মানুষটার নাম মন মিয়া। বয়স আনুমানিক ৬৫। স্ত্রী তাঁকে ফেলে চলে গেছেন কারণটা এখানে বলাটা সমীচীন মনে করছি না। ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নাই। এখন এখানে থাকেন একা।
রাস্তায় বসে কলা বিক্রি করেন, লাভ খুব একটা মন্দ না কিন্তু তিনি যার কাছ থেকে ১০০০ টাকা নিয়েছিলেন তাকে প্রতিদিন দেন ২০ টাকা। তিনি সম্ভবত এভাবে হিসাবটা করেননি যে মাসে তাঁকে দিতে হচ্ছে ৬০০ টাকা!
হা ঈশ্বর, ১০০০ টাকার জন্য ৬০০ টাকা! তিনি যে লিখিত কাগজটা দিয়েছেন ওই কাগজটা নিজ চোখে না দেখলে আমি বিশ্বাসই করতাম না।
হচ্ছেটা কী এই দেশে? মানুষ কী একেকজন চলমান দানব হয়ে যাচ্ছে? প্রার্থনাস্থলে উপচে পড়ছে ধার্মিক মানুষে। একজন আমাকে অন্য রকম একটা কথা বলেছিলেন, প্রতিদিন যে ভুলচুক করি তা উপরওয়ালার কছে মাফ চেয়ে নেই। প্রতিদিন কাটাকাটি হয়ে যায়। কী অদ্ভুত ভাবনা!
আমার ধারণা, আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ এই ভাবনাটা লালন করেন বলেই দানব হতে দ্বিতীয়বার ভাবেন না। আমি মনোবিদ নই, চৌকশ মনোবিদ ভাল বলতে পারবেন, আমাদের ভেতরে লুকিয়ে থাকা দানব মানবের মধ্যে লড়াইয়ে দানবটা কেন অনায়াসে জয়ী হচ্ছে। ফাঁকটা কোথায়? কোন ফাঁক দিয়ে দানবটা তার মাথা বের করে দিচ্ছে!
কেন আমরা হরদম হেরে যাচ্ছি? কেন? একটাই মাত্র জীবন আমাদের, কী স্বল্প আমাদের জীবন! তারপরও কেন-কেন?
এই মানুষটাকে আজ ১০০০ টাকা দেয়া হয়েছে। তাঁর সঙ্গে কথা বলে ঠিক করা হয়েছে প্রতিদিন তিনি ১০ টাকা করে দিয়ে দেবেন। এতে করে ৪ মাসের মধ্যেই তাঁর টাকাটা শোধ হয়ে যাবে।
এই 'ন্যানো ক্রেডিট' প্রজেক্টটা নিয়ে আমি বড়ো আশাবাদী। আমার ধারণা, এটা কালে কালে মহীরুহ হয়ে উঠবে।
সহায়ক লিংক:
১. ন্যানো ক্রেডিট, ১: http://www.ali-mahmed.com/2010/07/blog-post_14.html
5 comments:
টাকা টা কে দিয়েছে??
আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে, পড়শী ফাউন্ডেশন। আপনি সম্ভবত আগের পোস্টটা লক্ষ করেননি:
http://www.ali-mahmed.com/2010/07/blog-post_14.html
দানবীয় কাজ কারবার দেখতে দেখতে আমরা অনেকেই হয়তো ভুলে গেছি মনুষ্যত্ব কি। একজন আলী মাহমেদ আছেন বলেই আমাদের মনে করিয়ে দেন মানুষ হওয়া কোন দুরূহ কাজ না।দরকার একটু সদিচ্ছার।খুব নগন্য শব্দ তারপরও বলি-ধন্যবাদ
mursalin,
না, ভুল বললেন, একদম ভুল!
এই কাজগুলো করতে খুব বিরাট কিছু লাগে না, লাগে কেবল খানিকটা সদিচ্ছা।
আমি অভিভূত! আমি কল্পনাও করিনি মাত্র ১০০০ টাকায় একটা মানুষের, একটা পরিবারের জীবন পাল্টে যেতে পারে! আপনি বলেন, ১০০০ টাকা কী খুব বড়ো একটা সংখ্যা? কত অকাজে আমরা এই টাকা খরচ করি, করি না?
আমি আগেও বলেছি, এখানে আমি কেউ না। সমন্বয় করছি মাত্র, তবে এটা সত্য আমার যে অল্প মনন আছে তার পুরোটা ব্যবহার করার চেষ্টা করছি।
আমার মাথায় বড়ো যন্ত্রণা হয়- মাথাভর্তি পোকা নামের আইডিয়া গিজগিজ করে। একেকটা পোকা বের হয় আর আমি 'পড়শী ফাউন্ডেশন'-কে বলি, টাকা দাও। পড়শী ফাউন্ডেশন কিন্তু কোন দানবীরের না। এটা চালায় সাদিক আলম। সে কোত্থেকে কোত্থেকে যেন টাকা যোগাড় করে। খারাপ ভাষায় বললে ভিক্ষা করে। কেবল আমার স্বপ্নগুলোকে লালন করার জন্য। স্বপ্ন, আমার অদেখা স্বপ্নগুলো...।
এখন আমার কিছু ক্রাচ, ব্লাইন্ড স্টিক প্রয়োজন। আমি তো বলেই খালাশ। বেচারা সাদিক, আগামীকাল এইগুলো আমার এখানে নিয়ে আসছে। আমি তার অপেক্ষায়...।
সাদিক আলম নামের মানুষটার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নাই।
পড়শী ফাউন্ডেশন ভালো একটা কাজ করছে। but এই রকম ngo তো হাতে গোনা......
Post a Comment