Search

Friday, May 28, 2010

আমাদের সেলিব্রেটি তুষার মহোদয় সমীপে...

অভ্র-বিজয় নিয়ে এক ধুন্ধুমার কান্ড চলছিল, এখনো চলছে। এই নিয়ে আমার একটা লেখা ছিল, আজ আমি যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, এই বিজয় মিছিলে পুরোধা অভ্র [১]

এই বিষয়ে ডয়চে ভেলে আমার কাছে জানতে চাইলে আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছিলাম, "অভ্র চাচ্ছে ভাষা উম্মুক্ত হোক এবং এর জন্য এরা কেউ টাকা চাচ্ছে না। (ভাল লাগছে যেটা) এই সফটওয়্যার ব্যবহার করার জন্য কখনও আমার নিজেকে চোর মনে হবে না।
বাংলা ভাষার জন্য, বাংলা ভাষাকে উম্মুক্ত করার জন্য যে টাকা চাইবে তাকেই আমি অপছন্দ করব। অর্থের লালসার কাছে আর যাই হোক দেশপ্রেম হয় না"...[২] 

ওখানে আবদুন নুর তুষারের বক্তব্যও পড়লাম। 
ডয়চে ভেলেকে তুষার বলেন, ‘‘একটি সফটওয়্যার ফ্রি অথবা ফ্রি নয়, এটি আসলে তর্কের জায়গাটি নয়৷ আর আমার সহজ যুক্তিটি হচ্ছে, সফটওয়্যার হচ্ছে কলমের মতো, ভাষার পরাধীনতার সঙ্গে সফটওয়্যারের ফ্রি হওয়া না হওয়ার কোন সম্পর্ক নাই৷''
তিনি বলেন, ‘‘যদি সফটওয়্যার দিয়ে বাংলা লিখতে গেলে সেই সফটওয়্যারটি ফ্রি হতেই হবে, এটি আমরা বলি, তাহলে কলম দিয়ে বাংলা লিখতে গেলে, সকল কলম ফ্রি করে দেয়া উচিত৷'' 

তুষার সাহেব সেলিব্রেটি টাইপের মানুষ। সেলিব্রেটি টাইপের মানুষদের ভুল ধরার দুঃসাহস আমার নাই। এমনিতেই আমি ভীতু টাইপের মানুষ তা আবার সেলিব্রেটিকে নিয়ে কথা, পাগল! কারণ সেলিব্রেটি টাইপের মানুষরা অন্য রকম হন, এরা অন্য গ্রহ থেকে দেশ উদ্ধার করতে আসেন। এঁদের আচরণের সঙ্গে আমাদের মত সাধারণদের আচরণের সাযুজ্য খোঁজা বৃথা।

একবার টিভিতে দেখলাম, এই দেশের বিভিন্ন সেলিব্রেটি মিছিলের মত একেকজন করে আসছেন। আলাদা এক গাম্ভীর্য নিয়ে বলছেন, "আমি জীবনেও কখনও কোন শিশুর গায়ে হাত তুলিনি, আপনিও তুলবেন না"।

ওয়াল্লা, আমি চিন্তায় তো পড়ে গেলাম! আচ্ছা, যারা এই অনুষ্ঠানটা করেছেন তারা কী বেছে বেছে সেইসব সেলিব্রেটিদের বিজ্ঞাপন দিয়ে খুঁজে বের করেছেন, যারা জীবনে কখনও শিশুদের গায়ে হাত তোলেননি? বিজ্ঞাপনটা কি ছিল এমন? 'কাহারা কাহারা শিশুদের গায়ে হাত তোলেননি তাহারা তাহারা জিপিও বক্সে আমাদের পত্রাঘাত করুন'।
নাকি সেলিব্রেটিগণ এমনই হন, এরা কখনও শিশুদের গায়ে হাত তোলেন না? অনেকটা দেবতা দেবতা টাইপের!

এখানেই দেবতা এবং আমাদের মত সাধারণ মানুষদের মধ্যে পার্থক্য। কারণ আমাকে 'খোদা-না-খাস্তা' কেউ দুম করে জিজ্ঞেস করে বসলে আমার এটা না বলে উপায় ছিল না, কখনও কোনো শিশুর গায়ে হাত দেইনি, এটা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি না।
তবে এ অন্যায়ের জন্য আমি লজ্জিত। চেষ্টা করব আর কখনও এই অপরাধটা না-করতে।

তুষার সাহেবের মূল বক্তব্য, "তাহলে কলম দিয়ে বাংলা লিখতে গেলে, সকল কলম ফ্রি করে দেয়া উচিত" 

তুষার সাহেবের এই বক্তব্য পড়ে আমি ভাবছিলাম, এই কথাটা তিনি কী অবলীলায়ই না বলে বসলেন! এমন একজন সেলিব্রেটি মানুষকে যে কিছু বলব এই উপায়ও নেই। 
বাহ, তাহলে আমরা কি "মা", "বিজয়" এই সব শব্দের জন্যও কি পয়সা চাইব নাকি? আমরা কি আপনার মত তেমন ডাক্তার যে রোগী মারা গেলেও ফি পকেটে চালান করি? এই আমিই কি কখনও পারব, মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত কোন লেখার জন্য টাকা চাইতে? 
আমরা কি আপনার মত ভানবাজ যে নিজের অনুষ্ঠান "শুভেচ্ছা"য় লাইট-ক্যামেরা-সাউন্ড-ওয়ান-টু-থ্রি-একশন বলে ভেউভেউ করে কান্না করি?

আপনাকে কে বলল, আমরা এই দেশের তাবৎ সফটওয়্যার বিনে পয়সায় চাচ্ছি? এখানে তো অভ্রর বিষয়টা অন্য রকম। 
তর্কের খাতিরে নাহয় ধরেই নিলাম, অভ্র টিম কিছু ভুলভাল করে ফেলেছে। বেশ। কিন্তু কার জন্য? নিজেদের স্বার্থের জন্য? এরা কি আমাদের কাছ থেকে একটা আধুলিও চেয়েছে?
এরাই সহজে আমাদেরকে বাংলা ইউনিকোডে লেখার সহজ উপায় করে দিয়েছে বলেই আমার ৯ ইঞ্চি মনিটর হয়ে উঠে গোটা বিশ্ব। আমি আমার অদেখা স্বপ্নগুলো ছড়িয়ে দিতে পারছি এই গ্রহে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বাংলাভাষীদের কাছে। 
প্রবাসে পড়ে থাকা এই দেশের সেরা সন্তানগুলোও বাংলায় লিখে মাখামাখি হয়ে থাকে এই দেশের সোঁদা মাটির গন্ধে। কার্বন-ডাই-অক্সাইডে দমবন্ধ হয়ে আসা আটকে থাকা জারে, যেন একপশলা বিশুদ্ধ অক্সিজেন।

কেউ ফট করে আমাকে বলে বসতে পারেন, আচ্ছা, আপনি এটাই বা কেমন করে বলবেন, অভ্র টিম একসময় এটার জন্য টাকা চাইবে না?
আমি মানুষ চিনি না কিন্তু স্বপ্নবাজদের চিনি। অভ্র টিম, এরা হচ্ছে স্বপ্নবাজ। এরা কি করবে, কি করবে না, এটা আমি চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারি।

জব্বার সাহেব কি আমার সঙ্গে আলোচনায় বসবেন, এই উদ্বেগ নিয়ে, অভ্ররা আবার টাকা কামাবে নাতো এটা থেকে? আমি ওপেন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলাম জব্বার সাহেবের প্রতি। ভবিষ্যতে কখনও টাকা চাইবে না, অভ্র টিমের কাছ থেকে এটার লিখিত এনে দিতে না পারলে আমার সন্তানসম লেখালেখি ছেড়ে দেব। 
আমি চোখ বুজে বিশ্বাস করি, অভ্র টিম নামের স্বপ্নবাজরা এক মুহূর্তও না ভেবে এটা লিখে দেবে, এই তীব্র বিশ্বাস আমি বুকে লালন করি।

কিন্তু আপনি মি. তুষার, আপনি কি পারবেন জব্বার সাহেবের কাছ থেকে এমন প্রতিশ্রুতি এনে দিতে? তিনি বাংলা লেখার জন্য কোনো টাকা চাইবেন না? আহা, মি. তুষার, ছি, লাজুক মেয়েদের মত চোখ নামিয়ে নেবেন না, প্লিজ। আপনি না সেলিব্রেটি...! 

সহায়ক লিংক
১. এই মিছিলের পুরোধা, অভ্র: http://www.ali-mahmed.com/2010/04/blog-post_29.html
২. অভ্র-বিজয় বিতর্ক, ডয়চে ভেলে: http://www.dw-world.de/dw/article/0,,5590862,00.html   

3 comments:

মোহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান said...

"তর্কের খাতিরে নাহয় ধরেই নিলাম, অভ্র টিম কিছু ভুলভাল করে ফেলেছে। "

তর্কের খাতিরেও একথা এখন ধরে নেয়া যায়না। অভ্র টিম কারন দর্শাও নোটিশের জবাব দিয়েছে এবং স্পষ্টতই প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে অভ্র সঠিক পথেই আছে। বিরুদ্ধ পক্ষই বরঞ্চ খোলা মঞ্চে অভ্রকে চোর বলে সাব্যস্ত করে আইন ভেঙ্গেছে।

ধন্যবাদ

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

"অভ্র টিম কারন দর্শাও নোটিশের জবাব দিয়েছে এবং স্পষ্টতই প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে অভ্র সঠিক পথেই আছে।"
ধন্যবাদ। আমি এটা দেখেছি।

"তর্কের খাতিরে নাহয় ধরেই নিলাম, অভ্র টিম কিছু ভুলভাল করে ফেলেছে। "
আমার এই বাক্যটা লেখার কারণ হলো, ভঙ্গিটা- দু পক্ষের মধ্যে এক পক্ষ যখন বসে থাকেন, অন্য পক্ষ দাঁড়িয়ে, তখন আর যাই হোক সমাধানের আলোচেনা চলে না। জব্বর সাহেব বসতেই চাছিলেন না, তিনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলবেন।

আমার যেটা অসম্ভব খারাপ লেগেছে, জব্বার সাহেব আমাদের অতি আবেগের বিষয়টা দুম করে আইনের কাছে নিয়ে গেলেন! বাংলাদেশের অধিকাংশ আইন এখনও ব্রিটিশদের করা। এখানে আবেগের স্থান কোথায়!
এটা তিনি না করলেও পারতেন। এখানেই প্রমাণ হয়, মোস্তফা জব্বার নামের মানুষটা অতি লোভী, নীচ।

এটা জব্বার সাহেব না হয় বুঝলেন না কিন্তু তুষার সাহেব?
আমার কারণেই এই বাক্যটা রূপক অর্থে বলা...।
ওখানেই ছিল আমার বক্তব্যটা, তর্কের খাতিরে নাহয় ধরে নিলাম, অভ্র টিম ভুলভাল করেছে। কিন্তু কার জন্য করেছে? এই দেশের জন্য, দেশের মানুষদের জন্য।

আবারও ধন্যবদ আপনাকে। @মোহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

আমি লিখেছিলাম, আবদুর নুর তুষার। আবদুর না, হবে আবদুন। একজন ফোন করে ভুলটা ধরিয়ে দিয়েছেন।
আমি দুঃখ প্রকাশ করি।