Search

Friday, August 27, 2010

ধন্যবাদ প্রথম আলো

৬ আগস্ট যখন প্রথম আলোয় যখন এই সংবাদটা পড়ি তখন যথারীতি মেজাজের কাঁটা উর্ধ্বগতি। মনে মনে কষ্টের শ্বাস গোপন করি, কেউ কেউ কখনও বদলায় না, কেবল অন্যদেরকেই বদলাবার জন্যই আদাজল খেয়ে নামে! শেষের পাতায় খবরটা এক কলাম ইঞ্চি ছাপা হয়েছিল, "সম্পদের অর্ধেক দান করার ঘোষণা ৪০ ধনকুবেরের"।
আমি অহেতুক ভেবে ভেবে সারা, এটা কেন ফলাও করে প্রথম পাতায় এলো না? কেন এই খবরটা নিয়ে সম্পাদকীয় ছাপা হবে না? কেন এই খবরটা নিয়ে আমাদের দেশের দুধর্র্ষ কলামবাজরা ঝাপিয়ে পড়বেন না, কলাম লিখে লিখে পাতা ভরিয়ে ফেলবেন না?

এই খবরটা গুরুত্ব কী অপরিসীম এটা কেন আমরা অনুধাবন করতে পারলাম না? আমার সুযোগ থাকলে এঁদের ছবি বাঁধিয়ে প্রত্যহ ধূপ-ধুনা দিতাম। এঁদের এই একটা অভাবনীয় সিদ্ধান্ত, কোটি-কোটি মানবসন্তানের কল্যাণে ব্যয় হবে- এই গ্রহে আর কী চাওয়ার থাকতে পারে!
এই উদ্যোগটা নিয়ে ফলাও করে লিখলে যদি আমাদের দেশের কেবল একজন মাত্র ধনকুবেরের মত পরিবর্তন হয় সেটা কী এক অসাধারণ বিষয় হবে এটা আমার কল্পনাতেই আসে না। কেন আমি এটা আশা করতে পারব না, আমাদের দেশের একজন ধনকুবেরের ওদের মত মাথা এলোমেলো হবে না?

একজন ধনকুবের লাগে না, সামান্য একটা উদ্যোগ কেমন পরিবর্তন নিয়ে আসে এর ছোট্ট একটা উদাহরণ। 
সুদূর আমেরিকা থেকে একজন ৪০০ ডলার পাঠিয়েছেন। টাকাটা হাত ঘুরে আমার কাছে এসেছে। আমার আনন্দিত হওয়ার কথা কিন্তু খানিকটা বিমর্ষ হয়ে গেলাম! এই টাকাটা আমাদের দেশের হতদরিদ্র মানুষদের জন্য ব্যয় হবে। শর্ত আছে, টাকাটা ব্যয় হবে মুসলমানদের জন্য, খাবার-দাবারের পেছনে এবং রমযানের মধ্যেই টাকাটা ব্যয় করতে হবে। আমার জন্য এটা একটা কঠিন শর্ত এবং অপছন্দের। যদি বলা হতো ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য তাহলে আমার আপত্তির কারণ ছিল না। ক্ষুধার্ত তো ক্ষুধার্ত, হিন্দু-মুসলিম-খ্রীস্টান কী! একবার মনে হয়েছিল, না করে দেই কারণ ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন কাজ করে আমি আরাম পাই না। অনেক ভেবে দেখলাম, কাজটা আমার অপছন্দের হলেও আমার কারণে কিছু মানুষ কেন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে?

যিনি মাধ্যম, তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হয় এর অধিকাংশ টাকা ব্যয় হবে 'ঈশ্বরের বিশেষ সন্তানদের স্কুলের' [৩] পরিবারে লোকজনের মধ্যে। এঁরা এমন না যে দু-বেলা খেতে পান না। তাই আমরা ভেবে ঠিক করলাম, প্রত্যেক পরিবারে জন্য পর্যায়ক্রমে মাংশের (গোশত লেখার নিয়ম সম্ভবত, মাংশ নাকি মুরতাদের শব্দ!) ব্যবস্থা করা হবে। এই মাংশের কল্যাণে এঁদের এবং এঁদের বাচ্চা-কাচ্চাদের শরীরে খানিকটা প্রোটিন যোগ হবে। মন্দ কী!
আমি অবাক হয়ে ভাবছিলাম, সেই সুদূর আমেরিকা প্রবাসী একজনের টাকায় কেনা মাংশ খাচ্ছে দূর্গম এক এলাকার কিছু মানুষ!

ধরে নিলাম নিরুপায়, এরা লক্ষ-লক্ষ উট গুলি করে মেরে ফেলবে [৪] কিন্তু আমাদের দেবে না। হারামজাদারা, কেবল মুখ ফুটে একবার বললেই হতো আমরা এদের পোতাশ্রয় থেকে নিজ খরচে জাহাজ ভরে ভরে নিয়ে আসতাম। আমার জানার খুব আগ্রহ, অস্টেলিয়ায় আমাদের দূতাবাসের স্যাররা কি একবারও এদের বলে দেখেছিলেন, নাকি বড়ো বড়ো সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছিলেন?  

তো, সর্বদা পত্রিকাওয়ালাদের অন্ধকার দিক নিয়ে লিখতে ভাল লাগে না। আমি অপেক্ষায় থাকি, এই নিয়ে এই পত্রিকায় সুদীর্ঘ লেখা ছাপা হবে। আমাদের দেশেরও কোন ধনকুবেরকে এমন পাগলামি করতে প্ররোচিত করা হবে। আমার অপেক্ষা আর ফুরায় না।
অবশেষে আজ (২৭ আগস্ট, ২০২০), অন্যআলোয় ফলাও করে ছাপানো হয়েছে, "বিশ্বের ছয় ধনীর অর্ধেক সম্পদ এখন গরিবের"। প্রথম আলো, বিশেষ করে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই এটার লেখক নাইর ইকবালকে।

সহায়ক লিংক: 
১. সম্পদের অর্ধেক দান করার ঘোষণা ৪০ ধনকুবেরের, : http://www.eprothomalo.com/index.php?opt=view&page=24&date=2010-08-06
২. বিশ্বের ছয় ধনীর অর্ধেক সম্পদ এখন গরিবের: http://www.eprothomalo.com/index.php?opt=view&page=27&date=2010-08-27
৩. ঈশ্বরের বিশেষ সন্তানদের ইশকুল: http://tinyurl.com/2fs9j4p
৪. সভ্যতার কাকে বলে: http://www.ali-mahmed.com/2009/10/blog-post_9297.html 

No comments: