Search

Friday, June 4, 2010

স্বপ্ন, তিন: দু-জন দুর্ধর্ষ মুক্তযোদ্ধা, স্যালুট ম্যান

আমার অনেক দিনের এই স্বপ্ন, নৌ-কমান্ডো ফজলুল হক ভূঁইয়ার (যিনি জীবনের অনেকটা সময় ঠেলাগাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেছেন) কাছ থেকে শিশুরা মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনবে। এই আগুন মানুষটার কাছ থেকে তাদের উপহার নেবে। তাঁর সঙ্গে থাকবেন ট্যাংক-মানব এম এ জব্বার। 
একজন রাজনীতিবিদ, একজন আমলার কাছ থেকে পুরস্কার নেয়ার চেয়ে এই দেশের এমন সেরা সন্তানদের হাত থেকে পুরষ্কার নেয়া যে অনেক মর্যাদার এটা এরা জানবে, জানবে এদের অভিভাবক। জানব আমরা। জানব আমি নিজেও।

অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা ছিল ন-টায়। কিন্তু আয়োজকদের পক্ষ থেকে আমাদের খানিকটা দেরী হয়ে গেল। আমরা কেউ নেই অথচ বাচ্চারা এসে অডিটরিয়াম ভরে গেছে। প্রথমেই বাচ্চাদের কাছে আমরা বাজে একটা উদাহরণ সৃষ্টি করলাম। নিজেরাই সময় ঠিক করে সময় রক্ষা করতে পারলাম না। এই দায়টা আমার নিজের উপরও বর্তায়!
বাচ্চাদের কাছে ব্যক্তিগতভাবে আমি ক্ষমা চাইলাম এবং ঘুষ (!) হিসাবে প্রত্যেকটা বাচ্চার জন্য জুসের ব্যবস্থা করা হলো। :)
আমি অভিভূত। ১২টা স্কুল থেকে ৫৮জন বাচ্চা এসেছে। এতো বাচ্চা চলে আসবে এটা আমি ভাবিনি। 


নৌ-কমান্ডো ফজলুল হক ভূঁইয়া [১]
নৌ-কমান্ডো ফজলুল হক ভূঁইয়া, বর্ণনা করছেন তার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি [২]
 
ট্যাংক-মানব, মুক্তিযোদ্ধা এম, এ, জব্বার [৩]। বর্ণনা করছেন কেমন করে আস্ত একটা ট্যাংক নিয়ে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসেছিলেন। (বাইরে ঝুম বৃষ্টি, পাওয়ার নাই। তবুও থেমে থাকেনি অনুষ্ঠান।)
 
চলছে আঁকাআঁকির যুদ্ধ।
এই আর্টিস্টকে জিজ্ঞেস করলাম, বাবা, এটা কি আঁকছ? ও উত্তর দিল, বাঁয়েরটা মানুষ, ডানেরটা টেবিল। আমি আগ্রহ নিয়ে বললাম, বাহ, চমৎকার! তা এরপর কি হবে?
সে বলল, মানুষটা টেবিলে উঠে বসবে।
আমি বললাম, আচ্ছা।
 
এই বাচ্চাটা ইউএনও মহোদয়ের সন্তান। এখানে আমার নিজের সন্তানও আছে কিন্তু এখানে যেমন এই বাচ্চাটাকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নাই তেমনি আমার সন্তানকেও। আমি নিজেও প্রচুর আঁকাআঁকি করেছি কিন্তু এখানে বিচারক হওয়ার জন্য সবিনয়ে না করেছি কারণটা পূর্বেই বলেছি আমার সন্তানও এখানে আছে। আছে, কারণ স্কুল থেকে ও এখানে অংশগ্রহণ করলে আমার করার কিছু নেই। 
যাই হোক, এর সমস্যা হচ্ছে, এ কেবল একটাই আঁক শিখেছে। শহীদ মিনারের অবয়বটার কিছু অংশ ভুলে গেছে। ভুলে গেছে তাই এখন তার সাথে নিয়ে আসা ছবিটা তাকে দেখতে দিতে হবে, যেটা সম্ভব না। অধিকাংশ স্কুলগুলো বাচ্চাদেরকে একটা ছবিই আঁকা শেখায়- বাচ্চারা ওই একটা ছবিই বছরের পর বছর ধরে আঁকতে থাকে। 
সে কাঁদছে। আমি বললাম, 'তুমি যা পারো তাই চেষ্টা করো'।
সে বিভ্রান্ত, 'মাথা নেড়ে বলল, আমি এটা ছাড়া আর কিছু পারি না'।
আমি আবারওবললাম, 'চেষ্টা করো পারবে'।
সে এদিক-ওদিক মাথা নাড়ছে, 'না-না-না, আমি পারব না'।
এই ভাবনাটা পূর্বেই আমার মাথায় ছিল। যে কারণে এই প্রতিযোগীতায় সুনির্দিষ্ট কোন বিষয় দেয়া ছিল না। যে যা খুশী আঁকবে। পারলে ভূত আঁকবে, সমস্যার কিছু নাই।
তার আঁকার চেয়ে বিচারকের দৃষ্টি কেড়েছে যেটা, এই ছবির নীচে লেখা ছিল, "স্বাধীনতার চেতনা থাকুক প্রতিদিন"।
এই মেসেজটা আমার পছন্দ হয়েছে। কারণ আমি যখনই এই অনুষ্ঠানটা করার চেষ্টা করেছি তখনই আমাকে বলা হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে, ডিসেম্বরে করার জন্য। আমাদের তো আবার কান্নার জন্যও বিশেষ মাস লাগে, আয়োজন লাগে।
 
বিচারক তাদের ছবি দেখছেন। বাচ্চাদের উদ্বেগ কমাবার জন্য আয়োজকদের পক্ষ থেকে সবার জন্য ছিল চিপসের ব্যবস্থা।
 
বিজয়ী শিশুদের কথা।
 

বাচ্চাগুলোর মন খারাপ করার সুযোগ ছিল না কারণ তিন গ্রুপে ৯টা পুরষ্কার ব্যতীত সব বাচ্চাদের জন্য (৫৮ জন) ছিল, একটা করে পতাকা, একটা কলম, একটা করে কার্টুন-স্টিকারের পাতা। শিশুরা যেমন এই দুই অতিথীর কাছ থেকে পুরষ্কার নিয়েছে তেমনি এরাও বিশেষ অতিথীদের জন্য উপহার দিয়েছে।
 
এই সেরা সন্তানদের কাছ থেকে আমিসহ এই অনুষ্ঠানে যারা সহযোগীতা করেছেন, প্রত্যেকেই পেয়েছেন একটা করে কলম। 
ডা. রুমি নামের একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ আমাকে খুব করে অনুরোধ করেছিলেন, তাঁর জন্যও একটা কলম নেয়ার জন্য। তাঁর পক্ষ থেকে আমি নিয়েছি।  এই মানুষটা খানিকটা অন্য রকম। তিনি যখন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যান, ট্রেনটা যখন আখাউড়া অতিক্রম করে; তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকেন যতক্ষণ পর্যন্ত না বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের সমাধিক্ষেত্র ট্রেনটা অতিক্রম করে যায়। 
অন্যরা কি করবেন জানি না, আমার কলমটা রেখে দেব যত্ম করে। আমার জন্য এরচেয়ে বড়ো উপহার আর নাই।

কৃতজ্ঞতা: আমার ভূমিকা এখানে একবারেই গৌণ। এই অনুষ্ঠানটা সফল করার পেছনে আছেন এক ঝাঁক তরুণ যারা সংবাদপত্র ভূবনের সঙ্গে জড়িত। তাঁদের প্রতি আমার গভীর কৃতজ্ঞতা। এঁরা সহযোগীতা না-করলে এই অনুষ্ঠানটা সফল হতো বলে আমি মনে করি না।
আর্থিক সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে 'পড়শী ফাউন্ডেশন'[৪]। তাঁদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা।

*স্বপ্ন: http://tinyurl.com/3y7bpz3

সহায়ক লিংক:
১. মুক্তিযুদ্ধে একজন ঠেলাওয়ালা: http://www.ali-mahmed.com/2009/04/blog-post_18.html 
২. আবারও অগ্নিপুরুষ: http://www.ali-mahmed.com/2009/04/blog-post_22.html 
৩.  ট্যাংক-মানব: http://www.ali-mahmed.com/2010/03/blog-post_03.html 
৪. স্বপ্নের কারখানা: http://www.ali-mahmed.com/2010/05/blog-post_16.html 
৫. আমাদের কুমিল্লা: http://www.dailyamadercomilla.com/content/2010/06/05/news0745.htm

9 comments:

সায়ন said...

ভাইয়া স্টেজের পিছনে দুইটা ছবি কি আয়োজকরাই লাগিয়েছেন? নাকি আগে থেকেই ছিল?

সায়ন said...

শত সহস্র সালাম এবং আফুরন্ত ভালবাসা নৌ-কমান্ডো ফজলুল হক ভূঁইয়া ও ট্যাংক-মানব, মুক্তিযোদ্ধা এম, এ, জব্বার এর জন্য।

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

এটা উপজেলা মিলনায়তন। আমরা ভাড়া নিয়েছিলাম, কেবল পড়শী ফাউন্ডেশনের ব্যানারটা লাগিয়েছিলাম।

এটা আগে থেকেই ছিল- সম্ভবত উপজেলা লোকজনের জন্য এটা লাগানো বাধ্যতামূলক। @Shaqlain Shayon

সায়ন said...

ভাইয়া আমি আগেই বুঝতে পেরেছি। আপনি একটা লেখায়(http://www.ali-mahmed.com/2009/04/blog-post_18.html) চুনারুঘাটের যুদ্ধ উল্লেখ করেছেন। আমি এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই। আমার বাড়ি চুনারুঘাটে। আমার e-mail: shaqlain_acca@yahoo.com.

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

ভাইরে, অসম্ভব দৌড়ের উপর আছি। হাতে লেখাও জমে গেছে অনেক।
চুনারুঘাট নিয়ে সময় করে পোস্ট করব।
ভাল থাকুন।

মুকুল said...

অসাধারণ উদ্যোগ!

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

:) @মুকুল

Dr. Rumi said...

Ali Bhai,
Thank you very much for arranging such a excellent and extraordinary programme. I believe our next generation ( unfortunately our generation are much more lacking behind.....)will upgrade our socioeconomic and political condition with the inspiration of our liberation war and language movement.
I m grateful to u for that pen. I shall keep it for my whole life inshallah.

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

আপনার কলম আমার কাছে রাখা আছে। আপনাকে পৌঁছাবার ব্যবস্থা করব।

আমি বাচ্চাদের কাছে এবং এই দুই মুক্তিযোদ্ধার কাছে আপনার এই অসাধারণ আচরণের কথাও বলেছি,
"ডা. রুমি নামের একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ আমাকে খুব করে অনুরোধ করেছিলেন, তাঁর জন্যও একটা কলম নেয়ার জন্য। তাঁর পক্ষ থেকে আমি নিয়েছি।
এই মানুষটা খানিকটা অন্য রকম। তিনি যখন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যান, ট্রেনটা যখন আখাউড়া অতিক্রম করে; তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকেন যতক্ষণ পর্যন্ত না বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের সমাধিক্ষেত্র ট্রেনটা অতিক্রম করে যায়।"