এক দেশে এক দেশ ছিল। সেই দেশে যথারীতি এক শাসকও ছিল। ক্ষমতা হারানোর পর তার 'হাবেলি' বা প্রাসাদ থেকে প্রায় ২০০টি ব্লু-ফিল্ম উদ্ধার করা হয়েছিল (যার মধ্যে কিছু খুবই রেয়ার। কী টাইপের রেয়ার তার ব্যাখ্যায় গেলাম না কারণ ...) এবং ৬০ বোতল স্কচ হুইস্কি (আনুমানিক ৬০ লিটার)। আর বিশেষ (হালুয়া) বা ট্যাবলেট! যা খেলে বিশেষ মুহূর্তে নরের বিশেষ শক্তি (সবাই পরিণত পাঠক বিধায় 'এই বিশেষ শক্তির' ব্যাখ্যায় যাওয়ার চেষ্টা করলাম না) অনেকটা বেড়ে যায়। হাবিজাবি আরও অনেক কিছুই।
এই শাসক সাহেব আবার ছিলেন পীর প্রজাতির খুবই ভক্ত। তিনি অষ্টরশি পীরের দরবারেই গেছেন প্রায় ১০০ বার, ফল কি পেয়েছেন তা তিনিই ভাল বলতে পারবেন!
একসময় মনের দুঃখে 'পাগলা পানি' খাওয়া শুরু করলেন। অষ্টরশিকে বাদ দিয়ে দশরশি নামের একজন পীরের কাছে যাতায়ত-গতায়ত শুরু করলেন। দশরশি পীর সাহেব এই শাসক সাহেবকে খুবই স্নেহ করতেন।
ও সময়ের খানিক বাতচিত এখানে তুলে দেয়া হলো:
শাসক: বাবা, মনটা বড়ো অস্থির।
দশরশি: তুই কাজ-কাম একটু কমা। 'খাব' বা স্বপ্ন একটু কম দেখ। তুই স্বপ্ন দেখলেই দৌড় দেস এই-ওই মসজিদে নামায পড়তে! আর এইটা কি তোর কাজ, বৃষ্টি নামানো? এই কাম তুই করলে আমরা আছি কুন দিনের লাইগা? বৃষ্টি নামাইছস ভাল কথা আবার মিডিয়ায় কইলি, 'পৃথিবীর কোন রাষ্ট্রপ্রধানের দোয়ায় বৃষ্টি নামছে, কেবল নামছে আমার দোয়ায়'? আমাগো কথা ভাবলি না, এক্কবারে আমাগো ভাত মাইরা দিলি!
শাসক এর উত্তর দিলেন না। এক জুম্মাবারে তিনি ফট করে একটা মসজিদে ঢুকে নামায পড়লেন। এরপর দাঁড়িয়ে মুসুল্লীদেরকে বললেন, 'কাল রাতে স্বপ্ন দেখেছি এই মসজিতে নামায পড়ছি তাই সত্যি সত্যি আপনাদের সঙ্গে নামাজ পড়তে চলে এলাম'।
শাসকের সঙ্গে থাকা সৈনিকদের হাসি চেপে রাখা মুশকিল হয়ে দাঁড়াল কারণ এরা গোটা সপ্তাহ ধরে এই মসজিদের আশেপাশের এলাকা গভীর পর্যবেক্ষণ করেছে, শাসকের নিরাপত্তার জন্য। শাসক আসবেন এখানে নামাজ পড়তে...!
আরেকবার দেশে খুব খরা, বৃষ্টির নাম-গন্ধও নেই। এই শাসক সাহেব আবার খুবই পরহেজগার মানুষ- কতবার হজ করেছেন তার ইয়াত্তা নাই। তিনি খাস দিলে দোয়া করলেন। বৃষ্টি হওয়ার পর বিনয়ের সঙ্গে প্রশ্নটা করেছিলেন, 'পৃথিবীর কোন রাষ্ট্রপ্রধানের দোয়ায় বৃষ্টি নেমেছে'?
কথা সত্য, ওনার মত উপরের সঙ্গে হট-লাইনের রাষ্ট্রপ্রধান এই গ্রহে ক-জন আছে?
যাই হোক, শাসক এবার বললেন: বাবা রে, মনে শান্তি নাই!
দশরশি: থাকব কেমনে, তোরে অষ্টরশি খাইছে! তোরে রশি দিয়া বাইনন্ধা থুইছে। আচ্ছা বেটা, তুই কি পিসাব খায়া আইছস, মুখে পিসাবের গন্ধ পাইতাছি!
শাসক: বাবা, পিসাব না একটু পাগলা পানি দিয়া কুলি করছিলাম, ইয়ে মানে কুলি আর কী...। হইছে কি, সকালে তো ওঠছি দেরীতে। কেন? আহা, চোখে জানি কি সমস্যা হইছে রাতে খালি ব্লু দেখি, কী তামশা ছবিও ব্লু হয়া যায়, সব নীল! তো, রাতে ঘুমাইতে ঘুমাইতে দেরী হয়া গেল। সকালে তো ওঠছি দেরীতে, তাড়াহুড়া কইরা রুটি খাইতে গিয়া গলায় রূটি আটকায়া গেছিল তো, তাই পাগলা পানি দিয়া একটু, হে হে হে।
দশরশি: বেটারে, বুজছি-বুজছি, আর কইতে হইব না, ইতা কইরা কুনু লাভ নাই! তুই ইয়ের মধ্যে মান্ডার তেল মালিশ কর, ফল পাইবি। মালিশ করলে, ইনশাল্লাহ, তোর পুলাপাইন হইব।
শাসক: বাবা, আচানক কথা, আপনি জানেন না? আমার একটা পুলা আছে (দ্বিতীয়টির কথা তিনি বেমালুম চেপে গিয়েছিলেন)।
দশরশি (দাড়িতে হাত বুলিয়ে অমায়িক হাসলেন): তোর কুনু পোলাপাইন নাই।
শাসক: মাফ চাই বাবা, তা এইটা কি কন! আসলে আপনার কাছে গোপন করছিলাম, আমার একটা না দুইটা ছেলে ।
দশরশি: ওইটা তুই ভাবতাছস, আসলে তোর কুনু সন্তান নাই! কারণ ইয়ে হওয়ার ক্ষমতা তোর নাই...।
(এই অংশটুকু একটা ফিকশন। এই গ্রহ বা গ্রহের বাইরে, জীবিত বা মৃত, তোতলা বা কানা এমন কোন লাশের সঙ্গেও এর সম্পর্ক খোঁজা সময়ের অপচয় মাত্র!)
... ... ...
স্কেচ: আলী মাহমেদ |
সে তো গেল অন্য কোন-এক দেশের শাসকের কথা। এবার আমাদের দেশের এক শাসককে [১], [২] নিয়ে লিখেছেন, ব্রিগেডিয়ার শামসুদ্দিন আহমদ (অবঃ), "যখন বঙ্গভবনে ছিলাম" এই লেখায় তিনি লিখেন:
"১৯৮৩ সালের ১৮ জানুয়ারি। দিনটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে একটা ঘটনার জন্য।...রাষ্ট্রপতি আহসানউদ্দিন আনন্দে উল্লসিত। একটা ভয়ানক ঘটনা ঘটে গেছে হঠাৎ করেই। জেনারেল এরশাদের ছেলে হয়েছে। এ যে বিস্ময়ের বিস্ময়। রাষ্ট্রপতি আনন্দে আত্মহারা। তিনি সেনাভবনে যাবেন জেনারেল এরশাদকে মুবারকবাদ জানাতে। । সে জন্যই আমাকে খুঁজছিলেন।
...বেগম আহসানউদ্দিনও তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তবে শুধু জেনারেল এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ফিরে এসেছেন। নবজাত শিশুকে দেখতে দেয়া হয়নি। বেমম রওশন এরশাদ ও নবজাতক শিশু যে কামরায় ছিলো সেখানে কাউকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। বেগম আহসানউদ্দিনকেও না।
...বেগম রওশন এরশাদ যে সন্তানসম্ভবা এবং তাঁর সন্তান ভুমিষ্ঠ হবার সম্ভাব্য মাস তারিখ সম্পর্কে আগে কোন আভাস পাওয়া যায়নি। না সংবাদপত্রের মাধ্যমে; না লোকমুখে।
...মাত্র দুই সপ্তাহ হবে ৪ জানুয়ারি যুবরাজ করিম আগা খানের সম্মানে বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত ভোজসভাতেও বেগম রওশন এরশাদ উপস্থিত ছিলেন। কেউ তখনো বলেনি তিনি সন্তানসম্ভবা। তাঁকে দেখেও তেমন কিছু মনে হয়নি!"
(ভোরের কাগজ, ১৩.১০.৯২)
১. অন্ধকার ফিরে আসে বারবার: http://www.ali-mahmed.com/2009/07/blog-post_20.html
২. যে মহা কবি নোবেল পাননি: http://www.ali-mahmed.com/2009/03/blog-post_09.html
1 comment:
hahaha haste haste sotti ektu pesab ber hoye gese. thanks nirjhor
Post a Comment