Search

Friday, September 3, 2010

ভিক্ষুক!

জীবনে আমি অনেক ধরনের ভিক্ষুক দেখেছি। এদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, একবার যখন হাত বাড়িয়ে পয়সা পাওয়া যায় তখন আর এরা নড়াচড়া করতে চায় না। জাহাঙ্গির আলম [১] নামের এই মানুষটা এর জলজ্যান্ত প্রমাণ।

আমি ভিক্ষুকের ডাক্তার না কিন্তু কিছু ওষুধপত্র কাজ দেয়। কয়েকদিন পূর্বে ট্রেনে এক ভিক্ষুককে দেখলাম, ঠ্যাং দেখিয়ে দেখিয়ে ভিক্ষা করছে। আমার কাছে আসলে আমি বললাম, সমস্যা কি?
ভিক্ষুক বলল, অপারেশন করামু।
আমি বললাম, কি অপারেশন?
ভিক্ষুক, ঠ্যাং।
আমি বলি, বেশ। তা এই এক টাকা-দুই টাকা তুলে তুমি কত দিনে অপরারেশনের টাকা যোগাড় করবে। যে টাকা তুমি তুলবে ওখান থেকে তো খেয়েও ফেলবে।

আমি এর পা দেখলাম। এর বর্ণনা যদি সত্য হয় খুব ছোট্ট একটা কাটাছেঁড়ার প্রয়োজন হবে। এর জন্য ডাক্তারেরও প্রয়োজন নেই, ডাক্তারের সহকারীর পক্ষেই সম্ভব। তবে পয়সা খরচ হবে এটা সত্য। 
এবার আমি তাকে বললাম, তোমাকে আমি একজন এফসিপিএস ডাক্তারকে দেখিয়ে এই পায়ের জন্য যা যা লাগে সব ব্যবস্থা করব। কেবল তুমি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই ঠিকানায় চলে আসবে। আমি ওখানে থাকব। আমি অপেক্ষায় ছিলাম কিন্তু মানুষটা আসেনি। ভিক্ষুকের যা অভ্যাস।

ট্রেনে প্রায়ই ছোট্ট একটা ছেলেকে দেখি অনেক দিন ধরে। এর পেটে লালচে দগদগে ঘা, ভয়াবহ। আরও কিছু বিষয় আছে লেখতে ইচ্ছা করছে না তবুও লেখা প্রয়োজন। খানিক চাপ পড়লেই ওখান থেকে পেটের আবর্জনা বেরিয়ে আসে। বিভিন্ন সময়ে ট্রেনে উঠলে একে দেখিনি এমনটা খুব কম হয়েছে। একবার নিয়ত করে গেছি, কপালে যা থাকে ঝুলে পড়ব। একে বললাম, ঘটনা কি?
অপারেশন করামু।
ঠিক-ঠিক তো, অপারেশন করাবি?
হ।
চল আমার সাথে। তুই আমার সাথে থাক, হাসপাতালে নিয়ে তোর অপারেশন করাব।
এ কোন ফাঁকে সটকে পড়েছে আমি বলতেও পারব না। আরেক দিন যখন পেয়েছি তখন মেজাজ খারাপ করে বলেছি, দূর হ এখান থেকে, আমার চোখের সামনে থেকে।
এর ছবি তুলেছিলাম কিন্তু ছবিটা এমন বীভৎস দুর্বলচিত্তের একজন মানুষের হার্টবিট মিস করবে। এখানে দেয়া থেকে অনেক কষ্টে বিরত রইলাম। এদের ধরে ধরে জেলখানার মতো কোথাও আটকে রাখা প্রয়োজন।

এই মানুষটা ভিক্ষা করেন তার কথামতে নিজের জন্য না, বাঁদরের জন্য। আবার কাহিনিও আছে। তিনি যে নিজের জন্য চান না এই বিষয়ে কোন ছাপাছাপির যেন অবকাশ না থাকে এই হেতু প্রমাণ দেয়ার নিমিত্তে টাকা নেয়ার সময় নিজের হাতে নেন না। কেউ দিলে বিরক্তি সহকারে বলেন, আহ, আমারে দিতাছেন ক্যান। এইটা দিয়া আমি কি করমু! বান্দইরারে দেন, হের যন্ত্রণায় বাঁচি না। হের সারা শইল জুইড়া খিদা। 
একবার আমি খানিকটা রগড় করেছিলাম, বান্দরের জন্য আপনের অনেক যন্ত্রণা হয়। মাইনষের কাছে হাত পাততে হয়...।
তিনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলেছিলাম, আপনে একজন শিকখিত মানু হইয়া ক্যান উল্টাপাল্টা কইতাছেন! কুন সুমায় আমারে দেখলেন হাত পাততে?
আমি আর কথা বাড়াই না। তো এমন ভিক্ষুকের কথা বলে বলে একটা উপন্যাসের ম্যাটার দাঁড় করিয়ে ফেলা যাবে। (আমি যখন ছবিটা উঠাই তখন দুজনই গভীর ঘুমে।)

তবে কসম, চকচকে পোশাক-জুতা লাগিয়ে কাউকে ভিক্ষা করতে দেখেছি বলে তো মনে হয় না। এই মানুষটাকে দেখে প্রাণ জুড়ালো।

*ছবি ঋণ (পুলিশ ভিক্ষুক) : কালের কন্ঠ

সহায়ক লিংক:
১. জাহাঙ্গীর আলম: http://www.ali-mahmed.com/2010/08/blog-post_06.html  
 

2 comments:

সুব্রত said...

এদের আর দোষ দিয়ে লাভ কী? আমাদের দেশের সুট-টাইপরা মাথারাও তো বৈদেশ যান ভিক্ষেপাত্র হাতে নিয়ে। এর আবার একটা গালভরা নামও আছে...অনুদান।

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

"আমাদের দেশের সুট-টাইপরা মাথারাও তো বৈদেশ যান ভিক্ষেপাত্র হাতে নিয়ে। এর আবার একটা গালভরা নামও আছে...অনুদান।"
হা হা হা। দীর্ঘ দিন ধরে আমি লক্ষ করেছি, কখনও কখনও আপনার মন্তব্যগুলো মূল লেখাকে ছাড়িয়ে যায়।
আপনার মন্তব্যগুলোর মাধ্যমে এর পেছনের মানুষটার সম্বন্ধে যে ধারণা হয়েছে...। থাক, এই মুগ্ধতা পাবলিক ফোরামে আর শেয়ার করলাম না। @সুব্রত