Search

Monday, June 7, 2010

স্বপ্ন: চার


আমরা জাতি হিসাবে বড়ো আবেগময়- উঠল বাই তো তিমি চিবিয়ে খাই! ফেব্রুয়ারি এলে বাংলা বাংলা করে মিডিয়া কাঁদতে কাঁদতে দেশে অকাল বন্যা বইয়ে দেবে। ৩০ মিনিটের স্বপ্নদ্রষ্টা মতিউর রহমান [১] ৩০ হাত লম্বা একটা নৌকা বানিয়ে ফেলবেন। এই দেশ থেকে ব্রিটিশ পগারপার হয়েছে কতো বছর হবে, নাকি এখনও রয়ে গেছে?

ট্রেনে করে কোন কিছু রেলে পাঠাতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ে এখনো যে রসিদটা দেবে তাতে হাবিজাবি অনেক কিছুর সঙ্গে লেখা, "...কোন সরকারী অফিসারের (ব্রিটিশ বা বিদেশী উর্দি নহে কিংবা উর্দির অংশ বিশেষ নহে...)"
এখনও বাংলাদেশের অধিকাংশ আইন ইংরাজিতে। ফটাফট ইংরাজি বলতে না পারলে ওই মানুষটা এবং কলাগাছের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। মুখে মুখে বাংলা ভাষার জন্য আমাদের কী মায়া!

বিশ্বকাপের জ্বরে কাঁপছে দেশটা। এই কাঁপাকাঁপি নিয়ে আমার দ্বিমত নাই। অনেকে বিভিন্ন দেশের পতাকা লাগাচ্ছেন, এটার যথার্থতা নিয়ে তর্ক করার ইচ্ছা আমার নাই। কেন আমাদের স্বাধীনতার উৎসবে আমরা বাঁশ খুঁজে পাই না লম্বার ঝাড়ুর উল্টা পিঠে আমাদের পতাকা লাগাই এই নিয়ে কুতর্কেও আমি যাব না। আমাদের বাঁচার জন্য কোন-না-কোন একটা উপলক্ষ থাকার প্রয়োজন আছে। প্রয়োজন আছে খেলার আবেগেরও। এই নিয়ে আমার অমত নাই।

কেবল যেটা বলতে চাই, কমছে আমাদের মার শাড়ির বহর, বাড়ছে অন্য দেশের পতাকার নহর! যে মানুষটা তার মার ১২ হাতের শাড়ির বদলে ১০ হাত শাড়ি কেনে সে বানাচ্ছে ২২ হাতের পতাকা। গোটা দেশে এ এক অসভ্য প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। কে কার চেয়ে লম্বা পতাকা লাগাতে পারে। লেখার শুরুতে যা বলেছিলাম...।

অন্য দেশের পতাকা নিয়ে আমাদের মাতামাতির শেষ নাই, নিজের দেশে ফুটবল খেলার মাঠের কোন খোঁজ নাই, ফুটবল ম্যাচের পাত্তা নাই! কয়েকজনকে আমি বললাম, আমি টাকার ব্যবস্থা দেখি, তোমরা কি পারবে একটা ফুটবর ম্যাচের আয়োজন করতে? সবাই আমাকে নিরাশ করলেন। তাদের বক্তব্য, আরে না, মারপিট হবে। 
শোনো কথা!

হরিজন পল্লী, যার চালু নাম 'মেথর পট্টি'। এখানে পতাকার নমুনা দেখে থমকে দাঁড়াই। আমি যখন ছবি উঠাচ্ছি তখন এখানকার একজন আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনে কি সাম্বাদিক?
আমি বললাম, না।
তাইলে ছবি উঠাইতেছেন ক্যান?
আমি মনে মনে বলি, ভাল মুসিবত দেখি। জার্মান এম্বেসিতেও আমি সাংবাদিক কিনা এর ব্যাখ্যা দিতে হয়, লোকজনকেও। ভাবছি, কামনা বা বাসনা নামের কোন একটা রগরগে সাপ্তাহিকে জয়েন করে ফেলব কিনা?
মুখে বললাম, এমনিই তুললাম। আপনেরা পতাকা লাগাইছেন, সোন্দর দেখা যাইতাছে।

মানুষটা এইবার খুশী হয়। আমি এর সঙ্গে টুকটাক কথা বলি কারণ এখানে আসার আমার অন্য একটা উদ্দেশ্যও আছে। জানতে চাই, এখানকার ছোট-ছোট বাচ্চারা ইস্কুলে যায় কিনা?
যায় না জানার পর আমি বললাম, আচ্ছা, যদি একজন মাস্টার এসে বিনা পয়সায় আপনাদের বাচ্চাদের পড়িয়ে যায় তাহলে আপনারা কি আপনাদের এখানেই একটা ঘর ঘন্টাখানেকের জন্য দিতে পারবেন?
তিনি বলেন, এইটা সর্দারের পুলা ভালো বলতে পারব। তাইনে আপনের মতোই শিকখিত।

আমি মনে মনে বলি, বাপ, শিক্ষিত হলে বাচ্চাগুলোকে স্কুলে পাঠায় না কেন! নাকি শিক্ষাবিদ আনিসুজ্জামানের [২] মত হঠাৎ মনে পড়বে, ওরে, তোরা কে কোথায় আছিস বই-খাতা নিয়া আয়? 
কোন নিশ্চয়তা পাওয়া গেল না কারণ এই সিদ্ধান্ত সর্দারের 'শিকখিত' ছেলে ব্যতীত সম্ভব না। বেলা বাজে একটা। তিনি এখনও ঘুমাচ্ছেন, কখন জাগবেন বলা যাচ্ছে না। পরে আবার যেতে হবে।

এটাও আমার ছোট্ট স্বপ্নের একটা অংশ। আমার ইচ্ছা আছে, এখানে ছোট-ছোট বাচ্চাদের পড়াবার জন্য একজন টিচার ফি-রোজ পড়িয়ে যাবেন। এই বাচ্চাগুলোকে পড়তে বসাবার জন্য কিছু চালবাজি করতে হবে। পড়া শেষ হলে চকলেট পাবে এই ফাঁদে ফেলতে হবে। দেখা যাক।

*স্বপ্ন: http://tinyurl.com/3y7bpz3

সহায়ক লিংক:
১. শপথবাজ মতিউর রহমান: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_19.html
২. শিক্ষাবিদ আনিসুজ্জামান: http://www.ali-mahmed.com/2010/01/blog-post_03.html

5 comments:

JeweL said...

স্বপ্ন গুলো একদিন সত্য হবে। আমরা স্বপ্ন দেখি, স্বপ্ন দেখবো।
কারন আমাদের স্বপ্ন গুলো আমাদের মতই সাধারন।

সায়ন said...

ভাইয়া প্রথম ছবিটার লেখা ত কিছুই বুঝলাম না..

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

ছোট ছোট স্বপ্ন তো, সংখ্যায় অনেক। কিছু স্বপ্ন সত্য হচ্ছে, হবে...।

আমরা অতি সাধারণ মানুষ বলে আমাদের স্বপ্নগুলোও ক্ষুদ্র! ওদিন একজনের বেলায় পড়ছিলাম, তিনি নাকি ছোটবেলা থেকে দেশ স্বাধীন করার স্বপ্ন দেখতেন। হা হা হা। @JeweL

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

ছবিটা বড়ো করলে দেখতে পাবেন এটায় লেখা আছে,
"...উর্দি পরিধানের অধিকার সম্পন্ন কোন সরকারী অফিসারের (ব্রিটিশ বা বিদেশী) উর্দি নহে কিংবা উর্দির অংশ বিশেষ নহে..."
এটা স্বাধীন একটা দেশে ২০১০ সালেও চালু আছে!

এই ছবিটা এখানে দেয়ার অর্থ হচ্ছে, দেশ দেশ বলে আমরা জান দিয়ে ফেলছি কিন্তু এখনও ব্রিটিশ-পাকিস্তান এই মনোভাব থেকেই আমরা বের হতে পারিনি। প্রকৃত অর্থে এই দেশের জন্য আমরা তেমন কিছুই করিনি।

দেখবেন, সংবিধানের বই বগলে চেপে আমাদের দেশের সেরা(!) সন্তানরা লম্বা লম্বা বুলি কপচাবেন কিন্তু ব্রিটিশদের করা আইনগুলো পরিবর্তন করার যোগ্যতা এই সব বুদ্ধিমানদের(!) নাই।

ব্রিটিশ প্রভুরা এই দেশে রেখে গেছে তাদের অসংখ্য গোলাম...। যেন বানরের হাতে ক্ষুর! @Shaqlain Shayon

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

আরেকটা ছবি যোগ করে দিলাম। আশা করছি, এখন পড়তে পারবেন। @Shaqlain Shayon