এর নাম আনন্দ। পড়ে ক্লাশ সেভেনে।
হরিজন কলোনির স্কুলে বাচ্চাদের সঙ্গে আমি ব্যস্ত। আনন্দের মা যখন বললেন, এর স্কুলের ড্রেসের ব্যবস্থা করা যায় কি না তখন আমি খানিকটা বিরক্তই হলাম। স্কুলের কাজের সময় এই ঝামেলা ভাল লাগেনি।
বের হবার সময় আবারও একই প্রসঙ্গ। আমি বিরক্তি চেপে বলি, আনন্দ, তোমার আগের স্কুলের ড্রেস নাই?
আনন্দ বলে, আছে।
তাহলে? সমস্যা কি?
আনন্দ থেমে থেমে বলে, আগেরটা ছোট হয়া গেছে।
মানুষের প্রতি অবিশ্বাস আমাদের মজ্জাগত। আমার রক্তেও অবিশ্বাস খেলা করবে না এটা কেমন কথা! আমি সেই অবিশ্বাসে ভাসতে ভাসতে বলি, আনন্দ, দেখি তোমার স্কুল ড্রেসটা নিয়া আসো তো।
আনন্দ যে স্কুল ড্রেসটা নিয়ে আসে সেটা দেখে আমি হতভম্ব! এই ড্রেসটা সে কত বছর আগে বানিয়েছিল? এটা তার গায়ে আঁটে কেমন করে? আমার বিরক্তি বেদনায় মিশে একাকার হয়ে যায়। আপাতত তার এই সমস্যার একটা সমাধান হয় কিন্তু আনন্দের মার সঙ্গে কথা বলে মন আরও খানিকটা বিষণ্ন হয়।
আনন্দের বাবা নেই। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন বলে তার মা তাঁর এক সন্তানকে অন্য এক আত্মীয়র কাছে রেখেছেন। এখানকার লোকজনরা মিলে আনন্দের মাকে একটা দোকানের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এখানে, এদের এলাকায় কিছু দোকান দেখেছি বলেই মনে পড়ল।
আমাকে এটাও বড়ো লজ্জা দিল, হরিজনরা অন্তত এই কাজটা তো করে দিয়েছেন, তাঁদেরই স্বজাতি, অসহায় এই পরিবারটিকে একটা দোকানের ব্যবস্থা। এই উদারতা আমাদের মধ্যে কোথায়? ছোটবেলায় বেম্বাইয়াদের কথা শুনতাম, এরা নাকি এদের সম্প্রদায়দের কাউকে ভেসে যেতে দিতেন না। সবাই মিলে কোন-না-কোন একটা ব্যবস্থা করে দিতেন। অসহায় মানুষটাকে দাঁড় করিয়ে ছাড়তেন।
আনন্দের মার সমস্যা হচ্ছে, দোকানে জিনিস-পত্র কেনার জন্য পুঁজি নাই, এবং একা দোকান চালাতে পারেন না। কথা বলে ঠিক হয়, আপাতত ১০০০ টাকা তাঁকে দেয়া হবে। তিনি মাসে মাসে ১০০ টাকা করে ১০০০ টাকাটা শোধ দিয়ে দেবেন। হরিজন স্কুলের মাস্টারের কাছে টাকা জমা দেবেন, তিনি এটার হিসাব রাখবেন।
স্কুলের পর আনন্দ তার মাকে দোকানে সহায়তা করবে। আনন্দের মার একটাই চাওয়া, টাকাটা একটু তাড়াতাড়ি দিলে ভাল হয় কারণ এখানে এখন ওরস শুরু হচ্ছে, বাইরে থেকে যথেষ্ঠ লোকজন আসা শুরু করবেন। বিক্রি ভাল হবে বলেই তাঁর ধারণা। এটা কোন সমস্যা না, আজই টাকার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। আনন্দ বিপুল উৎসাহে ছুটছে জিনিসপত্র কেনার জন্য, আমি চোখ ভরে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি।
গত মাসে যত জনকে ন্যানো ক্রেডিট দেয়া হয়েছে প্রত্যেকেই ঠিক-ঠিক সময় মতো তাদের টাকা জমা করেছেন। আমি নিশ্চিত, আনন্দের মার বেলায়ও এর ব্যত্যয় হবে না।
*ন্যানো ক্রেডিট: http://tinyurl.com/39dkbhh
আপডেট: ১২ আগস্ট, ২০১০
স্কুলের কাজে আমাকে প্রায়ই এখানে আসতে হয়। আনন্দদের দোকানটাও এখানেই। অন্য দিন বন্ধ পেতাম, আজ দেখি মা-ছেলে দিব্যি দোকান খুলে বসে আছে। এদের আনন্দ দেখার সময় কোথায় আমার? নিজের আনন্দ ছেড়ে অন্যেরটা দেখতে বয়েই গেছে আমার।
8 comments:
এটা একটা দারুণ কাজ হচ্ছে। :)
এই উদারতা আমাদের মধ্যে কোথায়? ছোটবেলায় বেম্বাইয়াদের কথা শুনতাম, এরা নাকি এদের সম্প্রদায়দের কাউকে ভেসে যেতে দিতেন না। সবাই মিলে কোন-না-কোন একটা ব্যবস্থা করে দিতেন। অসহায় মানুষটাকে দাঁড় করিয়ে ছাড়তেন।
প্রথম কথা টা মানতে পারলাম না ....এর কারণ আপনিই....আমরা তাদের থেকেও উদার মানসিকতা সম্পন্ন বলে আপনি অন্য একটি সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ....এই বাপরে আপনি কোনো সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি আরোপ করেন নি......
কিন্তু হিন্দু রা এ ক্ষেত্রে চরম সাম্প্রদায়িক ...তারা নিজেদের ধর্মের লোক দেরকে যে রকম সহযোগিতা করে .... অন্য ধর্মের লোকদের বেপারে তারা সম্পূর্ণ বিপরীত .....
মন্তব্য পড়ে আমাকে আবার সাম্প্রদায়িক ভাববেন না.....আমি জাস্ট বাস্তব অবস্তা টা তুলে ধরলাম....
আর আপনার উদ্যোগ গুলো আসলেই ভালো.....আমরা সবাই যদি আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে এরকম কর্মকান্ডে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারতাম...তাহলে হয়তো আমাদের এই দেশের অবস্থা অন্যরকম হত .....
"আপনি অন্য একটি সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন"
সবিনয়ে বলি, আমি কেবল কাজগুলোর সমন্বয় করছি। আর্থিক সহযোগিতার পেছনে আছে 'পড়শী ফাউন্ডেশন'এবং আছে অনেকের বড়-ছোট সহায়তা।
"কিন্তু হিন্দু রা এ ক্ষেত্রে চরম সাম্প্রদায়িক..."
বেশ কিন্তু সমস্ত সম্প্রদায়গুলো তাদের লোকজনের জন্যই করুক না তাহলেই তো সীমাহীন সমস্যা মিটে যায়। @mutasim
ভাই.....বলেন তো ..বাংলাদেশ এর আজকে এই দুরাবস্থা কেন...?
আপনার উত্তর কি হবে জানি না....তবে আমার নিজের সল্প বুদ্ধিতে আমি যা বুঝি তাতে আমার উত্তর হলো ..একজন ভালো সমন্বয়কারীর অভাব ...
আরো অনেক কিছু বলার ছিলো....বেসি বললে আবার বিরক্ত হবেন...
ভালো থাকবেন......
ইয়ে...ন্যানো ক্রেডিটের ধারণাটা পেটেন্ট করিয়েছেন কি? আইডিয়া-ছিনতাইকারীর তো অভাব নেই চারপাশে! :)
"ইয়ে...ন্যানো ক্রেডিটের ধারণাটা পেটেন্ট করিয়েছেন কি?"
ইচ্ছা ছিল কিন্তু কোথায় কেমন করে করে কিছুই তো জানি না, ছাই...:(
"আইডিয়া-ছিনতাইকারীর তো অভাব নেই চারপাশে! :)"
আমার অনেক আইডিয়া পূর্বে ছিনতাই হয়েছে। ছিনতাইকারীর নাম বললে আপনি উল্টো আমাকেই দুষবেন, অবিশ্বাসের চোখে তাকাবেন... :( ।
'আমার অনেক আইডিয়া পূর্বে ছিনতাই হয়েছে।'
ভীতিবি, বাতাস বিক্রি, মোবাইলের প্যাকেজ ইত্যাদি-ইত্যাদি, মানে ব্লগে যা লিখেছেন, সেসব তো জানি। এর বাইরেও আর কিছু আছে কি?
"ভীতিবি, বাতাস বিক্রি, মোবাইলের প্যাকেজ ইত্যাদি-ইত্যাদি, মানে ব্লগে যা লিখেছেন, সেসব তো জানি।"
কী সর্বনাশ! আপনি দেখি মুখস্ত করে বসে আছেণ!
"এর বাইরেও আর কিছু আছে কি?"
হুঁ। @সুব্রত
Post a Comment