পরে ব্যর্থ হয়ে ফেরে এসে অন্যদের বিজয়ের গল্প মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখত।"[১]
এটা যে সত্যি সত্যি ফলে যাবে অন্তত আমি কল্পনা করিনি! ভুলেই গিয়েছিলাম, হিমালয়ে বাঙালি দূর্লভ হলেই কী- বাঙালির মাঝে ফিরে আসতে তো হবে।
দৈনিক 'কালের কন্ঠ' আজ "প্রযুক্তি এবং আবহাওয়ার কারণে এভারেস্ট জয়ের হিড়িক" এই শিরোনামে এএফপি, বিবিসি, এবিসি নিউজের সুত্রে বিশাল এক প্রতিবেদন ছাপিয়েছে। সাহেবদের লেজ ধরে!
মূল বিষয় হচ্ছে, এভারেস্ট জয় করা এখন ডালভাত, যে কেউ ওখানে গিয়ে হাওয়া খেতে পারে। কালের কন্ঠ এর কিছু নমুনাও দিয়েছে, জেক নরটনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, "...অন্য পাঁচটা ব্যস্ত এলাকার মতোই সেখানে এখন মানুষ গিজগিজ করে"।
কালের কন্ঠ আরও জানাচ্ছে, "...জয়ীদের তালিকায় নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীরাও রয়েছে।" কালের কন্ঠের কাছ থেকে আমরা আরও জানতে পারছি, "...২০০৭ সালে জাপানি নাগরিক কাতসুকে ইয়ানাগিসাওয়া ৭১ বছর বয়সে চূড়ায় উঠে চমক লাগিয়ে দেন।
মুসার এক দিন আগে তাঁর ব্যবহৃত পথ ধরেই সবচেয়ে কম বয়সে এভারেস্ট জয়ের রেকর্ড গড়ে শিশু রোমেরো।
...গত রবিবার রোমেরো মাত্র ১৩ বছর বয়সে এভারেস্ট জয় করার পর তার নিজ দেশের পত্রপত্রিকায়ও তেমন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি"।
"একই দিনে সবচেয়ে কম বয়সী অর্জুন বাজপেয়িকে নিয়েও তেমন মাতামাতি হয়নি [২]।"
এই সব তথ্য সঠিক কিনা এই নিয়ে আমি ভুলেও প্রশ্ন তুলব না কারণ সাহেবদের দেয়া তথ্য বলে কথা। এই সব তথ্য জানাবার জন্য আমি কালের কন্ঠের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব না তাও না।
আমার কথা অন্যখানে। এখন পর্যন্ত কয় জন বাঙালি এভারেস্টের চুড়ায় এই দেশের পতাকা নিয়ে যেতে পেরেছে? মুসা ব্যতীত অন্য কেউ আছে কী? নাকি আবেদ খানের এস্টাইলে [৩] বলব, বোধ হয় [৪] আরও কেউ আছে!
রোমেরো মাত্র ১৩ বছর বয়সে এভারেস্ট জয় করার পর তার নিজ দেশের পত্রপত্রিকায়ও তেমন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
রোমেরোকে নিয়ে তার দেশের পত্রপত্রিকায় মাতামাতি হয়নি, এটাও কি সাহেবদের কাছ থেকে ধার করা কথা নাকি সেন্ট্রাল এসি কক্ষে বসে বসে আবিষ্কার করেছেন? ইয়ে, তার নিজের দেশ বাদ দিয়ে অন্য দেশে মাতামাতি হলে কি চলবে আমাদের বিবেক ভাইয়া? [৬]
প্রকারান্তেরে কি বলা হলো, আমাদের পত্রিকায় মুসাকে নিয়ে মাতামাতি দৃষ্টি কটু? ঘটনা কী এটাই, প্রথম আলো তার নামটা বেশী ফাটিয়ে ফেলছে বলে? কালের কন্ঠের ব্যানার নিয়ে মুসা পোজ দিলে কালের কন্ঠের প্রথম পাতার সবটাই এই খবরে ভরে যেত, না?
আপনারা নিজেরা নিজেরা কার অন্তর্বাসের রং কি এটা দেখতে থাকুন না কেন, আমাদের কেন এতে জড়ানো?
মিডিয়া কী না পারে! কাউকে মাথায় তুলতে পারে, আবার আছড়ে ফেলতেও সময় লাগে না। আজকের প্রথম আলোয় আনিসুল হক লিখেছেন:
"প্রথম আলো ফুটছে। সূর্যের প্রথম রশ্মি এসে পড়ল এভারেস্টের চুড়ায়। ঠিক তখনই আমি এভারেস্টের মাথায়। আমার কী যে ভাল লাগল। এই আলো। এই আমার স্বপ্নপূরন। ২৩ মের প্রথম আলোকরশ্মি এভারেস্টের চুড়ায় আমাকে স্বাগত জানাল।"
আনিসুল হক পারলে এটাও লিখে দিতেন, এভারেস্টের চুড়ায় দেখলাম, এক ইয়েতি নিবিষ্টচিত্তে প্রথম আলো পত্রিকা পড়ছে এবং তার বিশেষ মনোযোগ আনিসুল হকের কলাম পড়ায়।
না পাঠক, এটা আনিসুল হক এভারেস্টে উঠে বলছেন না। বলছেন মুসা, আনিসুল হকের সঙ্গে ফোনে সাক্ষাৎকারে। শব্দের যাদুতে মুসা যে লেখক আনিসুল হককে ছাড়িয়ে গেছেন এতে কোন সন্দেহ নাই।
মুশকিল হচ্ছে, এমন অনেক না-বলা কথা আসমান থেকে চলে আসে মিডিয়ার কল্যাণে। নমুনা [৫]।
মিডিয়াই ঠিক করে দেয় আমরা কি বলব, এরা আমাদের ভাবনা তাদের মত করে ভাবতে আমাদেরকে বাধ্য করেন। আমরা নির্বোধ পাঠক মিডিয়ার সেই ভাবনাগুলোই পেট ভাসিয়ে পড়ি। বেদবাক্যের মত বিশ্বাস করি।
আমাদের ভার্চুয়াল জগতে যখন একজন অন্যজনকে ঈর্ষায় খাটো করে, কুৎসিত ভাষায় খিস্তিখেউড় করে তখন আমরা অনিচ্ছায় মেনে নেই, কী-বোর্ডের অন্য পাশের মানুষটা হয়তো অসুস্থ। আমি অবশ্য এই সব অসুস্থ মানুষদের জন্য করুণা করি, আহা, মানুষটা যে অসুস্থ।
এরা কেন অসুস্থ এটা মনোবিদরা ভালো বলতে পারবেন। পিঠে চাবুকের অসংখ্য দাগ নিয়ে ঘুরে বেড়ানো এই সব কাপুরুষ মানুষগুলো নিজেদের দগদগে ঘা নিয়ে, গা ঘিনঘিনে কুকুরের মত অস্থির হয়ে উঠে। যন্ত্রণার না-বলা কথাগুলো অন্য ভাবে বের হয়ে আসে। সামনাসামনি বলার সাহস নেই বলে আড়ালে বলে, বাপান্ত করে হয়তো তার পৈশাচিক আনন্দ হয়। এদের চিকিৎসার প্রয়োজন।
কিন্তু মিডিয়া নামের ভয়াবহ শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানগুলো যখন এই কাজটাই করে, তাদের এই সব ভাবনা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে তখন আমি কেবল করুণাই করি না, বেদনার সঙ্গে বলি, এরা চিকিৎসার বাইরে।
কারণ এই সব মিডিয়া হচ্ছে, বিবেক নামের এরা হচ্ছে, চুতিয়া বানাবার কারখানা। এরা অসংখ্য দানব বানাবার চেষ্টা করে।
আমি ধরে নিচ্ছি, কালের কন্ঠ যা লিখেছে সব সত্য। কিন্তু এটা এখন কেন? এখন আমাদের আনন্দ করার সময়, উল্লাসের সময়, ঠিক এখনই কেন? এটা ক-দিন পর লিখলে বসুন্ধরা সিটি নামের ভবনটা কি ধসে পড়ত?
ব্যাপারটা আমার কাছে মনে হচ্ছে এমন, কোন একজনের দাওয়াতে গিয়ে, গৃহকর্তার সাধ্যাতীত আয়োজনের পরও কোন অপদার্থ গল্প জুড়ে দেয়, মশায় বুঝলেন, এ আর কী আয়োজন; পরশু গিয়েছিলুম এক দাওয়াতে। সে এক এলাহী কান্ড, আস্ত তিমি মাছের রোস্ট এসে হাজির। দেখুন দিকি কী কান্ড!
এই সব অসভ্য-অভদ্র-হৃদয়হীন মানুষদের গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় মারা যায়। আফসোস, মিডিয়া তো আর মানুষ না!
কালের কন্ঠের যেসব অর্বাচীনদের মাথা থেকে এটা ছাপাবার আইডিয়া বের হয়েছে, এসি রুমে বসে এই সব লেখা বড়ো সহজ মনে হয়, না? আপনাদের এভারেস্টে যেতে হবে না, সীতাকুন্ড পাহাড়ে চড়ে দেখান। আমরাও একটু দেখি।
বাংলাদেশের ক্রিকেট টিম যখন কমান্ডো ট্রেনিং নিচ্ছিল তখন সেখানে আমাদের দেশের বিভিন্ন পত্রিকার ৩৭ জন সাংবাদিক ছিলেন। ইনস্ট্রাক্টর সাংবাদিকদের আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, "চাইলে আপনারাও ট্রেনিং-এ অংশগ্রহন করতে পারেন, ক্রিকেটাররাও সঙ্গ পাবেন"।
কী একেকজন বাহাদুর, একজনও রাজী হননি! ওহে, সাম্বাদিক (!) বীরবর, ক্রিকেট টিমদের সঙ্গ দিতে না পেরে লজ্জা করেনি তখন?
মুসাকে খাটো করতে কত উদাহরণই না এখানে দেয়া হয়েছে। "কাতসুকে ইয়ানাগিসাওয়া ৭১ বছর বয়সে চূড়ায় উঠে চমক লাগিয়ে দেন।"
হ্যাঁ, চমক লাগিয়ে দেন তো। আবেদ খান, শাহআলম সাহেবের বয়স নিশ্চয়ই ৭১ হয়নি। এরাও একটু চেষ্টা করে দেখেন না কেন? এভারেস্ট না, বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু ভবনটায় লিফট ব্যতীত সিড়ি বেয়ে উঠে দেখিয়ে দিলেই হবে। আমরা অপেক্ষায় আছি।
সহায়ক লিংক:
১. প্রথম বাঙালি সাক্ষাৎকার গ্রহনকারী: http://www.ali-mahmed.com/2010/05/blog-post_27.html
২. কালের কন্ঠের প্রতিবেদন: http://www.dailykalerkantho.com/?view=details&type=single&pub_no=176&cat_id=1&menu_id=13&news_type_id=1&index=2
৩. আবেদ খানের এস্টাইল: http://www.ali-mahmed.com/2010/01/blog-post_27.html
৪. আবেদ খানের বোধ হয়: http://www.ali-mahmed.com/2010/01/blog-post_26.html
৫. একটি আদর্শ সাক্ষাৎকার: http://www.ali-mahmed.com/2010/05/blog-post_05.html
৬. রোমেরো, ডয়চে ভেলে: http://www.dw-world.de/dw/article/0,,5600046,00.html
10 comments:
প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে আপনার সাইটটিতে ঢু মারি। খুব ভাল লাগে আপনার লেখা গুলো। চমৎকার সাহসী কলামগুলো আমি পড়ি আর ভাবি এমন অকপটে আমরাও লিখতে পারি? ধন্যবাদ আজকের রেখাটির জন্য।
প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে আপনার সাইটটিতে ঢু মারি। খুব ভাল লাগে আপনার লেখা গুলো। চমৎকার সাহসী কলামগুলো আমি পড়ি আর ভাবি এমন অকপটে আমরাও লিখতে পারি? ধন্যবাদ আজকের রেখাটির জন্য।
zhsoykot,
"...এমন অকপটে আমরাও লিখতে পারি...?"
কেন লিখতে পারবেন না, অবশ্যই পারবেন। আর অকপটের কথা বললেন, কোন ভাবে যদি কোন সূত্রে প্রমাণ থাকে আমার কাছে যে, আমার বাবা একজন ঘুষখোর, রাজাকার, খুনি ছিলেন; অমি তাঁকে নিয়েও লিখব।
আমার সমস্যা হচ্ছে, লেখা আমাকে নিয়ন্ত্রণ করে, আমি লেখাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।
যেটা বিশ্বাস করি, সেটা লিখবই।
ধন্যবাদ আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য।
যে যাই বলুক না কেন মুসা ইব্রাহীম!! আমরা আপনার জন্য গর্বিত.
Ashik,
তা আর বলতে।
মুসা এই দেশের প্রথম সেরা সন্তান যে এমন একটা কাজ করে দেখিয়েছেন, যা অন্য কেউ পারেনি। এই দেশের একজন মানুষ তাঁকে স্যালুট করবেই।
করবে না কেবল দানব। দানব নিয়ে আমার বিশেষ আগ্রহ নাই কারণ দানব তার মাকে খেয়ে ফেলে।
ভাইয়া অসাধারন!
এমন একটা post ই আশা করেছি।
মুসা ভাইয়ের ছেলে (ওয়াসী মুসা) বড় হয়ে সাধারণ জ্ঞাণ এ পড়বে এভারেষ্ট বিজয়ী প্রথম বাংলাদেশী কে?
সে উত্তর লিখবে "আমার বাবা"
আমরা লিখব "মুসা ইব্রাহিম"।
স্যালুট মিঃ মুসা ইব্রাহিম।
Shaqlain Shayon,
একমত আপনার সঙ্গে।
তবে এটাও যোগ করি, এই রকম প্রশ্ন আসবে, কোন একটা বিষয়ে সেরা বাংলাদেশীর নাম বলো?
উত্তর লেখা হবে, মুসা ইব্রাহিম।
আরেকটা প্রশ্নও আসবে, কোন একটা বিষয়ে সেরা দানবের নাম বলো?
উত্তর লেখা হবে, কালের কন্ঠ!
ভাই আপনার লেখা অত্যন্ত মনযোগ দিয়া পড়ি এবং যত পড়ি তত ভাল লাগে!!!!
জানি না কেন কখনও কখনও মনে হয়, ধুর, লেখা-টেখা ছেড়ে দেই। কী হয় লিখে, কী আর লিখি ছাই!
কিন্তু আপনার মত কারও কারও এমন মন্তব্য যখন পড়ি তখন মনে হয়, আরেকটা হাত থাকলে ভালো হতো- লিখতে সুবিধে হতো :)। @najim
Post a Comment