সুরুয মিয়ার পরিবারের [১] সঙ্গে আমি যোগাযোগ করে উঠতে পারছিলাম না। দোষটা সবটা আমার না, পূর্বে যাদেরকে নিয়ে আমি গিয়েছিলাম তারা সময় বের করতে পারছিলেন না। এই গ্রহে আমি ব্যতীত সবাই ভারী ব্যস্ত।
আমি তো আবার লোকেশন মনে না রাখতে পারার জন্য কুখ্যাত, তার উপর জায়গাটা খানিকটা দূর্গম। এমনিতে আমাদের দেশে বিখ্যাত ব্যতীত অখ্যাত মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি জিগেস করে বের করা আর খড়ের গাদায় সুই খোঁজার মধ্যে কোন ফারাক নাই! মুক্তিযোদ্ধা দুলা মিয়ার [২] বাড়ি বের করতে গিয়ে আমার কালঘাম বেরিয়ে গিয়েছিল।
এই দেশে ট্রাক-ড্রাইভারের নামেও রাস্তার নামকরণ হয় কারণ তিনি বিরাট মুক্তিযোদ্ধা- যুদ্ধের সময় তিনি ট্রাক চালাতেন! নাম ফলকে ভরে যায় রাস্তাঘাট!
কিন্তু এই সব প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে সড়কের নামকরণ দূরের কথা বাঁশের একটা খুঁটিও পাওয়া যায় না। এলাকার মানুষই চেনে না, এলাকার মানুষের বিশেষ আগ্রহও থাকে না কারণ আমাদের দয়াবান নেতাদের এতো সময় কোথায় এদের খোঁজ রাখার!
চকচকে একটা বাইক কিনেছেন এমন একজন, এই মানুষটাকে কাউবয় না বলে বলা যেতে পারে বাইক-বয়। কাউবয় যেমন ঘোড়ার পিঠে থাকতে পছন্দ করে তেমনি এই মানুষটাও বাইকের পিঠে। মানুষটা আমাকে কথা দেন যতক্ষণই লাগুক আমাকে ঠিক-ঠিক জায়গায় পৌঁছে দেবেন। মানুষটা তাঁর কথা রাখেন। তাঁর প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা।
মুক্তিযোদ্ধা সুরুয মিয়া [৩], যিনি ২০০৫ সালের ঠিক ১৬ ডিসেম্বরে আত্মহত্যা করেন যখন সমগ্র জাতি এই আনন্দের দিনটিকে বরণ করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল।
মানুষটা লাশ ১২ ঘন্টা গাছে ঝুলছিল, নামাতে দেয়া হয়নি! তাঁর জানাজা পড়া নিয়েও সমস্যা হয়েছিল। ক্ষমতাবানদের এতে ঘোর আপত্তি ছিল।
সুরুয মিয়ার পরিবারের বাসায় যেতে হয়নি রাস্তার পাশে মা-ছেলে, ছেলের নাম সেলিম মিয়াকে পেয়ে যাই। এঁরা একটা চার দোকান দিয়েছেন, দোকানে তেমন কিছুই নাই।
জেনে ভাল লাগে এরা এখন সরকার থেকে ভাতা পাওয়া শুরু করেছেন। ৬ মাসে ৯ হাজার করে ১৮ হাজার টাকা অর্থাৎ মাসে দেড় হাজার করে।
কিন্তু ভাতা পেতে গিয়ে এঁদের যে ত্যাগ করতে হয়েছে তার যে ভাষ্য শুনলাম এতে বিস্মিত হওয়ার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলি!
এই ১৮ হাজার টাকা উঠাতে এঁদেরকে ঋণ করে ১৯ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। যার চালু নাম ঘুষ।
দোকান দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু ঋণ শোধ করে হাতে কিছুই নাই! আপাতত দোকানে অল্প কিছু মাল-পত্র কেনার জন্য কিছু টাকা দেয়া হয়েছে।
প্রার্থনাস্থলে সব বিষয় নিয়েই জোশের সঙ্গে বলা হয়, বলা হয় না কেবল ঘুষ নিয়ে। কেন, কে জানে! এই দেশে ঘুষ নিয়ে মাথা ঘামাবার তেমন সময় কারও নেই! আমার মনে হয়, আমরা ঘুষ নামের টাকা পেলে করব না এমন কোন কাজ নেই। পারলে মাকেও বিক্রি করে দেব, তাঁর কিডনি-লিভার-ফুসফুস।
কৃতজ্ঞতা:
আর্থিক সহায়তা: পড়শী ফাউন্ডেশন
লজিস্টিক সাপোর্ট: ফাহমি আজিজ
সহায়ক লিংক:
১. সুরুয মিয়ার পরিবার: http://www.ali-mahmed.com/2009/08/blog-post_02.html
২. দুলা মিয়া: http://www.ali-mahmed.com/2009/04/blog-post_08.html
৩. সুরুয মিয়ার আত্মহত্যা: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_28.html
৪. দুলা মিয়ার মেয়ে: http://www.ali-mahmed.com/2009/08/blog-post_05.html
এরশাদ-খালেদা জিয়ার সময় যেভাবে লেখা গেছে, ক্যারিকেচার, কার্টুন আঁকা গেছে আওয়ামী শাসনামলে সেটা ছিল স্রেফ একটা স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন! একদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (!) শহিদুল আলমকে নগ্ন পায়ে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেল। কোথায় নিয়ে গেল সেটা আবার অনেক পরে জানা গেল। কোর্টে আবার 'মাই লর্ড' বিচারক পুলিশকে জিজ্ঞেস করছেন, পুলিশ আসামীর (শহিদুল আলমের) ফোনের পাসওয়ার্ড নিয়েছে কিনা, সেদিনই লেখালেখির কফিনে পেরেক ঠোকা হয়ে গেল...!
Wednesday, July 21, 2010
টাকা পেলে আমরা সব বেচে দেব...
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
2 comments:
Fahmi vai ke bolen gari kenar jonno.
গাড়ি...!
আরে না, আপনি সম্ভবত পোস্টের এই লেখাটা লক্ষ করেননি,
"...চকচকে একটা বাইক কিনেছেন এমন একজন, এই মানুষটাকে কাউবয় না বলে বলা যেতে পারে বাইক-বয়। কাউবয় যেমন ঘোড়ার পিঠে থাকতে পছন্দ করে তেমনি এই মানুষটাও বাইকের পিঠে...।"
আপনিই বলুন একজন কাউবয় কি তার ব্ল্যাক স্ট্যালিয়ন ঘোড়ার সঙ্গে ফেরারি অদল-বদল করবে :)। @Masud
Post a Comment