্তানদের জন্য যে কোন উদ্যেগ নিতে পারেন। এর জন্য কারও কাছে তাঁকে জবাব দিতে হয় না। এমন কী ফাঁসির আসামীকে পর্যন্ত ইচ্ছা করলে তিনি ক্ষমা করতে পারেন। কারণ তিনি রাষ্ট্রপিতা, বিপুল ক্ষমতার ব্রক্ষ্মাস্ত্র তাঁর হাতে। ব্রক্ষ্মাস্ত্র নামের এই অস্ত্রটা সবার কাছে থাকে না, এটার মুখোমুখি দাঁড়াবার ক্ষমতাও কারো নাই।
আসিফদেরকে একটু দয়া করতে পারেন না, রাষ্টপিতা? অবশ্যই পারেন, সে ক্ষমতা আপনার আছে।
আপনি আপনার এই বিপুল ক্ষমতা যে ব্যবহার করেননি এমন তো না। পত্রিকার খবর (প্রথম আলো/ ১৩.১১.০৯), চারটি দুর্নীতি মামলায় ১৮ বছরের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি শাহাদাব আকবরের সাজা আপনি মওকুফ করে দিয়েছেন। অথচ তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে কখনো আদালতের ধারেকাছেও আসেননি, আত্মসমর্পণ করেননি!
মি. প্রেসিডেন্ট, আমি সবিনয়ে জানতে চাই, শাহাদাব আকবর দেশের জন্য এমন কোন সম্মানটা নিয়ে এসেছেন যার জন্য আপনি আপনার এই ব্রক্ষ্মাস্ত্রটা ব্যবহার করলেন? শাহাদাব আকবরের এটাই কী একমাত্র যোগ্যতা তিনি জাতীয় সংসদের উপনেতা বেগম সাজেদা চৌধুরীর সন্তান?
মি. প্রেসিডেন্ট, আমরা আপনার প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকতাম যদি আপনি এই ব্রক্ষ্মাস্ত্রটা আসিফদের বেলায় ব্যবহার করতেন। আমাদের সন্তানদের কাছে আমরা বুক চিতিয়ে গল্প করতাম, জানোস রে, ব্যাটা, আমাগো পেরসিডেন্ট সাব কি করল, জানোস...।
এটা কি খুব বড়ো একটা চাওয়া ছিল মি. প্রেসিডেন্ট?
এরশাদ-খালেদা জিয়ার সময় যেভাবে লেখা গেছে, ক্যারিকেচার, কার্টুন আঁকা গেছে আওয়ামী শাসনামলে সেটা ছিল স্রেফ একটা স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন! একদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (!) শহিদুল আলমকে নগ্ন পায়ে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেল। কোথায় নিয়ে গেল সেটা আবার অনেক পরে জানা গেল। কোর্টে আবার 'মাই লর্ড' বিচারক পুলিশকে জিজ্ঞেস করছেন, পুলিশ আসামীর (শহিদুল আলমের) ফোনের পাসওয়ার্ড নিয়েছে কিনা, সেদিনই লেখালেখির কফিনে পেরেক ঠোকা হয়ে গেল...!
Sunday, April 25, 2010
এটা কি খুব বড়ো একটা চাওয়া ছিল, মি. প্রেসিডেন্ট?
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
3 comments:
Apni paren o!
boss baiya apner moto sobar nitinerdaroni(ideology) thinking takli amra onk onk gain cortam......
:) @Anwar
ভুল, আপনার সঙ্গে খানিকটা অমত পোষণ করি। ভাইরে, আসলে আমরা ভাবি সবাই কিন্তু যারা এই দেশ চালান তাঁরা আমাদের এই সব ভাবাভাবির ধার ধারেন না। @shihab
Post a Comment