এরশাদ-খালেদা জিয়ার সময় যেভাবে লেখা গেছে, ক্যারিকেচার, কার্টুন আঁকা গেছে আওয়ামী শাসনামলে সেটা ছিল স্রেফ একটা স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন! একদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (!) শহিদুল আলমকে নগ্ন পায়ে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেল। কোথায় নিয়ে গেল সেটা আবার অনেক পরে জানা গেল। কোর্টে আবার 'মাই লর্ড' বিচারক পুলিশকে জিজ্ঞেস করছেন, পুলিশ আসামীর (শহিদুল আলমের) ফোনের পাসওয়ার্ড নিয়েছে কিনা, সেদিনই লেখালেখির কফিনে পেরেক ঠোকা হয়ে গেল...!
Tuesday, August 31, 2010
ন্যানো ক্রেডিট: ৬
বৃষ্টির বয়স চার মাস। বৃষ্টির মা একে কোলে নিয়ে প্ল্যাটফরমে ভাত বিক্রি করেন। মাছ-ভাত। মাথাপিছু ১৫ টাকা! ভাবা যায়?
লোকজনকে দেখি আরামসে কনুই ডুবিয়ে খাচ্ছে। পূর্বের লেখায় উল্লেখ করেছিলাম, আমেরিকা প্রবাসী একজন লোকজনকে খাওয়াবার জন্য ৪০০ ডলার পাঠিয়েছিলেন যার একটা অংশ ব্যয় হয়েছে আমাদের ইশকুল: দুইয়ের ছাত্র-ছাত্রী-অভিভাবকদের মধ্যে।
এর বাইরে ক্ষুধার্ত লোকজনকে খাওয়াবার জন্য হোটেল থেকে প্যাকেট খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
স্টেশনে বৃষ্টির মার মত বেশ কিছু মহিলা ভাত বিক্রি করছেন দেখে এক ঢিলে কয়েকটা পাখি মারার বুদ্ধিটা মাথায় আসে। এমন একেকটা দোকানে ১০জন করে খাওয়ালেই তো দোকানগুলোর বিক্রি-বাট্টা চাঙ্গা হয়।
স্টেশনে যেসব শিশু পানি বিক্রি করে এদের সংখ্যা অন্তত ২৫/ ৩০ হবে। অন্যদের খাওয়াতে দেখে এরা মিছিল বের করে ফেলল, এককথা এক দাবি, এদের খাওয়াতে হবে। গররাজি হওয়ার কোন কারণ নেই, বাপধনরা বসে যাও কোন সমস্যা নেই- সমস্যাটা টের পাবে পরে।
মনে মনে এও বলি, রসো, বাছাধনরা! ছাই দিয়ে কেমন করে মাছ ধরতে হয় এটা আমরা শিখব! আমার মাথায় যেটা খেলা করে, এই শিশুদের দিয়ে স্টেশনের কাছাকাছি আরেকটা স্কুল খুলে দিলে কেমন হয়? আমার কেন যেন মনে হচ্ছে পূর্বের স্কুলগুলো, স্কুল: এক [১], স্কুল: দুইয়ের [২] চেয়ে এদের জন্য স্কুল করাটা জরুরি।
আমি এটাও জেনে যাই, এখানকার বেশ কিছু শিশু ড্যান্ডিতে আসক্ত। ড্যান্ডি একটা ভয়াবহ ড্রাগ। যেসব আঠা রাবারে লাগানো হয় ওইসব আঠা একটা পলিথিনে কয়েক ফোঁটা দিয়ে সেই পলিথিন মুখে চেপে খুব দ্রুত নিঃশ্বাস নেয়া হয়। একটা শিশুর কিডনি, লিভার, ফুসফুস ক্রমশ নষ্ট হতে থাকে। 'খোদেজা' বইয়ে [৩] সোহাগ নামের একটা চরিত্র দাঁড় করিয়েছিলাম যার ড্যান্ডিতে আসক্তি ছিল। এটা আমি দেখেছিলাম, কমলাপুর স্টেশনে ঘুম-ঘুম চোখে মশার কামড় খেতে খেতে।
আজ বৃষ্টির মা আনন্দের শেষ নাই কারণ তার খাবার শেষ। কথায় কথায় জানা গেল, চাউল এবং আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্র এই মহিলা বাকিতে ক্রয় করেন। সামান্য খোঁজ নিতেই জানা গেল, বাজারে চেয়ে বেশি দাম ধরা হয়। বাকিতে নেয়া হয় বলে বলার কোন সুযোগ নেই।
পুঁজি খুব বেশি লাগে না, শত পাঁচেক টাকা। এই টাকাটা বৃষ্টির মাকে দেয়া হয় মাসে একশ টাকা করে শোধ হবে এই শর্তে। পাঁচ মাসে টাকাটা শোধ হবে।
এই মুহূর্তে আমি বৃষ্টির মার ন্যানো ক্রেডিট [৪] নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না। আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, এদের জন্য একটা স্কুল করতে হবে যত দ্রুত সম্ভব। সম্ভব হলে আগামিকালই। পরশু কে দেখেছে?
সহায়ক লিংক:
১. আমাদের ইশকুল, এক: http://tinyurl.com/3xpuov5
২. আমাদের ইশকুল, দুই: http://tinyurl.com/2fs9j4p
৩. খোদেজা: http://tinyurl.com/33xcevn
৪. ন্যানো ক্রেডিট: http://tinyurl.com/39dkbhh
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment