তাকিমাৎসু আকিতা। জাপানী কবি। তিনি ‘হাইকু’ (জাপানী গীতি কবিতা) লেখা শুরু করেন অল্প বয়সে। তাঁর কবিতার জন্য তিনি বিখ্যাত কিছু পুরস্কার পেয়েছেন।
তিনি চমৎকারসব স্বপ্ন দেখতেন, তীব্রভাবে ভালবাসতেন এই অসুন্দর, কুৎসিত পৃথিবীটা- অপার্থিব স্বপ্নের চোখে! তুচ্ছ করতে চাইতেন নিজের জীবনের না পাওয়ার আনন্দকে! সীমাহীন যন্ত্রণাকে বুকে লালন করে ধরতে চাইতেন, অদেখা নীল পদ্মকে!
'৯৬-এ তিনি 'নিউজউইক'-এ এক মর্মস্পর্র্শী সাক্ষাৎকার দেন। যখন এই সাক্ষাৎকারটি দেন তখন তাঁর বয়স ছিল ৭৯। ৫৫ বছরের উপরে তিনি ওয়াকায়ামা জেলার কোমাস স্যানেটেরিয়ামে একরকম বন্দী জীবন-যাপন করছিলেন!
তাঁর জন্ম দরিদ্র পরিবারে! ৮ বছর বয়সে ডাক্তার জানান, তাঁর কুষ্ঠ হয়েছে। ওই ডাক্তার ছিলেন, ভারী সহৃদয় একজন মানুষ! আকিতাকে স্কুলে যাওয়ার আগে তিনি গোপনে আকিতার চিকিৎসা করতেন। ডাক্তার অনুমান করেছিলেন, জানাজানি হয়ে গেলে আকিতাকে কুষ্ঠাবাসে পাঠিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু ডাক্তার, এই সহৃদয় মানুষটা, তাঁকে খুব বেশী দিন আগলে রাখতে পারলেন না। আকিতাকে কুষ্ঠাবাসে যেতেই হলো। ওখানেই তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন।
আকিতার মা মারা যান আকিতার ২০ বছর বয়সে! আকিতা তাঁর মাকে নিয়ে বলেন: "আমার মা বলতেন, আমাদের পরিবারে কোন কুষ্ঠ রোগী ছিল না। মা আমাকে সবসময় বোঝাবার চেষ্টা করতেন শরীরের এই অবস্থার জন্য আমার কোন দোষ নেই। মা বলতেন, পৃথিবীতে অনেক লোক আছে যারা চুরি করে, অনেকে আবার নিজের অপকর্ম বা পাপের কথা স্বীকার করে না। মা বলতেন, তুমি তো একটা ঘটনার স্বীকার মাত্র। প্রকৃতি তোমার প্রতি অন্যায় করেছে, তাই তুমি এই রোগের সংস্পর্শে এসেছ, যাতে তোমার কোন হাত নাই! ...যখন কারো সঙ্গে কথা বলবে, তার চোখে চোখ রেখে কথা বলবে, বিন্দুমাত্র বিব্রতবোধ করবে না!"
স্যানেটেরিয়ামে, এখানেই তিনি বিয়ে করেন। তিনি তাঁর প্রতি অন্যায়ের কথা বলেন এভাবে: “আমার জীবনের সবচেয়ে অবমাননাকর অধ্যায় ছিল জোর করে, আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমার প্রজনন ক্ষমতা রহিতকরন বিষয়টি। আইন ছিল: যদি বিয়ে করি তাহলে প্রজনন ক্ষমতা বাধ্যতামূলক নষ্ট করতে হবে। আমি এটা মেনে নিতে পারছিলাম না। আমাকে যখন অপারেশন করতে চাইলো আমি কয়েকবার ছুটে বেরিয়ে গেছি। শেষে তারা আমার খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে আমার অস্ত্রোপচার করে।
এখন আইনটি পরিবর্তন হতে যাচ্ছে, কিন্তু লাভ কী! যারা আমার প্রতি অন্যায় করেছিল, তাদের অনেকেই আজ মৃত। তারা বেঁচে থাকলে আমি পার্টি দিতাম। তারা নিশ্চয়ই তাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইতো!”
*কবির বিকৃত মুখের ছবিটা ইচ্ছা করেই দিলাম না। স্বপ্নের জগতের মানুষটা থাকুক স্বপ্নের মতোই- কী দরকার, অহেতুক তাঁকে দুঃস্বপ্নের চোখে দেখার!
**তথ্য ঋণ: কিছু তথ্য নেয়া হয়েছে: হিদেকো তাকায়ামা, যেটা অনুবাদ করেন, অমল সাহা, ওখান থেকে।
***আমি এই লেখাটি উৎসর্গ করি, ঈশ্বরের বিশেষ-ভালবাসার সন্তানদের। এই বিশেষ সন্তানদের একটি
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'বি-স্ক্যান'-এর একজন প্রতিনিধির কথা শুনছিলাম: "আমাদেরও সেইসব করতে ইচ্ছা করে যা আপনাদের করে"।
কেন নয়? আপনাদের তো খানিকটা বেশীই ইচ্ছা করা উচিৎ কারণ আপনারা যে ঈশ্বরের বিশেষ সন্তান-ভালবাসার সন্তান। আমি বিশ্বাস করি, এ গ্রহের উপর আমাদের চেয়ে আপনাদের অধিকার বেশী।
আচ্ছা, আমরা কেন আপনাদের প্রতিবন্ধী বলি? আমি জানি না। কেবল জানি এ অন্যায়, জঘণ্য অন্যায়!
আমি কি আপনাদেরকে আকিতার মা'র কথাটা আবারও মনে করিয়ে দেব, তুমি তো একটা ঘটনার স্বীকার মাত্র। প্রকৃতি তোমার প্রতি অন্যায় করেছে, তাই তুমি এই রোগের সংস্পর্শে এসেছ, যাতে তোমার কোন হাত নাই! ...যখন কারো সঙ্গে কথা বলবে, তার চোখে চোখ রেখে কথা বলবে, বিন্দুমাত্র বিব্রতবোধ করবে না!
***ছবি ঋণ: আসাদ আবদুল্লাহ
3 comments:
অনেক ধন্যবাদ আলি ভাই আমার ছবি ব্যবহার করার জন্য
শুভ ভাই,কি জোরেই না থাপ্পরটা মারলেন। এমন থাপ্পর খেতেও গর্ব হয়
এই লেখাটার জন্য ছবিটা খুব জরুরী ছিল। আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে খাটো করি না।@আসাদ আবদুল্লাহ
নারে ভাই, নিজেই নিজের গালে চড় মেরেছি।@লেলিন
Post a Comment