আমাদের মুসাকে নিয়ে আমরা উল্লাস করবই। এই মানুষটা এই দেশের প্রথম সন্তান যিনি আমাদের জন্য এমন একটা কাজ করে দেখিয়েছেন যা অন্যরা পারেনি। স্যালুট। কালের কন্ঠের মত দানব বানাবার কারখানা [১] কি বলল, না বলল তাতে আমাদের কিছুই যায় আসে না। সে প্রসঙ্গ থাকুক।
আমি একটায় লেখা লিখেছিলাম, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসুক [১]। এসেছে-এসেছে, কী আনন্দ-কী আনন্দ! এই দেশের গর্ভ (টাইপে ভুল হয়েছে, পড়বেন গর্ব), আনিসুল হক সহি সালামতে দেশে ফিরে এসেছেন।
এই ছবিটায় আনিসুল হকের নাম না থাকলে আমার বুঝতে সমস্যা হতো কোনটা মুসা, কোন আনিসুল হক। কী পোশাকে, কী মাথার ফেট্টিতে, কী হাসিতে!
ভাল কথা, মুসা ২ আঙ্গুল দেখালে আনিসুল হকের এটা কি উচিৎ না অন্তত দেড়টা আঙ্গুল দেখানো।
তাঁর ত্যাগও কী কম? কত বড়ো ঝুঁকি তিনি নিয়েছেন! একজন লেখক হওয়ার পরও তিনি আমাদের জন্য হাসিমুখে দাঁত বের করে চৌর্যবৃত্তি করেছেন [২]।
কেবল করেনইনি, বমাল ধরা পরার পরও বিন্দুমাত্র বিব্রত হননি। কোথাও এখন পর্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করেছেন বলে আমার জানা নাই। কেবল দায়সারা গোছের এটা লিখেই দায় সেরেছেন, "...ফোন আসতে লাগল ডয়েচে ভেলে, বিবিসি থেকে। তারপর তিনি পেলেন আমার ফোন।"
বেমালুম ভুলে গেলেন তার এই লেখাটা, '...এটা ২৫ মে কাঠমান্ডু থেকে তিব্বতের বেসক্যাম্পের ফোনে মুসা ইব্রাহীমের সঙ্গে প্রথম কোন বাঙালির কথোপকথন। এবং প্রিয় পাঠক, এই ঐতিহাসিক কথোপকথনটা আপনি পড়ছেন, আপনিও কিন্তু ইতিহাসের সাক্ষী। ভবিষ্যতে নাতি-নাতনিদের এই গল্প আমরা করতে পারব। হা হা হা...'।"
ওহ, আমি যে লিখলাম, বমাল ধরা পড়েছেন এই কথাটায় খানিকটা ভুল আছে। বমাল মানে হচ্ছে মাল সহ, ওয়েব সাইটের জন্য এটা সম্ভবত প্রযোজ্য হবে না। বমালের জায়গায় বলা যেতে পারে, 'ওমাল'।
তো, চুরির মত এতো বড়ো একটা ঝুঁকিই কেবল নেন নাই, তিনি যেভাবে মুসাকে বুকে আগলে নিয়ে এসেছেন, দাঁতসহ ফটোসেশন করেছেন এই জন্য আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি নইলে মুসা দেশে ফিরতে পারতেন কি না সন্দেহ।
আনিসুল হকের কী একেকটা লেখার যাদু! লিখেছিলেন,
"প্রথম আলো ফুটছে। সূর্যের প্রথম রশ্মি এসে পড়ল এভারেস্টের চুড়ায়। ঠিক তখনই আমি এভারেস্টের মাথায়। আমার কী যে ভাল লাগল। এই আলো। এই আমার স্বপ্নপূরন। ২৩ মের প্রথম আলোকরশ্মি এভারেস্টের চুড়ায় আমাকে স্বাগত জানাল।"
কেবল তিনি দয়া করে এটা লিখেননি, এক ইয়েতিকে দেখলাম এভারেস্টের চুড়ায় বসে প্রথম আলো পত্রিকায় আনিসুল হকের লেখা গভীর মনোযোগের সঙ্গে পাঠ করছে। আমরা পাঠক আর খানিকটা নির্বোধ হলে তিনি এই জিনিসও প্রসব করতেন এতে কোন সন্দেহ নাই।
আমি বিস্মিত, অবাক হলাম, প্রথম আলো পত্রিকাতেও মুসাকে নিয়ে আনিসুল হক আছেন। পত্রিকায় পড়লাম, মুসার সঙ্গে তার সহযোদ্ধা তিন শেরপা এসেছেন। আমি অনেক সুখি হতাম এখানে আনিসুল হকের চাঁদবদন দেখার চেয়ে মুসার সঙ্গে ওই তিন শেরপার ছবি দেখলে। এবং তাঁরা নাকি এই দেশে প্রথমবারের মত এসেছেন।
আচ্ছা, এই মানুষটার কি বিন্দুমাত্র লাজ নাই। এই মানুষটা তো কেবল একজন সাংবাদ কর্মীই না একজন লেখকও। অন্তত নিজের পত্রিকায় ফটোসেশনের বেলায় সরে গেলে কী সূর্য খানিকটা কি নীচে নেমে আসত! একটা মানুষ এতোটা নির্লজ্জ হয় কেমন করে?
*ছবি ঋণ: সুবীর কুমার, আমাদেরসময়
সহায়ক লিংক:
১. দানব বানাবার কারখানা: http://www.ali-mahmed.com/2010/05/blog-post_28.html
২. চৌর্যবৃত্তির নমুনা: http://www.ali-mahmed.com/2010/05/blog-post_27.html
৩.ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসুক: http://www.ali-mahmed.com/2010/05/blog-post_29.html
6 comments:
মুসা'র এভারেস্ট জয় নিয়ে মাঝখানে গুটিকয়েক লোক প্রশ্ন তুলেছিলো। তখন বলা হয়েছিলো, এভারেস্ট চূড়ায় একটা বুদ্ধ মুর্তি আছে। তারপাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুললে সেটাই এভারেস্ট জয়ের প্রমান। যেহেতু প্রশ্ন উঠেছিলো, তাই উচিৎ বুদ্ধ মূর্তির পাশে দাঁড়ানো মুসার ছবিটা দ্রুত প্রকাশ করা। কিন্তু এখন পর্যন্ত ছবিটা কোথাও প্রকাশিত হয়নি।
উনি এভারেস্ট জয় করেছেন এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার মানে হই না।
He is our Proud.
টেলিভিশনে মুসা ইব্রাহিম বিমান থেকে কখন নামবেন এটা দেখার জন্য কাজকাম ফেলে বসে ছিলাম। মুসা ইব্রাহিমের পাশে আনিসুল হককে দেখে বিরক্ত হলাম। এই ভদ্রলোকের সমস্যা কি? ইনি কি এভারেস্ট জয় করে ফিরেছেন নাকি? দাত কেলিয়ে হাসছেন,মাথায় আবার পট্টি বেধেছেন,জার্সি লাগিয়েছেন। আনিসুল হকের এই বেহায়াপনা দেখে আমার বিরক্তির সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
মুকুল,
আমার মনে হয়, এটা নিয়ে এখন আর প্রশ্ন তোলার অবকাশ নাই। যেহেতু তাঁকে সনদ দেয়া হয়েছে- এটা তাঁদের দায়িত্ব কি কি থাকা প্রয়োজন ছিল সেটা দেখা...।
তবে আমার মতে, আনিসুল হকদের মত এই সব নির্লজ্জ মানুষদের ছবি দেখার চেয়ে আমি অনেক সুখী হতাম এমন একটা ছবি দেখতে পেলে কারণ এভারেস্টে বুদ্ধের ছবিটা কেমন এটা কখনো দেখিনি, সংগ্রহে রাখা যেত।
JeweL,
সহমত।
kazi ,
পোস্টে আমি বিস্তারিত লিখেছি।
তবে যত চকচকে পোশাকই পরুক, কিছু কিছু মানুষ একপেট আবর্জনা কখনই ঢেকে রাখতে পারেন না। মানুষটা লেখক বলেই আমাকে বিষাদের সঙ্গে বলতে হয়, আনিসুল হক তাদের একজন!
Post a Comment