এই সব সরকারি গুন্ডাদের আমরা কখনও দেখি ভিক্ষুকের বেশে [১], কখনও খুনির বেশে। এরা কেবল একজন মানুষকে পরোক্ষভাবে খুনই করেন না, করেন তার গোটা পরিবারকে। এদের কেউ কিচ্ছু বলে না। ইয়াসমীন হত্যা ব্যতীত ক-জন পুলিশম্যানের ফাঁসি হয়েছে- মানেটা কি এরা ফাঁসির মত অপরাধ করছেন না, করছে কেবল আমজনতা?
এদের শাস্তি বলতে বড়জোর পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুদিন ওখানে গায়ে বাতাস লাগিয়ে কাটাবার পর ঘুষ-ঘাস দিয়ে আবারও নতুন কোথাও পোস্টিং। দুর্বল মানুষ যেমন কচুগাছ কাটতে কাটতে ডাকাত হয় তেমনি এরা আরও নৃশংস, দুর্ধর্ষ হন।
এসএসসি পরীক্ষার্থী রুবেল এবং নাজমুলকে চোখ বেঁধে তালা থেকে সাতক্ষীরা জেলা দায়রা জজ আদালতে নিয়ে আসা হয়েছে! সন্দেহজনক মানুষের চোখ বাঁধার নিয়ম আজকের না, তাও জটিল কোন মিশনে, মাঠ পর্যায়ে; কখনও শারীরিক নির্যাতন করার সময়। এটা উচিত, কি অনুচিত সে প্রসঙ্গে এখন আর যাই না কিন্তু তাই বলে আদালতে নিয়ে আসা হবে চোখ বেঁধে? একটা সভ্য দেশে এটা সম্ভব? আর এরা কি জঙ্গিদের চেয়েও দুর্ধর্ষ?
প্রথম আলো জানাচ্ছে [২], এই দুইজনের প্রতি পুলিশের অভিযোগ হচ্ছে, এরা একটা খুনের সঙ্গে জড়িত।
কিন্তু এসএসসি পরীক্ষার্থী রুবেল বিচারকের কাছে ফাঁসি চাইছে তবুও যেন তাকে রিমান্ডে না দেয়া হয়। কারণ রিমান্ডে তাকে অমানুষিক অত্যাচার করা হয়েছে। একটা মানুষ কোন পর্যায়ে গেলে এমনটা বলতে পারে, আমাকে ফাঁসি দেন কিন্তু রিমান্ডে দিয়েন না! মানুষ কখন, কোন পর্যায়ে মরে যেতে চায়?
রুবেলের আরও বক্তব্য, এসআই লুৎফুর রহমান তাদের কাছে ৫০ হাজার টাকা চেয়েছিল। না দেয়ায় তাকে অমানুষিক অত্যাচার করে জোর করে খুন করেছে এটা বলার জন্য বাধ্য করা হয় এবং এমনটা না করলে পরবর্তীতে আরও ভয়াবহ নির্যাতন করা হবে বলে শাসানোও হয়।
জজ সাহেব পুরো বিষয়টা অনুধাবন করতে পেরেছেন এবং রুবেলকে জেলহাজতে পাঠাবার নির্দেশ দিয়েছেন।
ভাল, মাননীয় জজ সাহেবকে আন্তরিক সাধুবাদ। কিন্তু এটুকু করেই কী জজ সাহেবের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়? তিনি এই এসআই নামের গুন্ডাকে কেন কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন না? এর জন্য আইনের কোন বই ঘাঁটতে হবে এটা খুঁজে বের করা তো তাঁর দায়িত্ব, আমাদের না।
আমরা কেউই যার যার দায়িত্ব পালন করছি না- গা ভাসিয়ে দিচ্ছি। এর পরিণাম ভয়াবহ! যে বিষবৃক্ষগুলো রোপণ করছি এতে টসটসে ফল না ধরার তো কোন কারণ দেখি না।
এই দেশে কি এমন কোন আইন নাই সরকারী উর্দিপরা এই সব গুন্ডাদের বিচার করা যাবে? কখনও-সখনও আমরা দেখি আদালত এদের মৃদু তিরস্কার করে ছেড়ে দেন। বাসে গান পাউডার দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে ফেলা হয়, চড়চড় করে চামড়া পুড়তে থাকে। যে পুলিশম্যান এই ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছিলেন তাকে আদালত মৃদু তিরস্কার করেছিলেন! বাহ, এই-ই!
গোল্ডা মায়ারের কথাটা আবারও বলতে হয়, "কাউকে হত্যা করা এবং হত্যা করার সিদ্ধান্ত দেয়ার মধ্যে কোন তফাত নাই"। যেমন তফাত নাই হত্যাকারীকে রক্ষা করা, তেমনি আইনের থাবা থেকে বেঁচে যেতে পারেন না প্রকৃত সত্যকে গোপন করে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টাকারী।
মার্টিন সাহেবের উদাহরণ দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, "...There was no one left to speak for me".। হিস্ট্রি রিপিট! এই দেশের মহা ক্ষমতাধর আর্মি, গড়াগড়ি দিয়ে কেঁদেছে। আজ প্রশাসন কাঁদছে [৩], কাল আপনারা কাঁদবেন। কপাল, অনেক কান্না দেখার যে বাকী রয়ে গেছে আমাদের...।
সহায়ক লিংক:
১. ভিক্ষুক: http://www.ali-mahmed.com/2010/09/blog-post_03.html
২. প্রথম আলো: http://www.eprothomalo.com/?opt=view&page=5&date=2010-09-26
৩. প্রশাসনের কান্না: http://www.ali-mahmed.com/2010/09/blog-post_5190.html
এরশাদ-খালেদা জিয়ার সময় যেভাবে লেখা গেছে, ক্যারিকেচার, কার্টুন আঁকা গেছে আওয়ামী শাসনামলে সেটা ছিল স্রেফ একটা স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন! একদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (!) শহিদুল আলমকে নগ্ন পায়ে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেল। কোথায় নিয়ে গেল সেটা আবার অনেক পরে জানা গেল। কোর্টে আবার 'মাই লর্ড' বিচারক পুলিশকে জিজ্ঞেস করছেন, পুলিশ আসামীর (শহিদুল আলমের) ফোনের পাসওয়ার্ড নিয়েছে কিনা, সেদিনই লেখালেখির কফিনে পেরেক ঠোকা হয়ে গেল...!
Sunday, September 26, 2010
সরকারি পোশাকপরা গুন্ডা
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment